বিশেষ সাক্ষাৎকার : শামসুজ্জামান খান-বইমেলার জন্য শক্তিশালী জাতীয় কমিটি দরকার
বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী। জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানটি গবেষণার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজন করছে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে। বইমেলার আয়োজন, মেলার জায়গা সংকট, সমস্যা সমাধানসহ একাডেমীর নানা উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন
একাডেমীর মহাপরিচালক, বিশিষ্ট লোকসাহিত্য-গবেষক-লেখক শামসুজ্জামান খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নওশাদ জামিল
কালের কণ্ঠ : মেলাজুড়ে এখন বিদায়ের সুর। দুই দিন পরই শেষ হচ্ছে বাঙালির প্রাণের এ উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এবারের মেলার আয়োজন কেমন হলো, সার্বিক দিক থেকে এ আয়োজনে আপনি কতটুকু তৃপ্ত?
শামসুজ্জামান খান : সার্বিক দিক থেকে যদি বলি, তবে বলব, আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। বইমেলাকে যেমনভাবে আয়োজন করতে চেয়েছিলাম, ঠিক তেমনটি না হলেও এবারের আয়োজন ভালোই হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার স্টলসংখ্যা বাড়াতে হয়েছে। এবার শিশু কর্নার আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে শিশুরা অনেকটা জায়গা পেয়েছে। ঘুরেফিরে বই দেখতে ও কিনতে পারছে। মেলার ভেতরের জায়গায় আয়োজন সুন্দর ও মনোরম হয়েছে, তবে বাইরের দিকটায় কিছুটা সমস্যা থাকতে পারে। এটা অস্বীকার করব না। বাইরের অংশে আমাদের নিয়ন্ত্রণও নেই। ফলে ইচ্ছা থাকলেও আমরা সেখানের স্টলগুলো নিয়ে কিছু করতে পারি না।
কালের কণ্ঠ : বাইরের অংশে একাডেমীর নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও আপনারা কিন্তু সেখানে স্টল বরাদ্দ দিয়েছেন। একাডেমী প্রাঙ্গণের বাইরের স্টলগুলোয়, ফুটপাতের স্টলগুলোয় সব আজেবাজে বই, নকল বই বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। শত অভিযোগ সত্ত্বেও প্রতিবছর সেখানে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, কেন? এদিকে গোটা মাস একাডেমীর বাইরের রাস্তাটি বন্ধ থাকে। ফলে চারদিকে তীব্র যানজট হয়। ভেতর সুন্দর হলেও বাইরের রূপটি কুৎসিত। বাইরের স্টলগুলোয় কেন কোনো নজরদারি নেই?
শামসুজ্জামান খান : বাইরে রাস্তায় মেলা বসানো তথাকথিত বা মৌসুমি প্রকাশকদের দাবি। তদবির ও চাপের কারণে মেলায় তাঁদের স্টল দিতে হয়। এতে মেলার পরিবেশ নষ্ট হয়। তা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও রাস্তা বন্ধ করে এক মাস মেলা করা হয় না। এটা অন্যায়। আমরাও চেয়েছিলাম, বাইরের স্টল বরাদ্দ বাতিল করতে। পারিনি। স্টলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে কিছু মৌসুমি প্রকাশক ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে রাস্তায় স্টল দিয়েছি।
কালের কণ্ঠ : বইমেলায় প্রতিবছরই স্টল বাড়ছে। এ বছরও স্টলসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে পরিবেশ আরো ঘিঞ্জি হয়েছে। স্টল কমালে জায়গা বাড়ত। এতে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনা ও ঘোরার জায়াগা পেতেন। সেটা করা সম্ভব হবে কি?
শামসুজ্জামান খান : স্টলের চাহিদা বাড়ছে, প্রকাশকও বাড়ছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও স্টল পেতে আগ্রহী। সবদিক সামলাতে গিয়ে মেলায় স্টল বাড়াতে বাধ্য হয়েছি আমরা। আমাদের পরিসর নির্দিষ্ট। এর মধ্যেই একটা সমন্বয় করতে হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : মেলায় দেখা গেছে, ভুঁইফোড় প্রকাশক ও নামসর্বস্ব অনেক স্টলের ছড়াছড়ি। তাদের নিয়ন্ত্রণ করলে, স্টল বরাদ্দ বাতিল করলেই মেলার আয়োজন আরো সুন্দর ও গোছানো হতো। আপনি তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। স্টল বরাদ্দের সময় আপনি কঠোর হতে পারেননি।
শামসুজ্জামান খান : সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নামে এবং কিছু বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রের দৌরাত্ম্য বইমেলার পরিবেশ নষ্ট হয়। এসব স্টলে নোট বই, পাইরেটেড বই বিক্রি হয়। কিন্তু এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না সব সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর চাপ থাকে। রাজনৈতিক পরিচয়ে বিভিন্ন সংগঠনগুলোও স্টল বরাদ্দের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। যারা চাপ সৃষ্টি করে স্টল পেতে চায় তারা বেশির ভাগই উটকো সংগঠন। ইচ্ছা না থাকলেও নিরুপায় হয়ে আমাদের এদের কিছু কিছু সংগঠনকে স্টল বরাদ্দ দিতে হয়। কেননা বাংলা একাডেমীর অবস্থানটা নগরীর স্পর্শকাতর জায়গায়। একাডেমী মননশীলতার চর্চা করে। এসব সংগঠনের যারা এসে স্টল বরাদ্দ চায় এরা অনেকেই শালীনতার মাত্রা রাখে না। আমরা বিবাদ সৃষ্টি করতে চাই না। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপস করতে বাধ্য হই আমরা।
কালের কণ্ঠ : রাজনৈতিক লেজুড়ভিত্তিক সংগঠনগুলো ও বিভিন্ন অপ্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া উচিত নয়- এটা আপনিও মানবেন। কিন্তু এ কাজটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? একাডেমীর এ বিষয়ে কি কোনো উদ্যোগ নেই?
শামসুজ্জামান খান : এটা বন্ধ করতে গেলে শক্তিশালী একটি জাতীয় কমিটির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ করতে হবে। তাহলে হয়তো ওই ধরনের স্টলের সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে। আমরা চাই, শক্তিশালী জাতীয় কমিটির মাধ্যমে মেলার আয়োজন। সেটা এবার সম্ভব হয়নি। আগামীবার থেকে হবে বলে আশা করি।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় একটি স্টলের জন্য সংসদ সদস্য থেকে মন্ত্রীরা পর্যন্তও অনুরোধ করেন। এত কিছু সামাল দিয়ে মেলা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের যে আবেগ এ মেলাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, সেই আবেগকে সম্মান জানাতেই মেলা পরিচালনার সব সমস্যা সহ্য করছে বাংলা একাডেমী।
কালের কণ্ঠ : মেলা পরিচালনার কাজ তো একাডেমীর দায়িত্ব নয়। কিন্তু একাডেমী মেলার আয়োজন করছে প্রতিবছরই। এ কাজের জন্য বছরের একটা উল্লেখযোগ্য সময় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানকে। এতে একাডেমীর মূল কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। আপনার মতামত জানতে চাই।
শামসুজ্জামান খান : আমরাও তাই মনে করি। বইমেলা আয়োজনের কাজ একাডেমীর নয়। এটা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের করা উচিত। মেলা আয়োজন করতে গিয়ে আমরা তিন মাস অন্য কাজ করতে পারি না। বাংলা একাডেমী এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলও না। বছর দশেক আগে প্রকাশকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে, তাদের অনুরোধে বাংলা একাডেমী মেলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : মেলার আয়োজন করলেও বইমেলার পুরো নিয়ন্ত্রণ একাডেমীর হাতে নেই। এবারের মেলায় দেখা গেছে, বাইরের স্টলগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে পাইরেটেড বই। বইমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য আপনাদের বাড়তি লোকবলও নেই। বইমেলা এখন এতটাই বিস্তৃত যে বাংলা একাডেমীর পক্ষে এটা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করেন বইমেলার আয়োজন বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গণ থেকে বাইরে সম্প্রসারিত হওয়া উচিত।
শামসুজ্জামান খান : অমর একুশের এ বইমেলা পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ বইমেলা। কোথাও এত দীর্ঘ সময় ধরে মেলা হয় না। এ মেলা সফল করতে আমরা অমানুষিক পরিশ্রমও করি। নানা ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাজ করে চলেছি। এটা ঠিক যে মেলা আয়োজনের জন্য আমাদের বাড়তি কোনো লোকবল নেই। তার পরও আমরা চাই, মেলাকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে।
কালের কণ্ঠ : মেলায় জায়গা সংকটের বিষয়ে সবাই মত দিচ্ছেন জায়গা বাড়াতে। সেটা সম্ভব না হলে মেলা স্থানান্তরের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে বিভিন্নজনের বক্তব্যে। এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে ভাবতে পরামর্শ দিয়েছেন।
শামসুজ্জামান খান : আমরা এটা নিয়ে ভাবছি গভীরভাবে। প্রতিবছর চাহিদা বাড়ছে, নতুন প্রকাশকরা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। ফলে প্রতিবছরই মেলায় স্টলের চাহিদা বাড়ছে। বাংলা একাডেমীর সীমিত পরিসরে এ স্থান সংকুলান করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে মূল অনুষ্ঠান ও সরকারি স্টল ছাড়া বাকি পুস্তক প্রকাশক ও সামাজিক সংগঠনের স্টলগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে স্থানান্তর করা যেতে পারে। কিংবা বাংলা একাডেমীতে প্রকাশকদের রেখে বাকি সংগঠনগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যাওয়া যায়। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকে বইমেলা অন্য জায়গায় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম পছন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। চারদিকে বিশাল প্রাচীর রয়েছে। মাঠটাও বেশ বড়। একাডেমীর বেশ কাছে- মেডিক্যাল কলেজ ও শহীদ মিনারের পাশেই এর অবস্থান। বইমেলার সঙ্গে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনা জড়িত। আমরা মনে করি, মাঠের তিন দিকেই আছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলো। ফলে এ জায়গায় মেলা হলে একুশের চেতনাকেই সম্মান জানানো হবে।
কালের কণ্ঠ : একাডেমীর সামনেই বিশাল সোহরাওয়ার্দী ময়দান। মেলা এখানে সম্প্রসারণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছেন না কেন?
শামসুজ্জামান খান : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চাচ্ছি না নানা কারণেই। এখানে এর আগে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা হয়েছিল। সেটা ব্যর্থ হয়েছে। তিন দিক খোলা এ প্রান্তরে মেলা আয়োজন সম্ভবও নয়। কারণ খোলা উদ্যানে মেলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দেয়াল দিয়ে করলে পরিবেশবাদীরা মানবেন না। অস্থায়ীভাবে টিন দিয়ে করলে সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
কালের কণ্ঠ : প্রতিবছর মেলা সম্প্রসারণ কিংবা মেলার স্থান বদলের প্রসঙ্গ উঠলেও তা হয়নি। আগমীবারও হয়তো হবে না। একাডেমীর ভেতরে রেখেও তো মেলাকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় করা সম্ভব। অনেকে মনে করেন, মানসম্পন্ন প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দিলেই জায়গা সংকট দূর হবে। মেলা স্থানান্তরেরও প্রয়োজন হবে না।
শামসুজ্জামান খান : আপনার কথার সঙ্গে আমি একমত। আমরাও চাই মেলা হোক প্রকৃত প্রকাশকদের। মানসম্পন্ন প্রকাশক বাছাই ও নির্বাচনের জন্যও জাতীয় কমিটি দরকার রয়েছে। আমরাও চাই সত্যিকারের মানসম্পন্ন প্রকাশক ও সৃজনশীল প্রকাশকদের নিয়ে মেলা করতে। সেটা পারি না নানা তদবির ও রাজনৈতিক চাপের জন্য। এ চাপ সামলানো একাডেমীর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
কালের কণ্ঠ : অতীতে বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিক গ্রন্থ প্রকাশ করে একাডেমী যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিল। এ ধরনের অনুবাদের কাজ একাডেমী করছে না অনেক দিন ধরেই। এ প্রকল্পটি নতুনরূপে চালু করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কি?
শামসুজ্জামান খান : সৈয়দ আলী আহসান সাহেব যখন পরিচালক ছিলেন, তখন এ ধরনের গ্রন্থ যথেষ্ট পরিমাণে প্রকাশিত হয়েছে। পরে পরিচালক বা মহাপরিচালকরা এদিকটায় নজর দেননি। আমরা বাংলা একাডেমীর জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছি। এতে একটি শক্তিশালী অনুবাদ ও অভিধান বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইনটি পাস হলে একাডেমীতে অনুবাদকর্ম আগের মতো প্রকাশ হতে পারবে এবং অভিধান বিভাগও একাডেমীর অভিধানগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করার ব্যবস্থা করতে পারবে।
কালের কণ্ঠ : অভিধান প্রণয়নসহ অনেক ভালো কাজ আপনারা করেছেন। কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় বাংলা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পরিভাষা কোষ তৈরি থমকে আছে কেন?
শামসুজ্জামান খান : এই কাজটি থেমে নেই এবং এটা এতটাই উন্নতমানের হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গেও এর চাহিদা বিপুল। তবে পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য একধরনের বিশেষ জ্ঞান এবং রচনাশৈলী আয়ত্ত করা প্রয়োজন। সে ধরনের পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা আমাদের দেশে কম।
এখন আমরা সীমিতসংখ্যক পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করব, তা গুণে-মানে উন্নত হতে হবে। কোনো পাঠ্যপুস্তক জনপ্রিয় হলেও দ্বিতীয়বার ছাপা হবে না। কারণ সে বই প্রকাশে প্রকাশকরাই উৎসাহিত হবেন। একাডেমী বরং নতুন কোনো বিষয়ে মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করলেই উচ্চ শিক্ষায় পাঠ্যপুস্তকের অভাব দ্রুত দূর করা সম্ভব হবে।
কালের কণ্ঠ : গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে একাডেমীতে ব্যাপক রাজনৈতিক নিয়োগের অভিযোগ আছে। বর্তমান সরকারের আমলেও এ ধরনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে বেশ জোরালোভাবেই। অনেকে বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আপনিও নিজের লোকদের চাকরি দিয়েছেন একাডেমীতে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কি জবাব দেবেন?
শামসুজ্জামান খান : এ অভিযোগ সত্য নয়। এ সরকারের আমলে কোনো ধরনের নিয়োগই হয়নি। যা হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমল নিয়ে যে কথা উঠেছে, তা সত্য নয়। কয়েকটি প্রকল্পের জন্য শুধু কয়েকজন গবেষক সাময়িকভাবে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের এখন বাদ দেওয়ার ব্যাপারটি বেশ জটিল এবং এ ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া অমানবিকও বটে। আপাতত আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না।
কালের কণ্ঠ : বাংলা একাডেমীর সাহিত্য পুরস্কার বহু দিন কলুষিত ছিল। অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক পরিচয় ও দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে অনেকেই এ পুুরস্কারটি বাগিয়ে নিয়েছেন। মর্যাদাবান এ পুরস্কারটি কি প্রকৃত লেখকরা পাচ্ছেন? আপনার মতামত জানতে চাই।
শামসুজ্জামান খান : অতীতে কি ঘটেছে তা বলব না। আমার এ সময় পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মানোন্নয়নদাতাদের নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করেছি। এরপর এ ক্ষেত্রে তদবিরের সুযোগ কমেছে বলে মনে করি। কিন্তু তবুও পুরস্কার প্রত্যাশীরা অনুমান করেই বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুরস্কারের ব্যাপারে আমি বরাবরই যতদূর সম্ভব কঠোর থেকেছি। কোনো ধরনের দলবাজি, অনুরোধ ও তদবিরের কাছে মাথানত করিনি।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
শামসুজ্জামান খান : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
কালের কণ্ঠ : মেলাজুড়ে এখন বিদায়ের সুর। দুই দিন পরই শেষ হচ্ছে বাঙালির প্রাণের এ উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এবারের মেলার আয়োজন কেমন হলো, সার্বিক দিক থেকে এ আয়োজনে আপনি কতটুকু তৃপ্ত?
শামসুজ্জামান খান : সার্বিক দিক থেকে যদি বলি, তবে বলব, আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। বইমেলাকে যেমনভাবে আয়োজন করতে চেয়েছিলাম, ঠিক তেমনটি না হলেও এবারের আয়োজন ভালোই হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার স্টলসংখ্যা বাড়াতে হয়েছে। এবার শিশু কর্নার আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে শিশুরা অনেকটা জায়গা পেয়েছে। ঘুরেফিরে বই দেখতে ও কিনতে পারছে। মেলার ভেতরের জায়গায় আয়োজন সুন্দর ও মনোরম হয়েছে, তবে বাইরের দিকটায় কিছুটা সমস্যা থাকতে পারে। এটা অস্বীকার করব না। বাইরের অংশে আমাদের নিয়ন্ত্রণও নেই। ফলে ইচ্ছা থাকলেও আমরা সেখানের স্টলগুলো নিয়ে কিছু করতে পারি না।
কালের কণ্ঠ : বাইরের অংশে একাডেমীর নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও আপনারা কিন্তু সেখানে স্টল বরাদ্দ দিয়েছেন। একাডেমী প্রাঙ্গণের বাইরের স্টলগুলোয়, ফুটপাতের স্টলগুলোয় সব আজেবাজে বই, নকল বই বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। শত অভিযোগ সত্ত্বেও প্রতিবছর সেখানে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, কেন? এদিকে গোটা মাস একাডেমীর বাইরের রাস্তাটি বন্ধ থাকে। ফলে চারদিকে তীব্র যানজট হয়। ভেতর সুন্দর হলেও বাইরের রূপটি কুৎসিত। বাইরের স্টলগুলোয় কেন কোনো নজরদারি নেই?
শামসুজ্জামান খান : বাইরে রাস্তায় মেলা বসানো তথাকথিত বা মৌসুমি প্রকাশকদের দাবি। তদবির ও চাপের কারণে মেলায় তাঁদের স্টল দিতে হয়। এতে মেলার পরিবেশ নষ্ট হয়। তা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও রাস্তা বন্ধ করে এক মাস মেলা করা হয় না। এটা অন্যায়। আমরাও চেয়েছিলাম, বাইরের স্টল বরাদ্দ বাতিল করতে। পারিনি। স্টলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে কিছু মৌসুমি প্রকাশক ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে রাস্তায় স্টল দিয়েছি।
কালের কণ্ঠ : বইমেলায় প্রতিবছরই স্টল বাড়ছে। এ বছরও স্টলসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে পরিবেশ আরো ঘিঞ্জি হয়েছে। স্টল কমালে জায়গা বাড়ত। এতে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনা ও ঘোরার জায়াগা পেতেন। সেটা করা সম্ভব হবে কি?
