সার্ধশততম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী-রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ by মুস্তাফা নূরউল ইসলাম
আমাদের জন্য বর্তমান প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ_বিচিত্র কত ক্ষেত্রে তাঁর বিস্ময়কর সৃজনশীল কর্মগুলো এবং সেই সঙ্গে বিশেষ আরো কিছু কথা। বলব, বছরে বছরে যে রবীন্দ্রজয়ন্তী, তা প্রাত্যহিকতার স্থূল দাবিপীড়িত সাধারণ আমাদের কাছে ওই অবকাশটা এনে দেয়। তখন আমরা তাঁর নিকট হওয়ার প্রয়াস পাই; নানা জিজ্ঞাসার অবতারণা করতে আগ্রহী হয়ে উঠি।
জয়ন্তী উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিকতাকে তখন পেছনে সরিয়ে দিই; আবেগ-তৃপ্তির সেখানেই ইতি, তাও নয়, বরং রবীন্দ্র অবলম্বনে আমাদের সুকুমার মানস-ভুবনে চারণা এবং এর পরও রয়ে যায় পূর্বোক্ত সেই 'আরো কিছু'র সন্ধান-উদ্যোগ। কখনো কখনো আমাদের জীবনে জরুরি প্রাসঙ্গিকতার উদ্ভব ঘটে। যথা_রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপন। তখন আমরা আত্মচিহ্নিতকরণে সক্ষম হই, আমরা প্রত্যয়ী হয়ে উঠি। এবার এই উৎসবের আয়োজন আরো ব্যাপক। এবার সার্ধশততম রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী দুই বাংলায় যৌথভাবে পালিত হচ্ছে সাড়ম্বরে।
জানা সত্যটার এবং উত্তরপুরুষকে জানিয়ে দেওয়ার সত্যটার অবতারণা করা যাক। কী প্রকারে আজকের এই বাংলাদেশ? রাজনৈতিক মানচিত্রের বিশেষ স্বাতন্ত্র্য নিয়ে এবং এক সার্বভৌম সত্তা নিয়ে যে এই দেশটির অভ্যুদয়, জীবিত রয়েছেন সবারই তা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। এতদঞ্চলের মানুষ সেই সময় কেমন জীবনতুচ্ছ প্রাণিত প্রেরণায় দুঃসাহসী হয়ে উঠেছিল। মরণজয়ী অভিযান_বাঙালির ঠিকানার সন্ধান। সেদিন সাত কোটি সন্তান সেটি জেনে গিয়েছিল : 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা'। আর সেই সঙ্গে কোটি কণ্ঠে গগনবিদারী শপথ উচ্চারণ 'জয় বাংলা'। ইতিহাসের পালাবদল ঘটেছে_সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জনের ফসল মেঘনা-যমুনার বাঙালির বাংলাদেশ।
এখানে এখন ওই প্রসঙ্গ_রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ; কিংবা আরেকভাবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ। স্মরণ করি, আমাদেরই তো কৈশোরের-যৌবনের তরঙ্গবিক্ষুব্ধ কাল গেছে, যখন রাজনৈতিক প্রতিরোধ সংগ্রামের সমান্তরাল সম্পূরক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের তীব্রতা তুঙ্গে। সেই সময় সবটা মিলিয়ে বাঙালিত্বের চেতনার উদ্বোধনে অপ্রতিরোধ্য প্রেরণার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথে-নজরুলে। ইতিমধ্যে বেশিদিনের কথা তো নয়, তখন রবীন্দ্রনাথে-নজরুলে-বাংলাদেশে একাকার মেশামিশি হয়ে আমাদের চেতনাকে এক নতুন মাত্রিকতায় উজ্জ্বল করে তুলেছিল। রবীন্দ্রনাথের কথাটাই বলি। চলি্লশের-পঞ্চাশের-ষাটের দশকে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সে কী প্রচণ্ড উজ্জীবক প্রেরণার ওই গানগুলো_'বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও', 'এবার তোর নয়া গাঙে বান এসেছে', 'ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো', 'ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে, ততই