গ্রেট ব্রিটেন সত্যিকারের গ্রেট ব্রিটেন নয় by শাহনেওয়াজ বিপ্লব
সারা পৃথিবীর অর্থনীতি টালমাটাল। তার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থা শোচনীয়। দেনার দায়ে গ্রিসের অর্থনীতি প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী। গ্রিস ছাড়াও ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল এবং আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতিও রোগশয্যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানুষ অর্থনীতি নিয়ে ত্যক্তবিরক্ত।
এর ভেতর গ্রিস আর ইতালির প্রধানমন্ত্রীরা পদত্যাগ করে কোনো রকমে নিজেদের ইজ্জত বাঁচিয়েছেন। যে দুটো দেশ ইউরোপের রক্ষাকর্তা, সে জার্মানি আর ফ্রান্সেও জনমত এখন সরকারের বিপক্ষে যাচ্ছে ক্রমেই। আসলে এই বিপর্যয়ের উৎস অনেক আগে থেকেই, মূলত ইউরো অঞ্চলের পরিকল্পনায়। ইউরো অঞ্চলের মুদ্রা ইউরো চালু করতে গিয়ে এক অভিন্ন মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর এর ফলে এক দেশের ব্যাংক থেকে অন্য দেশের পক্ষে ঋণ গ্রহণে কোনো বাধা ছিল না। গ্রিস এ ব্যবস্থারই পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে।
মুদ্রানীতি ও নানা রকম আইনের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেহারাটি একটি দেশের মতো। তবে সমস্যা ছিল এক জায়গায়, সেটি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো অভিন্ন রাজস্বনীতি ছিল না। ফলে ইউরো অঞ্চলের গ্রিস, ইতালি, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও পর্তুগাল- আজ বড় ধরনের আর্থিক উচ্ছৃঙ্খলতার শিকার। যার পরিণতিতে ইউরো অঞ্চলে আজ বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়। যা হোক, বহু দেরিতে হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এখন হুঁশ হয়েছে। এর ভেতর সিক্স প্যাক নামের একটি রাজস্বনীতির প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে ইউরো অঞ্চলের দেশগুলো একটি নির্দিষ্ট রাজস্বনীতি মেনে চলবে। কোনো দেশ সে নীতি থেকে বিচ্যুত হলে তার বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সেটা নিশ্চিত করতেই এ প্রস্তাব। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসে এক বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে ব্রিটেন হঠাৎ বেঁকে বসে। পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোনো দেশ প্রস্তাবে আপত্তি বা ভেটো না দিলেও ব্রিটেন জানায় যে প্রস্তাবটি ব্রিটেনের স্বার্থবিরোধী। আর এতে জার্মানি, ফ্রান্সসহ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রিটেনের ওপর ক্ষুব্ধ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতর ব্রিটেনকে আরো নিঃসঙ্গ করে দেবে আগামী দিনে। ব্রিটেন বুঝতেই পারছে না, ব্রিটেনের আগের সেই দিন এখন নেই। একসময় বলা হতো, ব্রিটিশের রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না। ইউরোপ, এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো থেকে আমেরিকা পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। অর্থনৈতিক শক্তিতে ব্রিটেন ছিল সবার সেরা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ২০০ বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে দাপটের সঙ্গে আধিপত্য বজায় রাখে ব্রিটেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জার্মানি বিশ শতকের শুরুতে দাপটের সঙ্গে ফিরে আসে বিশ্ব অর্থনীতিতে। খুব দ্রুততর ব্যবধানে জার্মান অর্থনীতি ব্রিটেনের চেয়েও বিরাট আকার ধারণ করে। আমেরিকাও তত দিনে ব্রিটেনকে ডিঙিয়ে এক নম্বর অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে ব্রিটেনের স্থান দখল করে নেয়। সুতরাং আমেরিকা আর জার্মানির পরের স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রিটেনকে। সেই যে শুরু অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে ব্রিটেনের অবস্থান হারানো, যা অদ্যাবধি চলছে।
গত দশকেও আমেরিকা, জাপান, জার্মানির পর অনেক দিন ধরে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে চতুর্থ স্থানে ছিল ব্রিটেন। এরপর চীন আবির্ভূত হয় বিশ্ব অর্থর্নীতিতে নতুন পরাশক্তি হিসেবে। গত কয়েক বছরের ভেতর চীনের অর্থনীতি এত বিশাল আকার ধারণ করেছে যে আমেরিকার পরই চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় পরাশক্তি হিসেবে স্থান দখল করে নিয়েছে। চীন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নেওয়ার পর জাপান, জার্মানি, ব্রিটেন- সবাইকে এক ধাপ করে নিচে নামতে হয়েছে। এর ভেতর ফ্রান্স হঠাৎ করে ব্রিটেনের অর্থনীতি ডিঙিয়ে পঞ্চম স্থান দখল করে নিলে ব্রিটেনকে আরো এক ধাপ নিচে নেমে ষষ্ঠ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কিন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আবারও কোপ পড়েছে ব্রিটেনের ঘাড়ে। সেন্টার ফর ইকোনমিঙ্ অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তির তালিকায় ২০১২-এর জানুয়ারি মাস থেকে ব্রিটেনকে সরিয়ে দিয়ে ব্রাজিল ষষ্ঠ স্থান দখল করে নিয়েছে। সিইবিআর মজা করে বলেছে, ব্রাজিল ফুটবলে ব্রিটেনকে অনেকবার হারালেও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় এই প্রথম ইউরোপের একটি শিল্পোন্নত দেশকে হারালো। এর কারণ ২০১০-২০১১তে ব্রাজিলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৭-২০০৮-এর অর্থনৈতিক মন্দার পর ব্রিটিশ অর্থনীতি বলতে গেলে এগোতেই পারেনি। এখানেই শেষ নয়, ব্রিটেনের জন্য আরো এক দফা দুঃসংবাদ শুনিয়েছে সিইবিআর। অর্থনৈতিক মন্দার এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্রিটেন আগামী ১০ বছরে অষ্টম স্থানে নেমে যাবে। এ সময়ের ভেতর ব্রিটেনকে টপকে রাশিয়া অথবা ভারতের সপ্তম স্থান দখল করে নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
লেবার পার্টিও ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েও একটি দূরত্ব বজায় রেখেছিল সব সময়। সময় এসেছে এখন ব্রিটেনের রাজনীতিকদের উপলব্ধি করার, তাঁরা কী অতীত গরিমায় উচ্ছ্বসিত এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নাগরিক হয়ে থাকতে চান, নাকি ইউরোপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠতে চান? যদি দ্বিতীয়টিই তাদের কাম্য হয়, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন প্রস্তাবিত রাজস্বনীতিতে ক্যামেরনের ভেটো দেওয়ার সিদ্ধান্তটি যে ভুল, তা বলাই বাহুল্য। কারণ ইউরো অঞ্চলের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ব্রিটেনের স্বার্থ অবশিষ্ট ইউরোপ থেকে পৃথক হতে পারে না।
ইউরোপ ডুবলে যে ব্রিটেনও বাঁচবে না শেষ পর্যন্ত।
লেখক : গল্পকার, ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত
e-mail: shahnewazbiplob@hotmail.com
মুদ্রানীতি ও নানা রকম আইনের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেহারাটি একটি দেশের মতো। তবে সমস্যা ছিল এক জায়গায়, সেটি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো অভিন্ন রাজস্বনীতি ছিল না। ফলে ইউরো অঞ্চলের গ্রিস, ইতালি, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও পর্তুগাল- আজ বড় ধরনের আর্থিক উচ্ছৃঙ্খলতার শিকার। যার পরিণতিতে ইউরো অঞ্চলে আজ বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়। যা হোক, বহু দেরিতে হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এখন হুঁশ হয়েছে। এর ভেতর সিক্স প্যাক নামের একটি রাজস্বনীতির প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে ইউরো অঞ্চলের দেশগুলো একটি নির্দিষ্ট রাজস্বনীতি মেনে চলবে। কোনো দেশ সে নীতি থেকে বিচ্যুত হলে তার বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সেটা নিশ্চিত করতেই এ প্রস্তাব। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসে এক বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে ব্রিটেন হঠাৎ বেঁকে বসে। পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোনো দেশ প্রস্তাবে আপত্তি বা ভেটো না দিলেও ব্রিটেন জানায় যে প্রস্তাবটি ব্রিটেনের স্বার্থবিরোধী। আর এতে জার্মানি, ফ্রান্সসহ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রিটেনের ওপর ক্ষুব্ধ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতর ব্রিটেনকে আরো নিঃসঙ্গ করে দেবে আগামী দিনে। ব্রিটেন বুঝতেই পারছে না, ব্রিটেনের আগের সেই দিন এখন নেই। একসময় বলা হতো, ব্রিটিশের রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না। ইউরোপ, এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো থেকে আমেরিকা পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। অর্থনৈতিক শক্তিতে ব্রিটেন ছিল সবার সেরা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ২০০ বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে দাপটের সঙ্গে আধিপত্য বজায় রাখে ব্রিটেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জার্মানি বিশ শতকের শুরুতে দাপটের সঙ্গে ফিরে আসে বিশ্ব অর্থনীতিতে। খুব দ্রুততর ব্যবধানে জার্মান অর্থনীতি ব্রিটেনের চেয়েও বিরাট আকার ধারণ করে। আমেরিকাও তত দিনে ব্রিটেনকে ডিঙিয়ে এক নম্বর অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে ব্রিটেনের স্থান দখল করে নেয়। সুতরাং আমেরিকা আর জার্মানির পরের স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রিটেনকে। সেই যে শুরু অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে ব্রিটেনের অবস্থান হারানো, যা অদ্যাবধি চলছে।
গত দশকেও আমেরিকা, জাপান, জার্মানির পর অনেক দিন ধরে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে চতুর্থ স্থানে ছিল ব্রিটেন। এরপর চীন আবির্ভূত হয় বিশ্ব অর্থর্নীতিতে নতুন পরাশক্তি হিসেবে। গত কয়েক বছরের ভেতর চীনের অর্থনীতি এত বিশাল আকার ধারণ করেছে যে আমেরিকার পরই চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় পরাশক্তি হিসেবে স্থান দখল করে নিয়েছে। চীন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নেওয়ার পর জাপান, জার্মানি, ব্রিটেন- সবাইকে এক ধাপ করে নিচে নামতে হয়েছে। এর ভেতর ফ্রান্স হঠাৎ করে ব্রিটেনের অর্থনীতি ডিঙিয়ে পঞ্চম স্থান দখল করে নিলে ব্রিটেনকে আরো এক ধাপ নিচে নেমে ষষ্ঠ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কিন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আবারও কোপ পড়েছে ব্রিটেনের ঘাড়ে। সেন্টার ফর ইকোনমিঙ্ অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তির তালিকায় ২০১২-এর জানুয়ারি মাস থেকে ব্রিটেনকে সরিয়ে দিয়ে ব্রাজিল ষষ্ঠ স্থান দখল করে নিয়েছে। সিইবিআর মজা করে বলেছে, ব্রাজিল ফুটবলে ব্রিটেনকে অনেকবার হারালেও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় এই প্রথম ইউরোপের একটি শিল্পোন্নত দেশকে হারালো। এর কারণ ২০১০-২০১১তে ব্রাজিলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৭-২০০৮-এর অর্থনৈতিক মন্দার পর ব্রিটিশ অর্থনীতি বলতে গেলে এগোতেই পারেনি। এখানেই শেষ নয়, ব্রিটেনের জন্য আরো এক দফা দুঃসংবাদ শুনিয়েছে সিইবিআর। অর্থনৈতিক মন্দার এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্রিটেন আগামী ১০ বছরে অষ্টম স্থানে নেমে যাবে। এ সময়ের ভেতর ব্রিটেনকে টপকে রাশিয়া অথবা ভারতের সপ্তম স্থান দখল করে নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
লেবার পার্টিও ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েও একটি দূরত্ব বজায় রেখেছিল সব সময়। সময় এসেছে এখন ব্রিটেনের রাজনীতিকদের উপলব্ধি করার, তাঁরা কী অতীত গরিমায় উচ্ছ্বসিত এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নাগরিক হয়ে থাকতে চান, নাকি ইউরোপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠতে চান? যদি দ্বিতীয়টিই তাদের কাম্য হয়, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন প্রস্তাবিত রাজস্বনীতিতে ক্যামেরনের ভেটো দেওয়ার সিদ্ধান্তটি যে ভুল, তা বলাই বাহুল্য। কারণ ইউরো অঞ্চলের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ব্রিটেনের স্বার্থ অবশিষ্ট ইউরোপ থেকে পৃথক হতে পারে না।
ইউরোপ ডুবলে যে ব্রিটেনও বাঁচবে না শেষ পর্যন্ত।
লেখক : গল্পকার, ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত
e-mail: shahnewazbiplob@hotmail.com
No comments