নারীর প্রতি সহিংসতা- নির্যাতনের করুণ কাহিনি by মোহাম্মদ শাহজাহান
ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আদালতে মামলা করেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার দরিদ্র এক নারী। কিন্তু বিয়ের কথা বলে তাঁকে একটি বাড়িতে প্রায় এক বছর ‘গৃহবন্দী’ করে রাখেন আসামি। এরই মধ্যে ওই নারীর কোলজুড়ে আসে এক পুত্রসন্তান।
প্রায় ১০ মাস বয়সী ওই ছেলেকে সম্প্রতি লঞ্চে ফেলে রাখেন আসামি। মা ভাবেন, তাঁর ছেলেকে হয়তো লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু লঞ্চের কর্মচারী, সদরঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও প্রথম আলোর প্রচেষ্টায় ছেলেটিকে কোলে ফিরে পেয়েছেন মা।
এত ঘটনা ঘটলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহরাস্তি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খোরশেদ আলম কিছুই জানেন না। উল্টো তিনি মামলার বাদী ওই নারীর সঙ্গে কথা না বলেই তিন মাসের মাথায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।
আসামি আনোয়ার হোসেন ওই নারীকে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় তাদের আটকে রেখে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহরাস্তি উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র ওই নারীর বাবা মারা গেছেন ১০ বছর আগে। সংসারে মা ও ছয় ভাইবোন। ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার ফরিদাবাদ এলাকার মো. ফারুকের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়। কিন্তু ২০১১ সালের মে মাসে ওই নারীকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে রেখে চলে যান ফারুক। এরপর আর তাঁর খোঁজ নেননি।
আদালতে করা মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গ্রামে এসে শাহরাস্তির রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের আনোয়ারের ঘরে কাজ নেন ওই নারী। আনোয়ার তাঁর মায়ের চাচাতো ভাই। কিন্তু মে মাসের শেষের দিকে আনোয়ার তাঁর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ওই নারীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বাড়িতে সালিস হয়। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পরে আনোয়ার ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাতজনকে আসামি করে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ওই নারী। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটি শাহরাস্তি থানায় রেকর্ড করা হয়।
ওই নারীর অভিযোগ, মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পরও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. খোরশেদ আলম কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেননি। বরং আনোয়ারের সঙ্গে যোগসাজশ করে মাত্র তিন মাসের মাথায় ২৩ মে আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই খোরশেদ আলম বলেন, ‘সব আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই করা হয়েছে। বাদীকে আটকে রাখার বিষয়টি জানি না। গত মঙ্গলবার আদালত মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন।’
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে বন্দী: ওই নারীর মা জানান, মামলার পর আনোয়ার তাঁর মেয়েকে বিয়ে করার লোভ দেখিয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলার আলীগঞ্জের একটি বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে ওই মেয়ের সঙ্গে তাঁর ছোট এক মেয়েও ছিল। আনোয়ার প্রতি সপ্তাহে একবার তাঁর দুই মেয়ের জন্য বাজার করে দিতেন। পরে বাসা বাইরে থেকে তালা মেরে চলে যেতেন। এই অবস্থায় গত বছরের ২৯ মার্চ ওই বাড়িতে তাঁর মেয়ের একটি ছেলে হয়। কিন্তু ওই ছেলে তাঁর (আনোয়ার) নয় দাবি করে আনোয়ার আজ পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে করেননি।
আলীগঞ্জের ওই বাড়ির আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
আনোয়ারের আত্মীয় আলীগঞ্জ এলাকার শাহনেওয়াজ মারওয়ান বলেন, আলীগঞ্জের ওই বাড়ি আনোয়ারদের। সেখানে কেউ থাকত না। মামলা থেকে বাঁচতে আনোয়ার ওই নারীকে বাড়িতে তোলেন।
শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আনোয়ার আগে ইতালি থাকতেন। মামলা প্রত্যাহার হলে তিনি আবার ইতালি চলে যাবেন।’
শিশুকে ফিরে পেলেন মা: শিশুটির মা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বলেন, ছেলের ডিএনএ টেস্ট করার কথা বলে আনোয়ার ওই শিশু ও তাঁর মাকে নিয়ে গত সোমবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁদের সঙ্গে এমভি ইমান হাসান লঞ্চে ওঠেন সোহেল নামের এক ‘চিকিৎসক’।
শিশুটির মা বলেন, ‘রাত সাড়ে তিনটার দিকে আনোয়ার বাচ্চাকে ছাদে নেওয়ার কথা বলে কোলে নেন। পরে বাইরে থেকে কেবিনের দরজা আটকে দেন। দেড় ঘণ্টা পর বাচ্চা ছাড়া কেবিনে আসেন। বাচ্চা কোথায় জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, “লঞ্চে এক ব্যক্তির কাছে বাচ্চাটি দেওয়া হয়েছে।”’
তখন লঞ্চে কান্নাকাটি শুরু করেন শিশুটির মা। মায়ের অভিযোগ, কান্নাকাটি করলে তাঁকেও লঞ্চ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন আনোয়ার। মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটে পৌঁছালে তাঁকে জোর করে লঞ্চ থেকে নামানো হয়। এরপর আবার বাসে করে তাঁকে আলীগঞ্জের বাড়িতে পৌঁছে দেন ‘চিকিৎসক’ সোহেল। আনোয়ার শাহরাস্তির দোয়াভাঙ্গায় নামেন।
ওই দিন বিকেলে আনোয়ারের স্ত্রী ও বোন আলীগঞ্জের সেই বাড়িতে এসে ওই নারী ও তাঁর মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এলাকাবাসী খবর পেয়ে আনোয়ারের স্ত্রীকে বাসা থেকে বের করে দেন।
খবর পেয়ে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক আলীগঞ্জের বাসায় গিয়ে ওই ঘটনা দেখতে পান। দেখেন সন্তান ‘হারানো’র শোকে কাতর মা। তিনি ভাবেন, আনোয়ার তাঁর ছেলেকে লঞ্চ থেকে ফেলে হত্যা করেছেন।
এমভি ইমান হাসান লঞ্চের সোমবার রাতের যাত্রী চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক মনোজ কান্তি প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশকে বলেন, ‘ওই দুই যুবক (আনোয়ার ও সোহেল) গভীর রাতে ওই বাচ্চাকে বারবার লঞ্চের কেবিনের বাইরে ও ছাদে এনে ঘোরাফেরা করে। তখন সন্দেহ হয়, যুবকেরা বাচ্চাটিকে হয়তো নদীতে ফেলে দেবে। কিন্তু লঞ্চে যাত্রী বেশি থাকায় তারা সেই সুযোগ পায়নি। লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছালে যুবকেরা বাচ্চাটিকে কেবিনে রেখে চলে যায়। পরে লঞ্চের লোকজন বাচ্চাটিকে সদরঘাট নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইমান হাসান লঞ্চের সুপারভাইজার আলী আজগরও।
ওই বক্তব্য পাওয়ার পর পর প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করা হয় কোতোয়ালি থানার পুলিশের সঙ্গে। থানা থেকে বলা হলো, বাচ্চাটি সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আজিজুল ইসলামের জিম্মায় আছে। আজিজুলকে বলা হয় পুরো ঘটনা। তিনি নিশ্চিত করলেন শিশুটি সুস্থ আছে। মাকে এসে শিশু নিয়ে যেতে হবে।
এরপর হাজীগঞ্জ প্রতিনিধির মাধ্যমে শিশুটির মাকে জানানো হয়, তাঁর কোলের মানিক বেঁচে আছে, সুস্থ আছে। পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় রওনা হন শিশুর মা, তাঁর ছোট বোন ও মা এবং আলীগঞ্জ এলাকার শাহনেওয়াজ মারওয়ানসহ ছয়জন। তাঁদের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করেন এসআই আজিজুল। ছেলেকে ফিরে পেয়ে শান্তি পান মা। প্রথম আলোকে ধন্যবান জানান মা ও তাঁর স্বজনেরা।
এসআই আজিজুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাচ্চাটি যে তার মাকে ফিরে পেয়েছে, সেটিই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়।’
এত ঘটনা ঘটলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহরাস্তি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খোরশেদ আলম কিছুই জানেন না। উল্টো তিনি মামলার বাদী ওই নারীর সঙ্গে কথা না বলেই তিন মাসের মাথায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।
আসামি আনোয়ার হোসেন ওই নারীকে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় তাদের আটকে রেখে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহরাস্তি উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র ওই নারীর বাবা মারা গেছেন ১০ বছর আগে। সংসারে মা ও ছয় ভাইবোন। ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার ফরিদাবাদ এলাকার মো. ফারুকের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়। কিন্তু ২০১১ সালের মে মাসে ওই নারীকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে রেখে চলে যান ফারুক। এরপর আর তাঁর খোঁজ নেননি।
আদালতে করা মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গ্রামে এসে শাহরাস্তির রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের আনোয়ারের ঘরে কাজ নেন ওই নারী। আনোয়ার তাঁর মায়ের চাচাতো ভাই। কিন্তু মে মাসের শেষের দিকে আনোয়ার তাঁর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ওই নারীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বাড়িতে সালিস হয়। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পরে আনোয়ার ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাতজনকে আসামি করে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ওই নারী। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটি শাহরাস্তি থানায় রেকর্ড করা হয়।
ওই নারীর অভিযোগ, মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পরও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. খোরশেদ আলম কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেননি। বরং আনোয়ারের সঙ্গে যোগসাজশ করে মাত্র তিন মাসের মাথায় ২৩ মে আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই খোরশেদ আলম বলেন, ‘সব আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই করা হয়েছে। বাদীকে আটকে রাখার বিষয়টি জানি না। গত মঙ্গলবার আদালত মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন।’
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে বন্দী: ওই নারীর মা জানান, মামলার পর আনোয়ার তাঁর মেয়েকে বিয়ে করার লোভ দেখিয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলার আলীগঞ্জের একটি বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে ওই মেয়ের সঙ্গে তাঁর ছোট এক মেয়েও ছিল। আনোয়ার প্রতি সপ্তাহে একবার তাঁর দুই মেয়ের জন্য বাজার করে দিতেন। পরে বাসা বাইরে থেকে তালা মেরে চলে যেতেন। এই অবস্থায় গত বছরের ২৯ মার্চ ওই বাড়িতে তাঁর মেয়ের একটি ছেলে হয়। কিন্তু ওই ছেলে তাঁর (আনোয়ার) নয় দাবি করে আনোয়ার আজ পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে করেননি।
আলীগঞ্জের ওই বাড়ির আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
আনোয়ারের আত্মীয় আলীগঞ্জ এলাকার শাহনেওয়াজ মারওয়ান বলেন, আলীগঞ্জের ওই বাড়ি আনোয়ারদের। সেখানে কেউ থাকত না। মামলা থেকে বাঁচতে আনোয়ার ওই নারীকে বাড়িতে তোলেন।
শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আনোয়ার আগে ইতালি থাকতেন। মামলা প্রত্যাহার হলে তিনি আবার ইতালি চলে যাবেন।’
শিশুকে ফিরে পেলেন মা: শিশুটির মা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বলেন, ছেলের ডিএনএ টেস্ট করার কথা বলে আনোয়ার ওই শিশু ও তাঁর মাকে নিয়ে গত সোমবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁদের সঙ্গে এমভি ইমান হাসান লঞ্চে ওঠেন সোহেল নামের এক ‘চিকিৎসক’।
শিশুটির মা বলেন, ‘রাত সাড়ে তিনটার দিকে আনোয়ার বাচ্চাকে ছাদে নেওয়ার কথা বলে কোলে নেন। পরে বাইরে থেকে কেবিনের দরজা আটকে দেন। দেড় ঘণ্টা পর বাচ্চা ছাড়া কেবিনে আসেন। বাচ্চা কোথায় জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, “লঞ্চে এক ব্যক্তির কাছে বাচ্চাটি দেওয়া হয়েছে।”’
তখন লঞ্চে কান্নাকাটি শুরু করেন শিশুটির মা। মায়ের অভিযোগ, কান্নাকাটি করলে তাঁকেও লঞ্চ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন আনোয়ার। মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটে পৌঁছালে তাঁকে জোর করে লঞ্চ থেকে নামানো হয়। এরপর আবার বাসে করে তাঁকে আলীগঞ্জের বাড়িতে পৌঁছে দেন ‘চিকিৎসক’ সোহেল। আনোয়ার শাহরাস্তির দোয়াভাঙ্গায় নামেন।
ওই দিন বিকেলে আনোয়ারের স্ত্রী ও বোন আলীগঞ্জের সেই বাড়িতে এসে ওই নারী ও তাঁর মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এলাকাবাসী খবর পেয়ে আনোয়ারের স্ত্রীকে বাসা থেকে বের করে দেন।
খবর পেয়ে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক আলীগঞ্জের বাসায় গিয়ে ওই ঘটনা দেখতে পান। দেখেন সন্তান ‘হারানো’র শোকে কাতর মা। তিনি ভাবেন, আনোয়ার তাঁর ছেলেকে লঞ্চ থেকে ফেলে হত্যা করেছেন।
এমভি ইমান হাসান লঞ্চের সোমবার রাতের যাত্রী চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক মনোজ কান্তি প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশকে বলেন, ‘ওই দুই যুবক (আনোয়ার ও সোহেল) গভীর রাতে ওই বাচ্চাকে বারবার লঞ্চের কেবিনের বাইরে ও ছাদে এনে ঘোরাফেরা করে। তখন সন্দেহ হয়, যুবকেরা বাচ্চাটিকে হয়তো নদীতে ফেলে দেবে। কিন্তু লঞ্চে যাত্রী বেশি থাকায় তারা সেই সুযোগ পায়নি। লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছালে যুবকেরা বাচ্চাটিকে কেবিনে রেখে চলে যায়। পরে লঞ্চের লোকজন বাচ্চাটিকে সদরঘাট নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইমান হাসান লঞ্চের সুপারভাইজার আলী আজগরও।
ওই বক্তব্য পাওয়ার পর পর প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করা হয় কোতোয়ালি থানার পুলিশের সঙ্গে। থানা থেকে বলা হলো, বাচ্চাটি সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আজিজুল ইসলামের জিম্মায় আছে। আজিজুলকে বলা হয় পুরো ঘটনা। তিনি নিশ্চিত করলেন শিশুটি সুস্থ আছে। মাকে এসে শিশু নিয়ে যেতে হবে।
এরপর হাজীগঞ্জ প্রতিনিধির মাধ্যমে শিশুটির মাকে জানানো হয়, তাঁর কোলের মানিক বেঁচে আছে, সুস্থ আছে। পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় রওনা হন শিশুর মা, তাঁর ছোট বোন ও মা এবং আলীগঞ্জ এলাকার শাহনেওয়াজ মারওয়ানসহ ছয়জন। তাঁদের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করেন এসআই আজিজুল। ছেলেকে ফিরে পেয়ে শান্তি পান মা। প্রথম আলোকে ধন্যবান জানান মা ও তাঁর স্বজনেরা।
এসআই আজিজুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাচ্চাটি যে তার মাকে ফিরে পেয়েছে, সেটিই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়।’
No comments