প্রতিক্রিয়া-নাট্যকলা বিভাগ কি পরাধীন ছিল?
১ আগস্ট প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের ১৩ জন শিক্ষকের ‘মত প্রকাশের জন্য শিক্ষককে শাস্তি কেন’ শীর্ষক লেখাটি পড়ে আমরা হতাশ ও হতবাক হয়েছি। লেখকেরা উল্লেখ করেছেন, গত ৩১ মার্চ নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতির অপসারণের দাবিতে তাঁরা বিভাগে তালা ঝুলিয়েছিলেন।
এটি ছিল তাঁদের ভাষায় বিভাগকে স্বাধীন করার একটি পদক্ষেপ। প্রশ্ন হলো, নাট্যকলা বিভাগ কি পরাধীন ছিল? বিভাগের স্বাধীনতা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন এবং দেশের সংবিধানের আওতাকে অতিক্রম করতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন এবং সংবিধানের কোথায় বলা আছে যে দাবি আদায়ের জন্য বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিতে হবে? অবশ্য লেখকেরা যদি তাঁদের কর্মকাণ্ডকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দেশবাসী কর্তৃক আইন লঙ্ঘন করার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেন, তবে ভিন্ন কথা। মত প্রকাশ অর্থ যদি হয় অন্যের অধিকারকে খর্ব করা, অন্যকে হেয় করা, তাহলে সে ধরনের মত প্রকাশের অধিকার তাঁদের আছে কি? তাঁরা তো অসত্য তথ্য দিয়ে এমন কাজই করে চলেছেন।
নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের অ্যাডহক নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন শিক্ষকের বিষয়ে লেখকেরা তাঁদের মতামত দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। আমরা জানি, সম্প্রতি এই তিনজন শিক্ষকের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি তাঁদের নিয়োগ রক্ষায় কোনো সুপারিশ করেনি। ফলে তাঁদের নিয়োগ নবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে গত ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভার সিদ্ধান্তে (লেখকেরা সবাই কমিটির সদস্য) তিনজন শিক্ষককে বিভাগের সব কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অবশ্য অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন শিক্ষক যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, তা লেখকদের কথাতেই উঠে এসেছে।
লেখকদের লেখায় কতগুলো সত্য বেরিয়ে এসেছে, যা তাঁরা আগে স্বীকার করেননি। এ প্রসঙ্গে আমাদের কিছু বক্তব্য উল্লেখ করছি:
তাঁরা বলছেন, বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রশাসন তিনজন শিক্ষককে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে। এখন তাঁরা এ কথা বলছেন কিন্তু ওই শিক্ষকদের নিয়োগের পরপরই লেখকেরা প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছাড়া তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে ক্যাম্পাসে এবং বিভিন্ন ফোরামে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি এখন অনুধাবন করেছেন যে সময়-সুযোগ বুঝে শিক্ষকেরা কীভাবে তাঁদের সুর পাল্টেছেন।
শিক্ষকেরা তাঁদের লেখায় নাট্যকলার ঘটনায় তদন্ত হওয়া উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু আমরা জানি, নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে লেখকেরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে দুটি স্মারকলিপি দেন এবং এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে যে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তদন্তের দাবি ছিল না। দেরিতে হলেও আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি এ কথাও বলতে চাই, তাঁরা তদন্ত ছাড়াই নাট্যকলার সভাপতির অপসারণ চেয়েছিলেন।
লেখকেরা স্বীকার করেছেন, তাঁরা নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে তালা লাগিয়েছেন। আমরা আশা করব, তদন্তের ফল তাঁরা মেনে নেবেন।
লেখকেরা স্বীকার করেছেন, তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রাস্তা অবরোধ করে দীর্ঘ ছয় দিন নাচ-গান করেছেন। অন্যের স্বাধীনতা খর্ব করে নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় করতে যাওয়া কোন স্বাধীনতার নামান্তর? আমরা মনে করি, লেখকেরা বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।
লেখকেরা গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। গণতন্ত্রের অর্থ তো সংখ্যাগরিষ্ঠের অযৌক্তিক মত নয়। তাঁরা ১৬ জন শিক্ষক এক হয়ে যদি বলেন দুই আর দুইয়ে পাঁচ আর একজন শিক্ষক যদি বলেন চার, তাহলে একজনের কথাই গ্রহণযোগ্য। সত্য, ন্যায় ও কল্যাণকে বাদ দিয়ে কেবল গরিষ্ঠের জোরে কখনো গণতন্ত্র হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; অ্যাডহক বা খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য নয়। উপাচার্য তাঁর নিজ ক্ষমতাবলে এ ধরনের নিয়োগ দেন। সুতরাং এমন নিয়োগ বাতিলের ক্ষমতা এককভাবে তাঁর। এর আগে নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের একজন অ্যাডহক নিয়োগপ্রাপ্ত ও একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। লেখকেরা তাঁদের ব্যাপারে বড়ই অনুদার।
লেখকেরা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দী এবং নির্যাতিত শিক্ষকদের সঙ্গে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী তিনজন শিক্ষকের তুলনা করে জাতির বিবেককে অসম্মানিত করেছেন। কারাবন্দী শিক্ষকেরা জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। লেখকেরাসহ ওই তিনজন শিক্ষক নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে অরাজকতা ও অনিয়মের মধ্যে নিমজ্জিত থেকে কোন জাতীয় স্বার্থ উদ্ধার করছেন, তা দেশবাসী জানতে চায়।
নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের এই ১৩ জন শিক্ষক সব বিদ্যায়তনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আমরাও বিশ্বাস করি, সব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে তাঁদের চোখ-কান খোলা রাখবেন এবং প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করবেন। বিষয়টি তদন্তাধীন এবং তদন্তে প্রকাশিত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখকেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক।
নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের অ্যাডহক নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন শিক্ষকের বিষয়ে লেখকেরা তাঁদের মতামত দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। আমরা জানি, সম্প্রতি এই তিনজন শিক্ষকের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি তাঁদের নিয়োগ রক্ষায় কোনো সুপারিশ করেনি। ফলে তাঁদের নিয়োগ নবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে গত ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভার সিদ্ধান্তে (লেখকেরা সবাই কমিটির সদস্য) তিনজন শিক্ষককে বিভাগের সব কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অবশ্য অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন শিক্ষক যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, তা লেখকদের কথাতেই উঠে এসেছে।
লেখকদের লেখায় কতগুলো সত্য বেরিয়ে এসেছে, যা তাঁরা আগে স্বীকার করেননি। এ প্রসঙ্গে আমাদের কিছু বক্তব্য উল্লেখ করছি:
তাঁরা বলছেন, বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রশাসন তিনজন শিক্ষককে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে। এখন তাঁরা এ কথা বলছেন কিন্তু ওই শিক্ষকদের নিয়োগের পরপরই লেখকেরা প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছাড়া তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে ক্যাম্পাসে এবং বিভিন্ন ফোরামে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি এখন অনুধাবন করেছেন যে সময়-সুযোগ বুঝে শিক্ষকেরা কীভাবে তাঁদের সুর পাল্টেছেন।
শিক্ষকেরা তাঁদের লেখায় নাট্যকলার ঘটনায় তদন্ত হওয়া উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু আমরা জানি, নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে লেখকেরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে দুটি স্মারকলিপি দেন এবং এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে যে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তদন্তের দাবি ছিল না। দেরিতে হলেও আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি এ কথাও বলতে চাই, তাঁরা তদন্ত ছাড়াই নাট্যকলার সভাপতির অপসারণ চেয়েছিলেন।
লেখকেরা স্বীকার করেছেন, তাঁরা নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে তালা লাগিয়েছেন। আমরা আশা করব, তদন্তের ফল তাঁরা মেনে নেবেন।
লেখকেরা স্বীকার করেছেন, তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রাস্তা অবরোধ করে দীর্ঘ ছয় দিন নাচ-গান করেছেন। অন্যের স্বাধীনতা খর্ব করে নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় করতে যাওয়া কোন স্বাধীনতার নামান্তর? আমরা মনে করি, লেখকেরা বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।
লেখকেরা গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। গণতন্ত্রের অর্থ তো সংখ্যাগরিষ্ঠের অযৌক্তিক মত নয়। তাঁরা ১৬ জন শিক্ষক এক হয়ে যদি বলেন দুই আর দুইয়ে পাঁচ আর একজন শিক্ষক যদি বলেন চার, তাহলে একজনের কথাই গ্রহণযোগ্য। সত্য, ন্যায় ও কল্যাণকে বাদ দিয়ে কেবল গরিষ্ঠের জোরে কখনো গণতন্ত্র হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; অ্যাডহক বা খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য নয়। উপাচার্য তাঁর নিজ ক্ষমতাবলে এ ধরনের নিয়োগ দেন। সুতরাং এমন নিয়োগ বাতিলের ক্ষমতা এককভাবে তাঁর। এর আগে নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের একজন অ্যাডহক নিয়োগপ্রাপ্ত ও একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। লেখকেরা তাঁদের ব্যাপারে বড়ই অনুদার।
লেখকেরা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দী এবং নির্যাতিত শিক্ষকদের সঙ্গে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী তিনজন শিক্ষকের তুলনা করে জাতির বিবেককে অসম্মানিত করেছেন। কারাবন্দী শিক্ষকেরা জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। লেখকেরাসহ ওই তিনজন শিক্ষক নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে অরাজকতা ও অনিয়মের মধ্যে নিমজ্জিত থেকে কোন জাতীয় স্বার্থ উদ্ধার করছেন, তা দেশবাসী জানতে চায়।
নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের এই ১৩ জন শিক্ষক সব বিদ্যায়তনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আমরাও বিশ্বাস করি, সব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে তাঁদের চোখ-কান খোলা রাখবেন এবং প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করবেন। বিষয়টি তদন্তাধীন এবং তদন্তে প্রকাশিত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখকেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক।
No comments