শামসুজ্জামান খান : স্টলের চাহিদা বাড়ছে, প্রকাশকও বাড়ছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও স্টল পেতে আগ্রহী। সবদিক সামলাতে গিয়ে মেলায় স্টল বাড়াতে বাধ্য হয়েছি আমরা। আমাদের পরিসর নির্দিষ্ট। এর মধ্যেই একটা সমন্বয় করতে হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : মেলায় দেখা গেছে, ভুঁইফোড় প্রকাশক ও নামসর্বস্ব অনেক স্টলের ছড়াছড়ি। তাদের নিয়ন্ত্রণ করলে, স্টল বরাদ্দ বাতিল করলেই মেলার আয়োজন আরো সুন্দর ও গোছানো হতো। আপনি তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। স্টল বরাদ্দের সময় আপনি কঠোর হতে পারেননি।
শামসুজ্জামান খান : সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নামে এবং কিছু বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রের দৌরাত্ম্য বইমেলার পরিবেশ নষ্ট হয়। এসব স্টলে নোট বই, পাইরেটেড বই বিক্রি হয়। কিন্তু এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না সব সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর চাপ থাকে। রাজনৈতিক পরিচয়ে বিভিন্ন সংগঠনগুলোও স্টল বরাদ্দের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। যারা চাপ সৃষ্টি করে স্টল পেতে চায় তারা বেশির ভাগই উটকো সংগঠন। ইচ্ছা না থাকলেও নিরুপায় হয়ে আমাদের এদের কিছু কিছু সংগঠনকে স্টল বরাদ্দ দিতে হয়। কেননা বাংলা একাডেমীর অবস্থানটা নগরীর স্পর্শকাতর জায়গায়। একাডেমী মননশীলতার চর্চা করে। এসব সংগঠনের যারা এসে স্টল বরাদ্দ চায় এরা অনেকেই শালীনতার মাত্রা রাখে না। আমরা বিবাদ সৃষ্টি করতে চাই না। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপস করতে বাধ্য হই আমরা।
কালের কণ্ঠ : রাজনৈতিক লেজুড়ভিত্তিক সংগঠনগুলো ও বিভিন্ন অপ্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া উচিত নয়- এটা আপনিও মানবেন। কিন্তু এ কাজটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? একাডেমীর এ বিষয়ে কি কোনো উদ্যোগ নেই?
শামসুজ্জামান খান : এটা বন্ধ করতে গেলে শক্তিশালী একটি জাতীয় কমিটির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ করতে হবে। তাহলে হয়তো ওই ধরনের স্টলের সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে। আমরা চাই, শক্তিশালী জাতীয় কমিটির মাধ্যমে মেলার আয়োজন। সেটা এবার সম্ভব হয়নি। আগামীবার থেকে হবে বলে আশা করি।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় একটি স্টলের জন্য সংসদ সদস্য থেকে মন্ত্রীরা পর্যন্তও অনুরোধ করেন। এত কিছু সামাল দিয়ে মেলা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের যে আবেগ এ মেলাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, সেই আবেগকে সম্মান জানাতেই মেলা পরিচালনার সব সমস্যা সহ্য করছে বাংলা একাডেমী।
কালের কণ্ঠ : মেলা পরিচালনার কাজ তো একাডেমীর দায়িত্ব নয়। কিন্তু একাডেমী মেলার আয়োজন করছে প্রতিবছরই। এ কাজের জন্য বছরের একটা উল্লেখযোগ্য সময় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানকে। এতে একাডেমীর মূল কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। আপনার মতামত জানতে চাই।
শামসুজ্জামান খান : আমরাও তাই মনে করি। বইমেলা আয়োজনের কাজ একাডেমীর নয়। এটা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের করা উচিত। মেলা আয়োজন করতে গিয়ে আমরা তিন মাস অন্য কাজ করতে পারি না। বাংলা একাডেমী এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলও না। বছর দশেক আগে প্রকাশকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে, তাদের অনুরোধে বাংলা একাডেমী মেলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : মেলার আয়োজন করলেও বইমেলার পুরো নিয়ন্ত্রণ একাডেমীর হাতে নেই। এবারের মেলায় দেখা গেছে, বাইরের স্টলগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে পাইরেটেড বই। বইমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য আপনাদের বাড়তি লোকবলও নেই। বইমেলা এখন এতটাই বিস্তৃত যে বাংলা একাডেমীর পক্ষে এটা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করেন বইমেলার আয়োজন বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গণ থেকে বাইরে সম্প্রসারিত হওয়া উচিত।
শামসুজ্জামান খান : অমর একুশের এ বইমেলা পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ বইমেলা। কোথাও এত দীর্ঘ সময় ধরে মেলা হয় না। এ মেলা সফল করতে আমরা অমানুষিক পরিশ্রমও করি। নানা ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাজ করে চলেছি। এটা ঠিক যে মেলা আয়োজনের জন্য আমাদের বাড়তি কোনো লোকবল নেই। তার পরও আমরা চাই, মেলাকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে।
কালের কণ্ঠ : মেলায় জায়গা সংকটের বিষয়ে সবাই মত দিচ্ছেন জায়গা বাড়াতে। সেটা সম্ভব না হলে মেলা স্থানান্তরের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে বিভিন্নজনের বক্তব্যে। এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে ভাবতে পরামর্শ দিয়েছেন।
শামসুজ্জামান খান : আমরা এটা নিয়ে ভাবছি গভীরভাবে। প্রতিবছর চাহিদা বাড়ছে, নতুন প্রকাশকরা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। ফলে প্রতিবছরই মেলায় স্টলের চাহিদা বাড়ছে। বাংলা একাডেমীর সীমিত পরিসরে এ স্থান সংকুলান করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে মূল অনুষ্ঠান ও সরকারি স্টল ছাড়া বাকি পুস্তক প্রকাশক ও সামাজিক সংগঠনের স্টলগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে স্থানান্তর করা যেতে পারে। কিংবা বাংলা একাডেমীতে প্রকাশকদের রেখে বাকি সংগঠনগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যাওয়া যায়। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকে বইমেলা অন্য জায়গায় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম পছন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। চারদিকে বিশাল প্রাচীর রয়েছে। মাঠটাও বেশ বড়। একাডেমীর বেশ কাছে- মেডিক্যাল কলেজ ও শহীদ মিনারের পাশেই এর অবস্থান। বইমেলার সঙ্গে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনা জড়িত। আমরা মনে করি, মাঠের তিন দিকেই আছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলো। ফলে এ জায়গায় মেলা হলে একুশের চেতনাকেই সম্মান জানানো হবে।
কালের কণ্ঠ : একাডেমীর সামনেই বিশাল সোহরাওয়ার্দী ময়দান। মেলা এখানে সম্প্রসারণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছেন না কেন?
শামসুজ্জামান খান : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চাচ্ছি না নানা কারণেই। এখানে এর আগে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা হয়েছিল। সেটা ব্যর্থ হয়েছে। তিন দিক খোলা এ প্রান্তরে মেলা আয়োজন সম্ভবও নয়। কারণ খোলা উদ্যানে মেলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দেয়াল দিয়ে করলে পরিবেশবাদীরা মানবেন না। অস্থায়ীভাবে টিন দিয়ে করলে সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
কালের কণ্ঠ : প্রতিবছর মেলা সম্প্রসারণ কিংবা মেলার স্থান বদলের প্রসঙ্গ উঠলেও তা হয়নি। আগমীবারও হয়তো হবে না। একাডেমীর ভেতরে রেখেও তো মেলাকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় করা সম্ভব। অনেকে মনে করেন, মানসম্পন্ন প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দিলেই জায়গা সংকট দূর হবে। মেলা স্থানান্তরেরও প্রয়োজন হবে না।
শামসুজ্জামান খান : আপনার কথার সঙ্গে আমি একমত। আমরাও চাই মেলা হোক প্রকৃত প্রকাশকদের। মানসম্পন্ন প্রকাশক বাছাই ও নির্বাচনের জন্যও জাতীয় কমিটি দরকার রয়েছে। আমরাও চাই সত্যিকারের মানসম্পন্ন প্রকাশক ও সৃজনশীল প্রকাশকদের নিয়ে মেলা করতে। সেটা পারি না নানা তদবির ও রাজনৈতিক চাপের জন্য। এ চাপ সামলানো একাডেমীর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
কালের কণ্ঠ : অতীতে বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিক গ্রন্থ প্রকাশ করে একাডেমী যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিল। এ ধরনের অনুবাদের কাজ একাডেমী করছে না অনেক দিন ধরেই। এ প্রকল্পটি নতুনরূপে চালু করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কি?
