অপচিকিৎসা-সরল বিশ্বাসের খেসারত
এক বৃদ্ধাকে প্যারালাইসিস ভালো করে দেওয়ার নামে ভণ্ড কবিরাজ তার ওপর আঁতকে ওঠার মতো কথিত 'গোর চিকিৎসা' পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। বৃদ্ধার শরীরের কোমর থেকে নিম্নাংশ মাটিতে ঢেকে তাকে পাঁচ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে চিকিৎসা চলে।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত বৃদ্ধার প্যারালাইসিস রোগের কোনো ইতরবিশেষ হয়নি। এভাবেই রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কবিরাজ চিকিৎসার নামে একের পর এক মানুষকে প্রতারিত করে আসছে। এ ব্যাপারে গত সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, একই উপজেলার তাহির একডালা গ্রামের আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী ৭২ বছরের রাহেলা বেগমের প্যারালাইসিস রোগ ভালো করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভণ্ড কবিরাজ সাইদুর রহমান পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। কবিরাজ গোর চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেক রোগী ভালো করার দাবিও করে। কিন্তু গ্রামের লোকেরা তার চিকিৎসায় কোনো রোগী ভালো হওয়ার দাবিকে অস্বীকার করেছেন। বরং সবাই একবাক্যে সাইদুরকে ভণ্ড ও প্রতারক বলে অভিহিত করেছেন। বস্তুত গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা ও তা গরিব মানুষের নাগালের বাইরে থাকায় এবং কতক ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষের মধ্যে এখনও অতীত কবিরাজি চিকিৎসার ওপর বিশ্বাস থাকায় এক শ্রেণীর ভণ্ড কবিরাজ সেজে মানুষকে প্রতারিত করে আসছে। অথচ গ্রামের মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মারফত সচেতনতামূলক জোরদার প্রচারণা চালানো হলে চিকিৎসার নামে ভণ্ড কবিরাজদের প্রতি সাধারণ মানুষ আর আকৃষ্ট হতো না। তবে এই ভণ্ডদের দমনের জন্য প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগেরও যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। যারা এভাবে মানুষকে প্রতারিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ করে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া সম্ভব। রাজশাহীর বাগমারার তাহির একডালা গ্রামের রাহেলা বেগমের মতো আর কেউ যাতে সাইদুরের মতো ভণ্ড কবিরাজের অপচিকিৎসার শিকার না হন সে জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এ ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। এক সময় সাধারণ মানুষের পীর-ফকিরের ওপর যে অগাধ বিশ্বাস ছিল তাকে নানা কায়দায় ব্যবহার করে এক শ্রেণীর প্রতারক গ্রামের সাধারণ মানুষকে এখনও নানাভাবে প্রতারিত করে আসছে। গোর চিকিৎসা এর একটি ধরন মাত্র। সমাজকে সবধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধেই সোচ্চার হতে হবে এবং এটা দূর করার সচেতন প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
No comments