শিশুটির জ্বর এখন কত? by মাহবুব মোর্শেদ

অ্যানসেল অ্যাডাম নামের একজন ফটোগ্রাফার ও পরিবেশবাদী বলেছেন, 'ছবি শুধু চোখ বোলানোর জন্য, খুব কম ছবিই দেখা হয়।' কথাটা সত্যি। আমাদের ইন্দ্রিয় এখন অনেকটাই দৃশ্য ও শ্রুতিনির্ভর_ অডিওভিজ্যুয়াল। প্রতিদিন টিভি, সংবাদপত্র, ইন্টারনেটে অসংখ্য ছবিতে চোখ বোলাতে হয় আমাদের।


সংবাদপত্র পাঠ্য হলেও এখন এর অধিকাংশ সংবাদ এমনকি অভিমতগুলোও সচিত্র হয়ে উঠেছে। আর টেলিভিশন তো রীতিমতো অডিও ভিজ্যুয়ালের রাজা। ইন্টারনেটেও কখনও অডিও কখনও ভিজ্যুয়াল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দেখা ও শোনার বাইরে_ স্পর্শ, স্বাদ, গন্ধের কারবার ক্রমশ কমে আসছে। ফলে কান ও চোখই শরীরের বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের সংযোগ মাধ্যম_ মিডিয়া। অত্যধিক ব্যবহারের ফলে এ দুটি মিডিয়া ভোঁতা হয়ে গেছে কি-না এ সন্দেহ হয়। চোখে পড়ার মতো অনেক দৃশ্য যখন চোখে পড়তে চায় না, চমকে দেওয়ার মতো কোনো শব্দ যখন শুনেও শুনি না, তখন সন্দেহটা গাঢ় হয়। ফুটপাতে শুয়ে থাকা শিশুদের আমরা অনেক দেখি। বাস থেকে, পথ চলতে_ উদ্বাস্তু পরিবার চোখে পড়ে না এমন ঢাকায় ঘটে না। দেখি কিন্তু দেখি না। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি ছবি দেখে শুধু চোখ বুলিয়ে চলে যাওয়া হলো না। দৃষ্টিকে থামাতে হলো। রাজধানীর গাবতলী থেকে রাশেদ সুমন ছবিটি তুলেছেন। পত্রিকার প্রথম পাতায় বেশ বড় স্থান পেয়েছে। একটি শিশু রাস্তার পাশে শুয়ে আছে। শিশুটির খুব জ্বর। পাঁচ দিন ধরে। জ্বরে গা পুড়তে থাকা শিশুটি শুয়ে আছে একটা জীর্ণ বালিশে। গায়ের ওপর কয়েকটা নিমডাল। নিমপাতা ঢেকে রেখেছে তার দেহ। শিশুর মা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য বদল হয়নি। পানি বিক্রি করে যে সামান্য আয় হয় তা থেকে কোনো রকমে দিনের খাবার জোটে। চিকিৎসার খরচ হয় না। বাচ্চার জ্বর হলে তাই নিমপাতাই সম্বল। চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে নিমপাতার কাছে শুশ্রূষা আশা করেছেন নিরুপায় মা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই নিমপাতা কি পাঁচ দিন জ্বরে ভোগা শিশুটিকে শুশ্রূষা দিতে পারবে? ছবিটি সুন্দর। অনেক কথা বলে। কিন্তু ছবিটি দেখে আমরা কি বুঝতে পারব, শিশুটির জ্বর এখন কত? আমরা দেখি, আমরা পড়ি। আমরা শুনিও। একটি শিশু শুয়ে আছে ফুটপাতের নোংরা বিছানায়, এমন ঘটনা কি ঘটবে কখনও যে আমরা জানতে চাইব_ এই শিশুটির জ্বর কত? তার শরীরের তাপ অনুভব করার জন্য কখনও কি তার কপালে হাত রাখব?
 

No comments

Powered by Blogger.