বরমীর চেপা শুঁটকি যাচ্ছে বিদেশেও by আশরাফুল ইসলাম
‘চেপা’ শব্দটি শহরের অনেক মানুষের কাছেই অচেনা। তবে গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে কর্মের প্রয়োজনে যাদের শহরে আসা তারা পরিচিত এ শব্দের সঙ্গে। আমাদের দেশের নদ-নদী কিংবা খাল-বিলের মিঠাপানির সুস্বাদু পুটি মাছকে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি শুঁটকিকেই বলা হয় ‘চেপা’।
যা আবার পুঁটিমাছের সিঁদল হিসেবে পরিচিত। নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে বিত্তবানদের খাবারের তালিকায় রয়েছে চেপা শুঁটকির স্থান। কাঁচা বা শুকনা মরিচ সহযোগে চেপার সঙ্গে পাটশাক দিয়ে ভর্তার স্বাদ জুড়ি মেলা ভার। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এ চেপা শুঁটকি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর জেলায় ‘চেপা’ খাওয়ার প্রচলন একটু বেশিই।
গাজীপুর জেলার প্রাচীনতম ও দেশের অন্যতম বৃহৎ হাট বরমী। এক সময় পর্তুগিজ, ওলন্দাজ ও বার্মিজদের ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র ছিল বরমী বাজার। গ্রামীণ এ বাজারেই মিলবে সবচেয়ে ভালোমানের চেপা। এখানকার চেপার সুখ্যাতি এতোই যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোজন রসিকরা বরমী বাজার থেকে কিনে নিচ্ছেন সুস্বাদু চেপা শুঁটকি। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ছুটি কাটাতে দেশে এসে কিংবা বিদেশ যাত্রার সময় কিনে নিতে ভুলেন না বরমীর চেপা। ফলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে বরমীর বিশেষ চেপা শুঁটকি।
বাংলাদেশের তৈরি কাপড়, ইলেকট্রনিক্স সমাগ্রী, কৃষিজাত পণ্য, মাছ বিদেশে রফতানির মাধ্যমে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশীয় অর্থনীতিতে রাখছে বিরাট অবদান। সামুদ্রিক ও মিঠাপানির মাছের শুঁটকিও রফতানি হচ্ছে বিদেশে। অনেকে মনে করছেন, সুস্বাদু চেপা শুঁটকিও এক সময় দখল করবে বিদেশের বাঙালি কমিউনিটির বিপণী বিতানগুলো। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বন্দরখ্যাত বরমী বাজারের অন্যতম চেপা ব্যবসায়ী রথীন্দ্রচন্দ্র বর্মণ (৬৫)। উত্তরাধিকার সূত্রে পিতা রমাকান্ত বর্মণের কাছ থেকে তিনি এ ব্যবসা পেয়েছেন। রথীন্দ্রচন্দ্র বর্মণ বলেন, স্থানীয় বর্মণ পরিবারের সদস্যরা প্রায় দুইশ’ বছর ধরে বংস পরম্পরায় এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান, চেপা মূলত: পুঁঠিমাছ দিয়েই বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত শুঁটকি। ভালোমানের এককেজি চেপা শুঁটকির দাম ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। কি আছে চেপা শুঁটকিতে। কেনইবা এর দাম এতো তা জানতে চেপার কারিগরখ্যাত বরমীর কোশাদিয়া গ্রামের রথীন্দ্রচন্দ্র বর্মণের বাড়িতে দেখা যায় কয়েকটি ঘরে বস্তায় ভরে স্তূপাকারে রাখা হয়েছে শুকনো পুঁঠিমাছ।
এ পুঁটিমাছ গোপালগঞ্জের টেকেরহাট, সাতপাড় ও কিশোরগঞ্জের বড়বাজার থেকে কিনে এনে তৈরি করা হয় এ শুঁটকি। প্রতিমণ শুকনো পুঁঠি মাছের দাম ১৬/১৮ হাজার টাকা। চেপা তৈরির এ কাঁচামাল ভালো করে কয়েক দিন রোদে শুকিয়ে বরমীর শীতলক্ষ্যা নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধুয়ে নেন কারিগররা। এতে শুঁটকির ময়লা পরিষ্কার হয়ে নরম হয়। ধোয়া শুঁটকি গভীর রাত পর্যন্ত পানি ঝরিয়ে মাটির বিশেষ পাত্রে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে ভরে রাখেন কারিগররা। এরআগে পুঁঠি মাছের তেল দিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেয়া হয় পাত্রটি। মাছ ভরা হয়ে গেলে আগে থেকে তৈরি করা ‘ঘাগা’ (মাছ ও তেলের সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের মণ্ড) দিয়ে নিখুঁতভাবে ঢেকে দেয়া হয়। এরপর পলিথিনের ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে কমপক্ষে ৩ মাসের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় পাত্রটি।
