বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ, আলোচনারও উদ্যোগ

পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’—যেকোনো একটি জবাব খোঁজার চেষ্টা শুরু করেছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা বলার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী পাল্টা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেছেন,


পদ্মা সেতুর কাজের জন্য বিশ্বব্যাংক নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সুপারিশ করেছিল।
সূত্র জানায়, গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। এর পর থেকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, যদিও গতকাল পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে একটি চিঠি দেবেন বলে জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী গতকাল বলেন, ‘আমরা বসে নেই। কথাবার্তা চলছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে করা চুক্তির মেয়াদ এখনো আছে।’
এর আগে পদ্মা সেতুর ঠিকাদার নির্বাচনে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থছাড় স্থগিত করে রেখেছে। আর দুর্নীতি প্রমাণ করতে না পারলে বিদেশিদের অর্থ নেওয়া হবে না মর্মে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে দাতাদের সঙ্গে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়।
সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব সেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের দিক চেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরকার বসে থাকতে পারে না। গত দুই বছরের অহেতুক বিলম্বে ১০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা জাতীয় আয় বাড়ার সুযোগ হারিয়েছি, এই সেতু হলে যে জাতীয় অগ্রগতি হতো, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ যেকোনো একটি বললে, তা উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে সরকার চায়, দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক তথ্য-প্রমাণ দিক। তাহলে সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করবে। আর বিশ্বব্যাংক যদি এ ধরনের তথ্য-প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তহবিল ছাড় করে দ্রুত পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে পারে।
সূত্র জানায়, আলোচনা শুরু করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে গতকাল অর্থমন্ত্রী যে পাল্টা অভিযোগ করেছেন, তাতে আবারও সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে। এ নিয়ে অবশ্য বিশ্বব্যাংকের কেউ গতকাল কথা বলতে চাননি। অর্থমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করতে শুরুতে বিশ্বব্যাংক আগ্রহী ছিল না। পরে যখন রাজি হয়েছে, তখন সে অনুযায়ী প্রক্রিয়াও এগিয়েছে। দরপত্র আহ্বান করলে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এতে সাড়া দেয়। প্রাক-যোগ্যতাও সম্পন্ন হয়। দেখা যায়, এর মধ্যে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আর, এটিকেই কাজ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে বিশ্বব্যাংক।’
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে দেশের নারী উদ্যোক্তাদের ওপর লেখা একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বইটি লিখেছেন অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ আবুল হোসেন।
বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশে মুহিত বলেন, খুব দ্রুতই তাঁদের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি পাস হয় । হঠাৎ একদিন তারা বলল, এই প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে। অথচ কথিত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানটিকে তারাই নির্বাচন করেছিল।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বব্যাংককেই দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। নইলে তহবিল ছাড় করে কাজ শুরু করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া, চীন বা অন্যান্য বিকল্প খুঁজতে সরকার বাধ্য হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রস্তাবটি সেতু বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।

No comments

Powered by Blogger.