দরবারের দুই কোটি টাকা লুট by কামরুল হাসান
চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানা এলাকার একটি দরবার শরিফ থেকে দুই কোটি টাকা লুট করেছে র্যাবের একটি দল। প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে শনাক্ত করেছে র্যাব সদর দপ্তর। তদন্তে আরও বেরিয়ে এসেছে, র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল জুলফিকার আলী মজুমদার লুটের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
এই টাকা লুটের ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ৪ নভেম্বর। দরবার শরিফের কর্তৃপক্ষ প্রথমে ভেবেছিল, র্যাব সদস্যরা টাকার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তা ফেরত দেবে। ফলে প্রথম দিকে তারা চুপচাপ থাকলেও পরে এ নিয়ে অনেক দেনদরবার করে। এর একপর্যায়ে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি পায়। কিন্তু টাকা আর পায়নি। এই দীর্ঘ সময়ে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি বা কোনো মামলা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি এ ঘটনা তদন্ত করছে। অভিযুক্ত অধিনায়কসহ পাঁচ সদস্যকে চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করে মূল বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
র্যাব সূত্র জানায়, এ ঘটনা তদন্তে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত শনিবার সকালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় অধিনায়ক জুলফিকার আলী মজুমদার ছাড়াও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদুল হাসান, ডিএডি শফিক, এসআই তরুণ কুমার বসু, কনস্টেবল হাসান ও তাঁদের দুই সোর্স জড়িত থাকার প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। তাঁরা সেখান থেকে দুই কোটি সাত হাজার টাকা নিয়ে আসেন। তবে এই টাকা থানা বা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি তাঁরা।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য লে. কর্নেল জুলফিকার আলী মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কথা বলা সম্ভব হয়নি।
দুই সপ্তাহ আগে অভিযুক্ত র্যাব সদস্যদের চট্টগ্রাম থেকে র্যাব সদর দপ্তরে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) তাঁদের নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরও কেন মামলা করা হলো না, জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লুটের বর্ণনা: গতকাল রোববার ওই দরবারে গেলে মুরিদ মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদের দুই দিন আগে মুরিদদের অনেক টাকা দরবারে জমা হয়। ঈদের ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকায় এসব টাকা দরবারেই রাখা হয়। পীর আহমদ ছফা ধারণা করেছিলেন, আল্লাহর ঘরের টাকায় কেউ হাত দেবেন না। ইদ্রিস বলেন, ৪ নভেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে র্যাব-৭-এর একটি দল দরবারে আসে। তাঁরা দরবারের ভেতরে ঢুকে মূল ফটক বন্ধ করে দেন। এরপর পীর আহমদ ছফাকে দোতলার একটি কক্ষে আটকে হাত বেঁধে ফেলেন। এরপর জোর করে তাঁর কাছ থেকে আলমারির চাবি ছিনিয়ে নেন। তাঁরা দরবারের নিচের তলায় এসে প্রতিটি কক্ষে তন্ন তন্ন করে খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করেন। নিচের তলায় একটি কক্ষের ভেতরে রাখা আলমারির তালা খুলতে না পেরে সেটা ভেঙে ফেলেন র্যাব সদস্যরা। ওই আলমারিতে ছয়টি ব্যাগে ভরা দুই কোটি সাত হাজার টাকা রাখা ছিল। টাকাগুলো তিনটি ব্যাগে ভরে র্যাব গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি টাকার রসিদ চাইলে র্যাব সদস্যরা তাঁকে ভয় দেখান।
ইদ্রিস বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, টাকাগুলোর উৎস জানার জন্য হয়তো র্যাব এ টাকা নিয়েছে। পরে এ টাকা থানায় জমা দেবে। এ কারণে ঘটনার পরদিন বিষয়টি তিনি লিখিতভাবে আনোয়ারা থানার পুলিশকে জানান।
মোহাম্মদ আলম নামের এক গ্রামবাসী জানান, ওই দিন দরবারে ডাকাত পড়েছে বলে খবর রটে যায়। গ্রামের লোকজন এ খবরে জড়ো হলে র্যাব সদস্যরা তাঁদের পরিচয় দিয়ে গ্রামবাসীকে চলে যেতে বলেন। র্যাব সদস্যরা গ্রামবাসীকে জানান, দরবারের ভেতরে অস্ত্র উদ্ধার ও রোহিঙ্গা গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। ওই গ্রামবাসী বলেন, দিদার নামের এক সোর্স র্যাবকে ডেকে আনে। এ সময় খবর পেয়ে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেখানে গেলে র্যাব সদস্যরা তাঁকে দরবারের ভেতরে ঢুকতে দেননি। পরে পুলিশ ফিরে যায়।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে তিনি দরবারে গিয়ে দেখেন, মূল ফটকের সামনে অধিনায়ক লে. কর্নেল জুলফিকার ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদুল হাসান দাঁড়িয়ে আছেন। ভেতরে যেতে চাইলে জুলফিকার বলেন, ‘র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চলছে, আপনার প্রয়োজন নেই। আপনি চলে যেতে পারেন।’ এরপর তিনি থানায় ফিরে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ওসি বলেন, ওই দিন রাতেই তিনি টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা মৌখিকভাবে শুনতে পান। তবে পরদিন দরবার থেকে লিখিত অভিযোগ পান। অভিযোগের বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান। এ নিয়ে দরবার কর্তৃপক্ষ মামলা করতে রাজি হয়নি।
দরবারের কর্মচারী মুন্নাফ জানান, র্যাব সদস্যরা দরবারে পেছনের গোলাঘর থেকে চার রাখালকে আটক করেন। এদের রোহিঙ্গা বলে গ্রেপ্তার করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
আনোয়ারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, দরবারের অভিযান নিয়ে পরদিন ৫ নভেম্বর র্যাবের ডিএডি আবুল বাশার বাদী হয়ে আনোয়ারা থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ইমন হোসেন, জাহিদ আলম, আজিজ খান ও ইউনুস আলীকে আসামি করা হয়। বিদেশি নাগরিক-সম্পর্কিত আইনে করা মামলায় এদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরা চারজনই মিয়ানমারের নাগরিক বলে র্যাবের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরে আদালত তাদের জামিন দেন।
গ্রামবাসী জানিয়েছেন, এ ঘটনাটি তাঁরা এলাকার সাংসদ আখতারুজ্জামান চৌধুরীকে জানিয়েছিলেন। তিনি এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ আখতারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর গ্রামবাসী তাঁর কাছে এসেছিল। তারা দুই কোটি টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে। র্যাবের ওই কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
টাকা লুটের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন মামলা করেননি, জানতে চাইলে পীর আহমদ ছফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতারা আর এদুগুন টিয়া লই গিয়্যে। কেন গইজ্জুম। আইঁ বড়া মানুষ। আঁরে বাদি ফ্যালাইয়ে। বেইজ্জত গইজ্জে। ইতারা আর তুন মাফও ন চায়। (ওরা আমার এতগুলো টাকা নিয়ে গেল, দুঃখ নেই। আমি বুড়ো মানুষ। আমাকে বেঁধে রাখল, অপমান করল। একবার মাফও চাইল না।)
