নতুন শীতল যুদ্ধ শুরু by রবার্ট ফিক্স
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র-সামর্থ্য অর্জন করলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ একই পথে হাঁটতে চাইবে বলে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ অতিশয় বোকাটে ধরনের মন্তব্য করেন। হেগ নিজেকে একজন ভিন্ন ধরনের মানুষ হিসেবে চিত্রিত করতে চেষ্টা করে আসছেন। তাই তার মতো লোক এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন তা ভাবাটা কঠিন।
হেগের পহেলা নম্বরের ত্রুটি হলো, মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি দেশের হাতে যে কয়েকশ' পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং সে অস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করার মতো ক্ষেপণাস্ত্রও তাদের রয়েছে, সেটি তিনি তার মন্তব্যে উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পারমাণবিক শক্তিধর দেশটির নাম ইসরায়েল। তিনি কি সত্যি সত্যি এ বিষয়টি জানতেন না? এটা অবশ্যই তার জানা। তিনি আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, দেখ! ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তাহলে অবশ্যই অন্যান্য আরব দেশ, মুসলিম রাষ্ট্রগুলো একই ধরনের ক্ষমতা লাভ করতে ব্যগ্র হয়ে উঠবে আর তার দৃষ্টিতে ওটা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। তার ধারণায় ইসরায়েলের হাতে ইতিমধ্যে যে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ ইরানের একই শক্তি অর্জনের বিষয়টি।
এখন ব্রিটেন আরব দেশগুলোর কাছে শত শত কোটি পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রি করছে। ইরান ওইসব দেশকে আক্রমণ করতে পারে, এই ভুয়া ধুয়া তুলে তাদের প্রতিরক্ষার নামে এসব অস্ত্র বিক্রি করা চলছে। তাই এ অঞ্চলে অস্ত্র বিস্তার রোধ করার ব্যাপারে কথা বলার মতো ব্রিটেনের মুখ নেই। উপসাগরীয় অস্ত্র মেলায় দেখা গেছে আরব দেশগুলোকে শত্রুর হাত (অবশ্যই ইরান) থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান ও অন্য অস্ত্রগুলো যে কার্যকর সেটা ফিল্মের মাধ্যমে তুলে ধরতে।
এবার হেগের বক্তব্যের শেষাংশে আসা যাক। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র উদ্ভাবনের পর থেকে এবার মারাত্মক ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের বিপদ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শীতল যুদ্ধের উদ্ভব হতে পারে, যেটা হবে বৈশ্বিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। হেগ তথাকথিত মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছে। তবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ভারত ও পাকিস্তানে পারমাণবিক বোমা তৈরির পর পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের প্রকৃত বিপদ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান তো আল কায়দা ও স্বদেশী তালেবানে উপদ্রুত।
হেগের বক্তব্য অনুযায়ী এ মুহূর্তে ইরানকে কেউ আক্রমণ করুক তারা তা চান না বলে উপসাগরীয় দেশটিকে আশ্বস্ত করা উত্তম। ইরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিরিয়ার বাশার আল আসাদের ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর ইরান আক্রমণের বিষয়টি সামনে চলে আসবে। এর ফলে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে সমর্থনশূন্য হয়ে পড়বে। এ কারণেই আসাদের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য দিন দিন দাবি তুলে শোরগোল করা হচ্ছে। অন্যদিকে তারা আসাদকে উৎখাত করার জন্য সামরিকভাবে জড়িত হবে না বলেও উল্লেখ করছে। যতবার তারা সিরিয়ায় আসাদের বিরুদ্ধে অভিযানে ন্যাটো শামিল হবে না বলে উচ্চারণ করছে, যতবার তারা বলছে ইরাকের মতো সিরিয়ায় 'বিমান উড্ডয়নমুক্ত এলাকা' কার্যকর করবে না, ততবারই তাদের আসাদের বিরুদ্ধে অনেক বেশি ত্রুক্রদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা গেছে। তাদের ক্ষোভ একটাই বাশার আল আসাদ কেন ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিচ্ছে না! সে কেন এখনও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে! তাদের ভাবটা এমন_ আসাদ ভালোয় ভালোয় বিদায় হলে দেশটির ওপর শেল নিক্ষেপ, বোমা ফেলা বা দেশটিকে বুলডোজ করার মতো বিশ্রী কাণ্ড করার মতো ঝক্কি তাদের পোহাতে হতো না!
