যুক্তি তর্ক গল্প-আদিবাসীদের ভয় কেন? by আবুল মোমেন
রবীন্দ্রনাথের একটি বহুশ্রুত গানে আছে ‘জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না/ হায় ভীরু মন হায় রে’।প্রেমিকমনে এমন ভীরুতা থাকা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু দেশ চালানোর মতো শক্তপোক্ত কাজে এমন হলে চলে না। মনে হয়, বাঙালি মনস্তত্ত্বের গভীরে ‘হারাই হারাই’ ভাবটা খুব জাগ্রত, তাকে উতলা করে রাখে।
এই বুঝি ইমান নষ্ট হলো, বুঝি ইসলাম গেল, এই বুঝি সার্বভৌমত্ব গেল, বুঝি ভারত নিয়ে গেল দেশ ইত্যাদি। এই উতলা মনের হদিস যারা জানে, তারা দরকার পড়লে যেকোনো ইস্যু কাজে লাগিয়ে বাঙালি মনকে নাজুক যায়গায় নিয়ে যেতে পারে। ভীরু মন তো যেকোনো উপলক্ষেই জান বাঁচাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে।
আমরা যুদ্ধ জয় করে দেশটা স্বাধীন করেছি, মানুষের মন জয় করে এ দেশের মানুষ ইসলামের জয়পতাকা উড়িয়েছে হাজার বছর আগে। উর্দু আর উর্দুভাষীর আগ্রাসন ঠেকিয়ে বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের জয়ও বেশি দিনের কথা নয়। তবু তটস্থ থাকে যেন আমাদের ভয়কাতুরে মন।
দুটি ফ্রন্ট থেকেই এতকাল এ ভয়ের আগ্রাসন চলেছে—ইমান ও ইসলাম হারানোর ভয় এবং ভারতের কাছে সার্বভৌমত্ব খোয়ানোর ভয়। সাধারণত ভারত-রাষ্ট্র এবং হিন্দুধর্ম ও হিন্দুসম্প্রদায়-সংস্কৃতি লক্ষ করে এ ভয়ের সংস্কৃতিচর্চা করেছে আওয়ামী লীগবিরোধী সব দল, বর্তমানে যার নেতৃত্বে বিএনপি। একই মনস্তত্ত্ব থেকে এতকাল বিএনপি দেশের ক্ষুদ্র জাতিগুলো নিয়েও একটা ভয়ের সংস্কৃতি চালু রেখেছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি রাজনৈতিক শক্তিকে ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে চাপে রাখা। বলা বাহুল্য, এ রাজনীতির মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ তার প্রতিপক্ষের রাজনীতির অনেকটাই ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে, যেমন—রাষ্ট্রধর্ম। এবার আদিবাসী ইস্যুতে বিএনপির চেয়েও যেন কঠোর অবস্থানে গিয়েছে তারা। একসময় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে আমরা উপজাতি বলতাম। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নৃতত্ত্বের চর্চা ভালোভাবে চালু হওয়া এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের অধিকারের বিষয় সামনে চলে আসায় এ ক্ষেত্রে অনেক নতুন সংজ্ঞা, ধারণা ও ব্যাখ্যা সবার বিবেচনায় এসেছে ও গৃহীত হয়েছে। শিশু, কন্যাশিশু, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ ইত্যাদি নানা রকম অবস্থা, অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে অধিকার সুরক্ষার প্রয়াসগুলো সামনে এসেছে। এভাবেই আদিবাসী ধারণাটি এসেছে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে আলাদা ঘোষণা তৈরি হয়েছে।