বাঁধন টুটবে', 'নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়'_এমনি কত! সেই আমরা অমর করে জেনে গিয়েছিলাম_দেশ আমার জননী মাতা 'সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে', এই আমার দেশ 'সোনার বাংলা'; এবং তখন শপথ নিয়েছিলাম 'এখন বাতাস ছুটুক, তুফান উঠুক, ফিরব না গো আর'। আমরা নির্ভয় হয়েছিলাম_বারবার আমাদের উচ্চারণ_ভয় করব না, ভয় করব না। অতঃপর একষট্টিতে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। দুর্গম দুঃসাহসী কঠিনের সড়কে আমাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেল। প্রত্যক্ষ এবং অন্তরালের গভীরে এভাবে কাজ করে যায় প্রেরণার হোমমন্ত্র। এ আমাদেরই আপন অভিজ্ঞতা। যুগে যুগে, দেশে দেশে ইতিহাস তা-ই বলে।
না, যথার্থ যে জন্মসূত্রে রবীন্দ্রনাথ আজকের বাংলাদেশের কোনো ভৌগোলিক ঠিকানার নন, যেমন নন নজরুল। আরো, অবশ্যই তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতা নন_মহাত্মা গান্ধীর ন্যায়, কি নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের ন্যায়, কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ন্যায়। তথাপি তিনি রবীন্দ্রনাথ, প্রসঙ্গ যখন বাংলাদেশ। তাঁর ভাণ্ডার থেকেই তো চয়ন করে নিয়েছি জাতীয় সংগীত : 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি'। এটা অবশ্য একেবারে শেষের কথা, তত দিনে আমরা পেঁৗছে গেছি সার্বভৌমত্বে গরিমান্বিত, মুক্ত বাংলাদেশের ঠিকানায়। কিন্তু প্রারম্ভ পর্বে? শতাব্দীকালের ব্যবধানে এখন সন্ধান করছি_সেই কি রবীন্দ্রনাথই প্রথম চেনানোর প্রয়াস পেয়েছিলেন বিশেষ অবয়বের এই বাংলাদেশকে? পদ্মা-মেঘনা-যমুনার বাংলাদেশকে? কেউ কেউ বলতে পারেন, যোগাযোগটা ছিল 'কাকতালীয়'। তবে ইতিহাসে ওই প্রকারেই ঘটে থাকে। দীর্ঘ দ্বাদশ বর্ষকাল তাঁর ঘনিষ্ঠ বসবাস অন্তর-বাংলার জীবনের সঙ্গে, আকাশ-বাতাস-প্রকৃতির সঙ্গে। রবীন্দ্রজীবনী পাঠ করি, তাঁর গল্প-কবিতা-চিঠিপত্র পাঠ করি এবং তাঁর গান স্মরণ করি_যেন এক নতুন ভুবনকে আবিষ্কার করছেন। সত্য বটে, শত বংশ পরম্পরায় আমরা এই ভূখণ্ডেরই মানুষ, আমাদের তো তেমন করে জানা ছিল না তিনি চিনিয়ে দেওয়ার পূর্বে?
বলছি, রবীন্দ্রনাথ আবিষ্কার করেছিলেন। পর্যটক-অভিযাত্রীর কর্মকাণ্ড নয়। কৌতূহলী সেই মানুষ, সংবেদনশীল চিত্তের, ক্রমেই উদ্ঘাটিত হচ্ছে অপরূপ বাংলাদেশের হৃদয় তাঁর চেতনায় এবং তিনি চিনিয়ে দিচ্ছেন_এই তো বাংলাদেশ, পদ্মাচরের 'কী নিভৃত পাঠশালা'। বর্ণনার গ্রাফিক রেখাঙ্কন নয় মোটে, ভালোবাসার ভাষায় : 'সূর্য ক্রমেই রক্তবর্ণ হয়ে একেবারে পৃথিবীর শেষ রেখার অন্তরালে অন্তর্হিত হয়ে গেল। চারিদিক যে কী সুন্দর হয়ে উঠল, সে আর কী বলব! বহু দূরে একেবারে দিগন্তের শেষ প্রান্তে একটু গাছপালার ঘের দেওয়া ছিল, সেখানটা এমন মায়াময় হয়ে উঠল_নীলেতে-লালেতে মিশে এমন আবছায়া হয়ে এল_মনে হলো, ওইখানে যেন সন্ধ্যার বাড়ি...।' স্থান পতিসর ভায়া আত্রাই। পুনরায়, সাজাদপুরের ছবি : 'খুব উঁচু পাড় বরাবর দুই ধারে গাছপালা লোকালয়_এমন শান্তিময়, এমন সুন্দর, এমন নিভৃত, দুই ধারে স্নেহ-সৌন্দর্য বিতরণ করে নদীটি বেঁকে বেঁকে চলে গেছে_আমাদের বাংলাদেশের একটি অপরিচিত অন্তঃপুরচারিণী নদী।'
পুনরায় বলতে চাইছি, এই বাংলাদেশকে আমাদের এমন স্পষ্ট করে জানা ছিল না তার সামগ্রিকতাকে নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের মানচিত্রটি অবশ্য আয়তনে তেমন বড় ছিল না। তখনকার কুষ্টিয়া, পাবনা, আর রামপুর বোয়ালিয়া (রাজশাহী)_এই তো। নদী প্রধানতই পদ্মা, কোথাও বা যমুনা এসে মিশেছে, কিছু কিছু ছোট, শাখানদী। তবু তাৎপর্যমণ্ডিত সত্যটা এই যে, কালে তা প্রসারিত হয়ে গেল বাংলাদেশজুড়ে। রবীন্দ্রনাথই সেই অনন্য পথিকৃৎ, যিনি (অনাগত ভবিষ্যৎ) এই বাংলাদেশের হৃদয়ের সন্ধান দিয়েছিলেন।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
জানা সত্যটার এবং উত্তরপুরুষকে জানিয়ে দেওয়ার সত্যটার অবতারণা করা যাক। কী প্রকারে আজকের এই বাংলাদেশ? রাজনৈতিক মানচিত্রের বিশেষ স্বাতন্ত্র্য নিয়ে এবং এক সার্বভৌম সত্তা নিয়ে যে এই দেশটির অভ্যুদয়, জীবিত রয়েছেন সবারই তা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। এতদঞ্চলের মানুষ সেই সময় কেমন জীবনতুচ্ছ প্রাণিত প্রেরণায় দুঃসাহসী হয়ে উঠেছিল। মরণজয়ী অভিযান_বাঙালির ঠিকানার সন্ধান। সেদিন সাত কোটি সন্তান সেটি জেনে গিয়েছিল : 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা'। আর সেই সঙ্গে কোটি কণ্ঠে গগনবিদারী শপথ উচ্চারণ 'জয় বাংলা'। ইতিহাসের পালাবদল ঘটেছে_সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জনের ফসল মেঘনা-যমুনার বাঙালির বাংলাদেশ।
এখানে এখন ওই প্রসঙ্গ_রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ; কিংবা আরেকভাবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ। স্মরণ করি, আমাদেরই তো কৈশোরের-যৌবনের তরঙ্গবিক্ষুব্ধ কাল গেছে, যখন রাজনৈতিক প্রতিরোধ সংগ্রামের সমান্তরাল সম্পূরক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের তীব্রতা তুঙ্গে। সেই সময় সবটা মিলিয়ে বাঙালিত্বের চেতনার উদ্বোধনে অপ্রতিরোধ্য প্রেরণার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথে-নজরুলে। ইতিমধ্যে বেশিদিনের কথা তো নয়, তখন রবীন্দ্রনাথে-নজরুলে-বাংলাদেশে একাকার মেশামিশি হয়ে আমাদের চেতনাকে এক নতুন মাত্রিকতায় উজ্জ্বল করে তুলেছিল। রবীন্দ্রনাথের কথাটাই বলি। চলি্লশের-পঞ্চাশের-ষাটের দশকে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সে কী প্রচণ্ড উজ্জীবক প্রেরণার ওই গানগুলো_'বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও', 'এবার তোর নয়া গাঙে বান এসেছে', 'ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো', 'ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে, ততই বাঁধন টুটবে', 'নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়'_এমনি কত! সেই আমরা অমর করে জেনে গিয়েছিলাম_দেশ আমার জননী মাতা 'সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে', এই আমার দেশ 'সোনার বাংলা'; এবং তখন শপথ নিয়েছিলাম 'এখন বাতাস ছুটুক, তুফান উঠুক, ফিরব না গো আর'। আমরা নির্ভয় হয়েছিলাম_বারবার আমাদের উচ্চারণ_ভয় করব না, ভয় করব না। অতঃপর একষট্টিতে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। দুর্গম দুঃসাহসী কঠিনের সড়কে আমাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেল। প্রত্যক্ষ এবং অন্তরালের গভীরে এভাবে কাজ করে যায় প্রেরণার হোমমন্ত্র। এ আমাদেরই আপন অভিজ্ঞতা। যুগে যুগে, দেশে দেশে ইতিহাস তা-ই বলে।
না, যথার্থ যে জন্মসূত্রে রবীন্দ্রনাথ আজকের বাংলাদেশের কোনো ভৌগোলিক ঠিকানার নন, যেমন নন নজরুল। আরো, অবশ্যই তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতা নন_মহাত্মা গান্ধীর ন্যায়, কি নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের ন্যায়, কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ন্যায়। তথাপি তিনি রবীন্দ্রনাথ, প্রসঙ্গ যখন বাংলাদেশ। তাঁর ভাণ্ডার থেকেই তো চয়ন করে নিয়েছি জাতীয় সংগীত : 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি'। এটা অবশ্য একেবারে শেষের কথা, তত দিনে আমরা পেঁৗছে গেছি সার্বভৌমত্বে গরিমান্বিত, মুক্ত বাংলাদেশের ঠিকানায়। কিন্তু প্রারম্ভ পর্বে? শতাব্দীকালের ব্যবধানে এখন সন্ধান করছি_সেই কি রবীন্দ্রনাথই প্রথম চেনানোর প্রয়াস পেয়েছিলেন বিশেষ অবয়বের এই বাংলাদেশকে? পদ্মা-মেঘনা-যমুনার বাংলাদেশকে? কেউ কেউ বলতে পারেন, যোগাযোগটা ছিল 'কাকতালীয়'। তবে ইতিহাসে ওই প্রকারেই ঘটে থাকে। দীর্ঘ দ্বাদশ বর্ষকাল তাঁর ঘনিষ্ঠ বসবাস অন্তর-বাংলার জীবনের সঙ্গে, আকাশ-বাতাস-প্রকৃতির সঙ্গে। রবীন্দ্রজীবনী পাঠ করি, তাঁর গল্প-কবিতা-চিঠিপত্র পাঠ করি এবং তাঁর গান স্মরণ করি_যেন এক নতুন ভুবনকে আবিষ্কার করছেন। সত্য বটে, শত বংশ পরম্পরায় আমরা এই ভূখণ্ডেরই মানুষ, আমাদের তো তেমন করে জানা ছিল না তিনি চিনিয়ে দেওয়ার পূর্বে?
বলছি, রবীন্দ্রনাথ আবিষ্কার করেছিলেন। পর্যটক-অভিযাত্রীর কর্মকাণ্ড নয়। কৌতূহলী সেই মানুষ, সংবেদনশীল চিত্তের, ক্রমেই উদ্ঘাটিত হচ্ছে অপরূপ বাংলাদেশের হৃদয় তাঁর চেতনায় এবং তিনি চিনিয়ে দিচ্ছেন_এই তো বাংলাদেশ, পদ্মাচরের 'কী নিভৃত পাঠশালা'। বর্ণনার গ্রাফিক রেখাঙ্কন নয় মোটে, ভালোবাসার ভাষায় : 'সূর্য ক্রমেই রক্তবর্ণ হয়ে একেবারে পৃথিবীর শেষ রেখার অন্তরালে অন্তর্হিত হয়ে গেল। চারিদিক যে কী সুন্দর হয়ে উঠল, সে আর কী বলব! বহু দূরে একেবারে দিগন্তের শেষ প্রান্তে একটু গাছপালার ঘের দেওয়া ছিল, সেখানটা এমন মায়াময় হয়ে উঠল_নীলেতে-লালেতে মিশে এমন আবছায়া হয়ে এল_মনে হলো, ওইখানে যেন সন্ধ্যার বাড়ি...।' স্থান পতিসর ভায়া আত্রাই। পুনরায়, সাজাদপুরের ছবি : 'খুব উঁচু পাড় বরাবর দুই ধারে গাছপালা লোকালয়_এমন শান্তিময়, এমন সুন্দর, এমন নিভৃত, দুই ধারে স্নেহ-সৌন্দর্য বিতরণ করে নদীটি বেঁকে বেঁকে চলে গেছে_আমাদের বাংলাদেশের একটি অপরিচিত অন্তঃপুরচারিণী নদী।'
পুনরায় বলতে চাইছি, এই বাংলাদেশকে আমাদের এমন স্পষ্ট করে জানা ছিল না তার সামগ্রিকতাকে নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের মানচিত্রটি অবশ্য আয়তনে তেমন বড় ছিল না। তখনকার কুষ্টিয়া, পাবনা, আর রামপুর বোয়ালিয়া (রাজশাহী)_এই তো। নদী প্রধানতই পদ্মা, কোথাও বা যমুনা এসে মিশেছে, কিছু কিছু ছোট, শাখানদী। তবু তাৎপর্যমণ্ডিত সত্যটা এই যে, কালে তা প্রসারিত হয়ে গেল বাংলাদেশজুড়ে। রবীন্দ্রনাথই সেই অনন্য পথিকৃৎ, যিনি (অনাগত ভবিষ্যৎ) এই বাংলাদেশের হৃদয়ের সন্ধান দিয়েছিলেন।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
No comments