শিক্ষক নিয়োগ-কেবল মেধাই যথেষ্ট নয় by দক্ষিণা রঞ্জন দাস
আসুন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে বর্তমান অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসককে সহযোগিতা করে দেশের এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিই ১৯৬৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে নোয়াখালীর সুধারাম থানার প্রত্যন্ত অঞ্চল চরবাটায় ওই সালেই উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে
মঞ্জুরিপ্রাপ্ত চরবাটা খাসেরহাট হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগদান করি। মনে হয়, ওই সময়ে এখনকার মতো এত বেকারত্ব ছিল না। ম্যাট্রিক বা এসএসসি পাস করলেই প্রাইমারি স্কুলের এবং সরকারি বিভিন্ন দফতরে নিম্নমান সহকারী হিসেবে একটি চাকরি পেয়ে যেতেন। তবে বেতন সামান্যই ছিল। কাজে যোগদানের পর আমি বেতন পেয়েছিলাম স্কুল তহবিল থেকে ৫০ টাকা এবং সরকারি মহার্ঘ ভাতা ২০ টাকা। সর্বসাকুল্যে ৭০ টাকা। সাধারণত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের যারা এলাকায় থাকতেন বা সংসারের ঘানি টানতেন তারাই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতেন। বেতন যা পেতেন তাতেই চলত। তবে বেশি বেশি সালাম পেতেন। তখন দেখেছি বেত ছাড়া কোনো শাসনই চলত না।
বর্তমান যুগের শিক্ষকদের চাকরিবিধি ও মাসিক বেতন প্রদান আদেশ (গচঙ) হবে, তা আমাদের সময়ের শিক্ষকদের কেউ কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর ভাতাপ্রাপ্তি তো আলাদিনের চেরাগের মতো। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সেক্রেটারি থাকতেন এলাকার প্রভাবশালী বা বিত্তশালী ব্যক্তিরা। শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য কোনো চাকরিবিধি ছিল না। যে কোনো অপরাধ সভাপতি ও সেক্রেটারির গোচরীভূত হলে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি খতম। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত গ্রামগঞ্জে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রাম বা শহরে অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। তখনকার দিনে অধিকাংশ শিক্ষক টিউশনি করতেন না। দু'একজন শিক্ষক ইংরেজি ও অঙ্ক পড়াতেন। ঢাকা শহরে নামিদামি বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন, যারা শিক্ষকতার আয় দিয়ে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন, নিজস্ব বাড়ি করেছেন। এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িরও মালিক হয়েছেন। কথাগুলো বললাম, বিগত কয়েক দিনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করে। শিক্ষক নামের কলঙ্ক পরিমল জয়ধর ওই প্রতিষ্ঠানের ৬০ বছরের গৌরবময় ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। 'রে পাপিষ্ঠ! শত ধিক্ তোরে, রে চামার!' কর্তৃপক্ষকে বলছি, শুধু মেধা যাচাইয়ে প্রথম হলেই মেয়েদের স্কুলে বা কলেজে শিক্ষক নিয়োগ করা যায় না। পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ করতে হলে অনেক কিছু ভাবনা-চিন্তা করতে হয়।
নির্যাতিত ছাত্রীটি ১৯ জুন বিষয়টি সহপাঠীকে এবং ২১ জুন শাখাপ্রধানকে জানায় সে। শাখাপ্রধান নিশ্চয়ই প্রশাসনিক কাজে অদক্ষ। তার উচিত ছিল, তাৎক্ষণিক বিষয়টি অধ্যক্ষকে অবগত করা এবং অধ্যক্ষ সভাপতিকে অবগত করানোর মাধ্যমে জরুরি সভা ডেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা। রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ, জ্ঞানী ও গুণী। ছাত্র সংগঠন করার সুবাদে বর্তমান এমপি রাশেদ খান মেনন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি ও জানি। তাদের মতো সজ্জন রাজনীতিবিদের সংখ্যা আমার মতে সারা বিশ্বে হাতেগোনা কয়েকজন। ওই প্রতিষ্ঠানটি মেয়েদের স্কুল ও কলেজ। তাই মাত্র দু'জন পুরুষ শিক্ষক রাখার অলিখিত বিধান রয়েছে। ব্যাপারটি কি অনৈতিক ও অমানবিক নয়? সব শিক্ষকই কি পরিমল জয়ধরের মতো? অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের মতো শিক্ষকের সংখ্যা কি আদৌ কম? পরিমল জয়ধরের ব্যাপারটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর আগে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের মতিউর রহমানের ব্যাপারটিকে ধামাচাপা না দিয়ে সুষ্ঠু বিচার করলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।
পরিমল জয়ধর আইনের হাতে আটক হয়েছেন। আইনানুযায়ী অবশ্যই তার বিচার হবে। পরিশেষে বলব, আসুন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে বর্তমান অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসককে সহযোগিতা করে দেশের এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিই।
দক্ষিণা রঞ্জন দাস : শিক্ষক
বর্তমান যুগের শিক্ষকদের চাকরিবিধি ও মাসিক বেতন প্রদান আদেশ (গচঙ) হবে, তা আমাদের সময়ের শিক্ষকদের কেউ কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর ভাতাপ্রাপ্তি তো আলাদিনের চেরাগের মতো। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সেক্রেটারি থাকতেন এলাকার প্রভাবশালী বা বিত্তশালী ব্যক্তিরা। শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য কোনো চাকরিবিধি ছিল না। যে কোনো অপরাধ সভাপতি ও সেক্রেটারির গোচরীভূত হলে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি খতম। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত গ্রামগঞ্জে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রাম বা শহরে অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। তখনকার দিনে অধিকাংশ শিক্ষক টিউশনি করতেন না। দু'একজন শিক্ষক ইংরেজি ও অঙ্ক পড়াতেন। ঢাকা শহরে নামিদামি বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন, যারা শিক্ষকতার আয় দিয়ে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন, নিজস্ব বাড়ি করেছেন। এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িরও মালিক হয়েছেন। কথাগুলো বললাম, বিগত কয়েক দিনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করে। শিক্ষক নামের কলঙ্ক পরিমল জয়ধর ওই প্রতিষ্ঠানের ৬০ বছরের গৌরবময় ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। 'রে পাপিষ্ঠ! শত ধিক্ তোরে, রে চামার!' কর্তৃপক্ষকে বলছি, শুধু মেধা যাচাইয়ে প্রথম হলেই মেয়েদের স্কুলে বা কলেজে শিক্ষক নিয়োগ করা যায় না। পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ করতে হলে অনেক কিছু ভাবনা-চিন্তা করতে হয়।
নির্যাতিত ছাত্রীটি ১৯ জুন বিষয়টি সহপাঠীকে এবং ২১ জুন শাখাপ্রধানকে জানায় সে। শাখাপ্রধান নিশ্চয়ই প্রশাসনিক কাজে অদক্ষ। তার উচিত ছিল, তাৎক্ষণিক বিষয়টি অধ্যক্ষকে অবগত করা এবং অধ্যক্ষ সভাপতিকে অবগত করানোর মাধ্যমে জরুরি সভা ডেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা। রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ, জ্ঞানী ও গুণী। ছাত্র সংগঠন করার সুবাদে বর্তমান এমপি রাশেদ খান মেনন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি ও জানি। তাদের মতো সজ্জন রাজনীতিবিদের সংখ্যা আমার মতে সারা বিশ্বে হাতেগোনা কয়েকজন। ওই প্রতিষ্ঠানটি মেয়েদের স্কুল ও কলেজ। তাই মাত্র দু'জন পুরুষ শিক্ষক রাখার অলিখিত বিধান রয়েছে। ব্যাপারটি কি অনৈতিক ও অমানবিক নয়? সব শিক্ষকই কি পরিমল জয়ধরের মতো? অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের মতো শিক্ষকের সংখ্যা কি আদৌ কম? পরিমল জয়ধরের ব্যাপারটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর আগে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের মতিউর রহমানের ব্যাপারটিকে ধামাচাপা না দিয়ে সুষ্ঠু বিচার করলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।
পরিমল জয়ধর আইনের হাতে আটক হয়েছেন। আইনানুযায়ী অবশ্যই তার বিচার হবে। পরিশেষে বলব, আসুন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে বর্তমান অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসককে সহযোগিতা করে দেশের এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিই।
দক্ষিণা রঞ্জন দাস : শিক্ষক
No comments