সংবাদপত্রের স্বাধীনতা- চীনাদের প্রত্যাশা বাড়ছে
গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নবনির্বাচিত প্রধান শি জিনপিং তাঁর সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, তাঁরা যেন সংস্কারের বিষয়ে জনগণের ‘তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও অন্যান্য যেসব প্রত্যাশা আছে’, সেগুলোর প্রতি সাড়া দেন।
জিনপিং সম্ভবত তখন ধারণাই করতে পারেননি, জনগণের এই আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা কত।
দক্ষিণ চীনের গুয়াংজু শহরের এক ব্যস্ত সড়কে সম্প্রতি একরকম হঠাৎ করেই বিক্ষোভ শুরু করেন একদল মানুষ। তাঁদের দাবি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক্্স্বাধীনতা। সেই ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কয়ারের আলোচিত বিক্ষোভের পর থেকে এ পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক চীনে এ ধরনের দাবি নিয়ে প্রকাশ্য বিক্ষোভের ঘটনা বিরল। স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনায় দেশের নতুন নেতা শি জিনপিং কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন।
গুয়াংদং প্রদেশের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ওই বিক্ষোভ শুরু হয় এ মাসের ৭ তারিখে। ক্ষমতাসীন দলের সেন্সরের কারণে প্রদেশের জনপ্রিয় ও স্পষ্টভাষী পত্রিকা সাউদার্ন উইকেন্ড-এর নববর্ষের একটি বার্তা কাটছাঁট করতে হয়েছে—ইন্টারনেটে এমন অভিযোগ চাউর হওয়ার পর ওই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। সাউদার্ন উইকেন্ড গুয়াংদংভিত্তিক পত্রিকা হলেও সারা দেশেই এর পাঠক রয়েছে। মূল যে বার্তাটি ছাপার কথা ছিল, তাতে চীনের সংবিধানে যেসব স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সমুন্নত রাখতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তাতে আরও বলা হয়, এটা বাস্তবায়ন করার একমাত্র পথ হচ্ছে, ‘সরকারের ক্ষমতার সমালোচনায়’ নাগরিকদের ‘উচ্চকণ্ঠে কথা বলতে দেওয়া’। কাটছাঁট করে চূড়ান্তভাবে যা ছাপা হয়, তাতে এসব রাজনৈতিক দাবির সবই বাদ দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর শুরু হয় সাংবাদিকদের বিরল বিদ্রোহ। সাউদার্ন উইকেন্ড পত্রিকাটির নিয়ন্ত্রণকারী হচ্ছে নানফাং মিডিয়া গ্রুপ, যেটি দলের গুয়াংদং শাখার মুখপত্র)। অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয় ওই পত্রিকার সাবেক ও বর্তমান ১০ জনেরও বেশি সাংবাদিক ও কর্মী গুয়াংদং শাখার প্রচারণাবিষয়ক প্রধান তুয়ো ঝেনকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে এক আবেদনে সই করেন। কিছুসংখ্যক কর্মী অনশনে যাওয়ারও ঘোষণা দেন। দ্রুতই নানফাং মিডিয়া গ্রুপের সদর দপ্তর গণ-আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এ আন্দোলনের মূল আহ্বান ছিল বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার।
প্রতিবছরই চীনে হাজার হাজার লোক এ ধরনের অনেক বিক্ষোভ করে থাকেন। তবে এবার পার্থক্যটা হচ্ছে সমাবেশের স্লোগান। সেই স্লোগান জাতীয় রাজনীতিকে ধাক্কা দিয়েছে, যা চীনের মতো দেশের ক্ষেত্রে বিরল। সাউদার্ন উইকেন্ড-এর ওই সমর্থকদের কণ্ঠস্বর ছিল বলিষ্ঠ। মনে করা হচ্ছে, এটাকে একটা যুক্তি হিসেবে খাড়া করবেন দলের নেতারা; যাঁরা মনে করেন, রাজনীতিতে সামান্যতম উদারীকরণও একটার পর একটা দাবি ওঠার দ্বার খুলে দিতে পারে।
অবশ্য, সবাই এই বিদ্রোহীদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। সাউদার্ন উইকেন্ড-এর সমর্থকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে মাও সেতুংয়ের একদল অন্ধ সমর্থক। মাওয়ের ছবি হাতে নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছে। মুখে স্লোগান: কমিউনিস্ট পার্টির জন্য নিখাদ ভালোবাসা। নানফাং মিডিয়া গ্রুপকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়েছে এই মাওভক্তরা। তারা নানফাং মিডিয়া গ্রুপকে পশ্চিমা মূল্যবোধের আমদানিকারক হিসেবে বিবেচনা করে।
রাজধানী বেইজিংয়ে সরকারি প্রচার কর্মকর্তারা ইন্টারনেটে সাউদার্ন উইকেন্ড পত্রিকার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ ঠেকানোরও চেষ্টা চালাচ্ছেন। টুইটারের মতো মাইক্রোব্লগ সাইটগুলোতে সাউদার্ন উইকেন্ড বিষয়ে অনুসন্ধান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি কট্টর সরকারপন্থী পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস-এ ছাপানো একটি সম্পাদকীয় পুনর্মুদ্রণ করতে দেশের পত্রিকাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সাউদার্ন উইকেন্ড পত্রিকার সমর্থকেরা সংবাদপত্রের যে স্বাধীনতা দাবি করছেন, চীনের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওতায় তার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি পশ্চিমা সংবাদপত্রগুলোও তাদের নিজ দেশের সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ানোর পথ বেছে নিতে পারে না বলেও সম্পাদকীয়তে যুক্তি দেখানো হয়। একমাত্র বেইজিং নিউজ—যার আংশিক মালিকানা নানফাং মিডিয়ার—ওই সম্পাদকীয় ছাপতে রাজি হয়েছে।
হারুন-অর-রশীদ, ইকোনমিস্ট থেকে
দক্ষিণ চীনের গুয়াংজু শহরের এক ব্যস্ত সড়কে সম্প্রতি একরকম হঠাৎ করেই বিক্ষোভ শুরু করেন একদল মানুষ। তাঁদের দাবি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক্্স্বাধীনতা। সেই ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কয়ারের আলোচিত বিক্ষোভের পর থেকে এ পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক চীনে এ ধরনের দাবি নিয়ে প্রকাশ্য বিক্ষোভের ঘটনা বিরল। স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনায় দেশের নতুন নেতা শি জিনপিং কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন।
গুয়াংদং প্রদেশের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ওই বিক্ষোভ শুরু হয় এ মাসের ৭ তারিখে। ক্ষমতাসীন দলের সেন্সরের কারণে প্রদেশের জনপ্রিয় ও স্পষ্টভাষী পত্রিকা সাউদার্ন উইকেন্ড-এর নববর্ষের একটি বার্তা কাটছাঁট করতে হয়েছে—ইন্টারনেটে এমন অভিযোগ চাউর হওয়ার পর ওই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। সাউদার্ন উইকেন্ড গুয়াংদংভিত্তিক পত্রিকা হলেও সারা দেশেই এর পাঠক রয়েছে। মূল যে বার্তাটি ছাপার কথা ছিল, তাতে চীনের সংবিধানে যেসব স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সমুন্নত রাখতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তাতে আরও বলা হয়, এটা বাস্তবায়ন করার একমাত্র পথ হচ্ছে, ‘সরকারের ক্ষমতার সমালোচনায়’ নাগরিকদের ‘উচ্চকণ্ঠে কথা বলতে দেওয়া’। কাটছাঁট করে চূড়ান্তভাবে যা ছাপা হয়, তাতে এসব রাজনৈতিক দাবির সবই বাদ দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর শুরু হয় সাংবাদিকদের বিরল বিদ্রোহ। সাউদার্ন উইকেন্ড পত্রিকাটির নিয়ন্ত্রণকারী হচ্ছে নানফাং মিডিয়া গ্রুপ, যেটি দলের গুয়াংদং শাখার মুখপত্র)। অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয় ওই পত্রিকার সাবেক ও বর্তমান ১০ জনেরও বেশি সাংবাদিক ও কর্মী গুয়াংদং শাখার প্রচারণাবিষয়ক প্রধান তুয়ো ঝেনকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে এক আবেদনে সই করেন। কিছুসংখ্যক কর্মী অনশনে যাওয়ারও ঘোষণা দেন। দ্রুতই নানফাং মিডিয়া গ্রুপের সদর দপ্তর গণ-আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এ আন্দোলনের মূল আহ্বান ছিল বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার।
প্রতিবছরই চীনে হাজার হাজার লোক এ ধরনের অনেক বিক্ষোভ করে থাকেন। তবে এবার পার্থক্যটা হচ্ছে সমাবেশের স্লোগান। সেই স্লোগান জাতীয় রাজনীতিকে ধাক্কা দিয়েছে, যা চীনের মতো দেশের ক্ষেত্রে বিরল। সাউদার্ন উইকেন্ড-এর ওই সমর্থকদের কণ্ঠস্বর ছিল বলিষ্ঠ। মনে করা হচ্ছে, এটাকে একটা যুক্তি হিসেবে খাড়া করবেন দলের নেতারা; যাঁরা মনে করেন, রাজনীতিতে সামান্যতম উদারীকরণও একটার পর একটা দাবি ওঠার দ্বার খুলে দিতে পারে।
অবশ্য, সবাই এই বিদ্রোহীদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। সাউদার্ন উইকেন্ড-এর সমর্থকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে মাও সেতুংয়ের একদল অন্ধ সমর্থক। মাওয়ের ছবি হাতে নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছে। মুখে স্লোগান: কমিউনিস্ট পার্টির জন্য নিখাদ ভালোবাসা। নানফাং মিডিয়া গ্রুপকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়েছে এই মাওভক্তরা। তারা নানফাং মিডিয়া গ্রুপকে পশ্চিমা মূল্যবোধের আমদানিকারক হিসেবে বিবেচনা করে।
রাজধানী বেইজিংয়ে সরকারি প্রচার কর্মকর্তারা ইন্টারনেটে সাউদার্ন উইকেন্ড পত্রিকার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ ঠেকানোরও চেষ্টা চালাচ্ছেন। টুইটারের মতো মাইক্রোব্লগ সাইটগুলোতে সাউদার্ন উইকেন্ড বিষয়ে অনুসন্ধান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি কট্টর সরকারপন্থী পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস-এ ছাপানো একটি সম্পাদকীয় পুনর্মুদ্রণ করতে দেশের পত্রিকাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সাউদার্ন উইকেন্ড পত্রিকার সমর্থকেরা সংবাদপত্রের যে স্বাধীনতা দাবি করছেন, চীনের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওতায় তার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি পশ্চিমা সংবাদপত্রগুলোও তাদের নিজ দেশের সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ানোর পথ বেছে নিতে পারে না বলেও সম্পাদকীয়তে যুক্তি দেখানো হয়। একমাত্র বেইজিং নিউজ—যার আংশিক মালিকানা নানফাং মিডিয়ার—ওই সম্পাদকীয় ছাপতে রাজি হয়েছে।
হারুন-অর-রশীদ, ইকোনমিস্ট থেকে
No comments