পাকিস্তান :ডি চক আর লাল মসজিদ এক নয় by আনোয়ার ইকবাল
ডি চক আর লাল মসজিদের মধ্যে পার্থক্যটা গণতন্ত্র এবং সামরিক একনায়কত্বের মধ্যকার পার্থক্যের মতো। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আপসই বিজয়ের সোপান তৈরি করে। আর সহিংসতা পরাজয়ের দ্যোতক। একনায়কত্বের অভিধানে সহিংসতা ছাড়া বিজয় অসম্ভব।
যারা লাল মসজিদের ভেতরে লুকিয়ে ছিল, তারা কোনো অর্থেই গণতন্ত্রী নয়। তারা ছিল সশস্ত্র, যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও কঠোর লড়াই করার মানসিকতাসম্পন্ন। তারা নির্র্বাচনী সংস্কারের দাবি নিয়ে সেখানে জড়ো হয়নি। তারা তাদের মত গোটা দেশের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল এবং এই লক্ষ্য অর্জনে একমাত্র বন্দুকের নলের ওপরই তারা নির্ভর করছিল।
লাল মসজিদ সংকটের প্রথমদিকে জেনারেল মোশাররফের সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছুটা ধৈর্য দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হলো, মোশাররফ একজন সামরিক একনায়কই। একজন সামরিক কর্মকর্তা আপসের প্রশিক্ষণ পান না। তাই কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তার পক্ষে ধৈর্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি যেটার প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, সেই অস্ত্র ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করেন। যখন জঙ্গি আর সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, সঙ্গত কারণেই অপেক্ষাকৃত অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী সামরিক বাহিনীই ওই লড়াইয়ে বিজয়ী হয়। কিন্তু এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতি।
সুফি ড. কাদরির আহ্বানে যারা ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট ভবনের কাছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন, তাদের কারও কাছেই বন্দুক, বিস্ফোরক বা আত্মঘাতী জ্যাকেট ছিল না। তারা তাদের সন্তানদেরসহ খাবার পানি, খাবার ও তাঁবু নিয়ে এসেছিল।
আর যেভাবে পিপিপি সরকার জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আত্মঅহমিকা ত্যাগ করে একটা সম্ভাব্য বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিকে প্রশমিত করেছে, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। বিক্ষোভ শুরুর প্রথম থেকেই প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বলে এসেছেন যে, প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অধিকার নাগরিকদের রয়েছে এবং তার সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করবে না। দু'জন মন্ত্রীর কতিপয় দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদ্ভট বক্তব্য ছাড়া সরকার রাজনৈতিক তীক্ষষ্ট বিচারবুদ্ধি ও মুক্তমন নিয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এর পাশাপাশি আপস প্রস্তাবকে গ্রহণ করে ড. তাহিরুল কাদরিও প্রমাণ দিয়েছেন যে, তিনি শুধু একজন পীরই নন, একই সঙ্গে রাজনীতিবিদের বুদ্ধিসম্পন্নও। ইসলামাবাদের একজন অধিবাসী এই আপস ঘোষিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই তার ফেসবুকে এটাকে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের জন্যই এটা 'উইন উইন' পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং শেষ বিচারে লাভবান হয়েছে পাকিস্তানের জনগণ।
লন্ডনে বসবাসকারী এক পাকিস্তানি এম আরশাদ খান মনে করেন, কাদরি এই বিক্ষোভ থেকে কী অর্জন করলেন_ সেটা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, গণতান্ত্রিক এবং অগণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যকার চলমান লড়াইয়ে পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও জনগণ বিজয়ী হয়েছে।
লাহোরের এক ব্লগার সাবির নাজির বলেছেন, এ থেকে ইমরানের জন্য শিক্ষা হলো_ ইসলামাবাদ থেকে ওয়াজিরিস্তানে লংমার্চ ফলপ্রদ হয় না। এর ভিন্ন তরিকা রয়েছে।
অনেক ব্লগার ও ফেসবুকপ্রেমী এ ধরনের পরিস্থিতিতে পূর্বসূরিদের মতো উগ্রতা প্রদর্শন না করে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট জারদারির প্রশংসা করেছেন।
ইসলামাবাদের আইনজীবী মিয়া আমের লিখেছেন, যারা এই অবস্থান ধর্মঘট ও লংমার্চে অংশ নিয়েছেন, তাদের লাখো সালাম। বিশেষত প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে জয় করে তারা দাবি আদায়ে অটল ছিলেন ... আমরা এর ফলাফলে আনন্দিত... শেষ পর্যন্ত এতে গণতন্ত্রই বিজয়ী হলো। আরেক ব্লগার লিখেছেন, কাদরি এবং সরকার বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আমরাও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান করতে পারি। এটা একটা শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিগ্রাহ্যভাবে সুসংগঠিত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের নতুন পর্যায় বা রাজনৈতিক অগ্রগতি বলা যায়। এখন সময় এসেছে গণতন্ত্র ও সুশাসনের এজেন্ডা নিয়ে দেশের নাগরিক সমাজের গঠনমূলক ও সঙ্গতিপূর্ণ ভাবনা-চিন্তা করা এবং সব রাজনৈতিক দল যাতে তার অংশীদার হয়, সে দাবি করা।