শিল্প-বিপ্লবোত্তর আধুনিক বিশ্বের একটি বড় সমস্যা হলো, একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মানবজগতে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। আজ পৃথিবীতে প্রতি ১৫ দিনে একটি করে ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে। তারও চেয়ে সংকট হলো, ইংরেজি ভাষার ব্যাপক আগ্রাসন ও আধিপত্যের ফলে বিশ্বের অনেক ভাষার চর্চা হ্রাস পাচ্ছে এবং ফলে সেসব ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। চীনের মতো একটি প্রায়-মহাদেশ তার সাংগীতিক ঐতিহ্যের অনেকখানি হারিয়ে ফেলে পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। জাপানে এ প্রবণতাই প্রধান। আফ্রিকার বহু দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে পারেনি। কোনোটি ফরাসিভাষী, কোনোটি পর্তুগিজ আর কোনোটি ইংরেজিভাষী দেশে পরিণত হয়েছে।
পশ্চিমা ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের চরম ও নিষ্ঠুর প্রকাশ ঘটেছে দুই আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। এসব অঞ্চলে আক্রমণকারী দখলদারেরা সপ্তদশ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত স্থানীয় আদিবাসীদের গণহারে হত্যা করে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। আজ এসব ভূমিপুত্র বা আদিবাসী অতি সংখ্যালঘু হিসেবে সেসব দেশে টিকে আছে। একদিকে জনসংখ্যার স্বল্পতা, দারিদ্র্য, নিজস্ব ভাষায় আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের সমস্যা; আর অন্যদিকে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শক্তিশালী ক্ষমতাধর বেগবান সংস্কৃতির চাপের ফলে যেকোনো রাষ্ট্রে এই আদিবাসীদের অবস্থান খুবই দুর্বল। প্রতিবেশী সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর আয়তনগত স্বাভাবিক প্রভাব, শিল্প-সাহিত্যের সমৃদ্ধিগত প্রভাব এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার চাপ মিলে স্বল্প জনসংখ্যার আদিবাসী মানুষ মারাত্মক সাংস্কৃতিক চাপের মধ্যে পড়ে যায়। বাংলাদেশের ৩০-৪০টি আদিবাসী গোষ্ঠীর দিকে তাকালে দেখা যাবে, এ রাষ্ট্রে তাদের বিকশিত হতে হলে বাংলা ভাষা ও অনেকাংশ বাঙালি সংস্কৃতির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। রাষ্ট্র ও বৃহত্তর সমাজ যদি এ ক্ষেত্রে সচেতন না হয়, সমব্যথীর মন নিয়ে তাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে আদিবাসীদের স্বতন্ত্র ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
এমন এক বাস্তবতায় এসে পৌঁছেছি আজ, যখন মানুষের মৃত্যুও আমাদের মনে বাজে না, যদি না তা স্বজনের মৃত্যু হয়। ভাষার মৃত্যু, সংস্কৃতির বিলুপ্তি সম্পর্কে আমরা ততটা সংবেদনশীল নই। বাঘ নিয়ে কিছু প্রচারণা চলছে, গাছ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে, নদী বাঁচানোর জন্যও আমরা আজকাল কথা বলছি। অথচ আমাদের প্রতিবেশী ৩০-৪০টি ভাষা ও সংস্কৃতিকে হারিয়ে যেতে দিতে আমাদের আপত্তি নেই।
আমরা বুক ফুলিয়ে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার কথা বলি, গর্ব করি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে, কত না আবেগ দিয়ে গাই ‘মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা’। সেই আমরাই কিনা গারো ছেলেটি, মার্মা মেয়েটি, খাসিয়া যুবতীটি, তঞ্চংগ্যা কিশোরটি, পাংখো বৃদ্ধাটির প্রাণের ধন মায়ের ভাষাটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছি না। আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনা কি এতই উগ্র যে তা চাকমা ভাষা আর গারো জীবনের কান্না শুনতে পায় না?
