বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল-সেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা by শিশির মোড়ল ও শেখ সাবিহা আলম
বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার শেষ আশ্রয়স্থল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার ঘোষণায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজকে শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে এর জন্য নতুন আইন হবে। প্রশাসনিক কাঠামো, ব্যবস্থাপনা ও সেবাদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের দরিদ্র মানুষ, যারা বিনা মূল্যে বা স্বল্পমূল্যে এ হাসপাতাল থেকে সেবা পায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র (১৯৫৯ সালের ব্যাচ) ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ বি এম এফ করীম বলেন, শুধু নাম বদল করে কোনো লাভ হবে না। পিজি হাসপাতালকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে সেবার মানে যুগান্তকারী কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে সেবার মানসিকতা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করেও বর্তমান সেবা ভবিষ্যতে দেওয়া সম্ভব হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী জরুরি চিকিৎসাসেবা-ব্যবস্থা। জরুরি বিভাগে সেবা পায় প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ রোগী। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের দূরদূরান্ত থেকে এসব রোগী ছুটে আসে। মানুষ জানে, ২৪ ঘণ্টা জরুরি চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল সবার জন্য খোলা।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন করে রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি সেবাব্যবস্থা সারা বিশ্বে অনুকরণীয়। আমি পাগল হয়ে যাইনি যে, এ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেব।’
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখানে শয্যাসংখ্যা এক হাজার ৭০০। প্রতিদিন গড়ে এখানে ধারণক্ষমতার তিন গুণ রোগী সেবা পায়। বিনা মূল্যে রোগীদের অস্ত্রোপচারসহ অনেক ধরনের চিকিৎসা করা হয়। প্রায় সব ওষুধ বিনা মূল্যে পায় রোগীরা। নামমাত্র খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে থাকে। কলেজের শিক্ষক ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের বাইরে এখানে রোগীদের সেবা দেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও অবৈতনিক চিকিৎসকেরা।
প্রতিবছর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আড়াই লাখ রোগী সেবা পায়। বহির্বিভাগে আড়াই থেকে পৌনে তিন লাখ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন হাসপাতালের ২০টি অপারেশন থিয়েটারে গড়ে ৯০টির মতো অস্ত্রোপচার হয়। গড়ে কমপক্ষে ১০ জন নারী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন। সব ধরনের অস্ত্রোপচার বিনা মূল্যে হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একজন অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, দেশের যেকোনো হাসপাতালের চেয়ে এখনো ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসার মান ভালো। দ্বিতীয়ত, দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার জন্য এত বড় প্রতিষ্ঠান আর নেই। বিশ্ববিদ্যালয় হলে এই ঐতিহ্য ধরে রাখা কঠিন হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানে স্নাতকোত্তর ও উচ্চশিক্ষার কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। সারা দেশের এমবিবিএস কোর্স সমন্বয়ের দায়িত্ব থাকবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কাজী দীন মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্তশাসন পাবে, তাতে সেবার মান বাড়বে।
কেন ঢাকা মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অনুদানে চলবে, নাকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজস্ব আয়ে চলবে, সেই আয়ের উৎস কী হবে—এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু বলছে না। বিশ্ববিদ্যালয় করলে লাভ কী? জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এতে ক্ষতির কিছু নেই।’
এই কলেজের আরেক প্রাক্তন ছাত্র ও বিএসএমএমইউর সাবেক সহ-উপাচার্য রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো দিক—শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসাসেবা বা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়, নাকি সরকারের হাতে থাকবে, চরিত্র কী হবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সমাজের বিতর্ক করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নবীন চিকিৎসক বলেছেন, অনেকে ব্যক্তিস্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছেন। ৬০ বছর বয়সে অবসরে যেতেন এমন শিক্ষক ও চিকিৎসকেরা বিশ্ববিদ্যালয় হলে পাঁচ বছর বেশি চাকরি করতে পারবেন। আবার চিকিৎসকদের বদলিও হতে হবে না। তা ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকরণের সুযোগ হবে বা চাকরি দেওয়া হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র (১৯৫৯ সালের ব্যাচ) ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ বি এম এফ করীম বলেন, শুধু নাম বদল করে কোনো লাভ হবে না। পিজি হাসপাতালকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে সেবার মানে যুগান্তকারী কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে সেবার মানসিকতা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করেও বর্তমান সেবা ভবিষ্যতে দেওয়া সম্ভব হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী জরুরি চিকিৎসাসেবা-ব্যবস্থা। জরুরি বিভাগে সেবা পায় প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ রোগী। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের দূরদূরান্ত থেকে এসব রোগী ছুটে আসে। মানুষ জানে, ২৪ ঘণ্টা জরুরি চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল সবার জন্য খোলা।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন করে রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি সেবাব্যবস্থা সারা বিশ্বে অনুকরণীয়। আমি পাগল হয়ে যাইনি যে, এ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেব।’
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখানে শয্যাসংখ্যা এক হাজার ৭০০। প্রতিদিন গড়ে এখানে ধারণক্ষমতার তিন গুণ রোগী সেবা পায়। বিনা মূল্যে রোগীদের অস্ত্রোপচারসহ অনেক ধরনের চিকিৎসা করা হয়। প্রায় সব ওষুধ বিনা মূল্যে পায় রোগীরা। নামমাত্র খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে থাকে। কলেজের শিক্ষক ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের বাইরে এখানে রোগীদের সেবা দেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও অবৈতনিক চিকিৎসকেরা।
প্রতিবছর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আড়াই লাখ রোগী সেবা পায়। বহির্বিভাগে আড়াই থেকে পৌনে তিন লাখ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন হাসপাতালের ২০টি অপারেশন থিয়েটারে গড়ে ৯০টির মতো অস্ত্রোপচার হয়। গড়ে কমপক্ষে ১০ জন নারী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন। সব ধরনের অস্ত্রোপচার বিনা মূল্যে হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একজন অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, দেশের যেকোনো হাসপাতালের চেয়ে এখনো ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসার মান ভালো। দ্বিতীয়ত, দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার জন্য এত বড় প্রতিষ্ঠান আর নেই। বিশ্ববিদ্যালয় হলে এই ঐতিহ্য ধরে রাখা কঠিন হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানে স্নাতকোত্তর ও উচ্চশিক্ষার কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। সারা দেশের এমবিবিএস কোর্স সমন্বয়ের দায়িত্ব থাকবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কাজী দীন মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্তশাসন পাবে, তাতে সেবার মান বাড়বে।
কেন ঢাকা মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অনুদানে চলবে, নাকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজস্ব আয়ে চলবে, সেই আয়ের উৎস কী হবে—এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু বলছে না। বিশ্ববিদ্যালয় করলে লাভ কী? জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এতে ক্ষতির কিছু নেই।’
এই কলেজের আরেক প্রাক্তন ছাত্র ও বিএসএমএমইউর সাবেক সহ-উপাচার্য রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো দিক—শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসাসেবা বা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়, নাকি সরকারের হাতে থাকবে, চরিত্র কী হবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সমাজের বিতর্ক করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নবীন চিকিৎসক বলেছেন, অনেকে ব্যক্তিস্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছেন। ৬০ বছর বয়সে অবসরে যেতেন এমন শিক্ষক ও চিকিৎসকেরা বিশ্ববিদ্যালয় হলে পাঁচ বছর বেশি চাকরি করতে পারবেন। আবার চিকিৎসকদের বদলিও হতে হবে না। তা ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকরণের সুযোগ হবে বা চাকরি দেওয়া হবে।
No comments