খোলা হাওয়া-ছোট আগুন না নেভালে বড় আগুন লাগবে by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
শবে বরাতের মধ্যরাতে আমিনবাজারে ছয় যুবককে পিটিয়ে মারল বড়দেশী গ্রামবাসী। ওই ছয় যুবক, কোনো কোনো পত্রিকার ভাষ্যমতে, নিরিবিলিতে মাদক সেবন করছিল; অথবা তাদের পরিবারের জবানিতে, আড্ডা দিচ্ছিল। শবে বরাতের ওই রাতে, আমি নিশ্চিত, বড়দেশীর অনেক মানুষ নামাজ পড়েছেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনজনের মঙ্গলের জন্য
প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু এর পরপরই এঁদের কেউ কেউ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ওই ছয় তরুণের ওপর। তরুণেরা নিশ্চয় বাঁচার জন্য তাঁদের হাতে-পায়ে ধরেছে, আকুল আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু তাঁদের সামান্যটুকু দয়াও ওই তরুণেরা আদায় করতে পারেনি। কাগজে আরও লিখেছে, ওই হত্যার পেছনে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা জড়িত ছিল। অর্থাৎ মাদক ব্যবসায়ী ব্যবহার করেছে এলাকার লোকজনকে।
ব্যাপারটা যেকোনো অনুভূতিশীল মানুষকে ব্যথিত, মর্মাহত করেছে। আমাকে ভাবিয়েছেও। এ দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে? ধর্ম-অধর্মের প্রভেদ তাহলে মানুষ বুঝছে না, পৈশাচিকতা আর যথার্থ ক্রোধের মধ্যে কোনো পার্থক্য টানতে পারছে না। এবং এ ব্যাপারটা নিয়ে কাগজে-টিভিতেই যা একটু শোরগোল হলো; কোনো রাজনৈতিক দল, ধর্মভিত্তিক ছোট-বড় দল এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করল না। তাদের চোখে এটি তেমন কোনো বড় বিষয় নয়। এ দেশে মাদক ব্যবসায়ীরা কোনো ব্যাপারে জড়িত হলে তারা যা চায়, তা-ই হয়। বড়দেশীর মাদক ব্যবসায়ীরা নিশ্চয় চাইছে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকুক। কাজেই পুলিশ শেষ পর্যন্ত নিষ্ক্রিয়ই থাকবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রুটিনমাফিক কিছু কথা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক...’ এ রকম অভয় বাণী দিয়েছেন। কিন্তু বড়দেশীতে শেষ হাসিটা হাসবে মাদক ব্যবসায়ীরাই।
বড়দেশী গ্রামে ডাকাতি হয়েছে এবং মানুষ ডাকাত-আতঙ্কে আছে, এ রকম সংবাদ কাগজে-টিভিতে এসেছে। ডাকাত ধরতে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল, এ রকম অভিযোগও উঠেছে। এ জন্য রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থাও করেছিল গ্রামবাসী। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। ডাকাতদের প্রতি একটা যথার্থ ক্রোধ থাকতেই পারে ভুক্তভোগীদের। কিন্তু ছয় তরুণকে যখন বিনা বাধায় পাকড়াও করা গেল, তখন তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াটাই কি উচিত ছিল না? নিদেনপক্ষে, তাদের গুরুজনদের ফোনে ডেকে এনে তাদের থেকে একটি মুচলেকাও আদায় করা যেত। আমি নিশ্চিত, গুরুজনদের ডাকা হলে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হতো। হয়তো গ্রামবাসীকে অযথা হয়রানিতে ফেলার জন্য তরুণেরা ক্ষমা চাইত। হয়তো তাদের হাতে হালুয়া-রুটি তুলে দিতেন গ্রামের কোনো গৃহস্থ, শবে বরাতে যা হওয়া উচিত। গ্রামবাসীর একটা যথার্থ ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ হতে পারত থানায় গিয়ে ডাকাত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো, মানববন্ধন করা, স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আদায় করা। কিন্তু সব আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে তারা যে পাশবিকতার চর্চা করলেন, তা তাঁদের নায্য দাবি আদায়কেও এখন অনিশ্চিত করে তুলল। তার থেকেও বড় কথা, এখন তারা জঙ্গলের আইনের কালো গহ্বরে ঢুকে শিকারি থেকে কখন না শিকারে পরিণত হয়ে যান, এই শঙ্কাতেও তাঁদের দিন কাটাতে হবে।
