আরেক আলোকে-একটি পশ্চিমা চ্যালেঞ্জ by ইনাম আহমদ চৌধুরী

তবুও এটা বুঝে নেওয়ার প্রয়োজন আছে যে, কী ভাবে এবং কত প্রকারে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। অ-পশ্চিমাদের তাই এই আগ্রাসনমূলক কার্যক্রম মোকাবেলার জন্য সুসংহত ও নীতিনিষ্ঠ আচরণের প্রয়োজন আছে। বুঝিয়ে দিতে হবে ইসলামিক আইন বা শরিয়া অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো অভিলাষ বা ইচ্ছা মুসলমানদের কিংবা কোনো মুসলিম


রাষ্ট্রশক্তির নেই। ধর্মপালন একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্যান্য বহুস্বার্থগত চিন্তা রয়েছে। যা মানুষকে ঐক্যবন্ধনে গ্রোথিত করতে পারে


পশ্চিমের পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো সবসময় বহির্জগতের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নিরন্তর সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে আপন আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে গেছে। বস্তুত পৃথিবীতে যখন থেকে 'নেশন স্টেট' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যখন থেকে বিভিন্ন জাতি রাষ্ট্রীয় পরিসীমায় আবদ্ধ হয়ে আপন শাসন পরিচালনা করেছে; তখন থেকেই তাদের স্বার্থবুদ্ধির উদয় হয়েছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, ভূ-পরিসীমাগত স্বার্থ বিস্তারের মাধ্যমে নিজের রাষ্ট্র ও জাতির উন্নয়ন সাধন করা।
প্রাচীন গ্রিক রাজ্যগুলো 'গণতান্ত্রিক' হলেও নিজেদের মধ্যে কিছু যুদ্ধ করেছে; কিন্তু সেটা ছিল নেতৃত্বের যুদ্ধ। অর্থাৎ তখনকার দিনের পরিচিত গ্রিক বিশ্বের কর্তৃত্ব কে নেবে। মেসিডোনিয়া থেকে আলেকজান্ডার বেরিয়ে পড়েছিলেন দিগ্গি্বজয়ে। তারপর রোমান সাম্রাজ্যের পত্তন। এবং এগুলোতে মূলত গ্রিকো-রোমান সভ্যতারই শুধু যে প্রসার হলো তা নয়, ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিজিত রাজ্যগুলো রোমের পদানত হয়ে পড়ল। তাদের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য রোখা প্রায় অসম্ভবই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর মধ্যে ঘটে গেল ষষ্ঠ শতাব্দীতে ইসলামের আবির্ভাব এবং সেটা আরব বা মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিকই হয়ে থাকল। এই অঞ্চল থেকেই ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মের উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসের গতিচক্রে বা বিবর্তনে তা পশ্চিমাদের হেফাজতে চলে গেল। ইহুদি ধর্মের নেতারা ইউরোপকেন্দ্রিক হয়ে উঠলেন। আর রোমের পোপ তো হয়ে উঠলেন রোমান ক্যাথলিকদের ভাগ্যবিধাতা। পরবর্তীকালে প্রটেস্ট্যাট চিন্তাধারার উদ্ভবও হলো ইউরোপে। তাদের কাছে আরব বা মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক ইসলাম একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতীয় মতামত ও চিন্তাধারা বলে প্রতিভাত হতে থাকল।
এটা অবশ্য অনস্বীকার্য যে, এই তিন ধর্মের মূলনীতি একই_ সকলেই নিরাকার একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করে_ সকলেই বিশ্বাস করে তাদের ধর্মগুরু সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত। কিন্তু যে কারণে ওদের সঙ্গে এই প্রাচ্যে উদ্ভূত মত ও পথ অবলম্বীদের স্বার্থ সংঘাত শুরু হলো তা মূলত আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই, বলতে গেলে ইসলামের উদ্ভবের একশ' বছরের মধ্যেই, অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ইসলাম ধর্ম ও আরব প্রশাসন পৃথিবীর বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে প্রসারিত হলো। যা হয়ে দাঁড়াল আকৃতিতে মধ্য গগনে রোমান সাম্রাজ্যের চেয়েও বৃহত্তর। পশ্চিমা দেশগুলো তখন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতি, ভাষা ও রাষ্ট্রসীমা বিস্তৃত হয়ে শুরু করল ক্রুসেড। আরব নেতৃত্বে মুসলিম ভূখণ্ড থেকে শুরু হলো জিহাদ। কিন্তু পুরোপুরি আরব নেতৃত্ব ছিল না। ক্রুসেডবিরোধী জিহাদের মহানায়ক ছিলেন তুরস্ক দেশের কুর্দিস্তানি গাজি সালাহউদ্দিন। এই নেতৃত্ব কিন্তু ব্রিটেনের রাজা রিচার্ডের মতো সামন্ততান্ত্রিক ছিল না। এই নেতৃত্ব গজিয়ে উঠেছিল সাধারণ সংগ্রামী মানুষ ও সেনানী থেকে। তারপরের ইতিহাস তো আমাদের অস্তিত্বের অংশ হিসেবেই দাঁড়িয়েছে।
কয়েক শতাব্দী পরে এই মুসলিম শাসিত দেশগুলোর রাষ্ট্রযন্ত্রের পতন হতে থাকল। ছয় শতাব্দী আরবদের অধীনে থাকার পর স্পেন স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করল। পূর্ব ইউরোপ থেকে অটোমান সাম্রাজ্যের বিদায় হলো। ভারতবর্ষে হলো মোগল সাম্রাজ্যের পতন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে বিভিন্ন শক্তি তাদের আপন নিয়ন্ত্রণের বলয়ে নিয়ে গেল। কিন্তু এখানেই তারা ক্ষান্ত ছিল না। অন্যান্য মহাদেশ ও ভূখণ্ডে তাদের ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন অব্যাহত রইল। আমেরিকায় 'আবিষ্কারের' নামে আর অস্ট্রেলিয়ায় 'অভিবাসীদের স্বার্থে' তারা সম্পূর্ণ দখলই করে নিল। পরবর্তীকালে আমেরিকাই হয়ে দাঁড়াল তাদের শক্তিমত্তার প্রতিভূ। আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া_ সর্বত্রই হলো তাদের বিস্তার। যেখানে সুযোগ এবং সুবিধা পেল, সেখানেই কিন্তু তারা শুধু অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণই নয়, ধর্ম পরিবর্তনেরও প্রক্রিয়া গ্রহণ করল। যেমন ফিলিপাইনে।
ভারতবর্ষেও তারা এই প্রক্রিয়া চালুর চিন্তা করেছিল, চেষ্টাও করেছিল। মিশনারিরা ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতবর্ষের সর্বত্র। কিন্তু এখানে তীব্র জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় বিশ্বাসের জন্য বিষয়টি সম্পূর্ণ সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, যাকে ব্রিটিশরা সিপাহি বিদ্রোহ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে, তা শক্তি সঞ্চার করেছিল কেবল শেষতম মোগল সম্রাজ বাহাদুর শাহ জাফরের প্রতি আনুগত্য থেকে নয় (যদিও তা ঐক্যবোধের জন্য গৃহীত হয়েছিল); এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল একটি গুজবের সার্থক প্রচার। গুজব রটেছিল যে, বন্দুকের কার্তুজে শূকর ও গরুর চর্বি যুক্ত করে তা সিপাহিদের দংশন করতে বাধ্য করা হচ্ছে হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মনাশ করতে। গুজব এতটাই প্রতিষ্ঠা পেল যে দেশীয় জনগণ, এমনকি রাজন্যবর্গ সচকিত হয়ে উঠলেন যে, এই বিদেশি আক্রমণকারীরা শুধু শাসনক্ষমতা নয়, ধর্ম ও জাতিত্ব হরণেও উদ্যোগী।