আনোয়ার ইকবাল : ডনের নিয়মিত লেখক
সংক্ষেপিত ভাষান্তর সুভাষ সাহা
লাল মসজিদ সংকটের প্রথমদিকে জেনারেল মোশাররফের সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছুটা ধৈর্য দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হলো, মোশাররফ একজন সামরিক একনায়কই। একজন সামরিক কর্মকর্তা আপসের প্রশিক্ষণ পান না। তাই কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তার পক্ষে ধৈর্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি যেটার প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, সেই অস্ত্র ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করেন। যখন জঙ্গি আর সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, সঙ্গত কারণেই অপেক্ষাকৃত অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী সামরিক বাহিনীই ওই লড়াইয়ে বিজয়ী হয়। কিন্তু এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতি।
সুফি ড. কাদরির আহ্বানে যারা ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট ভবনের কাছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন, তাদের কারও কাছেই বন্দুক, বিস্ফোরক বা আত্মঘাতী জ্যাকেট ছিল না। তারা তাদের সন্তানদেরসহ খাবার পানি, খাবার ও তাঁবু নিয়ে এসেছিল।
আর যেভাবে পিপিপি সরকার জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আত্মঅহমিকা ত্যাগ করে একটা সম্ভাব্য বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিকে প্রশমিত করেছে, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। বিক্ষোভ শুরুর প্রথম থেকেই প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বলে এসেছেন যে, প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অধিকার নাগরিকদের রয়েছে এবং তার সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করবে না। দু'জন মন্ত্রীর কতিপয় দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদ্ভট বক্তব্য ছাড়া সরকার রাজনৈতিক তীক্ষষ্ট বিচারবুদ্ধি ও মুক্তমন নিয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এর পাশাপাশি আপস প্রস্তাবকে গ্রহণ করে ড. তাহিরুল কাদরিও প্রমাণ দিয়েছেন যে, তিনি শুধু একজন পীরই নন, একই সঙ্গে রাজনীতিবিদের বুদ্ধিসম্পন্নও। ইসলামাবাদের একজন অধিবাসী এই আপস ঘোষিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই তার ফেসবুকে এটাকে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের জন্যই এটা 'উইন উইন' পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং শেষ বিচারে লাভবান হয়েছে পাকিস্তানের জনগণ।
লন্ডনে বসবাসকারী এক পাকিস্তানি এম আরশাদ খান মনে করেন, কাদরি এই বিক্ষোভ থেকে কী অর্জন করলেন_ সেটা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, গণতান্ত্রিক এবং অগণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যকার চলমান লড়াইয়ে পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও জনগণ বিজয়ী হয়েছে।
লাহোরের এক ব্লগার সাবির নাজির বলেছেন, এ থেকে ইমরানের জন্য শিক্ষা হলো_ ইসলামাবাদ থেকে ওয়াজিরিস্তানে লংমার্চ ফলপ্রদ হয় না। এর ভিন্ন তরিকা রয়েছে।
অনেক ব্লগার ও ফেসবুকপ্রেমী এ ধরনের পরিস্থিতিতে পূর্বসূরিদের মতো উগ্রতা প্রদর্শন না করে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট জারদারির প্রশংসা করেছেন।
ইসলামাবাদের আইনজীবী মিয়া আমের লিখেছেন, যারা এই অবস্থান ধর্মঘট ও লংমার্চে অংশ নিয়েছেন, তাদের লাখো সালাম। বিশেষত প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে জয় করে তারা দাবি আদায়ে অটল ছিলেন ... আমরা এর ফলাফলে আনন্দিত... শেষ পর্যন্ত এতে গণতন্ত্রই বিজয়ী হলো। আরেক ব্লগার লিখেছেন, কাদরি এবং সরকার বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আমরাও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান করতে পারি। এটা একটা শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিগ্রাহ্যভাবে সুসংগঠিত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের নতুন পর্যায় বা রাজনৈতিক অগ্রগতি বলা যায়। এখন সময় এসেছে গণতন্ত্র ও সুশাসনের এজেন্ডা নিয়ে দেশের নাগরিক সমাজের গঠনমূলক ও সঙ্গতিপূর্ণ ভাবনা-চিন্তা করা এবং সব রাজনৈতিক দল যাতে তার অংশীদার হয়, সে দাবি করা।
আনোয়ার ইকবাল : ডনের নিয়মিত লেখক
সংক্ষেপিত ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments