ভাঙল মিলনমেলা, এসএ গেমসের বর্ণিল সমাপন মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে, চোখ ধাঁধানো এ্যাকোয়াটিক শো by মজিবর রহমান
বিউগলের করম্নণ সুরে নিভে গেল মশালের আলো। এরই সঙ্গে শেষ হলো একাদশ গেমসের মিলনমেলা। গেমস সফলভাবে শেষ হওয়ায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলস্নুর রহমান ধন্যবাদ জানান স্বাগতিক বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ক্রীড়াবিদ-কর্মকর্তাদের।
পতাকা হসত্মানত্মর পরবতী গেমসের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সভাপতি, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আব্দুল মুবিন। সমাপনী বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এদিকে ্উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো সমাপনীর আয়োজনটাও ছিল বর্ণিল। যদিও সমাপনীটা সাজানো হয়েছিল ভিন্ন আঙ্গিকে এবং কিছুটা অন্য আমেজে। ছিল উদ্বোধনীর মতোই এ্যাকোয়াটিক শো'সহ সব ধরনের প্রদর্শনী। তবে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গেমসের সমপনীর আয়োজনটায় বেশি গুরম্নত্ব দেয়া হয় দেশীয় সংস্কৃতির ওপর।' প্রায় ৩ ঘণ্টা ৫ মিনিটের এই আয়োজনে উদ্বোধনীর মতোই প্রথমে ছিল সঙ্গীত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর ও শুভ্রদেব সঙ্গীত পরিবেশন করলেও সমাপনী অনুষ্ঠানে ছিলেন কনক চাঁপা, রফিকুল আলম ও এস আই টুটুল। পাশাপাশি প্রায় এক হজার আনসার ভিডিপি সদস্যদের সমন্বয়ে মিলিটারি ব্যান্ড। এছাড়া লন্ডনভিত্তিক 'লক্ষ্মী টেরা' ব্যান্ড নিজেদের গান পরিবেশন করে প্রায় ৩০ মিনিট। তবে মূল আকর্ষণ হিসেবে গেমসের উদ্বোধনী দিনের মতোই দৃষ্টিনন্দন এ্যাকোয়াটিকের সঙ্গে সমন্বয় করে নৃত্য পরিবেশনা মাতিয়ে তোলে উপস্থিত দর্শক ক্রীড়াবিদ, আমন্ত্রিত অতিথিদের। যা পরিচালনা করেন দেশের স্বনামধণ্য শিল্পী শিবলী মোহাম্মদ এবং শামীম আরা নীপা। এসব আয়োজনের সঙ্গে লেজার শো ও ফায়ার ওয়াক্স আকর্ষণীয় করে তুলে সমাপনী অনুষ্ঠান। আয়োজকদের অভিমত, এ্যাকোয়াটিক শো দণি এশিয়ায় তো বটেই এমনকি এশিয়ায় এবারই প্রথম। যদিও টেকনিক্যাল দিকটার দায়িত্বে ছিলেন বিদেশীরা। কিন্তু আয়োজনের সবটাই সাজানো-গোছানো ছিল দেশীয় সংস্কৃতিতে। যেখানে পারফর্ম করে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ২ হাজার পারফর্মার। একই সঙ্গে দেশের উপজাতি মগ, মুরাং, চাকমাসহ বেশ ক'টি গোষ্ঠী অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ হয় এক ভিন্ন মাত্রা বা এনে দেয় নতুন স্বাদ।উলেস্নখ্য, সমাপনী অনুষ্ঠান সফল করতে গত প্রায় দুই মাস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শারাফাত হোসেনের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক হাজার সদস্য, ২৫০ পারফর্মার এবং ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের প্রায় ৩৬ জন আনত্মর্জাতিক মানের টেকনিশিয়ান। সবশেষে ছিল কল-কল-ছল-ছল গানের নৃত্য পরিবেশনা। যা ওয়াটার ওয়ার্কসের এবং লেজার শোর মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়।বিওএ সভাপতি, সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আব্দুল মুবিনের কাছ থেকে পতাকা গ্রহণ করেন গেমসের পরবর্তী স্বাগতিক দেশ ভারতীয় অলিম্পিক কাউন্সিলের সভাপতি সুরেশ কালমাদি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিলের মহাসচিব রাজা রনধীর সিং।
বর্ণাঢ্য সমাপনীর মধ্য দিয়ে ভাঙল সৌহার্দ্য-ভ্রাতৃত্বের মিলনমেলা, শেষ হলো 'দৰিণ এশিয়ার অলিম্পিক'খ্যাত এসএ গেমসের একাদশ আসরের পদকের লড়াই। ২৯ জানুয়ারি, যাত্রা শুরম্ন হয়ে ৯ ফেব্রম্নয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘটল। কেউ পদক জেতার আনন্দ সঙ্গী করে, কেউবা পদক না পাওয়ার বেদনা বুকে নিয়েই ফিরলেন নিজ নিজ ঘরে। সেই ১৯৮৪ সালে প্রচলন হওয়ার পর থেকে এবারের আসরে ভারতীয়দের একচেটিয়া আধিপত্য। পদক তালিকায় নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্ব। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটল না। অর্থাৎ বরাবরের মতোই এবারও পদক তালিকায় ভারতীয়দেরই জয়জয়কার। এবারের আসরের আয়োজক বাংলাদেশের ১৮টি স্বর্ণ জেতার বিষয়টি উজ্জ্বল দৃষ্টানত্ম হয়ে রইল। যা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে আগামীতে। এক কথায় বাংলাদেশের এই প্রাপ্তির গুরম্নত্ব অপরিসীম। এ প্রাপ্তি অপার আনন্দের। কারণ এসএ গেমসের ২৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এত স্বর্ণ জেতার কৃতিত্ব দেখাল বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্বর্ণের সংখ্যা ছিল ১১। তাও ১৯৯৩ সালের ঢাকায়, নিজ মাটিতে। গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি এ রেকর্ড ভেঙ্গে ১৪ স্বর্ণ জয় করার কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ। আর পরদিন ফুটবলাররা পূরণ করে ১৮ স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিলন হলো, প্রত্যাশা ছাড়িয়েও গেল_ এসএ গেমসে মোট ১৮টি স্বর্ণ জেতার মধ্যে দিয়ে। গেমসের একাদশতম দিনে সোমবার বাংলাদেশকে কাঙ্ৰিত লৰ্য পেঁৗছে দেয় উশুর একটি আর বক্সিংয়ের দুই স্বর্ণ। ১৮তম স্বর্ণ এনে দেন ফুটবলাররা। এবারের গেমস শুরম্নর আগে ১৭ স্বর্ণ জেতার প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছিল আয়োজক কমিটি। তবে ১৭ স্বর্ণের টার্গেট পূরণ হলেও প্রত্যাশিত অনেক ইভেন্টেই স্বর্ণপদক জোটেনি। এর মধ্যে অন্যতম এ্যাথলেটিক্স ও সুইমিং। দেশবাসীকে হতাশ করলেন বাংলাদেশের সাঁতারম্ন এবং এ্যাথলেটরা। অথচ গেমস শুরম্নর আগে সাঁতার ও এ্যাথলেটিক্সও ছিল অগ্রগণ্য। অন্যদিকে ১৮ স্বর্ণ এলো ফুটবল, ক্রিকেটসহ কারাতে, গলফ, তায়কোয়ান্ড, উশু আর বক্সিংয়ের কল্যাণে।
এবারের গেমসে বাংলাদেশকে প্রথম স্বর্ণপদকটি উপহার দেন ভারোত্তোলক হামিদুল ইসলাম । এরপর একে একে বাংলাদেশকে স্বর্ণ উপহার দিলেন তিন মহিলা শূটার রত্না, সাদিয়া, তৃপ্তির সঙ্গে আসিফ, শোভন, বাকী। উশুতে ইতি ইসলাম, তায়কোয়ান্ডতে শারমিন ফারজানা রম্নমি। এরই ধারাবাহিকতায় আরও ছয়টি স্বর্ণ এলো রবিবার। কারাতে মেয়েদের এককে জো উ প্রম্ন, মরিয়ম খাতুন। পুরম্নষ ও মহিলা দলগত বিভাগেও এলো দু'টি। তায়কোয়ান্ডতে স্বর্ণ উপহার দিলেন শাম্মী আকতার। আনন্দের স্বর্ণটি উপহার দিলেন অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেটাররা, টি২০ ক্রিকেটের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৬ রানে হারিয়ে।
এবারের গেমসে ফুটবলের এই স্বর্ণকে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের সবাচাইতে দামী এবং কাঙ্ৰিত স্বর্ণ হিসেবে। ১৯৯৯ সালের পর এবারই গেমসের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ ফুটবল দল। আর দীর্ঘ প্রতীৰার অবসানটা ঘটল স্বর্ণপদক গলায় ঝুলিয়ে। মেয়েদের নিয়েই এবার প্রত্যাশা ছিল বেশি। এ প্রত্যাশাও পূরণ হয়েছে। স্বর্ণ শিকারে মেয়েদের সাফল্য এবার ঈর্ষণীয়। এসএ গেমসের বাংলাদেশের ঝুলিতে জমা পড়া মোট ১৮ স্বর্ণপদকের বেশিরভাগই গলায় ঝুলিয়েছেন মেয়েরা। একক ও দলগত মিলিয়ে মেয়েদের স্বর্ণ সংখ্যা দশটি। এসএ গেমস বা তৎকালীন সাফ গেমসে শূটিংয়ের বাইরে বাংলাদেশের মেয়েদের স্বর্ণ সাফল্য ছিল না। স্বর্ণপদক দূরের কথা, রৌপ্যের সংখ্যাও হাতেগোনা। কিন্তু দেশের মাটিতে এবার বাজিমাত করলেন মেয়েরাই।
No comments