স্মরণ-আহসান উল্লাহ মাস্টার : শ্রমজীবী মানুষের বন্ধু ছিলেন by মো. মুজিবুর রহমান

আজ ৭ মে ২০১১, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমানে গাজীপুর জেলা) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে গ্রামে। এ দেশের শ্রমজীবী মানুষের জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার।


তিনি ছিলেন খেতমজুরদের নেতা, শিক্ষকদের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতীয় সংসদের সদস্য। সমাজকে বড় করে দেখতে হলে মানুষকে বড় করে দেখতে হবে, আর সেই মানুষই বড় সম্মান করে আহসান উল্লাহকে তাঁর নামের সঙ্গে একটি পরিচায়ক বিশেষণ জুড়ে দিয়েছিল 'মাস্টার'। পেশাপরিচয় ও শিক্ষকতার আদর্শই তাঁর সমগ্র জীবনাচরণের অঙ্কুর ও শিকড়কে ধারণ করেছিল। টঙ্গী হাই স্কুল থেকে আহসান উল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত তৎকালীন কায়েদে আজম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহে টঙ্গী-জয়দেবপুরের জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেই কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন লড়াকু ছাত্রনেতা প্রয়াত আহসান উল্লাহ। তিনি কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে 'মুজিব তহবিল'-এর জন্য প্রতিটি কুপন ১০ পয়সা করে বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করেন। ছাত্রনেতা আহসান উল্লাহ ১৯৬৯ সালের ছাত্রদের ১১ দফাভিত্তিক গণ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করেন। টঙ্গীর নতুন বাজারে অবস্থিত টঙ্গী হাই স্কুল আউচপাড়ায় স্থানান্তর হওয়ার পর টঙ্গীর নোয়াগাঁওয়ে এম এ মজিদ মিয়া হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার জন্য যে কয়জন শিক্ষানুরাগীর অবদান ছিল, তাঁদের মধ্যে আহসান উল্লাহ একজন। স্কুলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। পরবর্তী সময়ে আহসান উল্লাহ মাস্টার ওই স্কুলে পর্যায়ক্রমে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব আমৃত্যু পালন করেন। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ব্যক্তিসত্তার মধ্যে একজন সমাজদরদী মহান মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়ন, পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন প্রতিনিয়ত। তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করা, নারীশ্রমিক স্বার্থ সংবলিত দাবি বাস্তবায়ন ও বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে মজুরি ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ করার জন্য দেশের নীতিনির্ধারণী মহলের সচেতনতা বৃদ্ধি করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি সংগ্রাম ও আন্দোলন করেছেন মানুষের জন্য। যে স্কুলের তিনি প্রধান শিক্ষক, সেই স্কুলের বিজ্ঞান ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ৭ মে, ঘাতকের বুলেটে শহীদ হন আহসান উল্লাহ মাস্টার। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মো. মুজিবুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.