চিরস্থায়ী পানি-সংকট কার দোষে?-তৃষ্ণার্ত ও তপ্ত রাজধানী
একেই বলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তীব্র গরমের মধ্যে শুরু হয়েছে রোজা। রোজার শুরুতেই বেড়েছে বিদ্যুৎ-সংকট। বিদ্যুতের অভাবে ওয়াসা পানি তুলতে পারছে কম; কিন্তু পানির চাহিদা গরম ও রোজার জন্য গেছে অনেক বেড়ে। এই অবস্থায় অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মানুষ।
বুধবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে তারই সচিত্র বিবরণ। পয়লা আগস্ট থেকে ওয়াসা তার পানির মূল্য বাড়িয়েছে। অথচ গরমে যে পানির চাহিদা বাড়বে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সচেতন ছিল না। বর্তমানে পানির চাহিদা ২৫০ কোটি লিটার; সাধারণ সময়ে তা থাকে মোটামুটি ২৩০ থেকে ২৪০ কোটি লিটারের মধ্যে। বোতলজাত সুপেয় পানির জোগান হিসাবে ধরলে চাহিদা আরও বেশি। ওয়াসার দাবি যা-ই হোক, পানি উৎপাদিত হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ কোটি লিটারের মধ্যে। বাকি ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ না হওয়া মানে ঢাকার অন্তত পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষের পানি না পাওয়া। আগাম ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিগগিরই এই ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়। তাহলে কি তাদের জীবনে কারবালার পরিস্থিতিই চলতে থাকবে? কে দেবে এর উত্তর?
পানি ছাড়া জনজীবন অচল। কয়েক বছর আগে পানির দাবিতে শনির আখড়ায় বিরাট গণ-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল, স্থানীয় সাংসদকে জনরোষে পালাতেও হয়েছিল। প্রতিবছরই এই সময়ে ঢাকাবাসীকে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সংকটটা তো নতুন নয়, তাহলে সমাধান হচ্ছে না কেন? কেন আধুনিক দুনিয়ার একটি দেশের আধুনিক রাজধানীতে পানি-দুর্ভোগ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পেয়ে বসবে?
বিদ্যুতের অভাবে ওয়াসা পানি তুলতে পারছে না সত্য। কিন্তু জেনারেটরের সংখ্যা কি আগেভাগেই বাড়িয়ে রাখা যেত না? দ্বিতীয়ত, জরুরি ক্ষেত্র নয় এমন সব খাত, যেমন সুপার মল, অরপ্তানিমুখী শিল্প, ধনী এলাকার শৌখিন আলোকসজ্জা, বিলবোর্ড ইত্যাদি থেকে বিদ্যুৎ বাঁচিয়ে পানি উত্তোলনে ব্যবহারের বন্দোবস্ত করা যেত। একই সঙ্গে গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক প্রয়োজনে পানি সরবরাহের মাত্রা ও মূল্যও আলাদা হওয়া দরকার। কিন্তু যা করা দরকার তা করা হয় না।
সমস্যার গোড়ায় কেবল বিদ্যুতের অভাবই নেই, আছে অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অদূরদর্শিতা, সরকারি দায়িত্বহীনতা এবং বাণিজ্যিকায়নের মনোভাব। এই খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ হচ্ছে না, সংস্কার হচ্ছে না পুরোনো যন্ত্রপাতির। সরবরাহ অপ্রতুল হলেও পানি-বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। বিপরীতে কমছে সেবার মান এবং অনেক সময় সরবরাহকৃত পানিও দুর্গন্ধযুক্ত।
পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই সেবামূলক জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকে, যাতে সেবা প্রদান নিরবচ্ছিন্ন থাকে এবং সেবামূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে রাখা হয়। ওয়াসাই হোক আর ডেসাই হোক, এসব জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা না বাড়ার কারণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা। এখন যে পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে, তার দাবি একটাই: সেবা খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করে জনদুর্ভোগ কমানো।
No comments