‘আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা কঠিন’

এবার একুশে পদক পেলেন মামুনুর রশীদ। তাঁর কাজ ও ভাবনা নিয়ে মামুনুর রশীদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন আরেক গুণী নাট্যজন আব্দুল্লাহেল মাহমুদ। তাঁদের কথোপকথন নিয়েআনন্দের এই আয়োজন চার বছর পর পর ফিরে আসে ২৯ ফেব্রুয়ারি—আপনার জন্মদিন। বিষয়টা কীভাবে দেখেন?


চার বছর পর পর হওয়াতে সুবিধাই হয়েছে। জন্মদিন সেভাবে অনুপ্রাণিত করে না। আসলে এটা তো একটা জৈবিক ব্যাপার। জীবনটাকে অর্থবহ হতে হবে। জীবনে আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা খুবই কঠিন কাজ। দায়বদ্ধতা থেকে সামান্য বিচ্যুতি সারা জীবনের অর্জনকে শেষ করে দিতে পারে। ভূপেন হাজারিকার কী গৌরবোজ্জ্বল জীবন। অথচ শেষ জীবনে বিজেপিতে যোগদান তাঁর সারা জীবনের অবদানকে ম্লান করে দিল।
আবার যদি জন্ম নেন, তাহলে কেমন জীবন চাইবেন?
আমি এ জীবনটাই চাইব। সংগ্রামের মধ্যে বেঁচে থাকার যে আনন্দ, তা আমাকে উজ্জীবিত করে, অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে নাট্যজীবনের সংগ্রাম, কখনো সাফল্য, কখনো ব্যর্থতা—এগুলো আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেয়।
জীবনে ব্যর্থতার বা অপ্রাপ্তির কথা কিছু বলবেন কি?
ব্যর্থতার কথা যদি বলতে হয়, তাহলে আমার সীমাবদ্ধতার কথাই বলতে হয়। জীবনে এত বড় বড় নাট্যকারের নাটক করেছি কিন্তু তাঁদের ভাবনার ধারেকাছেও যেতে পারিনি। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে একজন ক্ষুদ্র অভিনেতাই মনে হয়। আবার নির্দেশক হিসেবে যখন দেশ-বিদেশের নির্দেশকদের কাজ দেখি, তখন মনে হয় এ রকম ভাবনা কেন আমার মাথায় এল না।
ব্যর্থতার আরেকটি দিক হলো বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে, রাজনীতিতে নাটকের যথার্থ মূল্যায়ন আজও হয়নি। আমরা রাজপথেও নেমেছি কিন্তু খুব একটা কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। এখন থেকে বহু বছর আগে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন—নাটকে লোকশিক্ষা হয়, কিন্তু আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রের কাউকে তা বোঝাতে পারলাম না।
আগামী দিনগুলো নিয়ে কী ভাবছেন?
ভাবছি তো অনেক কিছু, অনেক বড় বড় পরিকল্পনা। টেলিভিশনে ব্যস্ততা কমবে, মঞ্চে নতুন কিছু করতে চাই। চলচ্চিত্র নিয়েও ভাবছি। তিনটা ছবি বানাতে চাই, বিষয়গুলো হলো—ভাষা আন্দোলন, হাওর জীবন আর শিক্ষাব্যবস্থা।
নাটক নিয়ে ভাবনাটা সুদূরপ্রসারী। সেই ১৯৯২ সাল থেকে চেষ্টা করছি পেশাদারি থিয়েটার গড়ে তুলতে। শিল্পকলা একাডেমী একটি জাতীয় রেপার্টরি করতে যাচ্ছে। আমাকে তারা প্রথম আর্টিস্টিক ডিরেক্টর হিসেবে নির্বাচন করেছে। আমি এ ধারাটা অব্যাহত রাখার জন্য কাজ করব। পরে যাঁরা আসবেন তাঁদের জন্য আইনগত ও সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করব। এ ছাড়া আরণ্যকের যে কর্মী-বন্ধুরা বছরের পর বছর স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদেরও একটা ন্যূনতম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।

No comments

Powered by Blogger.