হেগ সিরিয়ার ব্যাপারে অনেক কঠোর কথাবার্তা বললেও তিনি এ মুহূর্তে দেশটি কেউ আক্রমণ করুক তা সমর্থন করছেন না। তিনি সঠিকভাবেই চলতি সপ্তাহে মারিয়ে কলভিনের মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। আমি শেষবার কলভিনকে মিসরে গণঅভ্যুত্থান চলার শেষ দিনগুলোতে গুলি-টিয়ারগ্যাস চলার সময়ও অবিচল দেখেছিলাম।
সিরিয়ায় এ পর্যন্ত শত শত নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি অংশ বিরোধীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। কিন্তু বিরোধীদের নৃশংসতার বিরুদ্ধে হেগ সাহেবদের টুঁ শব্দটিও করতে দেখা যায়নি, যতটা তারা উচ্চকণ্ঠ আসাদের বিরুদ্ধে। সিরিয়ায় ব্রিটেন সশস্ত্রভাবে জড়িত হবে না বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন এর জন্য তাকে ধন্যবাদ। কারণ ইরান নয়, সিরিয়াকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে ইতিমধ্যে শীতল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। রাশিয়া ইতিমধ্যে আসাদের পক্ষ নিয়ে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আসাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতে গেলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাবেন তা এখনও রহস্যময়। তাছাড়া হেগ ও অন্যরা যেমনটা দেখতে চান সেই নতুন গণতান্ত্রিক সিরিয়া যে পশ্চিমা সমর্থক হবে, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
১৯৮২ সালে হামায় ১০ হাজার সুনি্ন মুসলমানকে হত্যা করার জন্য ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্টের নীরব সম্মতির বিষয়টি সিরিয়ার মানুষের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। গত ২৫ মার্চ ছিল এই হত্যাযজ্ঞের ৩০তম বার্ষিকী।
রবার্ট ফিক্স :ব্রিটিশ সাংবাদিক
লন্ডনের 'দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট' থেকে
ভাষান্তর সুভাষ সাহা
এখন ব্রিটেন আরব দেশগুলোর কাছে শত শত কোটি পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রি করছে। ইরান ওইসব দেশকে আক্রমণ করতে পারে, এই ভুয়া ধুয়া তুলে তাদের প্রতিরক্ষার নামে এসব অস্ত্র বিক্রি করা চলছে। তাই এ অঞ্চলে অস্ত্র বিস্তার রোধ করার ব্যাপারে কথা বলার মতো ব্রিটেনের মুখ নেই। উপসাগরীয় অস্ত্র মেলায় দেখা গেছে আরব দেশগুলোকে শত্রুর হাত (অবশ্যই ইরান) থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান ও অন্য অস্ত্রগুলো যে কার্যকর সেটা ফিল্মের মাধ্যমে তুলে ধরতে।
এবার হেগের বক্তব্যের শেষাংশে আসা যাক। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র উদ্ভাবনের পর থেকে এবার মারাত্মক ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের বিপদ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শীতল যুদ্ধের উদ্ভব হতে পারে, যেটা হবে বৈশ্বিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। হেগ তথাকথিত মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছে। তবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ভারত ও পাকিস্তানে পারমাণবিক বোমা তৈরির পর পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের প্রকৃত বিপদ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান তো আল কায়দা ও স্বদেশী তালেবানে উপদ্রুত।
হেগের বক্তব্য অনুযায়ী এ মুহূর্তে ইরানকে কেউ আক্রমণ করুক তারা তা চান না বলে উপসাগরীয় দেশটিকে আশ্বস্ত করা উত্তম। ইরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিরিয়ার বাশার আল আসাদের ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর ইরান আক্রমণের বিষয়টি সামনে চলে আসবে। এর ফলে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে সমর্থনশূন্য হয়ে পড়বে। এ কারণেই আসাদের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য দিন দিন দাবি তুলে শোরগোল করা হচ্ছে। অন্যদিকে তারা আসাদকে উৎখাত করার জন্য সামরিকভাবে জড়িত হবে না বলেও উল্লেখ করছে। যতবার তারা সিরিয়ায় আসাদের বিরুদ্ধে অভিযানে ন্যাটো শামিল হবে না বলে উচ্চারণ করছে, যতবার তারা বলছে ইরাকের মতো সিরিয়ায় 'বিমান উড্ডয়নমুক্ত এলাকা' কার্যকর করবে না, ততবারই তাদের আসাদের বিরুদ্ধে অনেক বেশি ত্রুক্রদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা গেছে। তাদের ক্ষোভ একটাই বাশার আল আসাদ কেন ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিচ্ছে না! সে কেন এখনও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে! তাদের ভাবটা এমন_ আসাদ ভালোয় ভালোয় বিদায় হলে দেশটির ওপর শেল নিক্ষেপ, বোমা ফেলা বা দেশটিকে বুলডোজ করার মতো বিশ্রী কাণ্ড করার মতো ঝক্কি তাদের পোহাতে হতো না!
হেগ সিরিয়ার ব্যাপারে অনেক কঠোর কথাবার্তা বললেও তিনি এ মুহূর্তে দেশটি কেউ আক্রমণ করুক তা সমর্থন করছেন না। তিনি সঠিকভাবেই চলতি সপ্তাহে মারিয়ে কলভিনের মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। আমি শেষবার কলভিনকে মিসরে গণঅভ্যুত্থান চলার শেষ দিনগুলোতে গুলি-টিয়ারগ্যাস চলার সময়ও অবিচল দেখেছিলাম।
সিরিয়ায় এ পর্যন্ত শত শত নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি অংশ বিরোধীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। কিন্তু বিরোধীদের নৃশংসতার বিরুদ্ধে হেগ সাহেবদের টুঁ শব্দটিও করতে দেখা যায়নি, যতটা তারা উচ্চকণ্ঠ আসাদের বিরুদ্ধে। সিরিয়ায় ব্রিটেন সশস্ত্রভাবে জড়িত হবে না বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন এর জন্য তাকে ধন্যবাদ। কারণ ইরান নয়, সিরিয়াকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে ইতিমধ্যে শীতল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। রাশিয়া ইতিমধ্যে আসাদের পক্ষ নিয়ে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আসাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতে গেলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাবেন তা এখনও রহস্যময়। তাছাড়া হেগ ও অন্যরা যেমনটা দেখতে চান সেই নতুন গণতান্ত্রিক সিরিয়া যে পশ্চিমা সমর্থক হবে, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
১৯৮২ সালে হামায় ১০ হাজার সুনি্ন মুসলমানকে হত্যা করার জন্য ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্টের নীরব সম্মতির বিষয়টি সিরিয়ার মানুষের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। গত ২৫ মার্চ ছিল এই হত্যাযজ্ঞের ৩০তম বার্ষিকী।
রবার্ট ফিক্স :ব্রিটিশ সাংবাদিক
লন্ডনের 'দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট' থেকে
ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments