এবারের অস্কারের আলোচিত দিকগুলো কী? একপলকে সেগুলোই দেখে নিন

ইরানের জয় আ সেপারেশন শেষ পর্যন্ত মিলনাত্মক গল্পই উপহার দিল অন্তত অস্কারের মঞ্চে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো ইরানের চলচ্চিত্রের। পুরস্কারটি আসলে আসার কথা ছিল ১৯৯৯ সালেই। মাজিদ মাজিদির চিলড্রেন অব হেভেন শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েও পুরস্কার জেতেনি।


এক যুগ পেরিয়ে এসে অবশেষে একজন ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা হাতে তুললেন অস্কার। আসগার ফরহাদির আ সেপারেশন জিতল বিদেশি ভাষার সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার।
বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম ইরানি ছবি হিসেবে গোল্ডেন বিয়ার জয়, এরপর গোল্ডেন গ্লোবও মাত করে দেওয়া। আ সেপারেশনই যে অস্কারে ইরানের পতাকা সগৌরবে ওড়াতে যাচ্ছে, সেই পূর্বাভাস ছিল। এমন এক সময়ে ফারহাদি অস্কার জিতলেন, যখন ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা পৃথিবীর দূরত্ব আরও বাড়ছে। বাড়ছে টানাপোড়েন।
পুরস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়েও ফরহাদি বলেছেন, রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে, শেষ পর্যন্ত এই পৃথিবী রক্তমাংসের সাধারণ মানুষের। সিমিন-নাদেদের মানসিক টানাপোড়েনই শেষ পর্যন্ত আসলে মুখ্য। বলেছেন, তাঁর এই জয় ইরানের হাজার বছরের ঐতিহ্যের জয়, ‘আমরা যে সময়টায় কথা বলছি যুদ্ধ নিয়ে, ভয়ভীতি প্রদর্শন আর রাজনীতিবিদদের মধ্যে আক্রমণাত্মক ভাষার চাপান-উতোর নিয়ে; সেই সময়ে ইরানের নাম এখানে উচ্চারিত হচ্ছে দেশটির গৌরবান্বিত ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ ও সুপ্রাচীন সংস্কৃতি নিয়ে, যা আসলে রাজনীতি নামের এক ধুলোর আস্তরের নিচে চাপা পড়ে আছে।’
আব্বাস কিয়ারোস্তামি, জাফর পানাহি, মহসেন মাখমলবাফের মতো অসামান্য চলচ্চিত্রকারের জন্ম দেওয়া ইরান যে শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতেই প্রথম অস্কার দিল, এ নিয়ে অহং নেই। বরং ফরহাদি বলছেন, বিশ্বে চলচ্চিত্রের স্বতন্ত্র এক ভাষা গড়ে তোলা ইরানের চলচ্চিত্র পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবেই গ্রহণ করলেন এই পুরস্কার। আর এই অর্জন তিনি উৎসর্গ করেছেন তাঁর দেশের জনগণকে।

ধন্যবাদ, উগি!
জ্যঁ দুজারদ্যা, শেষ পর্যন্ত যোগ্য অভিনেতার হাতেই উঠেছে সেরা অভিনেতার পুরস্কার। পুরো সিনেমায় গোটা দুই সংলাপ দিয়েই অস্কার জিততে পারেন যিনি, তাঁর বাকশক্তির না জানি কী ক্ষমতা। ফরাসি এই অভিনেতার বাকশক্তির পরীক্ষা সামনে হয়ে যাবে। কিন্তু চাইলেও কথা বলতে পারবে না এমন এক অভিনেতাও কিন্তু মন জিতে নিয়েছিল দ্য আর্টিস্ট ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে। উগি, দুজারদ্যার কুকুর!
জর্জ ভ্যালেন্টিন নামের নির্বাক যুগের এক পতনোন্মুখ তারকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুজারদ্যা, আর ছবিতে তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, মৃত্যুমুখ থেকে উদ্ধারকারী ছিল টেরিয়ার প্রজাতির এই ছোট্ট কুকুরটি। দ্য আর্টিস্ট দেখে থাকলে উগির ভক্ত না হয়ে আপনার উপায় নেই।
এতটাই দুর্দান্ত অভিনয় করেছে সে, যে উগির সমর্থনে এবার বিশ্বব্যাপী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফেসবুকে ‘উগিকেও বিবেচনা করুন’ প্রচারণা বেশ জমেও উঠেছিল। দাবি ছিল একটাই, তাকেও দেওয়া হোক বিশেষ অস্কার। না, শেষ পর্যন্ত সেই পুরস্কারের ব্যবস্থা হয়নি। তাতে উগি মন খারাপ করেছে বলে শোনাও যায়নি। তবে তার কথা ভোলেননি মিশেল আজনাভিকুস। সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক ও সেরা অভিনেতা—তিনটি মূল বিভাগসহ মোট পাঁচটি অস্কার জেতার পর ছবিটির পরিচালক আজনাভিকুস বলেছেন, ‘উগিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যদিও আমি জানি, সে এসবের পরোয়া করে না। আমি কী বলছি, সেটা বোঝার সামর্থ্য ওর আছে কি না, জানি না। তার পরও বলি, ধন্যবাদ!’

উডি অ্যালেনের প্রত্যাবর্তন
শেষবার অস্কারের মঞ্চে বিজয়ীর প্রতিক্রিয়া জানালেন যখন, তাঁর বয়স ৫০ পেরিয়ে ৫১। ঠিক ২৫ বছর, ২৫ বছর মানে সিকি শতাব্দী, পর আবারও বিজয়ী উডি এলেন। মিডনাইট ইন প্যারিস-এর জন্য সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জিতেছেন এই ৭৬ বছর বয়সী। কোথায় হারাল অ্যালেনের সেই সূক্ষ্ম রসবোধ? জীবনের করুণ পরিণতি নিয়েও ঠাট্টার দুর্বোধ্য সাহস? এই হাহাকার যখন তাঁর ভক্তদের মধ্যে, সেই সময় যেন অ্যালেন সগর্বে জানান দিলেন নিজ অস্তিত্বের। ছাইধূসর চুলের মানুষটির চোখজোড়া পরিচিত কালো ফ্রেমের চশমার আড়াল থেকে যেন বলে দিল, ‘আমি ফিনিক্স পাখি। আমার মরণ নেই।’
অ্যানি হল দিয়ে বাজিমাত করে দিয়েছিলেন সেই ১৯৭৭ সালে। এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে, আর কোনো কমেডি ছবির ভাগ্যে জোটেনি সেরা ছবির অস্কার। এরপর এসেছে ম্যানহাটন, হান্নাহ অ্যান্ড হার সিস্টারস, হাজব্যান্ড অ্যান্ড ওয়াইভস।
কিন্তু গত দুই দশকে অ্যালেন যেন ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যর্থতার অতলে। আর কিছু দেওয়ার নেই—এমনটা ভেবেছিলেন কোনো কোনো নিন্দুক। ২০০৬ সালে ম্যাচ পয়েন্ট দিয়ে প্রত্যাবর্তনের আভাস দিলেন। আরও জোরালো পদশব্দ পাওয়া গেল দুই বছর পর ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা দিয়ে।
অবশেষে গত বছর মিডনাইট ইন প্যারিস মাঝরাত্তিরের নৈঃশব্দ দিয়েই শোরগোল তুলে দিল। শুধু সমালোচক নয়, দর্শকেরও মন জিতে নিয়েছে এই ছবি। বিশ্বজুড়ে আয় করেছে ১৫ কোটি মার্কিন ডলার!

অন্যান্য
বিগিনার্স ছবিতে হল ফিল্ডস চরিত্রে অভিনয় করে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন ক্রিস্টোফার প্লুমার। সবচেয়ে বেশি বয়সে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জেতার নতুন রেকর্ড গড়লেন এই ৮২ বছর বয়সী।
সর্বাধিক ১১টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল হুগো। মূল বিভাগগুলোর পুরস্কার হাতছাড়া হয়ে গেলেও পাঁচটি অস্কার জিতেছে ছবিটি। দ্য আর্টিস্টও জিতেছে পাঁচটি।
৩০ বছর ধরে চলচ্চিত্র জগতে সক্রিয় থাকার পর অবশেষে অন্তত মনোনয়নের শিকে ছিড়েছে গ্যারি ওল্ডম্যানের। টিংকার টেইলর সোলজার স্পাই ছবির জর্জ স্মাইলি চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পেয়েছিলেন এই ৫৩ বছর বয়সী।
 রাজীব হাসান

No comments

Powered by Blogger.