আশ্চর্য ও সন্তুষ্টির কথা, সেই মধ্যযুগীয় শতাব্দীগুলোতেও ভারতবর্ষের পাঠান ও মোগল সম্রাটরা, দু'একজন ছাড়া বল বা কৌশলপূর্বক ধর্মপ্রচারের চেষ্টা করেননি। রাষ্ট্রযন্ত্র বা বাদশাহি ফৌজে কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি প্রয়োগে ছিল সব ধর্মমতেরই স্বীকৃতি, প্রয়োগ ও অবস্থান। ব্রিটিশরা কিন্তু এটা উপলব্ধি করেই ধর্মান্তর প্রচেষ্টা শুধু দলিত ও অনুন্নত আদিবাসী শ্রেণীর খেলায় মত্ত হলো। সেটি হলো ভারতে প্রধান দুই ধর্মাবলম্বী মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে বিরোধ ও সংঘর্ষের বীজ রোপণ করে দিয়ে। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে সৃষ্টি করল হিন্দু জমিদারকুলের। যারা প্রতিষ্ঠিত রইস ও জায়গিরদারদের সঙ্গে একটি সাংঘর্ষিক প্রতিযোগিতার মোকাবেলা করতে পারে। এর পরবর্তীকালের ইতিহাস বিবৃত করার প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা সবাই জানি, কী হয়েছিল, কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে। বিদায় বেলায়ও তৎকালীন বার্মা বর্তমান মিয়ানমারে একটি আজগুবি সংবিধান চাপিয়ে দিয়ে তারা চিরকালের জন্য অভ্যন্তরীণ আন্তঃজাতীয় সংঘর্ষ অনিবার্য করে তুলল। ভারতবর্ষে রেখে গেল কাশ্মীর, হায়দরাবাদ, জুনাগর প্রভৃতি বিরোধপূর্ণ অঞ্চল।
মধ্যপ্রাচ্যে এখন কী হচ্ছে? গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মারণাস্ত্র ব্যবহার বোধের নামে ইরাকে পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা সংহার করে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ আদায়ের বন্দোবস্ত করল। সিরিয়া, মিসর, লিবিয়া, তিউনিসিয়া_ যেখানেই তারা গণবিপ্লব সমর্থন করেছে, তা গণতন্ত্র বা জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে নয়। সেসব অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারই মূল উদ্দেশ্য।
হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রনায়কেরা একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপ হচ্ছে শুধু সেখানেই, যেখানে শাসকরা পশ্চিমা স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম নিয়েছিল। লিবিয়াতে তো সম্প্রতি কূটনীতির দিক থেকে একটি অবিশ্বাস্য কুকাণ্ড তারা করেছে। ব্রিটেনে লিবীয় দূতাবাসের সব কূটনীতিককে বহিষ্কার করে তারা বিদ্রোহী দলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক আইনে যেসব মানদণ্ড প্রয়োজন হয়, সেগুলোকে বিসর্জন দিয়ে নীতিগতভাবে সমর্থনযোগ্য কোনো আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বীকৃতি দেওয়ার কারণ হচ্ছে সে দেশে তিক্ত বিভাজন ও দীর্ঘ বিবাদ সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নীতিগত সমর্থন যারা দিয়েছিল, তারাও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছিল স্বাধীনতা ঘোষণার বহু পরে। বস্তুত একাত্তরের ডিসেম্বর মাস থেকে এ স্বীকৃতি আসা শুরু হয়েছিল। স্বার্থবুদ্ধি প্রণোদিত এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে শুধু মুসলিম দেশ নয়, অন্য যে কোনো অপশ্চিমা দেশকেই সচেতন থাকতে হবে।
নিঃসন্দেহে সৌদি আরব কিংবা বিভিন্ন উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র নেই। কিন্তু যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে তারা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই পশ্চিমা শক্তির বিরোধিতা করবে না, তাই তাদের সমর্থন দিতে তাদের অসুবিধা নেই। বর্তমানে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ ছাড়াও তারা মনস্তাত্তি্বক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ঘোষণা করেছে। এটা বলা যায়, চীনের বিরুদ্ধে তারা কীসব কাণ্ড করে বেড়াচ্ছে, তা আমরা জানি। সোভিয়েত রাশিয়া তাদের দলভুক্ত ছিল শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে। কিন্তু পরবর্তীকালে সোভিয়েত শক্তির পতন তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এবং বিভিন্ন কারণে তাতে তারা সাফল্য অর্জন করে।
এখন চোখ পড়েছে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর ওপরে। ইসলাম ধর্মের ওপরে, প্রয়োজনবোধে অন্য ধর্মের ওপরও যে পড়বে, সে সম্পর্কে সন্দেহ নেই। ইহুদি ধর্মকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়ন করে এখন তারা নিজের পোষ্যবৎ মিত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। সেটাও স্বার্থের কারণে। একজন ইহুদির কাছ থেকে তারা পরমাণু বোমার বিদ্যাশিক্ষা নিয়েছিল, যা দিয়ে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
আমরা স্যামুয়েল হাংটিংটনের 'ক্ল্যাস অব সিভিলাইজেশন' তত্ত্বের কথা জানি। এখন নিউইয়র্কের ইহুদি আইনজীবী ডেভিড এরুশালমি লাইমলাইটে এসেছেন। তিনি শুরু করেছিলেন প্রথম বর্ণগত ও অভিবাদন সম্পর্কে বিতর্কের সূচনা করে। এখন কথা বলছেন ইসলামিক আইন এবং শরিয়া বিস্তারের কল্পিত আশঙ্কাজনিত বিপর্যয় নিয়ে। আমেরিকার টেনেসি রাজ্যের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান রিক ওমিক একটি স্টেট আইন প্রর্বতনের চেষ্টা শুরু করেছেন। যার মর্মকথা হচ্ছে ইসলামিক অথবা শরিয়া আইন দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য সর্বোচ্চ হুমকি এবং ইসলামিক গ্রুপ মাত্রই শরিয়া সংগঠন।
কিছুদিন আগে নরওয়েতে হত্যাযজ্ঞ চালানো এন্দ্রাস ব্রেভিক ঘোষণা করল যে বহুজাতীয় সাংস্কৃতিক এবং ইসলামী শরিয়া আইনের বিস্তার সম্পর্কে রাষ্ট্রকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্যই সে এ কাজ করেছে। যদিও নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতার সঙ্গে আদর্শনিষ্ট থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেছেন এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা মসজিদে গিয়েও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তবুও এটা বুঝে নেওয়ার প্রয়োজন আছে যে, কী ভাবে এবং কত প্রকারে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। অ-পশ্চিমাদের তাই এই আগ্রাসনমূলক কার্যক্রম মোকাবেলার জন্য সুসংহত ও নীতিনিষ্ঠ আচরণের প্রয়োজন আছে। বুঝিয়ে দিতে হবে ইসলামিক আইন বা শরিয়া অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো অভিলাষ বা ইচ্ছা মুসলমানদের কিংবা কোনো মুসলিম রাষ্ট্রশক্তির নেই। ধর্মপালন একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্যান্য বহুস্বার্থগত চিন্তা রয়েছে। যা মানুষকে ঐক্যবন্ধনে গ্রোথিত করতে পারে।
আমি এই উপমহাদেশেরই একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে এ নিবন্ধের পরিসমাপ্তি টানছি। ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধের, সত্যি বলতে কি একটিই কারণ রয়েছে, তা হচ্ছে কাশ্মীর। সন্ত্রাসবাদের জন্য এই ইস্যু থেকেই যদি এই দুই দেশ কাশ্মীর সমস্যার সম্মানজনক সমাধান করতে পারে, এদের কাউকেই পশ্চিমা মুখাপেক্ষী বা নির্ভরশীল থাকতে হবে না। তারা নিজস্ব দিক-নির্দেশনায় অগ্রগামী হতে পারবে। সাম্প্রতিক দিলি্ল সফরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানী খার এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনার আভাস দিয়েছেন। তা যদি হতে পারে, তাহলে উপমহাদেশের অন্যান্য দেশেও এর শুভ প্রভাব বিস্তার লাভ করবে।

ইনাম আহমেদ চৌধুরী : সাবেক সচিব ও কলাম লেখক
 

No comments

Powered by Blogger.