অনেক দিন ধরেই দেশে দেশে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে দুর্বলের তথা প্রান্তিকজনের বেদনা অগ্রাহ্য করে চলেছে। জাতিসংঘের একটি হিসাবে বলা হচ্ছে, এভাবে পৃথিবীর ৭২টি দেশে ৩০-৩৫ কোটি আদিবাসী রয়েছে, যারা আবার প্রায় পাঁচ হাজার ভিন্ন জনজাতিতে বিভক্ত। আদিবাসী জনগোষ্ঠী যেন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের খনি। বিশ্বের দেশে দেশে মানবদরদি, সংস্কৃতিচেতন বিশ্বনাগরিকদের সোচ্চার হতে হয়েছে সংখ্যাগুরুর অসচেতনতা ও আগ্রাসনে ক্ষয় পেতে থাকা, হারিয়ে যেতে বসা জনগোষ্ঠীর জন্য। তাদেরই কণ্ঠস্বর পৌঁছেছে জাতিসংঘ অবধি। আর তা থেকে আদিবাসী ইস্যু, তাদের অধিকার রক্ষার প্রশ্ন উঠেছে। পৃথিবীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষার এ আয়োজন এক দিনে হয়নি। ১৯৮২ সালে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসক) তৈরি করে আদিবাসীবিষয়ক কর্মদল (ডব্লিউজিআইপি), যার ভিত্তি একটি বিশেষজ্ঞ দলের দীর্ঘ গবেষণা। ১৯৮৫ সালে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় ঘোষণা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে খসড়াটি চূড়ান্ত হয়। এটি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও তাদের প্রতি বৈষম্য রোধসংক্রান্ত কমিটি পর্যালোচনা করে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী কনভেনশন ১৯৮৯ গ্রহণ করে। আরও কয়েক ধাপ পেরিয়ে ঘোষণাটি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। ১৪৩টি দেশ পক্ষে, চারটি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়, আর ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে, যার একটি বাংলাদেশ।
সংক্ষেপে আদিবাসী হলো সেসব জনগোষ্ঠী, যারা ঔপনিবেশিক শক্তির হস্তক্ষেপের ফলে সৃষ্ট ‘আধুনিক’ সংস্কৃতির আওতার বাইরে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ভিত্তিতে জীবনধারা পরিচালিত করে চলেছে। স্বভাবতই তারা বিশেষ জনগোষ্ঠী। মনে রাখা দরকার, বাঙালি কোনো নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নয়, ভাষাজাতি; যেমন—আর্য ও দ্রাবিড়। চাকমা, মারমা, মণিপুরিরাও ভাষাজাতি, তবে ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত তারা। বাংলা হলো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীরই একটি ভাষা। আর চাকমা, মারমা, মণিপুরি, খাসিয়া, ত্রিপুরিদের ভাষা সম্ভবত ভোটচেনিক ও মন্-খমের ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। সাঁওতাল-ওঁরাওদের ভাষা অস্ট্রিক ভাষারই অপভ্রংশ উপভাষা। বাংলা এ অঞ্চলের মূলত বদ্বীপ সমতলের মানুষের ভাষা, যারা যুগযুগ ধরে সব মিশ্রণ-রূপান্তর-পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এখানে বসবাস করছে। তারা এখানকার ভূমিপুত্র, এখানকার অধিবাসী। কিছু মানুষ, যারা দুর্গম বনাঞ্চলে গণ্ডিবদ্ধ ও সুরক্ষিত জীবন কাটিয়েছে, তারা এসব সম্প্রদায়ের বাইরে ছিল। সমতলে গারো-সাঁওতাল-ওঁরাও-মুন্ডা প্রভৃতি এ রকম মানুষ, যাদের আদিবাসী বলতে হবে। আর পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চলে ঐতিহাসিক কালে—অনেকের মতে ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে—এসে আশ্রয় নিয়েছিল ভোটচৈনিক ভাষাগোষ্ঠীর ও নৃতাত্ত্বিককভাবে মঙ্গোলয়েড মহাজাতিভুক্ত মানুষ। মিশ্রণের বাইরে থেকে তারাও আদিবাসী। সাধারণভাবে আহরণজীবীর যাযাবর বৃত্তির পর্ব শেষ হয়ে বসতি স্থাপন শুরু হয় কৃষি আবিষ্কারের পরে। এ অঞ্চলের মতো উর্বর সুগম সমতল ভূমিতে দলে দলে (প্রাচীনকালে দক্ষিণবঙ্গ অবশ্য সমুদ্র থেকে ওঠেনি) নানা জাতের মানুষ এসে বসতি করেছে। ইতিহাসে সাংস্কৃতিক পরিচয়ে প্রথম পাই অস্ট্রিকভাষী জনগোষ্ঠীর কথা, যারা নৃতাত্ত্বিকভাবে ছিল নিগ্রোয়েড মহাজাতির নানা সংযোগী বর্গের মানুষ। এরপর আসে ভাষাজাতি দ্রাবিড়রা, তারপর আর্যভাষীদের আগমন ঘটে। এসব মিশ্রণের ভেতর দিয়ে গেছে সমতলের কৃষিজীবী মানুষ, যারা আজ বাংলা ভাষার সূত্রে বাঙালি নামে পরিচিত। খুঁজলে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে অস্ট্রিক, দ্রাবিড় উপাদানও সহজেই মিলবে।