শুধু বড়দেশী নয়, বাংলাদেশের সবখানেই এখন বিচারের পরিবর্তে চলছে বন্যবিচার। যেমন বিবেকের জায়গা দখল করে নিয়েছে এক আশ্চর্য নিষ্পৃহতা। আমিনবাজারের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক তরুণ জানাল, এক বৃদ্ধের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার জন্য সে আবেদন জানাচ্ছিল। তিনি পা সরিয়ে অন্যদিকে হাঁটা দিয়েছিলেন।
আমার ছেলেবেলায় শবে বরাতে পাড়ার মসজিদের পাশের বাড়িতে এক চুরির ঘটনা ঘটেছিল। চোরটা হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। সে কান্নাকাটি শুরু করলে মসজিদের ইমাম সাহেব তাকে তওবা পড়িয়েছিলেন। মুসল্লিদের দু-একজন তাকে দু-আনা চার-আনা দিয়েছিলেন। আর দিয়েছিলেন হালুয়া-রুটি। চোরটা চোখে পানি নিয়ে ফিরে গিয়েছিল।
সেই ঘটনাটি মনে পড়েছিল আমিনবাজারের নৃশংসতার বিবরণ পড়ে। তাতে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সেই মানুষগুলো আর নেই। থাকলেও তাঁরা বিবেকহীনদের ভিড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
২.
বড়দেশীর লোকজন ছয় তরুণকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়নি, কিন্তু কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া গ্রামের মুরব্বিরা ১৬ বছরের শামসুদ্দিন মিলনকে পুলিশের জিম্মায় দিয়েছিলেন। ২৭ জুলাই সকালে মিলন বেরিয়েছিল জমি নিবন্ধনের জন্য, যাচ্ছিল বসুরহাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। যাওয়ার পথে চর কাঁকড়া গ্রামে এক খালাতো বোনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এক পুকুরের ঘাটে বসে অপেক্ষা করছিল। স্থানীয় এক মুরব্বি তাকে বসে থাকার কারণ জানতে চান। বেচারা মিলন। অল্প বয়স, হয়তো ভয় পেয়েছিল, হয়তো কথাবার্তা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। মিলনের কপালে জোটে প্রহার। তার সঙ্গের ১৪ হাজার টাকা যায়, মোবাইল ফোনটাও যায়। শেষবার ওই ফোন থেকে সে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিল, বলেছিল, লোকজন তাকে ঘিরে রেখেছে। তবে চর কাঁকড়ার অবস্থা বড়দেশীর মতো হয়ে দাঁড়ায়নি, হয়তো সময়টা সকাল ছিল বলে। অথবা মাদক ব্যবসায়ী কেউ জড়িত ছিল না বলে। মুরব্বিরা পুলিশ ডেকে মিলনকে তাদের কাছে তুলে দিলেন।
এ পর্যন্ত যা হলো, তার অনেকটা নিন্দনীয় হলেও ছেলেটাকে প্রাণে তো মারা হয়নি। দেশটি সভ্য হলে মিলন ঘণ্টা খানেক থানায় থেকে, হয়তো তার মা উপস্থিত হলে, বাড়ি ফিরে যেত। কিন্তু দেশটা সভ্য নয়। সে জন্য যা ঘটল তা সভ্য দেশের কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। ঘটনাটি শোনার আগে আমরাও এ রকম কিছু কল্পনা করতে পারিনি। পুলিশ মিলনকে টেকেরবাজারে নিয়ে জনতার হাতে ছেড়ে দিল। জনতার অনেকের নিশ্চয় মিলনের বয়সী ছেলে অথবা ছোট ভাই আছে। কিন্তু তারা হাতের সুখ মিটিয়ে ছেলেটিকে পেটাল। এক ফাঁকে মিলন একটা দোকানে আশ্রয় নিতে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে নির্দয়ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। এক যুবক এরপর ইট দিয়ে তার মাথাটা থেঁতলে দিল। কে একজন মোবাইল ফোনসেটের ক্যামেরায় পুরো ঘটনার ভিডিও করেছিল। তাতে দেখা যায়, দাঁড়ানো কেউ কেউ হাসছে। যেমন—কিছুদিন আগে এক গ্রামের গৃহবধূকে মাটিতে ফেলে পেটানোর একটা ছবি বেরিয়ে ছিল কাগজে। তাতে দেখা গেল, গোল হয়ে চেয়ারে বসে লোকজন বিমলানন্দ নিয়ে ঘটনাটা দেখছে। একজন দাঁত কেলিয়ে হাসছে। অর্থাৎ মিলনের মৃত্যু এবং ওই গৃহবধূকে প্রহার খুব মজার দৃশ্য। দাঁত কেলিয়ে হেসে যা উপভোগ করা যায়।
টেকেরবাজারে মিলনকে পিকআপ থেকে নামিয়ে দিয়ে এর পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশের তিন লোকও পিটিয়ে মারার দৃশ্য দেখল। তারাও নিশ্চয় আনন্দ পেল। তারা কষ্ট পেলে নিশ্চয় প্রতিকার করত। আর ১৬ বছরের একটি কিশোরের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তারা যখন অপেক্ষা করেছে, নিশ্চয় তাদেরও চিত্তসুখ হয়েছে।
এই মানুষগুলোর নিশ্চয় ভাইবোন নেই, তারা নিশ্চয় বিয়েশাদি করেনি। নিশ্চয় তাদের সন্তান নেই। তারা নিশ্চয় নিঃসঙ্গ, একা; এই সমাজের কেউ নয়। তা না হলে চোখের সামনে একটি কিশোরের এই মর্মান্তিক মৃত্যু তারা সহ্য করতে পারত না—অথবা আরও বড় কথা যা, এই মৃত্যুর আয়োজন তারা কিছুতেই করতে পারত না।
পুলিশ কেন এ কাজ করবে—এ রকম প্রশ্ন করছেন দেশের স্তম্ভিত মানুষজন। আমি নিশ্চিত, মনোবিজ্ঞানীরাও এর কোনো উত্তর পাবেন না। পুলিশ অবশ্য বলছে, মিলন ডাকাত ছিল। এর আগে খোদ ঢাকা শহরে কাদের নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে পেটাল এক থানার পুলিশ, এমনকি চাপাতি দিয়ে একটা পা তার জখম করে ফেলল। তবে কাদেরের ভাগ্য ভালো, তাকে মিলনের মতো লাশ হতে হয়নি। কিন্তু কাদেরকেও ডাকাত বনে যেতে হলো। তিনটি মামলাও হলো তার নামে এবং তাকে সবচেয়ে অদ্ভুত গণপিটুনির শিকারও বানাল পুলিশ—যে গণপিটুনিতে গণ নেই, পিটুনিও নেই। কাদেরের আরও ভাগ্য, সে মিডিয়ার নজরে এসে গিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার পাশে ছিল। মিলনের সেই ভাগ্য ছিল না। কোম্পানীগঞ্জ ঢাকা নয়, একা একটি ছেলের পক্ষে মারমুখী জনতা ও শক্তিশালী পুলিশকে মোকাবিলা করাটা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
মিলনের বিষয়টি মিডিয়াতে চলে আসায় হইচই হয়েছে। কর্তৃপক্ষের যাকে বলে, টনক নড়েছে। কাগজে লিখেছে, তিন পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা কর্তব্যে অবহেলা করেছে। আমরা সবিনয়ে বলতে চাই, এটি কর্তব্যে অবহেলা নয়, এটি ঠান্ডা মাথায় খুনের আয়োজন করা। তদন্ত যদি এই খুনের ব্যাপারটি সামনে রেখে এগোয়, ছেলেটির মা হয়তো ন্যায়বিচার পাবেন। তবে আমরা জানি, এসব ক্ষেত্রে ক্বচিৎ-কদাচিৎ দোষীর শাস্তি হয়। আমাদের মিডিয়ার মনোযোগ প্রায় একটি বাচ্চা ছেলের মতো। একটা বিষয় নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক হইচই করে তাকে বাদ দিয়ে নতুন বিষয় নিয়ে পড়ে। কাগজে দেখেছি, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি পুলিশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দিতে টেকেরবাজারের ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। ফলে তদন্ত কমিটির সামনে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
৩.
