ওষুধ যখন মৃত্যুর কারণ

মানুষের রোগ সারানোর জন্য ওষুধ প্রয়োজন। আর সেই ওষুধও কখনো কখনো মৃত্যু বা জীবন সংহারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন ঘটনা আমাদের দেশে একাধিকবার ঘটেছে। এগুলো হয় সাধারণত নিম্নমানের ও ভেজাল ওষুধের কারণে। আর এই ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারে যাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর হাত ধরে, নিতান্তই তাদের মুনাফা লুণ্ঠনের


উদ্দেশ্যে। সরকারের তদারকিকাজে ব্যর্থতার জন্যই এ ধরনের ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ দেশের আনাচকানাচে ওষুধের দোকানগুলোতে চলে যাচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে। আর ব্যবহারকারী নিত্য প্রতারিত হচ্ছে ওষুধ ব্যবসায়ীদের হাতে। এ পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা বোঝা যায় কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি খবরের মাধ্যমে। দেশে যেখানে অনুমোদিত জেনেরিক ওষুধ আছে মাত্র এক হাজার ২০০, সেখানে বাজারে দুই হাজার ৩০০ ওষুধ বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে বেচাকেনা হচ্ছে। এতে তদারকির ক্ষেত্রে যেমন অসুবিধায় পড়তে হয়, তেমনি ভোক্তা পর্যায়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এগুলো প্রেসক্রিপশনে অন্তর্ভুক্ত করেন চিকিৎসকরা। তাঁদেরও মাঝে মাঝে অসুবিধায় পড়তে হয়।
এমন অবস্থা চলমান থাকা সত্ত্বেও একটি সুষ্ঠু ওষুধনীতি তৈরি হয়নি, যদিও অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্যনীতির পাশাপাশি ওষুধনীতিও ঘোষিত হবে। ওষুধনীতি ঘোষিত হলে আশা করা যায়, নিয়ন্ত্রণহীন এই পরিস্থিতি থাকবে না।
নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানকে 'কাজীর গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই'-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। বেহালপ্রায় প্রতিষ্ঠানটির জনবলে যেমন ঘাটতি আছে, তেমনি আছে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব। এখানে ৭৬ জন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক থাকার কথা থাকলেও পদ পূরণ হয়েছে মাত্র চারটি। ড্রাগ ইন্সপেক্টরের ১৭টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র চারজন; আর চারটি পরিচালক পদের বিপরীতে একজনও নেই। এই যদি হয় ওষুধ প্রশাসনের অবস্থা, তাহলে অনুমান করা যায়, ওষুধ নিয়ন্ত্রণহীন থাকছে কিভাবে। স্বল্প জনবল নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আর এই সুযোগটি নিচ্ছে কিছু অসাধু লোক।
ওষুধ কম্পানির সঙ্গে চিকিৎসকদের সম্পর্কের কথা বহুবার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরা নিত্যপ্রয়োজনের বাইরেও বিভিন্ন ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারেও তাঁদের কোনো নিয়মনীতি মানতে দেখা যায় না বলে অভিযোগ আছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ওষুধ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য এবং সুষ্ঠু চিকিৎসাসুবিধা সম্প্রসারণের জন্য সরকারকে অতি দ্রুত ওষুধ প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির পাশাপাশি ওষুধনীতিও ঘোষণা করতে হবে। তা না হলে দেশের মানুষের চিকিৎসা-ভোগান্তি কমবে না। মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিক না থাকলে বিদেশেও ওষুধের বাজার খারাপ হবে, যার ফলে একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

No comments

Powered by Blogger.