শামসুজ্জামান খান : সৈয়দ আলী আহসান সাহেব যখন পরিচালক ছিলেন, তখন এ ধরনের গ্রন্থ যথেষ্ট পরিমাণে প্রকাশিত হয়েছে। পরে পরিচালক বা মহাপরিচালকরা এদিকটায় নজর দেননি। আমরা বাংলা একাডেমীর জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছি। এতে একটি শক্তিশালী অনুবাদ ও অভিধান বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইনটি পাস হলে একাডেমীতে অনুবাদকর্ম আগের মতো প্রকাশ হতে পারবে এবং অভিধান বিভাগও একাডেমীর অভিধানগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করার ব্যবস্থা করতে পারবে।
কালের কণ্ঠ : অভিধান প্রণয়নসহ অনেক ভালো কাজ আপনারা করেছেন। কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় বাংলা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পরিভাষা কোষ তৈরি থমকে আছে কেন?
শামসুজ্জামান খান : এই কাজটি থেমে নেই এবং এটা এতটাই উন্নতমানের হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গেও এর চাহিদা বিপুল। তবে পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য একধরনের বিশেষ জ্ঞান এবং রচনাশৈলী আয়ত্ত করা প্রয়োজন। সে ধরনের পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা আমাদের দেশে কম।
এখন আমরা সীমিতসংখ্যক পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করব, তা গুণে-মানে উন্নত হতে হবে। কোনো পাঠ্যপুস্তক জনপ্রিয় হলেও দ্বিতীয়বার ছাপা হবে না। কারণ সে বই প্রকাশে প্রকাশকরাই উৎসাহিত হবেন। একাডেমী বরং নতুন কোনো বিষয়ে মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করলেই উচ্চ শিক্ষায় পাঠ্যপুস্তকের অভাব দ্রুত দূর করা সম্ভব হবে।
কালের কণ্ঠ : গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে একাডেমীতে ব্যাপক রাজনৈতিক নিয়োগের অভিযোগ আছে। বর্তমান সরকারের আমলেও এ ধরনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে বেশ জোরালোভাবেই। অনেকে বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আপনিও নিজের লোকদের চাকরি দিয়েছেন একাডেমীতে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কি জবাব দেবেন?
শামসুজ্জামান খান : এ অভিযোগ সত্য নয়। এ সরকারের আমলে কোনো ধরনের নিয়োগই হয়নি। যা হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমল নিয়ে যে কথা উঠেছে, তা সত্য নয়। কয়েকটি প্রকল্পের জন্য শুধু কয়েকজন গবেষক সাময়িকভাবে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের এখন বাদ দেওয়ার ব্যাপারটি বেশ জটিল এবং এ ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া অমানবিকও বটে। আপাতত আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না।
কালের কণ্ঠ : বাংলা একাডেমীর সাহিত্য পুরস্কার বহু দিন কলুষিত ছিল। অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক পরিচয় ও দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে অনেকেই এ পুুরস্কারটি বাগিয়ে নিয়েছেন। মর্যাদাবান এ পুরস্কারটি কি প্রকৃত লেখকরা পাচ্ছেন? আপনার মতামত জানতে চাই।
শামসুজ্জামান খান : অতীতে কি ঘটেছে তা বলব না। আমার এ সময় পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মানোন্নয়নদাতাদের নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করেছি। এরপর এ ক্ষেত্রে তদবিরের সুযোগ কমেছে বলে মনে করি। কিন্তু তবুও পুরস্কার প্রত্যাশীরা অনুমান করেই বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুরস্কারের ব্যাপারে আমি বরাবরই যতদূর সম্ভব কঠোর থেকেছি। কোনো ধরনের দলবাজি, অনুরোধ ও তদবিরের কাছে মাথানত করিনি।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
শামসুজ্জামান খান : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
No comments