বিএনপি আজ সংসদে যোগ দিতে পারে
সাফ গেমসের কারণে টানা পাঁচদিন বিরতির পর আজ বুধবার বসছে জাতীয় সংসদ অধিবেশন। ১০ দফা দাবি ভুলে গিয়েই ৬৩ কার্যদিবস অনুপস্থিতির পর আজ শুরম্নতেই সংসদে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের।
তবে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার আসনের পাশে কে বসবেন, সে নিয়ে দলটিতে নতুন করে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এৰেত্রে কপাল পুড়ছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। তাঁকে সরিয়ে সংসদে খালেদা জিয়ার পাশের আসনে বসছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। বিরোধীদলীয় উপনেতা কে হচ্ছেন, একাধিক প্রার্থিতার কারণে তা এখনও চূড়ানত্ম করতে পারেননি খালেদা জিয়া। কোন্দল এড়াতে এ যাত্রায় কাউকে উপনেতা করা না-ও হতে পারে বলে জানা গেছে। ্এদিকে বিএনপির যোগদানের সম্ভাবনায় আজ থেকে নিষ্প্রাণ সংসদ আবারও উত্তপ্ত-প্রাণবনত্ম হয়ে উঠবে।রণেভঙ্গ দিয়ে বিএনপি আজ যোগ দিলে সংসদে অভিষেক ঘটবে সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের। উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শপথ নিলেও টানা বর্জনের কারণে তাঁরা এতদিন অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত ছিল বিএনপি। স্পীকার জমির উদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নির্বাচিত পরাজিত হওয়ায় তখন খালেদা জিয়ার পাশের আসনটি পেয়েছিলেন সাকা চৌধুরী।
পরবতর্ীতে খালেদা জিয়া বগুড়ার দু'টি আসন ছেড়ে দিয়ে উপ-নির্বাচনে ওই দু'জনকে বিজয়ী করে আনার পর সৃষ্টি হয় জটিলতা। পাশের আসনটিতে কাকে বসাবেন, এ নিয়ে খালেদা জিয়া কিছুটা বিব্রত ছিলেন। সর্বশেষ সাকা চৌধুরীকে সরিয়ে মওদুদ আহমেদকেই তাঁর পাশের আসনে বসানোর সিদ্ধানত্ম নিয়েছেন। জানা গেছে, দলীয় আসন বণ্টন চূড়ানত্ম করে ইতোমধ্যে বিএনপির পৰ থেকে স্পীকারের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিএনপির দেয়া আসনবিন্যাস অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পাশের আসনে বসবেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ।
আসন বিন্যাস অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এম কে আনোয়ার এবং দুই নম্বর আসন থেকে প্রথম সারির সর্বশেষ পাঁচ নম্বর আসনটি দেয়া হয়েছে সাকা চৌধুরীকে। দলটির এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দলের এমন আসন বিন্যাসে চরম নাখোশ সাকা চৌধুরী। তাই গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের সংসদীয় দলের সভায় উপস্থিত ছিলেন না তিনি।
সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে চা-চক্রে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। এও বলেছেন, বিরোধী দল সংসদ ও রাজপথে একইসঙ্গে সরকারের বিরোধিতা করে যাবে। তবে বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, চার টার্গেট থেকে সংসদে ফিরছে তারা। আর তা হচ্ছে- সংসদ সদস্যপদ রৰা, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় ফ্রি-স্টাইলে বক্তব্য রাখার সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরসহ নানা ইসু্যতে সংসদকে উত্তপ্ত করে স্থায়ী বর্জনের পথ খোঁজা, সরকারকে চাপে ফেলে সংসদ বর্জন করে রাজপথের আন্দোলনের ইসু্য সৃষ্টি, সর্বশেষ বিনা ইসু্যতে সংসদ বর্জনের সমালোচনার দায় ঘোচানো। বিএনপির সঙ্গে আজ সংসদে ফিরছে জামায়াত ও বিজেপির সংসদ সদস্যরাও।
এসব টার্গেট পূরণে বিরোধী দল কৌশলী পন্থা নিলেও বসে নেই সরকারী দল। সংসদে বিরোধী দলকে মোকাবেলায় তারাও নিচ্ছে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি। ফলে দীর্ঘদিন নিষ্প্রাণ থাকা সংসদ আবারও প্রাণবনত্ম-উত্তপ্ত, দফায় দফায় ওয়াক-আউটের চিরচেনা রূপে ফিরতে পারে।
জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদে টানা ৬১ কার্যদিবস অনুপস্থিত রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। আর মাত্র ২৯ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলেই সংবিধান অনুযায়ী সবার সদস্যপদ শূন্য হয়ে যাবে। এমনিতেই বড় কোন ইসু্য ছাড়াই সংসদ বর্জনের কারণে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। উপরন্তুু ৯০ কার্যদিবস পূরণ হওয়ার আগে শুধুমাত্র সংসদে সদস্য পদ রৰায় সংসদে গেলে আরও সমালোচনার মুখে পড়তে হবে তাদের। এসব দিক বিবেচনায় করেই এক ঢিলে তিন পাখি মারার কৌশলী পরিকল্পনায় চলতে সংসদ অধিবেশনেই ফেরার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে বিরোধী দল।
সংসদে অন্যসময় একমাত্র পয়েন্ট অব অর্ডার ছাড়া কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ফ্রি-স্টাইল বক্তব্য রাখার সুযোগ নেই। এখন সংসদে চলছে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা। এতে ৩০ ঘণ্টার নির্ধারিত বক্তব্যে সংখ্যানুপাতিক হারে পর্যাপ্ত সময় পাবে তারা। আর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার সুযোগ নিয়ে সরকার বিরোধী সত্য-মিথ্যার সমাহার ঘটিয়ে ফ্রি-স্টাইল বক্তব্য দেয়ার সুযোগ রয়েছে। তাতে স্পীকার বাধা দিতে পারবে না। এই সুযোগটি নিতেই দ্রম্নত সংসদে যোগদানের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে বিএনপি।
জানা গেছে, আজ অধিবেশনে যোগ দিয়েই নানা ইসু্যতে সংসদ উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালাবে তারা। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর, সম্পাদিত চুক্তিসহ নানা ইসু্যতে ফ্রি-স্টাইলে সরকারের সমালোচনা করে চাপে ফেলতে চাইবে বিরোধী দল। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সংসদে ফিরে বিরোধী দল এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করবে যাতে সরকারি দল বাধা দেয়। আর বাধা দিলেই 'সরকার সংসদে কথা বলতে দেয়া হয়নি' এমন অজুহাত তুলে আবারও সংসদ বর্জন করে রাজপথের আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চালাবে বিএনপি।
অন্যদিকে বিরোধী দলের সংসদে ফেরার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে সরকারী দলও ভেতরে ভেতরে তাদের মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে শুরম্ন করেছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকা বসেছে_ কীভাবে বিরোধী দলকে মোকাবেলা করা যায় এবং কোন অজুহাত খুঁজে আবারও দীর্ঘ সময়ের জন্য সংসদ বর্জনের সুযোগ না পায় সেজন্য সতর্ক থেকে কথা বলার গোপন ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে প্রতিটি সংসদ সদস্যকে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় বিরোধী দলের প্রতিটি অভিযোগ-সমালোচনার যোগ্য উত্তর যাতে সরকারী দলের সংসদ সদস্যরাও দিতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন পর নিষ্প্রাণ সংসদ আবার উত্তপ্ত হওয়ার অপেৰায়। উত্তপ্ত-প্রাণবনত্ম বিতর্ক, দফায় দফায় ওয়াকআউট এবং একে অপরকে ঘায়েল করতে নানা কৌশলী-পন্থা অবলম্বনের চিরায়িত চিত্র দেখার অপেৰায় এখন গোটা জাতি।
No comments