বড় জয়ে শুরু চ্যাম্পিয়ন ঢাকার
একদিকে ফিল্ডার-ব্যাটসম্যানরা মাঠে নামছেন, আরেক দিকে চলছে বাউন্ডারির দড়িতে বিজ্ঞাপনী টোবলার লাগানোর কাজ। নাবিল সামাদ যখন এবারের বিপিএলের প্রথম বলটি করতে যাচ্ছেন, মাঠকর্মীদের হঠাৎ বোধোদয় হলো।
তড়িঘড়ি করে সরে দাঁড়ালেন মাঠের বাইরে। খুব বিস্ময়কর কিছু অবশ্য নয়, বরং বলা চলে টুর্নামেন্টের প্রতীকী দৃশ্য। অব্যবস্থাপনার আরেকটি নজির দিয়ে শুরু বিপিএলের দ্বিতীয় আসর! প্রথম আসরের উদ্বোধনী দিনে বাকি সবকিছু আড়াল করে দিয়েছিল ক্রিস গেইলের বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি। এবার গেইল নেই, তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ঝলকানি কম থাকল না। ঝোড়ো এক ইনিংস খেললেন ওয়াইস শাহ, এনামুল হকের ব্যাট থেকে এল এবারের আসরের প্রথম ফিফটি। গতবার পুরো আসরেই ২০০ রানের ইনিংস ছিল একটি। এবার প্রথম ম্যাচেই ২০৪ করে ফেলল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। শিরোপা ধরে রাখার মিশন শুরু করল ৬২ রানের দাপুটে জয়ে। মোশাররফ হোসেন গড়লেন বিপিএলের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। মাঠের ক্রিকেট তবু পারিপার্শ্বিকতাকে আড়াল করতে পারল কমই।এমন পরাজয়ের চেয়েও খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের জন্য বড় হয়ে থাকল যেমন ১১ জনকে মাঠে নামাতে পারাই। সাত পাকিস্তানিকে হারিয়ে প্রায় রিক্ত দলটি শেষ পর্যন্ত মাঠে নামতে পারল নিলামের বাইরে আসিফ আহমেদকে দলে নিয়েছিল বলে। বয়সভিত্তিক পর্যায়ের দুই ক্রিকেটারকে করতে হয়েছে দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ ব্যক্তি। অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস এসবকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে না চাইলেও পারিপার্শ্বিকতার ছাপ তাঁর দলের পারফরম্যান্স ও শরীরী ভাষায় ফুটে উঠেছে স্পষ্টই।
ঝড়ের ইঙ্গিত দিয়েই শুরু হয়েছিল ঢাকার ইনিংস। নাবিলের প্রথম ওভারেই দুটি চারে শুরু জশুয়া কবের। লিস্টারশায়ার ব্যাটসম্যান পরের ওভারের প্রথম বলে ডলারকে স্বাগত জানালেন ছক্কায়। ওপেনিংয়ে কবের সঙ্গী আশরাফুল কিছুক্ষণের জন্য ফিরে গেলেন হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোয়। শাহাদতের প্রথম ওভারেই ৩ চার ও ১ ছয়ে নিলেন ১৮! দারুণ এক সুইপে ৪ নাবিলকে। ব্যস, এরপরই ‘চিরায়ত’ আশরাফুল। ডলারকে থার্ডম্যানে গ্লাইড করতে গিয়ে বল টেনে আনলেন স্টাম্পে। নিজের আগের ওভারেই ডলার ফিরিয়েছেন কবকে। শর্ট বলের মহড়ার মাঝে হঠাৎই ডলারের দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড কব।
ভালো শুরুটাকে ছুড়ে আসেননি এনামুল-ওয়াইস। সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়েছেন একজন, আরেকজন দীর্ঘদিন এই স্বাদবঞ্চিত। দুজনের তোলা ঝড়ে এলোমেলো খুলনা। চতুর্থ উইকেটে ৬১ বলে ৯০ রানের জুটি। ৩৮ বলে ফিফটি ছুঁয়েই ফিরে গেছেন এনামুল। তবে সাকিবকে নিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে গেছেন ওয়াইস। ৬৪ রানের জুটি গড়েছেন ২০০ স্ট্রাইক রেটে! ৩৩ বলে ফিফটি ছোঁয়া ওয়াইস একসময় জাগিয়েছিলেন সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও। সেটা না হলেও করেছেন টি-টোয়েন্টিতে নিজের সর্বোচ্চ স্কোর (৮৪), আগের ১৬৪ ম্যাচে সর্বোচ্চ ছিল ৮০। সাকিব মাঠে ফেরা উদ্যাপন করেছেন প্রথম বলেই ছয় মেরে। দীর্ঘদিন বাইরে থাকার ছাপ খুব একটা ছিল না পারফরম্যান্সে।
ম্যাচ শেষ আসলে প্রথম ইনিংস শেষেই। ৪ ওভারে ৩৮ তুলে তবুও কিছুটা উত্তেজনা ফিরিয়ে ছিলেন খুলনার দুই ওপেনার রিকি ওয়েসেলস ও নাজিমউদ্দিন। কিন্তু মোশাররফের দুর্দান্ত বোলিং আর ক্রমেই বাড়তে থাকা রানরেটের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সামর্থ্য কালকের খুলনার ছিল না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস: ২০ ওভারে ২০৪/৪ (কব ১৭, আশরাফুল ২২, এনামুল ৫০, ওয়াইস ৮৪, সাকিব ২৭*, নাবিল ০/৩৪, ডলার ৩/৪০, শাহাদাত ০/৪০, ফরহাদ ১/৪২, সানজামুল ০/৩২, আসিফ ০/১৫)। খুলনা রয়েল বেঙ্গলস: ২০ ওভারে ১৪২/৮ (নাজিমউদ্দিন ২৭, ওয়েসেলস ৩০, শাহরিয়ার ৫, মিঠুন ০, মিজানুর ৮, ফরহাদ ১৭, আসিফ ২৯, ডলার ৮, সানজামুল ৪*, শাহাদাত ৭*, মাশরাফি ০/৪২, লিডল ০/২৯, সাকিব ১/২৭, মোশাররফ ৪/৯, লোকুয়ারাচ্চি ২/২৯)।
ফল: ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস ৬২ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ওয়াইস শাহ।
No comments