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশের মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন, তদন্ত হবে; এবং গোটা কয় ব্যক্তির জন্য পুরো পুলিশ বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না। তাঁর সঙ্গে আমরাও একমত। বাংলাদেশের পুলিশ প্রতিবেশী যেকোনো দেশের পুলিশের চেয়ে সদাশয়। পুলিশ বাহিনীতে অনেক ভালো এবং দক্ষ কর্মকর্তা আছেন, একেবারে কনস্টেবল পর্যায় পর্যন্ত দায়িত্বশীল অনেক সদস্য আছেন। পুলিশ স্টাফ কলেজে কয়েকবার ক্লাস নিতে গিয়ে আমি অনেক তরুণ কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি; তাদের কর্মদক্ষতা এবং সৌজন্যবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে। বিদেশে বিভিন্ন শান্তি মিশনে বাংলাদেশের পুলিশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু কাদেরের নির্যাতনকারী এবং মিলনকে গণপিটুনির শিকার বানানো কোম্পানীগঞ্জের পুলিশ সদস্যদের মতো অল্প কিছু পুলিশই পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। এবং তাদের সংখ্যা যে অল্প, তা-ও নয়। তারা আছে এবং ভয়ডরহীনভাবে তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছে। সে জন্য, ভক্ষকের ভূমিকায় নামা এসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে খোদ পুলিশকেই। শুধু একটি ঘটনা ঘটার পরেই দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ করা’ অথবা ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করার মতো ব্যবস্থা নিলে চলবে না। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে এ রকম ঘটনা যারা ঘটিয়ে পার পেয়ে যায় বা যারা ঘটাতে যাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি ব্যবস্থা নিলে এর একটা প্রভাব বাহিনীতে পড়বে। আর যদি শুধু বক্তব্য-মন্তব্য, হচ্ছে-হবে করেই কর্তৃপক্ষ ক্ষান্ত দেয়, দোষীর শাস্তি হয় না, তাহলে কোম্পানীগঞ্জের মতো ঘটনা শুধু আরও ঘটবে তা নয়, অনেক বেশি মাত্রায় ঘটবে।
অবশ্য আইনের শাসন এসব অপরাধীর ওপর প্রয়োগ করা, এদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে-রাজনৈতিক সরকারকেই—প্রধান দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু কাগজে যখন দেখি, নোয়াখালীর পুলিশ সুপারের সামনে এক যুবক মিলন হত্যার ব্যাপারে ‘স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না করে গাড়িতে তাকে ও যুবলীগকর্মী রাসেলকে নিয়ে ঘোরাফেরা করছে’ এবং ‘অভিযোগ উঠেছে সরকারি দলের লোকজন এবং পুলিশ মিলে হত্যাকারীদের আড়াল করতে চাইছে’ (সমকাল ৮.৮.১১)। তখন এ বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ জাগে। কিন্তু সরকারের লোকজন নিজেরাই যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে কোম্পানীগঞ্জের পুনরাবৃত্তি একসময় একটি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াবে।
একটি চীনা উক্তি দিয়ে শেষ করি। ‘একটি বিশাল কাঠের বাড়ির ছোট একটি কোনাতেও যদি একটুখানি আগুন লাগে, তা নেভাতে গাফিলতির অর্থ হচ্ছে একসময় বড় সেই বাড়িটির হাওয়া হয়ে যাওয়া।’
মুখের ওপর অপ্রিয় কথা বললে মানুষ রুষ্ট হয়। চীনারা একসময় তাই অনেক কথা এ রকম রূপকের মাধ্যমে সারত। রূপকের আশ্রয় নেওয়াটা সে জন্য মন্দ নয়। কিন্তু কেউ কি সেসব শোনে? কখনো?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক। অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্যাপারটা যেকোনো অনুভূতিশীল মানুষকে ব্যথিত, মর্মাহত করেছে। আমাকে ভাবিয়েছেও। এ দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে? ধর্ম-অধর্মের প্রভেদ তাহলে মানুষ বুঝছে না, পৈশাচিকতা আর যথার্থ ক্রোধের মধ্যে কোনো পার্থক্য টানতে পারছে না। এবং এ ব্যাপারটা নিয়ে কাগজে-টিভিতেই যা একটু শোরগোল হলো; কোনো রাজনৈতিক দল, ধর্মভিত্তিক ছোট-বড় দল এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করল না। তাদের চোখে এটি তেমন কোনো বড় বিষয় নয়। এ দেশে মাদক ব্যবসায়ীরা কোনো ব্যাপারে জড়িত হলে তারা যা চায়, তা-ই হয়। বড়দেশীর মাদক ব্যবসায়ীরা নিশ্চয় চাইছে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকুক। কাজেই পুলিশ শেষ পর্যন্ত নিষ্ক্রিয়ই থাকবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রুটিনমাফিক কিছু কথা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক...’ এ রকম অভয় বাণী দিয়েছেন। কিন্তু বড়দেশীতে শেষ হাসিটা হাসবে মাদক ব্যবসায়ীরাই।
বড়দেশী গ্রামে ডাকাতি হয়েছে এবং মানুষ ডাকাত-আতঙ্কে আছে, এ রকম সংবাদ কাগজে-টিভিতে এসেছে। ডাকাত ধরতে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল, এ রকম অভিযোগও উঠেছে। এ জন্য রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থাও করেছিল গ্রামবাসী। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। ডাকাতদের প্রতি একটা যথার্থ ক্রোধ থাকতেই পারে ভুক্তভোগীদের। কিন্তু ছয় তরুণকে যখন বিনা বাধায় পাকড়াও করা গেল, তখন তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াটাই কি উচিত ছিল না? নিদেনপক্ষে, তাদের গুরুজনদের ফোনে ডেকে এনে তাদের থেকে একটি মুচলেকাও আদায় করা যেত। আমি নিশ্চিত, গুরুজনদের ডাকা হলে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হতো। হয়তো গ্রামবাসীকে অযথা হয়রানিতে ফেলার জন্য তরুণেরা ক্ষমা চাইত। হয়তো তাদের হাতে হালুয়া-রুটি তুলে দিতেন গ্রামের কোনো গৃহস্থ, শবে বরাতে যা হওয়া উচিত। গ্রামবাসীর একটা যথার্থ ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ হতে পারত থানায় গিয়ে ডাকাত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো, মানববন্ধন করা, স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আদায় করা। কিন্তু সব আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে তারা যে পাশবিকতার চর্চা করলেন, তা তাঁদের নায্য দাবি আদায়কেও এখন অনিশ্চিত করে তুলল। তার থেকেও বড় কথা, এখন তারা জঙ্গলের আইনের কালো গহ্বরে ঢুকে শিকারি থেকে কখন না শিকারে পরিণত হয়ে যান, এই শঙ্কাতেও তাঁদের দিন কাটাতে হবে।
শুধু বড়দেশী নয়, বাংলাদেশের সবখানেই এখন বিচারের পরিবর্তে চলছে বন্যবিচার। যেমন বিবেকের জায়গা দখল করে নিয়েছে এক আশ্চর্য নিষ্পৃহতা। আমিনবাজারের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক তরুণ জানাল, এক বৃদ্ধের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার জন্য সে আবেদন জানাচ্ছিল। তিনি পা সরিয়ে অন্যদিকে হাঁটা দিয়েছিলেন।
আমার ছেলেবেলায় শবে বরাতে পাড়ার মসজিদের পাশের বাড়িতে এক চুরির ঘটনা ঘটেছিল। চোরটা হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। সে কান্নাকাটি শুরু করলে মসজিদের ইমাম সাহেব তাকে তওবা পড়িয়েছিলেন। মুসল্লিদের দু-একজন তাকে দু-আনা চার-আনা দিয়েছিলেন। আর দিয়েছিলেন হালুয়া-রুটি। চোরটা চোখে পানি নিয়ে ফিরে গিয়েছিল।
সেই ঘটনাটি মনে পড়েছিল আমিনবাজারের নৃশংসতার বিবরণ পড়ে। তাতে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সেই মানুষগুলো আর নেই। থাকলেও তাঁরা বিবেকহীনদের ভিড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
২.
বড়দেশীর লোকজন ছয় তরুণকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়নি, কিন্তু কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া গ্রামের মুরব্বিরা ১৬ বছরের শামসুদ্দিন মিলনকে পুলিশের জিম্মায় দিয়েছিলেন। ২৭ জুলাই সকালে মিলন বেরিয়েছিল জমি নিবন্ধনের জন্য, যাচ্ছিল বসুরহাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। যাওয়ার পথে চর কাঁকড়া গ্রামে এক খালাতো বোনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এক পুকুরের ঘাটে বসে অপেক্ষা করছিল। স্থানীয় এক মুরব্বি তাকে বসে থাকার কারণ জানতে চান। বেচারা মিলন। অল্প বয়স, হয়তো ভয় পেয়েছিল, হয়তো কথাবার্তা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। মিলনের কপালে জোটে প্রহার। তার সঙ্গের ১৪ হাজার টাকা যায়, মোবাইল ফোনটাও যায়। শেষবার ওই ফোন থেকে সে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিল, বলেছিল, লোকজন তাকে ঘিরে রেখেছে। তবে চর কাঁকড়ার অবস্থা বড়দেশীর মতো হয়ে দাঁড়ায়নি, হয়তো সময়টা সকাল ছিল বলে। অথবা মাদক ব্যবসায়ী কেউ জড়িত ছিল না বলে। মুরব্বিরা পুলিশ ডেকে মিলনকে তাদের কাছে তুলে দিলেন।
এ পর্যন্ত যা হলো, তার অনেকটা নিন্দনীয় হলেও ছেলেটাকে প্রাণে তো মারা হয়নি। দেশটি সভ্য হলে মিলন ঘণ্টা খানেক থানায় থেকে, হয়তো তার মা উপস্থিত হলে, বাড়ি ফিরে যেত। কিন্তু দেশটা সভ্য নয়। সে জন্য যা ঘটল তা সভ্য দেশের কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। ঘটনাটি শোনার আগে আমরাও এ রকম কিছু কল্পনা করতে পারিনি। পুলিশ মিলনকে টেকেরবাজারে নিয়ে জনতার হাতে ছেড়ে দিল। জনতার অনেকের নিশ্চয় মিলনের বয়সী ছেলে অথবা ছোট ভাই আছে। কিন্তু তারা হাতের সুখ মিটিয়ে ছেলেটিকে পেটাল। এক ফাঁকে মিলন একটা দোকানে আশ্রয় নিতে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে নির্দয়ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। এক যুবক এরপর ইট দিয়ে তার মাথাটা থেঁতলে দিল। কে একজন মোবাইল ফোনসেটের ক্যামেরায় পুরো ঘটনার ভিডিও করেছিল। তাতে দেখা যায়, দাঁড়ানো কেউ কেউ হাসছে। যেমন—কিছুদিন আগে এক গ্রামের গৃহবধূকে মাটিতে ফেলে পেটানোর একটা ছবি বেরিয়ে ছিল কাগজে। তাতে দেখা গেল, গোল হয়ে চেয়ারে বসে লোকজন বিমলানন্দ নিয়ে ঘটনাটা দেখছে। একজন দাঁত কেলিয়ে হাসছে। অর্থাৎ মিলনের মৃত্যু এবং ওই গৃহবধূকে প্রহার খুব মজার দৃশ্য। দাঁত কেলিয়ে হেসে যা উপভোগ করা যায়।
টেকেরবাজারে মিলনকে পিকআপ থেকে নামিয়ে দিয়ে এর পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশের তিন লোকও পিটিয়ে মারার দৃশ্য দেখল। তারাও নিশ্চয় আনন্দ পেল। তারা কষ্ট পেলে নিশ্চয় প্রতিকার করত। আর ১৬ বছরের একটি কিশোরের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তারা যখন অপেক্ষা করেছে, নিশ্চয় তাদেরও চিত্তসুখ হয়েছে।
এই মানুষগুলোর নিশ্চয় ভাইবোন নেই, তারা নিশ্চয় বিয়েশাদি করেনি। নিশ্চয় তাদের সন্তান নেই। তারা নিশ্চয় নিঃসঙ্গ, একা; এই সমাজের কেউ নয়। তা না হলে চোখের সামনে একটি কিশোরের এই মর্মান্তিক মৃত্যু তারা সহ্য করতে পারত না—অথবা আরও বড় কথা যা, এই মৃত্যুর আয়োজন তারা কিছুতেই করতে পারত না।
পুলিশ কেন এ কাজ করবে—এ রকম প্রশ্ন করছেন দেশের স্তম্ভিত মানুষজন। আমি নিশ্চিত, মনোবিজ্ঞানীরাও এর কোনো উত্তর পাবেন না। পুলিশ অবশ্য বলছে, মিলন ডাকাত ছিল। এর আগে খোদ ঢাকা শহরে কাদের নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে পেটাল এক থানার পুলিশ, এমনকি চাপাতি দিয়ে একটা পা তার জখম করে ফেলল। তবে কাদেরের ভাগ্য ভালো, তাকে মিলনের মতো লাশ হতে হয়নি। কিন্তু কাদেরকেও ডাকাত বনে যেতে হলো। তিনটি মামলাও হলো তার নামে এবং তাকে সবচেয়ে অদ্ভুত গণপিটুনির শিকারও বানাল পুলিশ—যে গণপিটুনিতে গণ নেই, পিটুনিও নেই। কাদেরের আরও ভাগ্য, সে মিডিয়ার নজরে এসে গিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার পাশে ছিল। মিলনের সেই ভাগ্য ছিল না। কোম্পানীগঞ্জ ঢাকা নয়, একা একটি ছেলের পক্ষে মারমুখী জনতা ও শক্তিশালী পুলিশকে মোকাবিলা করাটা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
মিলনের বিষয়টি মিডিয়াতে চলে আসায় হইচই হয়েছে। কর্তৃপক্ষের যাকে বলে, টনক নড়েছে। কাগজে লিখেছে, তিন পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা কর্তব্যে অবহেলা করেছে। আমরা সবিনয়ে বলতে চাই, এটি কর্তব্যে অবহেলা নয়, এটি ঠান্ডা মাথায় খুনের আয়োজন করা। তদন্ত যদি এই খুনের ব্যাপারটি সামনে রেখে এগোয়, ছেলেটির মা হয়তো ন্যায়বিচার পাবেন। তবে আমরা জানি, এসব ক্ষেত্রে ক্বচিৎ-কদাচিৎ দোষীর শাস্তি হয়। আমাদের মিডিয়ার মনোযোগ প্রায় একটি বাচ্চা ছেলের মতো। একটা বিষয় নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক হইচই করে তাকে বাদ দিয়ে নতুন বিষয় নিয়ে পড়ে। কাগজে দেখেছি, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি পুলিশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দিতে টেকেরবাজারের ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। ফলে তদন্ত কমিটির সামনে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
৩.
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশের মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন, তদন্ত হবে; এবং গোটা কয় ব্যক্তির জন্য পুরো পুলিশ বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না। তাঁর সঙ্গে আমরাও একমত। বাংলাদেশের পুলিশ প্রতিবেশী যেকোনো দেশের পুলিশের চেয়ে সদাশয়। পুলিশ বাহিনীতে অনেক ভালো এবং দক্ষ কর্মকর্তা আছেন, একেবারে কনস্টেবল পর্যায় পর্যন্ত দায়িত্বশীল অনেক সদস্য আছেন। পুলিশ স্টাফ কলেজে কয়েকবার ক্লাস নিতে গিয়ে আমি অনেক তরুণ কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি; তাদের কর্মদক্ষতা এবং সৌজন্যবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে। বিদেশে বিভিন্ন শান্তি মিশনে বাংলাদেশের পুলিশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু কাদেরের নির্যাতনকারী এবং মিলনকে গণপিটুনির শিকার বানানো কোম্পানীগঞ্জের পুলিশ সদস্যদের মতো অল্প কিছু পুলিশই পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। এবং তাদের সংখ্যা যে অল্প, তা-ও নয়। তারা আছে এবং ভয়ডরহীনভাবে তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছে। সে জন্য, ভক্ষকের ভূমিকায় নামা এসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে খোদ পুলিশকেই। শুধু একটি ঘটনা ঘটার পরেই দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ করা’ অথবা ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করার মতো ব্যবস্থা নিলে চলবে না। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে এ রকম ঘটনা যারা ঘটিয়ে পার পেয়ে যায় বা যারা ঘটাতে যাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি ব্যবস্থা নিলে এর একটা প্রভাব বাহিনীতে পড়বে। আর যদি শুধু বক্তব্য-মন্তব্য, হচ্ছে-হবে করেই কর্তৃপক্ষ ক্ষান্ত দেয়, দোষীর শাস্তি হয় না, তাহলে কোম্পানীগঞ্জের মতো ঘটনা শুধু আরও ঘটবে তা নয়, অনেক বেশি মাত্রায় ঘটবে।
অবশ্য আইনের শাসন এসব অপরাধীর ওপর প্রয়োগ করা, এদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে-রাজনৈতিক সরকারকেই—প্রধান দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু কাগজে যখন দেখি, নোয়াখালীর পুলিশ সুপারের সামনে এক যুবক মিলন হত্যার ব্যাপারে ‘স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না করে গাড়িতে তাকে ও যুবলীগকর্মী রাসেলকে নিয়ে ঘোরাফেরা করছে’ এবং ‘অভিযোগ উঠেছে সরকারি দলের লোকজন এবং পুলিশ মিলে হত্যাকারীদের আড়াল করতে চাইছে’ (সমকাল ৮.৮.১১)। তখন এ বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ জাগে। কিন্তু সরকারের লোকজন নিজেরাই যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে কোম্পানীগঞ্জের পুনরাবৃত্তি একসময় একটি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াবে।
একটি চীনা উক্তি দিয়ে শেষ করি। ‘একটি বিশাল কাঠের বাড়ির ছোট একটি কোনাতেও যদি একটুখানি আগুন লাগে, তা নেভাতে গাফিলতির অর্থ হচ্ছে একসময় বড় সেই বাড়িটির হাওয়া হয়ে যাওয়া।’
মুখের ওপর অপ্রিয় কথা বললে মানুষ রুষ্ট হয়। চীনারা একসময় তাই অনেক কথা এ রকম রূপকের মাধ্যমে সারত। রূপকের আশ্রয় নেওয়াটা সে জন্য মন্দ নয়। কিন্তু কেউ কি সেসব শোনে? কখনো?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক। অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments