বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে by মনজুর আহমেদ
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত ছাড়াও এবার বিনিয়োগের জন্য দেশের বাইরে অর্থ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে তা সীমিত আকারে, মূলধন হিসাব সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে নয়।
রপ্তানিকারকেরা বিদেশি মুদ্রা আয় থেকে যে অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় রাখার সুযোগ (এক্সপোর্টার রিটেনশন কোটা বা ইআরকিউ) পান, প্রাথমিকভাবে ওই অর্থই বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে।
সীমিত পর্যায়ে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের এই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মূলধন হিসাব (ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট) আংশিক অবমুক্ত করে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যায় কি না, তার বিশদ পর্যালোচনা প্রতিবেদন তাদের সভা উপস্থাপন করতে বলেছে পর্ষদ। আগামীকাল রোববার পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এ বিষয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনও তৈরি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তান কোন প্রক্রিয়ায় মূলধন হিসাব অবমুক্ত করেছে, তা বিশেষ বিবেচনাতে দেখা হচ্ছে। তবে এই দুই দেশ রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা দিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ রাখেনি। তারা বরং সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য মূলধন হিসাব অবমুক্ত করেছে।
অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম হচ্ছে ঘনবসতি এবং শ্রমের মূল্য কম যেখানে, সেসব দেশে বাইরের পুঁজি বেশি বিনিয়োগ হয়। অন্যদিকে ধনী দেশে পুঁজি বেশি, শ্রমিকের সংখ্যা কম ও মজুরি বেশি। ফলে সেখান থেকেই পুঁজি আসে। বিদেশে দেশের পুঁজি বিনিয়োগ হলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান হয় না, তবে মুনাফা আসতে পারে। কিন্তু বিদেশের বিনিয়োগ দেশে এলে কর্মসংস্থান হয়, আর মুনাফা চলে যায়।
তবে ভিন্নমতও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধভাবে দুবাই, মরিসাসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে। সেই অর্থ বা তার মুনাফা দেশে আনার সুযোগ নেই। কিন্তু যদি বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ থাকে, তবে তা থেকে আয় ফেরত আনার বাধ্যবাধকতাও থাকবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেছেন, বাংলাদেশের বড় সমস্যা অবৈধ পথে বিদেশে পুঁজি পাচার। বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে অবৈধ পুঁজি পাচার ঠেকানো যাবে না। কারণ, পাচার করা পুঁজি মূলত বিদেশের গৃহ-সম্পত্তি ক্রয় ও অন্যান্য অনুৎপাদনশীল কাজেই ব্যয় হয়, বিনিয়োগে নয়। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট পুঁজি আকৃষ্ট করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে দেশের পুঁজি দিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের সময় এখনো এসেছে বলে মনে হয় না। বৈদেশিক বিনিময় ভারসাম্য, রিজার্ভ পরিস্থিতি এখনো এতটা শক্ত নয়। সাময়িক পরিস্থিতির বিবেচনায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় এটা নয়।
তার পরও বিদেশে বিনিয়োগের আদৌ সুযোগ দিতে হলে তা শর্ত সাপেক্ষে হওয়া দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক মাহমুদ। তিনি বলেন, বিদেশে বিনিয়োগ করা প্রকল্প থেকে মুনাফা লাভের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ, সেই মুনাফা দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপ এবং ওই প্রকল্পে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়গুলো পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ব্যবস্থাপনা ও এর তদারকি আগে উন্নত করতে হবে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতা ও আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, রিটেনশন কোটাতে যে বিদেশি মুদ্রা রাখতে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা তো ব্যবসায়ীকে খরচ করতেই দেওয়া হয়েছে। এটা হয়তো বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ভ্রমণসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে খরচ করতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এ কোটা থেকে কেউ যদি বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায় তাতে আপত্তি কোথায়? বরং সেই বিনিয়োগ থেকে দেশে মুনাফা ফিরিয়ে আনার শর্ত থাকবে। ফলে এতে লাভই হওয়ার কথা।’
ভারত ও পাকিস্তান পরিস্থিতি: পাকিস্তানে মূলধন হিসাব অনুমোদন সাপেক্ষে অবমুক্ত। অন্যদিকে ভারত ২০০৮ সাল থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। উভয় দেশই বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে পিছিয়ে আছে। তবে ভারতে বিপুল পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসছে আর পাকিস্তান পাচ্ছে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক সাহায্য। চলতি জানুয়ারি মাসের হিসাবে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাড়ে ২৯ হাজার কোটি ডলারের বেশি। তবে পাকিস্তানে রিজার্ভ বাংলাদেশের প্রায় কাছাকাছি বা সোয়া ১৩০০ কোটি ডলার।
রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা: এই কোটাতে বিদেশি মুদ্রা রাখার সুযোগ দেওয়া হয় রপ্তানিকারকের বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিদেশে ভ্রমণ খরচ মেটাতে। বর্তমানে এই খাতে ২৫ কোটি ডলারের মতো বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষিত আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানিকারকেরা যদি পুরো সীমা অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতেন, তাহলে এর পরিমাণ হতো প্রায় আড়াই শ কোটি ডলার।
এই কোটা নির্ধারণ হয় দেশীয় মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে। কৃষি, পাট ও সফটওয়্যার খাতে মূল্য সংযোজন বেশি হওয়ায় ৫০ শতাংশ এবং পোশাকসহ অন্যান্য কয়েকটি খাতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে বিদেশি মুদ্রা রিটেনশন কোটাতে রাখার সুযোগ রয়েছে বৈদেশিক বিনিময়-সংক্রান্ত বিধিবিধানে।
১৯৯৪ সাল থেকে দেশে বৈদেশিক বিনিময়ের চলতি হিসাব অবমুক্ত করা শুরু হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এলসি (ঋণপত্র) খোলা, শিক্ষার জন্য বিদেশে অর্থ প্রেরণ, বিদেশি বিনিয়োগের লভ্যাংশ নিতে দেওয়া, শিপিং কোম্পানির অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহার এসব কাজ ধীরে ধীরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সীমিত পর্যায়ে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের এই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মূলধন হিসাব (ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট) আংশিক অবমুক্ত করে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যায় কি না, তার বিশদ পর্যালোচনা প্রতিবেদন তাদের সভা উপস্থাপন করতে বলেছে পর্ষদ। আগামীকাল রোববার পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এ বিষয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনও তৈরি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তান কোন প্রক্রিয়ায় মূলধন হিসাব অবমুক্ত করেছে, তা বিশেষ বিবেচনাতে দেখা হচ্ছে। তবে এই দুই দেশ রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা দিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ রাখেনি। তারা বরং সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য মূলধন হিসাব অবমুক্ত করেছে।
অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম হচ্ছে ঘনবসতি এবং শ্রমের মূল্য কম যেখানে, সেসব দেশে বাইরের পুঁজি বেশি বিনিয়োগ হয়। অন্যদিকে ধনী দেশে পুঁজি বেশি, শ্রমিকের সংখ্যা কম ও মজুরি বেশি। ফলে সেখান থেকেই পুঁজি আসে। বিদেশে দেশের পুঁজি বিনিয়োগ হলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান হয় না, তবে মুনাফা আসতে পারে। কিন্তু বিদেশের বিনিয়োগ দেশে এলে কর্মসংস্থান হয়, আর মুনাফা চলে যায়।
তবে ভিন্নমতও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধভাবে দুবাই, মরিসাসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে। সেই অর্থ বা তার মুনাফা দেশে আনার সুযোগ নেই। কিন্তু যদি বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ থাকে, তবে তা থেকে আয় ফেরত আনার বাধ্যবাধকতাও থাকবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেছেন, বাংলাদেশের বড় সমস্যা অবৈধ পথে বিদেশে পুঁজি পাচার। বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে অবৈধ পুঁজি পাচার ঠেকানো যাবে না। কারণ, পাচার করা পুঁজি মূলত বিদেশের গৃহ-সম্পত্তি ক্রয় ও অন্যান্য অনুৎপাদনশীল কাজেই ব্যয় হয়, বিনিয়োগে নয়। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট পুঁজি আকৃষ্ট করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে দেশের পুঁজি দিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের সময় এখনো এসেছে বলে মনে হয় না। বৈদেশিক বিনিময় ভারসাম্য, রিজার্ভ পরিস্থিতি এখনো এতটা শক্ত নয়। সাময়িক পরিস্থিতির বিবেচনায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় এটা নয়।
তার পরও বিদেশে বিনিয়োগের আদৌ সুযোগ দিতে হলে তা শর্ত সাপেক্ষে হওয়া দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক মাহমুদ। তিনি বলেন, বিদেশে বিনিয়োগ করা প্রকল্প থেকে মুনাফা লাভের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ, সেই মুনাফা দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপ এবং ওই প্রকল্পে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়গুলো পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ব্যবস্থাপনা ও এর তদারকি আগে উন্নত করতে হবে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতা ও আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, রিটেনশন কোটাতে যে বিদেশি মুদ্রা রাখতে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা তো ব্যবসায়ীকে খরচ করতেই দেওয়া হয়েছে। এটা হয়তো বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ভ্রমণসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে খরচ করতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এ কোটা থেকে কেউ যদি বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায় তাতে আপত্তি কোথায়? বরং সেই বিনিয়োগ থেকে দেশে মুনাফা ফিরিয়ে আনার শর্ত থাকবে। ফলে এতে লাভই হওয়ার কথা।’
ভারত ও পাকিস্তান পরিস্থিতি: পাকিস্তানে মূলধন হিসাব অনুমোদন সাপেক্ষে অবমুক্ত। অন্যদিকে ভারত ২০০৮ সাল থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। উভয় দেশই বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে পিছিয়ে আছে। তবে ভারতে বিপুল পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসছে আর পাকিস্তান পাচ্ছে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক সাহায্য। চলতি জানুয়ারি মাসের হিসাবে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাড়ে ২৯ হাজার কোটি ডলারের বেশি। তবে পাকিস্তানে রিজার্ভ বাংলাদেশের প্রায় কাছাকাছি বা সোয়া ১৩০০ কোটি ডলার।
রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা: এই কোটাতে বিদেশি মুদ্রা রাখার সুযোগ দেওয়া হয় রপ্তানিকারকের বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিদেশে ভ্রমণ খরচ মেটাতে। বর্তমানে এই খাতে ২৫ কোটি ডলারের মতো বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষিত আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানিকারকেরা যদি পুরো সীমা অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতেন, তাহলে এর পরিমাণ হতো প্রায় আড়াই শ কোটি ডলার।
এই কোটা নির্ধারণ হয় দেশীয় মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে। কৃষি, পাট ও সফটওয়্যার খাতে মূল্য সংযোজন বেশি হওয়ায় ৫০ শতাংশ এবং পোশাকসহ অন্যান্য কয়েকটি খাতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে বিদেশি মুদ্রা রিটেনশন কোটাতে রাখার সুযোগ রয়েছে বৈদেশিক বিনিময়-সংক্রান্ত বিধিবিধানে।
১৯৯৪ সাল থেকে দেশে বৈদেশিক বিনিময়ের চলতি হিসাব অবমুক্ত করা শুরু হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এলসি (ঋণপত্র) খোলা, শিক্ষার জন্য বিদেশে অর্থ প্রেরণ, বিদেশি বিনিয়োগের লভ্যাংশ নিতে দেওয়া, শিপিং কোম্পানির অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহার এসব কাজ ধীরে ধীরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
No comments