আদিবাসী বা ইনডাইজেনাস শব্দটি এসব বদ্ধ ও অনেকটাই অবিমিশ্র সংস্কৃতির জনগোষ্ঠীকে বোঝানোর জন্যই সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তারা বৃহৎ সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর পাশে ক্ষুদ্র তো বটেই, তারও চেয়ে শঙ্কার কথা হলো, বৃহতের অসচেতনতার ফলে তাদের সংস্কৃতি, জীবনযাপন, ধর্মবিশ্বাস, বসতি এমনকি জীবনও হুমকির সম্মুখীন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা নিজেদের অবস্থানটা এভাবেই দেখছে, এমনকি সমতলের আদিবাসীরাও এভাবে অস্তিত্বের হুমকি অনুভব করছে। কারণ, যে আমরা নিজেদের মাতৃভাষার প্রশ্নে এত আবেগপ্রবণ, এত আপসহীন, তারাই কিনা ক্ষুদ্র প্রান্তিক মানুষগুলোর সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের অধিকার ও দাবি বুঝতে চাইছি না। যদি তারা এই শঙ্কা ও আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন-সংগ্রামের কথা বলে, তখন তো আমরা একদিকে পুরো অঞ্চলে বাঙালি এবং মুসলিম সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও আগ্রাসন চালানোর ব্যবস্থা করি; আর অন্যদিকে তাদের আত্মবিকাশ ও অধিকারের আন্দোলন দাবিয়ে রাখার জন্য সামরিক অভিযানের আশ্রয় নিই।
সাংস্কৃতিক বিকাশ ও রূপান্তরের ক্ষেত্রে জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ঘটবে। আমাদের আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও কালের নিয়মে এ পরিবর্তন ঘটে চলেছে, কিন্তু কীভাবে কখন কতটা হচ্ছে ও হবে, সে তো একাডেমিক চর্চার বিষয়, প্রশাসনের কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর ব্যক্ত আকাঙ্ক্ষা ও ন্যায্য অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।
দেশের রাষ্ট্রশক্তির মারমুখী রক্ষণশীলতা দেখে বলতে হয়, ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ বিশাল বিজয় অর্জনের পরও কেন ভয় পাচ্ছে, কাকে পাচ্ছে, সেটা ঠিক বোধগম্য হলো না।
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
আমরা যুদ্ধ জয় করে দেশটা স্বাধীন করেছি, মানুষের মন জয় করে এ দেশের মানুষ ইসলামের জয়পতাকা উড়িয়েছে হাজার বছর আগে। উর্দু আর উর্দুভাষীর আগ্রাসন ঠেকিয়ে বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের জয়ও বেশি দিনের কথা নয়। তবু তটস্থ থাকে যেন আমাদের ভয়কাতুরে মন।
দুটি ফ্রন্ট থেকেই এতকাল এ ভয়ের আগ্রাসন চলেছে—ইমান ও ইসলাম হারানোর ভয় এবং ভারতের কাছে সার্বভৌমত্ব খোয়ানোর ভয়। সাধারণত ভারত-রাষ্ট্র এবং হিন্দুধর্ম ও হিন্দুসম্প্রদায়-সংস্কৃতি লক্ষ করে এ ভয়ের সংস্কৃতিচর্চা করেছে আওয়ামী লীগবিরোধী সব দল, বর্তমানে যার নেতৃত্বে বিএনপি। একই মনস্তত্ত্ব থেকে এতকাল বিএনপি দেশের ক্ষুদ্র জাতিগুলো নিয়েও একটা ভয়ের সংস্কৃতি চালু রেখেছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি রাজনৈতিক শক্তিকে ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে চাপে রাখা। বলা বাহুল্য, এ রাজনীতির মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ তার প্রতিপক্ষের রাজনীতির অনেকটাই ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে, যেমন—রাষ্ট্রধর্ম। এবার আদিবাসী ইস্যুতে বিএনপির চেয়েও যেন কঠোর অবস্থানে গিয়েছে তারা। একসময় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে আমরা উপজাতি বলতাম। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নৃতত্ত্বের চর্চা ভালোভাবে চালু হওয়া এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের অধিকারের বিষয় সামনে চলে আসায় এ ক্ষেত্রে অনেক নতুন সংজ্ঞা, ধারণা ও ব্যাখ্যা সবার বিবেচনায় এসেছে ও গৃহীত হয়েছে। শিশু, কন্যাশিশু, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ ইত্যাদি নানা রকম অবস্থা, অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে অধিকার সুরক্ষার প্রয়াসগুলো সামনে এসেছে। এভাবেই আদিবাসী ধারণাটি এসেছে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে আলাদা ঘোষণা তৈরি হয়েছে।
শিল্প-বিপ্লবোত্তর আধুনিক বিশ্বের একটি বড় সমস্যা হলো, একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মানবজগতে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। আজ পৃথিবীতে প্রতি ১৫ দিনে একটি করে ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে। তারও চেয়ে সংকট হলো, ইংরেজি ভাষার ব্যাপক আগ্রাসন ও আধিপত্যের ফলে বিশ্বের অনেক ভাষার চর্চা হ্রাস পাচ্ছে এবং ফলে সেসব ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। চীনের মতো একটি প্রায়-মহাদেশ তার সাংগীতিক ঐতিহ্যের অনেকখানি হারিয়ে ফেলে পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। জাপানে এ প্রবণতাই প্রধান। আফ্রিকার বহু দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে পারেনি। কোনোটি ফরাসিভাষী, কোনোটি পর্তুগিজ আর কোনোটি ইংরেজিভাষী দেশে পরিণত হয়েছে।
পশ্চিমা ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের চরম ও নিষ্ঠুর প্রকাশ ঘটেছে দুই আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। এসব অঞ্চলে আক্রমণকারী দখলদারেরা সপ্তদশ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত স্থানীয় আদিবাসীদের গণহারে হত্যা করে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। আজ এসব ভূমিপুত্র বা আদিবাসী অতি সংখ্যালঘু হিসেবে সেসব দেশে টিকে আছে। একদিকে জনসংখ্যার স্বল্পতা, দারিদ্র্য, নিজস্ব ভাষায় আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের সমস্যা; আর অন্যদিকে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শক্তিশালী ক্ষমতাধর বেগবান সংস্কৃতির চাপের ফলে যেকোনো রাষ্ট্রে এই আদিবাসীদের অবস্থান খুবই দুর্বল। প্রতিবেশী সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর আয়তনগত স্বাভাবিক প্রভাব, শিল্প-সাহিত্যের সমৃদ্ধিগত প্রভাব এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার চাপ মিলে স্বল্প জনসংখ্যার আদিবাসী মানুষ মারাত্মক সাংস্কৃতিক চাপের মধ্যে পড়ে যায়। বাংলাদেশের ৩০-৪০টি আদিবাসী গোষ্ঠীর দিকে তাকালে দেখা যাবে, এ রাষ্ট্রে তাদের বিকশিত হতে হলে বাংলা ভাষা ও অনেকাংশ বাঙালি সংস্কৃতির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। রাষ্ট্র ও বৃহত্তর সমাজ যদি এ ক্ষেত্রে সচেতন না হয়, সমব্যথীর মন নিয়ে তাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে আদিবাসীদের স্বতন্ত্র ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
এমন এক বাস্তবতায় এসে পৌঁছেছি আজ, যখন মানুষের মৃত্যুও আমাদের মনে বাজে না, যদি না তা স্বজনের মৃত্যু হয়। ভাষার মৃত্যু, সংস্কৃতির বিলুপ্তি সম্পর্কে আমরা ততটা সংবেদনশীল নই। বাঘ নিয়ে কিছু প্রচারণা চলছে, গাছ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে, নদী বাঁচানোর জন্যও আমরা আজকাল কথা বলছি। অথচ আমাদের প্রতিবেশী ৩০-৪০টি ভাষা ও সংস্কৃতিকে হারিয়ে যেতে দিতে আমাদের আপত্তি নেই।
আমরা বুক ফুলিয়ে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার কথা বলি, গর্ব করি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে, কত না আবেগ দিয়ে গাই ‘মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা’। সেই আমরাই কিনা গারো ছেলেটি, মার্মা মেয়েটি, খাসিয়া যুবতীটি, তঞ্চংগ্যা কিশোরটি, পাংখো বৃদ্ধাটির প্রাণের ধন মায়ের ভাষাটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছি না। আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনা কি এতই উগ্র যে তা চাকমা ভাষা আর গারো জীবনের কান্না শুনতে পায় না?
অনেক দিন ধরেই দেশে দেশে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে দুর্বলের তথা প্রান্তিকজনের বেদনা অগ্রাহ্য করে চলেছে। জাতিসংঘের একটি হিসাবে বলা হচ্ছে, এভাবে পৃথিবীর ৭২টি দেশে ৩০-৩৫ কোটি আদিবাসী রয়েছে, যারা আবার প্রায় পাঁচ হাজার ভিন্ন জনজাতিতে বিভক্ত। আদিবাসী জনগোষ্ঠী যেন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের খনি। বিশ্বের দেশে দেশে মানবদরদি, সংস্কৃতিচেতন বিশ্বনাগরিকদের সোচ্চার হতে হয়েছে সংখ্যাগুরুর অসচেতনতা ও আগ্রাসনে ক্ষয় পেতে থাকা, হারিয়ে যেতে বসা জনগোষ্ঠীর জন্য। তাদেরই কণ্ঠস্বর পৌঁছেছে জাতিসংঘ অবধি। আর তা থেকে আদিবাসী ইস্যু, তাদের অধিকার রক্ষার প্রশ্ন উঠেছে। পৃথিবীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষার এ আয়োজন এক দিনে হয়নি। ১৯৮২ সালে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসক) তৈরি করে আদিবাসীবিষয়ক কর্মদল (ডব্লিউজিআইপি), যার ভিত্তি একটি বিশেষজ্ঞ দলের দীর্ঘ গবেষণা। ১৯৮৫ সালে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় ঘোষণা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে খসড়াটি চূড়ান্ত হয়। এটি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও তাদের প্রতি বৈষম্য রোধসংক্রান্ত কমিটি পর্যালোচনা করে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী কনভেনশন ১৯৮৯ গ্রহণ করে। আরও কয়েক ধাপ পেরিয়ে ঘোষণাটি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। ১৪৩টি দেশ পক্ষে, চারটি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়, আর ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে, যার একটি বাংলাদেশ।
সংক্ষেপে আদিবাসী হলো সেসব জনগোষ্ঠী, যারা ঔপনিবেশিক শক্তির হস্তক্ষেপের ফলে সৃষ্ট ‘আধুনিক’ সংস্কৃতির আওতার বাইরে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ভিত্তিতে জীবনধারা পরিচালিত করে চলেছে। স্বভাবতই তারা বিশেষ জনগোষ্ঠী। মনে রাখা দরকার, বাঙালি কোনো নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নয়, ভাষাজাতি; যেমন—আর্য ও দ্রাবিড়। চাকমা, মারমা, মণিপুরিরাও ভাষাজাতি, তবে ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত তারা। বাংলা হলো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীরই একটি ভাষা। আর চাকমা, মারমা, মণিপুরি, খাসিয়া, ত্রিপুরিদের ভাষা সম্ভবত ভোটচেনিক ও মন্-খমের ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। সাঁওতাল-ওঁরাওদের ভাষা অস্ট্রিক ভাষারই অপভ্রংশ উপভাষা। বাংলা এ অঞ্চলের মূলত বদ্বীপ সমতলের মানুষের ভাষা, যারা যুগযুগ ধরে সব মিশ্রণ-রূপান্তর-পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এখানে বসবাস করছে। তারা এখানকার ভূমিপুত্র, এখানকার অধিবাসী। কিছু মানুষ, যারা দুর্গম বনাঞ্চলে গণ্ডিবদ্ধ ও সুরক্ষিত জীবন কাটিয়েছে, তারা এসব সম্প্রদায়ের বাইরে ছিল। সমতলে গারো-সাঁওতাল-ওঁরাও-মুন্ডা প্রভৃতি এ রকম মানুষ, যাদের আদিবাসী বলতে হবে। আর পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চলে ঐতিহাসিক কালে—অনেকের মতে ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে—এসে আশ্রয় নিয়েছিল ভোটচৈনিক ভাষাগোষ্ঠীর ও নৃতাত্ত্বিককভাবে মঙ্গোলয়েড মহাজাতিভুক্ত মানুষ। মিশ্রণের বাইরে থেকে তারাও আদিবাসী। সাধারণভাবে আহরণজীবীর যাযাবর বৃত্তির পর্ব শেষ হয়ে বসতি স্থাপন শুরু হয় কৃষি আবিষ্কারের পরে। এ অঞ্চলের মতো উর্বর সুগম সমতল ভূমিতে দলে দলে (প্রাচীনকালে দক্ষিণবঙ্গ অবশ্য সমুদ্র থেকে ওঠেনি) নানা জাতের মানুষ এসে বসতি করেছে। ইতিহাসে সাংস্কৃতিক পরিচয়ে প্রথম পাই অস্ট্রিকভাষী জনগোষ্ঠীর কথা, যারা নৃতাত্ত্বিকভাবে ছিল নিগ্রোয়েড মহাজাতির নানা সংযোগী বর্গের মানুষ। এরপর আসে ভাষাজাতি দ্রাবিড়রা, তারপর আর্যভাষীদের আগমন ঘটে। এসব মিশ্রণের ভেতর দিয়ে গেছে সমতলের কৃষিজীবী মানুষ, যারা আজ বাংলা ভাষার সূত্রে বাঙালি নামে পরিচিত। খুঁজলে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে অস্ট্রিক, দ্রাবিড় উপাদানও সহজেই মিলবে।
আদিবাসী বা ইনডাইজেনাস শব্দটি এসব বদ্ধ ও অনেকটাই অবিমিশ্র সংস্কৃতির জনগোষ্ঠীকে বোঝানোর জন্যই সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তারা বৃহৎ সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর পাশে ক্ষুদ্র তো বটেই, তারও চেয়ে শঙ্কার কথা হলো, বৃহতের অসচেতনতার ফলে তাদের সংস্কৃতি, জীবনযাপন, ধর্মবিশ্বাস, বসতি এমনকি জীবনও হুমকির সম্মুখীন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা নিজেদের অবস্থানটা এভাবেই দেখছে, এমনকি সমতলের আদিবাসীরাও এভাবে অস্তিত্বের হুমকি অনুভব করছে। কারণ, যে আমরা নিজেদের মাতৃভাষার প্রশ্নে এত আবেগপ্রবণ, এত আপসহীন, তারাই কিনা ক্ষুদ্র প্রান্তিক মানুষগুলোর সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের অধিকার ও দাবি বুঝতে চাইছি না। যদি তারা এই শঙ্কা ও আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন-সংগ্রামের কথা বলে, তখন তো আমরা একদিকে পুরো অঞ্চলে বাঙালি এবং মুসলিম সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও আগ্রাসন চালানোর ব্যবস্থা করি; আর অন্যদিকে তাদের আত্মবিকাশ ও অধিকারের আন্দোলন দাবিয়ে রাখার জন্য সামরিক অভিযানের আশ্রয় নিই।
সাংস্কৃতিক বিকাশ ও রূপান্তরের ক্ষেত্রে জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ঘটবে। আমাদের আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও কালের নিয়মে এ পরিবর্তন ঘটে চলেছে, কিন্তু কীভাবে কখন কতটা হচ্ছে ও হবে, সে তো একাডেমিক চর্চার বিষয়, প্রশাসনের কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর ব্যক্ত আকাঙ্ক্ষা ও ন্যায্য অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।
দেশের রাষ্ট্রশক্তির মারমুখী রক্ষণশীলতা দেখে বলতে হয়, ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ বিশাল বিজয় অর্জনের পরও কেন ভয় পাচ্ছে, কাকে পাচ্ছে, সেটা ঠিক বোধগম্য হলো না।
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
No comments