দরবারটি ৫০ বছরের পুরোনো: চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম তালসরা। এ গ্রামের ঠিক মাঝখানে পীর আহমদ ছফার বিশাল দরবার শরিফ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো এ দরবার শরিফটি তিন একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দরবারে যাওয়া-আসা করেন। তাঁদের থাকা-খাওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মুরিদদের জমায়েত ও মিলাদ মাহফিল হয়। দরবারের পেছনে আছে একটি গোয়ালঘর। সেখানে শতাধিক গরু ও মহিষ আছে। দান-মানত হিসেবে এসব এসেছে। দরবারের ভেতরে নারী-পুরুষের জন্য আছে বিশাল আকারের পৃথক মসজিদ। গত কোরবানির ঈদের আগে থেকে একতলা মসজিদ দুটি দোতলা করার জন্য মুরিদদের কাছ থেকে দান নেওয়া হচ্ছিল। র্যাবের অভিযানের আগে পর্যন্ত দান হিসেবে সেখানে দুই কোটি টাকার বেশি জমা পড়ে। দরবারের একটি কক্ষে স্টিলের বাক্সে এসব টাকা রাখা হয়। এই বাক্সের তালা ভেঙে র্যাব সদস্যরা দুই কোটি সাত হাজার টাকা নিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি এ ঘটনা তদন্ত করছে। অভিযুক্ত অধিনায়কসহ পাঁচ সদস্যকে চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করে মূল বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
র্যাব সূত্র জানায়, এ ঘটনা তদন্তে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত শনিবার সকালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় অধিনায়ক জুলফিকার আলী মজুমদার ছাড়াও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদুল হাসান, ডিএডি শফিক, এসআই তরুণ কুমার বসু, কনস্টেবল হাসান ও তাঁদের দুই সোর্স জড়িত থাকার প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। তাঁরা সেখান থেকে দুই কোটি সাত হাজার টাকা নিয়ে আসেন। তবে এই টাকা থানা বা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি তাঁরা।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য লে. কর্নেল জুলফিকার আলী মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কথা বলা সম্ভব হয়নি।
দুই সপ্তাহ আগে অভিযুক্ত র্যাব সদস্যদের চট্টগ্রাম থেকে র্যাব সদর দপ্তরে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) তাঁদের নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরও কেন মামলা করা হলো না, জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লুটের বর্ণনা: গতকাল রোববার ওই দরবারে গেলে মুরিদ মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদের দুই দিন আগে মুরিদদের অনেক টাকা দরবারে জমা হয়। ঈদের ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকায় এসব টাকা দরবারেই রাখা হয়। পীর আহমদ ছফা ধারণা করেছিলেন, আল্লাহর ঘরের টাকায় কেউ হাত দেবেন না। ইদ্রিস বলেন, ৪ নভেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে র্যাব-৭-এর একটি দল দরবারে আসে। তাঁরা দরবারের ভেতরে ঢুকে মূল ফটক বন্ধ করে দেন। এরপর পীর আহমদ ছফাকে দোতলার একটি কক্ষে আটকে হাত বেঁধে ফেলেন। এরপর জোর করে তাঁর কাছ থেকে আলমারির চাবি ছিনিয়ে নেন। তাঁরা দরবারের নিচের তলায় এসে প্রতিটি কক্ষে তন্ন তন্ন করে খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করেন। নিচের তলায় একটি কক্ষের ভেতরে রাখা আলমারির তালা খুলতে না পেরে সেটা ভেঙে ফেলেন র্যাব সদস্যরা। ওই আলমারিতে ছয়টি ব্যাগে ভরা দুই কোটি সাত হাজার টাকা রাখা ছিল। টাকাগুলো তিনটি ব্যাগে ভরে র্যাব গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি টাকার রসিদ চাইলে র্যাব সদস্যরা তাঁকে ভয় দেখান।
ইদ্রিস বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, টাকাগুলোর উৎস জানার জন্য হয়তো র্যাব এ টাকা নিয়েছে। পরে এ টাকা থানায় জমা দেবে। এ কারণে ঘটনার পরদিন বিষয়টি তিনি লিখিতভাবে আনোয়ারা থানার পুলিশকে জানান।
মোহাম্মদ আলম নামের এক গ্রামবাসী জানান, ওই দিন দরবারে ডাকাত পড়েছে বলে খবর রটে যায়। গ্রামের লোকজন এ খবরে জড়ো হলে র্যাব সদস্যরা তাঁদের পরিচয় দিয়ে গ্রামবাসীকে চলে যেতে বলেন। র্যাব সদস্যরা গ্রামবাসীকে জানান, দরবারের ভেতরে অস্ত্র উদ্ধার ও রোহিঙ্গা গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। ওই গ্রামবাসী বলেন, দিদার নামের এক সোর্স র্যাবকে ডেকে আনে। এ সময় খবর পেয়ে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেখানে গেলে র্যাব সদস্যরা তাঁকে দরবারের ভেতরে ঢুকতে দেননি। পরে পুলিশ ফিরে যায়।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে তিনি দরবারে গিয়ে দেখেন, মূল ফটকের সামনে অধিনায়ক লে. কর্নেল জুলফিকার ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদুল হাসান দাঁড়িয়ে আছেন। ভেতরে যেতে চাইলে জুলফিকার বলেন, ‘র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চলছে, আপনার প্রয়োজন নেই। আপনি চলে যেতে পারেন।’ এরপর তিনি থানায় ফিরে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ওসি বলেন, ওই দিন রাতেই তিনি টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা মৌখিকভাবে শুনতে পান। তবে পরদিন দরবার থেকে লিখিত অভিযোগ পান। অভিযোগের বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান। এ নিয়ে দরবার কর্তৃপক্ষ মামলা করতে রাজি হয়নি।
দরবারের কর্মচারী মুন্নাফ জানান, র্যাব সদস্যরা দরবারে পেছনের গোলাঘর থেকে চার রাখালকে আটক করেন। এদের রোহিঙ্গা বলে গ্রেপ্তার করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
আনোয়ারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, দরবারের অভিযান নিয়ে পরদিন ৫ নভেম্বর র্যাবের ডিএডি আবুল বাশার বাদী হয়ে আনোয়ারা থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ইমন হোসেন, জাহিদ আলম, আজিজ খান ও ইউনুস আলীকে আসামি করা হয়। বিদেশি নাগরিক-সম্পর্কিত আইনে করা মামলায় এদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরা চারজনই মিয়ানমারের নাগরিক বলে র্যাবের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরে আদালত তাদের জামিন দেন।
গ্রামবাসী জানিয়েছেন, এ ঘটনাটি তাঁরা এলাকার সাংসদ আখতারুজ্জামান চৌধুরীকে জানিয়েছিলেন। তিনি এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ আখতারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর গ্রামবাসী তাঁর কাছে এসেছিল। তারা দুই কোটি টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে। র্যাবের ওই কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
টাকা লুটের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন মামলা করেননি, জানতে চাইলে পীর আহমদ ছফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতারা আর এদুগুন টিয়া লই গিয়্যে। কেন গইজ্জুম। আইঁ বড়া মানুষ। আঁরে বাদি ফ্যালাইয়ে। বেইজ্জত গইজ্জে। ইতারা আর তুন মাফও ন চায়। (ওরা আমার এতগুলো টাকা নিয়ে গেল, দুঃখ নেই। আমি বুড়ো মানুষ। আমাকে বেঁধে রাখল, অপমান করল। একবার মাফও চাইল না।)
দরবারটি ৫০ বছরের পুরোনো: চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম তালসরা। এ গ্রামের ঠিক মাঝখানে পীর আহমদ ছফার বিশাল দরবার শরিফ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো এ দরবার শরিফটি তিন একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দরবারে যাওয়া-আসা করেন। তাঁদের থাকা-খাওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মুরিদদের জমায়েত ও মিলাদ মাহফিল হয়। দরবারের পেছনে আছে একটি গোয়ালঘর। সেখানে শতাধিক গরু ও মহিষ আছে। দান-মানত হিসেবে এসব এসেছে। দরবারের ভেতরে নারী-পুরুষের জন্য আছে বিশাল আকারের পৃথক মসজিদ। গত কোরবানির ঈদের আগে থেকে একতলা মসজিদ দুটি দোতলা করার জন্য মুরিদদের কাছ থেকে দান নেওয়া হচ্ছিল। র্যাবের অভিযানের আগে পর্যন্ত দান হিসেবে সেখানে দুই কোটি টাকার বেশি জমা পড়ে। দরবারের একটি কক্ষে স্টিলের বাক্সে এসব টাকা রাখা হয়। এই বাক্সের তালা ভেঙে র্যাব সদস্যরা দুই কোটি সাত হাজার টাকা নিয়ে যান।
No comments