বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩২৬ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। মো. আবদুল হাকিম, বীর প্রতীক সফল এক নৌকমান্ডোর কথা রাতের অন্ধকারে নদীতে নেমে পড়লেন মো. আবদুল হাকিম ও তাঁর দুই সহযোদ্ধা। তাঁদের বুকে গামছা দিয়ে বাঁধা লিমপেট মাইন। কোমরে ছুরি।
সাঁতরিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছালেন লক্ষ্যস্থলে। সফলতার সঙ্গে জাহাজের গায়ে মাইন লাগিয়ে সরে গেলেন নিরাপদ স্থানে। একটু পর বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো মাইন। বিধ্বস্ত জাহাজ ডুবতে থাকল পানিতে। এ ঘটনা লন্ডন ঘাটে। ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর।
লন্ডন ঘাট চাঁদপুর নৌবন্দরের অদূরে। ডাকাতিয়া নদীতে। ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর সেখানে আমেরিকার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি লোরেন নোঙর করেছিল। তাতে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য ও সমরাস্ত্র। মুক্তিবাহিনীর একদল নৌকমান্ডো ওই সময় অবস্থান করছিলেন চাঁদপুরে। তাঁরা খবর পাওয়ামাত্র ওই জাহাজে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
নৌকমান্ডো মো. আবদুল হাকিমসহ ছিলেন ১৫-১৬ জন। তাঁরা লিমপেট মাইনসহ ওই রাতেই লন্ডন ঘাটের অপর পাড়ে ডব্লিউ রহমান জুটমিলের পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় বন্দর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার ছিল। রাতে বন্দরে সার্বক্ষণিক সার্চলাইটের আলো জ্বেলে রাখা হতো। বন্দরে থাকা জাহাজের আলোও জ্বালানো থাকত। নদীতে ছিল গানবোটের অনবরত টহল।
নৌকমান্ডোরা এর ভেতরেই অপারেশন করার জন্য সেখানে যান। মো. আবদুল হাকিম, মোমিনউল্লাহ পাটোয়ারীসহ তিনজন নদীতে নেমে ওই জাহাজে লিমপেট মাইন লাগাতে যান। বাকিরা নদীর পাড়ে তাঁদের নিরাপত্তায় থাকেন। মো. আবদুল হাকিমেরা বুকে মাইন বাঁধা অবস্থায় দীর্ঘপথ সাঁতরিয়ে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান। তারপর নিজেদের কচুরিপানার আড়াল করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাতে মাইন লাগন। মাইন লাগানোর পর তাঁরা দ্রুত সাঁতরিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। একটু পর তিনটি মাইন বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। শব্দে বন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও জাহাজের নাবিক ও সান্ত্রিরা হকচকিত হয়ে পড়ে।
মো. আবদুল হাকিমদের দুঃসাহসিক অভিযানে এমভি লোরেন বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে নিমজ্জিত হয়। স্বাধীনতার পর অনেক বছর সেখান থেকে সেই জাহাজ অপসারণ করা হয়নি। সেটি নৌকমান্ডোদের দুর্ধর্ষ অভিযানের স্মৃতি বহন করে।
মো. আবদুল হাকিম চাকরি করতেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমান পাকিস্তান)। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। ছুটি শেষ হলে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে এসেও শেষ পর্যন্ত আর যাননি। বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে। ভারতে যাওয়ার পর তাঁকে মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেশ কয়েকটি অপারেশনে তিনি অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মো. আবদুল হাকিমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৭৪।
মো. আবদুল হাকিমের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম সোনা মিয়া পাটোয়ারী। মা সাহানারা বেগম। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তাঁদের এক ছেলে তিন মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি এম কে মানিক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১০।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
লন্ডন ঘাট চাঁদপুর নৌবন্দরের অদূরে। ডাকাতিয়া নদীতে। ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর সেখানে আমেরিকার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি লোরেন নোঙর করেছিল। তাতে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য ও সমরাস্ত্র। মুক্তিবাহিনীর একদল নৌকমান্ডো ওই সময় অবস্থান করছিলেন চাঁদপুরে। তাঁরা খবর পাওয়ামাত্র ওই জাহাজে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
নৌকমান্ডো মো. আবদুল হাকিমসহ ছিলেন ১৫-১৬ জন। তাঁরা লিমপেট মাইনসহ ওই রাতেই লন্ডন ঘাটের অপর পাড়ে ডব্লিউ রহমান জুটমিলের পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় বন্দর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার ছিল। রাতে বন্দরে সার্বক্ষণিক সার্চলাইটের আলো জ্বেলে রাখা হতো। বন্দরে থাকা জাহাজের আলোও জ্বালানো থাকত। নদীতে ছিল গানবোটের অনবরত টহল।
নৌকমান্ডোরা এর ভেতরেই অপারেশন করার জন্য সেখানে যান। মো. আবদুল হাকিম, মোমিনউল্লাহ পাটোয়ারীসহ তিনজন নদীতে নেমে ওই জাহাজে লিমপেট মাইন লাগাতে যান। বাকিরা নদীর পাড়ে তাঁদের নিরাপত্তায় থাকেন। মো. আবদুল হাকিমেরা বুকে মাইন বাঁধা অবস্থায় দীর্ঘপথ সাঁতরিয়ে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান। তারপর নিজেদের কচুরিপানার আড়াল করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাতে মাইন লাগন। মাইন লাগানোর পর তাঁরা দ্রুত সাঁতরিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। একটু পর তিনটি মাইন বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। শব্দে বন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও জাহাজের নাবিক ও সান্ত্রিরা হকচকিত হয়ে পড়ে।
মো. আবদুল হাকিমদের দুঃসাহসিক অভিযানে এমভি লোরেন বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে নিমজ্জিত হয়। স্বাধীনতার পর অনেক বছর সেখান থেকে সেই জাহাজ অপসারণ করা হয়নি। সেটি নৌকমান্ডোদের দুর্ধর্ষ অভিযানের স্মৃতি বহন করে।
মো. আবদুল হাকিম চাকরি করতেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমান পাকিস্তান)। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। ছুটি শেষ হলে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে এসেও শেষ পর্যন্ত আর যাননি। বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে। ভারতে যাওয়ার পর তাঁকে মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেশ কয়েকটি অপারেশনে তিনি অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মো. আবদুল হাকিমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৭৪।
মো. আবদুল হাকিমের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম সোনা মিয়া পাটোয়ারী। মা সাহানারা বেগম। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তাঁদের এক ছেলে তিন মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি এম কে মানিক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১০।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments