নির্ধারিত আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ-নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম

মূল্যবৃদ্ধি কোনো নতুন বিষয় নয়। যেটা নতুন তা হলো, কোনো কোনো জিনিসের দাম এক লাফে কয়েক টাকা করে বেড়ে যাওয়া। যেমন: ডিমের হালি ছিল ২৬ টাকা। কয়েক দিন আগে হঠাৎ বাড়তে শুরু করল। এখন এক হালি ডিমের দাম ৩২ টাকা। কেন বাড়ছে, তা বিক্রেতারা বলতে পারেন না।


তাঁদের সহজ উত্তর: বেশি দামে কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। করলার দাম সম্ভবত সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। বেশ কয়েক দিন ধরে এই সবজির দাম বেড়ে ৮০ টাকায় দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কয়েক ধরনের অসুখের জন্য যাঁদের করলা খেতে হয়, তাঁদের মাথায় বজ্রাঘাতের উপক্রম হয়েছে। আটার দাম বাড়তে বাড়তে এখন কেজিপ্রতি ৩৮ টাকায় ঠেকেছে। মুড়ি-মুড়কির সমান দরের দেশের মতো আমাদের দেশেও চাল-আটার সমান দর হয়ে গেছে।
খোলা সয়াবিনের দাম ১২০ থেকে ১২৪ টাকা। মোড়কজাত সয়াবিন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। অথচ এর ন্যায্য দাম লিটারপ্রতি ১০৯ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। গত মাসে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও গবেষণা করে এই দামের সুপারিশ করেছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সুপারিশ নিয়ে বসে আছে, আর বাজার চলছে বাজারের মর্জি অনুযায়ী।
বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এটাই একমাত্র স্বস্তির কথা। বাকি প্রায় সব জিনিসের দামে অস্থিরতা চলছে। একই জিনিসের দাম ঠাটারীবাজারের চেয়ে নিউমার্কেটে বেশি, তার চেয়ে বেশি হয়তো আরেক বাজারে। ফুলকপির দাম যখন বগুড়ার বাজারে ছিল চার টাকা, তখন কারওয়ান বাজারে ছিল আট টাকা; ঠাটারীবাজারে সেই কপিই বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়। এখন কপির দাম বেড়ে হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। দেশে চিনির মজুদ থাকা সত্ত্বেও সরকার বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সরকারকে ভর্তুকি তো দিতেই হবে, উপরন্তু বেরিয়ে যাবে কষ্টার্জিত কিছু বৈদেশিক মুদ্রা।
কেন দাম বাড়ে—তার কিছু উত্তর সরকারের মন্ত্রীরাও জানেন। যেমন: একবার খাদ্যমন্ত্রী হিসাব দিয়ে বলেছিলেন পণ্য পরিবহনে প্রতিটি ট্রাক থেকে পথে পথে কত হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদাবাজির কারণে শাকসবজি, মাছ-মুরগির দাম বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তাহলে হয়তো কিছু পণ্যের দাম স্থিতিশীল হতে পারে।
তবে সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও সতর্ক হতে হবে। ব্যাংক থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি মেনে চললে হয়তো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। পাশাপাশি বাজার তদারকি রাখতে হবে। কোনো অশুভ চক্র যেন কৃত্রিম উপায়ে দাম না বাড়াতে পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.