বিয়ে-গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে গান বাজনা-নগরবাসীর ঘুম হারাম by মিঠুন চৌধুরী
‘দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত সন্তানসহ পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় হঠাৎ বিকট শব্দে গান বেজে ওঠে। মিনিট খানেক পর থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার বাজতে শুরু করে। ছেলেটার ঘুম ভেঙে যায়। এভাবে থেমে থেমে চলতে থাকে রাত দেড়টা পর্যন্ত।’
নগরের জামালখান এলাকার বাসিন্দা মুনির আহমেদ প্রথম আলোর কাছে বর্ণনা করেন রাতের ‘শব্দযন্ত্রণা’র কথা। তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে বাসার আশপাশের এলাকায় রাতে নানা রকমের অনুষ্ঠান হয়। সেখানে উচ্চ স্বরে বাজে গান। পরিবারের কেউ তখন ঘুমাতে পারি না।’
শুধু জামালখান নয়, নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের রাতের ঘুম নিয়মিতই নষ্ট হচ্ছে শব্দদূষণের কারণে। কিছু কমিউনিটি সেন্টার ও আবাসিক এলাকার ভবনের ছাদে বিয়ে-গায়েহলুদ উপলক্ষে আয়োজিত গানের অনুষ্ঠান, নানা রকম ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণেই শব্দদূষণের সৃষ্টি হয় বলে নগরবাসীর অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও চিকিৎসকেরা বলছেন, রাতে শব্দদূষণের কারণে নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুসারে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম না করার শর্তে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার বিধান আছে। তবে নগরবাসীর অভিযোগ, এসব অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অনুসরণ করা হয় না। বিরামহীনভাবে চলতে থাকায় এটি পরিণত হয়েছে সামাজিক সমস্যায়। সবাই সচেতন হলেই এ থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব।
নগরের কাঠগড় এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কাঠগড় ও পতেঙ্গা এলাকায় প্রায় প্রতিরাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ এক পাড়ায় তো পরের দিন অন্য পাড়ায়, যেন প্রতিযোগিতা দিয়ে চলে অনুষ্ঠান। এলাকার সাধারণ মানুষ রাতে ঘুমাতেই পারে না। এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে কখনো কখনো রাজনৈতিক বক্তব্যও প্রচার করা হয়।
অভিভাবকদের অভিযোগ, রাতে উচ্চ স্বরে গানবাজনার কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা।
রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে শব্দদূষণের অভিযোগ করেছেন নগরের সিরাজদ্দৌলা সড়ক, সদরঘাট, ষোলশহর, মুরাদপুর, নিমতলা, ঈদগা, বাকলিয়া, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।
গত শুক্রবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদরঘাট সড়কের ‘জুঁই কমিউনিটি সেন্টার’ ও ‘ফোর স্টার ক্লাব’ থেকে উচ্চ স্বরে গান ভেসে আসছিল।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘যে রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে, সে রাতে শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। প্রতিমাসে ছয়-সাত রাতে এ রকম অনুষ্ঠান চলে।’
ভাড়া নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে মুঠোফোনে এ দুই কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফোর স্টার ক্লাবের ব্যবস্থাপক লিটন বলেন, চাহিদা ভেদে ক্লাবের ভাড়া ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। গানের অনুষ্ঠানের অনুমতির জন্য আলাদা ৫০০ টাকা দিতে হবে। রাত ১২টা থেকে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত অনুষ্ঠান করা যাবে। রাতভর অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।
জুঁই কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপক উত্তম মুঠোফোনে বলেন, ‘রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এমনিতেই অনুষ্ঠান করা যাবে। এর বেশি করলে ৫০০ টাকা দিয়ে থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। আপনারা টাকা দিলে আমরা অনুমতি নিয়ে দেব।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুসারে আবাসিক, নীরব, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার জন্য শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এ মানমাত্রা অতিক্রম করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে।
অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক মাঈন উদ্দিন বলেন, নগরের কমিউনিটি সেন্টারগুলো আইন ও বিধি বিধান সম্পর্কে সচেতন নয়। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নোটিশ দেওয়া হয়। লোকবলের অভাবে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
এ প্রসঙ্গে কমিউনিটি সেন্টার মালিক সমিতির উপদেষ্টা মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, রাত ১২টার পর কোনো ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা সমিতির পক্ষ থেকে নিষেধ করা আছে। তার পরও কেউ কেউ পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠান করে। তবে তা-ও ১২টা পর্যন্ত।
স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম মো. জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, শব্দদূষণের কারণে ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। উচ্চমাত্রার শব্দ মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
পাশাপাশি রাতে স্বাভাবিক ঘুম না হওয়ায় উচ্চরক্তচাপ, হূদেরাগ ও মানসিক সমস্যা হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে ঘুমের ব্যাঘাত হয় এমন শব্দ সৃষ্টি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
বিধিমালায় যা আছে: ২০০৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ২০ ধারা অনুসারে ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ নামের বিধিমালাটি প্রণয়ন করা হয়।
বিধিমালার ১৮ নম্বর ধারায় বলা আছে: কোনো ব্যক্তি বিধিমালার বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদণ্ডে বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
শুধু জামালখান নয়, নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের রাতের ঘুম নিয়মিতই নষ্ট হচ্ছে শব্দদূষণের কারণে। কিছু কমিউনিটি সেন্টার ও আবাসিক এলাকার ভবনের ছাদে বিয়ে-গায়েহলুদ উপলক্ষে আয়োজিত গানের অনুষ্ঠান, নানা রকম ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণেই শব্দদূষণের সৃষ্টি হয় বলে নগরবাসীর অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও চিকিৎসকেরা বলছেন, রাতে শব্দদূষণের কারণে নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুসারে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম না করার শর্তে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার বিধান আছে। তবে নগরবাসীর অভিযোগ, এসব অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অনুসরণ করা হয় না। বিরামহীনভাবে চলতে থাকায় এটি পরিণত হয়েছে সামাজিক সমস্যায়। সবাই সচেতন হলেই এ থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব।
নগরের কাঠগড় এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কাঠগড় ও পতেঙ্গা এলাকায় প্রায় প্রতিরাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ এক পাড়ায় তো পরের দিন অন্য পাড়ায়, যেন প্রতিযোগিতা দিয়ে চলে অনুষ্ঠান। এলাকার সাধারণ মানুষ রাতে ঘুমাতেই পারে না। এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে কখনো কখনো রাজনৈতিক বক্তব্যও প্রচার করা হয়।
অভিভাবকদের অভিযোগ, রাতে উচ্চ স্বরে গানবাজনার কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা।
রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে শব্দদূষণের অভিযোগ করেছেন নগরের সিরাজদ্দৌলা সড়ক, সদরঘাট, ষোলশহর, মুরাদপুর, নিমতলা, ঈদগা, বাকলিয়া, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।
গত শুক্রবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদরঘাট সড়কের ‘জুঁই কমিউনিটি সেন্টার’ ও ‘ফোর স্টার ক্লাব’ থেকে উচ্চ স্বরে গান ভেসে আসছিল।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘যে রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে, সে রাতে শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। প্রতিমাসে ছয়-সাত রাতে এ রকম অনুষ্ঠান চলে।’
ভাড়া নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে মুঠোফোনে এ দুই কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফোর স্টার ক্লাবের ব্যবস্থাপক লিটন বলেন, চাহিদা ভেদে ক্লাবের ভাড়া ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। গানের অনুষ্ঠানের অনুমতির জন্য আলাদা ৫০০ টাকা দিতে হবে। রাত ১২টা থেকে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত অনুষ্ঠান করা যাবে। রাতভর অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।
জুঁই কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপক উত্তম মুঠোফোনে বলেন, ‘রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এমনিতেই অনুষ্ঠান করা যাবে। এর বেশি করলে ৫০০ টাকা দিয়ে থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। আপনারা টাকা দিলে আমরা অনুমতি নিয়ে দেব।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুসারে আবাসিক, নীরব, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার জন্য শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এ মানমাত্রা অতিক্রম করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে।
অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক মাঈন উদ্দিন বলেন, নগরের কমিউনিটি সেন্টারগুলো আইন ও বিধি বিধান সম্পর্কে সচেতন নয়। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নোটিশ দেওয়া হয়। লোকবলের অভাবে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
এ প্রসঙ্গে কমিউনিটি সেন্টার মালিক সমিতির উপদেষ্টা মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, রাত ১২টার পর কোনো ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা সমিতির পক্ষ থেকে নিষেধ করা আছে। তার পরও কেউ কেউ পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠান করে। তবে তা-ও ১২টা পর্যন্ত।
স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম মো. জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, শব্দদূষণের কারণে ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। উচ্চমাত্রার শব্দ মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
পাশাপাশি রাতে স্বাভাবিক ঘুম না হওয়ায় উচ্চরক্তচাপ, হূদেরাগ ও মানসিক সমস্যা হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে ঘুমের ব্যাঘাত হয় এমন শব্দ সৃষ্টি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
বিধিমালায় যা আছে: ২০০৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ২০ ধারা অনুসারে ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ নামের বিধিমালাটি প্রণয়ন করা হয়।
বিধিমালার ১৮ নম্বর ধারায় বলা আছে: কোনো ব্যক্তি বিধিমালার বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদণ্ডে বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
No comments