কারিগররা জানান, চেপার প্রকৃত স্বাদ ও গন্ধ অটুট রাখতে পাত্রটি বাতাসমুক্ত করে ভর্তি করা হয়। ৩ মাস পর তা খাওয়ার উপযোগী হয়। চেপা দিয়ে এ অঞ্চলে তৈরি হয় রকমারি খাবার। এর মধ্যে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, রসুনের সমন্বয়ে চেপার ভর্তা, লাউপাতা ও চেপার ভর্তা দিয়ে চেপার পুলি, চেপার পিঠা, চেপার চাশনি উল্লেখযোগ্য। চেপা দিয়ে তৈরি তরকারি ছাড়াও এর বহুমাত্রিক ব্যবহার রয়েছে। স্থানীয়দের কাছে পোলাও-মাংসের চেয়ে চেপার কদর একটু বেশি! চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাট শাকের সঙ্গে চেপা ভর্তার যেন বিকল্প নেই। বরমীতে চেপা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রায় ২০/২২টি পরিবার। তাদের কাছ থেকে পাইকারী কিনে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করছে শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। প্রবাসী বাংলাদেশিরা গ্রাম বাংলার এ খাবারের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ছুটিতে এসে অন্যকিছু নিতে না পারলেও চেপা নিতে ভুল করেন না তারা।
এ পুঁটিমাছ গোপালগঞ্জের টেকেরহাট, সাতপাড় ও কিশোরগঞ্জের বড়বাজার থেকে কিনে এনে তৈরি করা হয় এ শুঁটকি। প্রতিমণ শুকনো পুঁঠি মাছের দাম ১৬/১৮ হাজার টাকা। চেপা তৈরির এ কাঁচামাল ভালো করে কয়েক দিন রোদে শুকিয়ে বরমীর শীতলক্ষ্যা নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধুয়ে নেন কারিগররা। এতে শুঁটকির ময়লা পরিষ্কার হয়ে নরম হয়। ধোয়া শুঁটকি গভীর রাত পর্যন্ত পানি ঝরিয়ে মাটির বিশেষ পাত্রে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে ভরে রাখেন কারিগররা। এরআগে পুঁঠি মাছের তেল দিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেয়া হয় পাত্রটি। মাছ ভরা হয়ে গেলে আগে থেকে তৈরি করা ‘ঘাগা’ (মাছ ও তেলের সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের মণ্ড) দিয়ে নিখুঁতভাবে ঢেকে দেয়া হয়। এরপর পলিথিনের ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে কমপক্ষে ৩ মাসের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় পাত্রটি।
কারিগররা জানান, চেপার প্রকৃত স্বাদ ও গন্ধ অটুট রাখতে পাত্রটি বাতাসমুক্ত করে ভর্তি করা হয়। ৩ মাস পর তা খাওয়ার উপযোগী হয়। চেপা দিয়ে এ অঞ্চলে তৈরি হয় রকমারি খাবার। এর মধ্যে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, রসুনের সমন্বয়ে চেপার ভর্তা, লাউপাতা ও চেপার ভর্তা দিয়ে চেপার পুলি, চেপার পিঠা, চেপার চাশনি উল্লেখযোগ্য। চেপা দিয়ে তৈরি তরকারি ছাড়াও এর বহুমাত্রিক ব্যবহার রয়েছে। স্থানীয়দের কাছে পোলাও-মাংসের চেয়ে চেপার কদর একটু বেশি! চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাট শাকের সঙ্গে চেপা ভর্তার যেন বিকল্প নেই। বরমীতে চেপা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রায় ২০/২২টি পরিবার। তাদের কাছ থেকে পাইকারী কিনে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করছে শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। প্রবাসী বাংলাদেশিরা গ্রাম বাংলার এ খাবারের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ছুটিতে এসে অন্যকিছু নিতে না পারলেও চেপা নিতে ভুল করেন না তারা।
No comments