খেজুরে ফরমালিন-জেনেশুনে বিষপান
মূলত মরদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত ফরমালিন মাছসহ পচনশীল কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যে প্রয়োগের খবর আমরা জানি। প্রাণঘাতী এ রাসায়নিকটি যে খেজুরেও মেশানো হবে, তা বোধহয় কেউ ধারণা করেনি। সেটাই ঘটেছে। বিএসটিআইএর ভ্রাম্যমাণ আদালত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে সেখানকার সব ধরনের
খেজুরেই বিষাক্ত ফরমালিনের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের এ আশঙ্কাও যথার্থ যে বাজারে সব ধরনের খেজুরই সম্ভবত ফরমালিনযুক্ত। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশি হজযাত্রীরা খোদ সৌদি আরব থেকে 'ইনটেক' অবস্থায় যে খেজুর নিয়ে আসছেন, বিএসটিআইয়ে ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় সেগুলোতেও ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাহলে কি উৎসেই এ বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে? হতে পারে বাংলাদেশের বাজারে পেঁৗছার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ ও প্রক্রিয়া পাড়ি দেওয়া এ পণ্য অপচনশীল রাখতেই মধ্যপ্রাচ্যের রফতানিকারকরা সহজ অথচ প্রাণঘাতী পদ্ধিতিটি বেছে নেয়। এটা ঠিক, বাজারে বিক্রীত প্রজাতিটি বাংলাদেশে না জন্মালেও খেজুর এখানে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিশেষ করে ইফতারি আয়োজনের অনিবার্য অনুষঙ্গ। এর ধর্মীয় তাৎপর্যও রয়েছে। তাই বলে জেনেশুনে বিষপান করব কেন? দেরিতে হলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত যে খেজুর পরীক্ষা করে দেখেছে এজন্য সাধুবাদ জানাই। এর সমাধান আবার সহজ নয়। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে যেভাবে সব খেজুর জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেভাবে তো নয়ই। ফরমালিন যদি খেজুরের উৎসে মেশানো হয়ে থাকে, প্রান্তিক বিক্রেতাকে দণ্ড দিয়ে কিংবা জরিমানা করে সুফল মিলবে না। আমরা চাইব, কোন কোন পর্যায়ে খেজুরে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে, তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হোক। জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফলটিকে বিষাক্ত রাসায়নিক থেকে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা। ফরমালিন প্রয়োগ ছাড়াও খেজুর দীর্ঘদিন সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক নানা পদ্ধতি রয়েছে। ব্যয়বহুল হলেও স্বাস্থ্য ও প্রাণ রক্ষার স্বার্থে সেগুলো অনুসরণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। দেশীয় প্রজাতির খেজুরের জাত উন্নয়নের কথাও কি ভাবা যায় না? কৃষি খাতে বিজ্ঞান নানাভাবে অবদান রেখে চলেছে।
No comments