ভবিষ্যতের কগনেটিভ গাড়ি by হপ্রদীপ সাহা
রাস্তাঘাটে গাড়ি চালানোর ঝুঁকি অনেক এবং দিন দিন দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে_ এ কথা নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলে হাত, প্যাডেল ও ব্রেকের ওপর সবসময় দুই পা এবং সামনে সতর্ক দৃষ্টি; একটু এদিক-ওদিক হলেই ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
এটা সত্যি যে, মানুষের মন সবসময় সতর্ক থাকতে পারে না। তাই প্রযুক্তিবিদেরা গাড়ি চালনায় চালকের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। তারা চান মানুষ নয়, গাড়িই চালাবে নিজেকে। আর এর ফলে মানুষ চালকের ওপর নির্ভরশীলতা যেমন কমবে, তেমনি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকবে না। গাড়ির বাজারে একের পর এক নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছে জার্মানি। এবার তারা দুর্ঘটনা ঠেকাতে নতুন অটোনোমাস গাড়ি তৈরির চেষ্টা করছে। এ গাড়ি চালক ছাড়া নিজে থেকেই চলতে পারবে। জার্মানির কার্লসরুয়ে ইনস্টিউট অব টেকনোলজি সংক্ষেপে 'কেআইটি'র গবেষকরা বর্তমানে এ প্রযুক্তির বিকাশে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। রাস্তার গাড়িকে স্বাবলম্বী করে তুলতে তারা গাড়ির প্রযুক্তিকে আরও অত্যাধুনিক করে তোলার চেষ্টা করছেন। তাদের এ গবেষণা সফল হলে একটি গাড়ি সহজেই বুঝতে পারবে তার অবস্থান কোথায়। আর শুধু নিজের অবস্থান নয়, আশপাশে থাকা সব গাড়ির অবস্থানও সে সহজে শনাক্ত করতে পারবে। গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন 'ভবিষ্যতের কগনিটিভ কার'।
এ গবেষণা কাজে নিযুক্ত আছেন ক্রিস্টোভ স্টিলার। নতুন উদ্ভাবিত এ ভবিষ্যৎ গাড়ি কেমন হবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কগনিটিভ গাড়ি হচ্ছে এমন এক ধরনের গাড়ি, যেটি আশপাশের অবস্থা দেখতে পারবে। এটা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তা ছাড়া গাড়িটি সহজেই জানতে পারবে তার কোন রাস্তা ধরে যাওয়া উচিত এবং সেভাবেই এটি গাড়ির যন্ত্রগুলোকে পরিচালিত করবে। এভাবে গাড়িটি কোনোরকম দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে নিরাপদে অনেকক্ষণ রাস্তায় চলতে পারবে।' এখন প্রশ্ন হচ্ছে_ মানুষ যেভাবে গাড়ি পরিচালনা করে, একটি গাড়ি কীভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে পারবে? আসলে এ কাজটি কিন্তু সহজ নয়। এজন্য একটি গাড়িকে যেমন সার্বক্ষণিকভাবে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, তেমনি তাকে আশপাশের গাড়িগুলোর সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। তাহলেই শুধু এ নতুন উদ্ভাবিত কগনিটিভ গাড়ি রাস্তায় ঠিকঠাকভাবে চলতে পারবে।
কেআইটির গবেষকরা এ ব্যাপারে এখনও নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখছেন। মার্টিন লাওয়ার নামের এক গবেষক নতুন একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এ সফটওয়্যারটি তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ছোট একটি খেলনা গাড়িতে বসিয়ে দিয়েছেন। দেখা গেছে, এ খেলনা গাড়িটি শুরুতে বেশ কয়েকবার ভুল করলেও পরবর্তী সময়ে সেটি ঠিকঠাক সঠিক রাস্তা দিয়েই চলেছে। তবে এটাও ঠিক যে, গাড়িটিকে অবশ্যই রাস্তা চিনতে হবে। আর এজন্য গবেষকরা তাদের পরীক্ষার গাড়িতে ক্যামেরা বসিয়ে দিয়েছেন। তারপর তাতে একই পথ ধরে কয়েকবার আসা-যাওয়াও করেছেন। গাড়ির এ ক্যামেরাটি আশপাশের সবকিছু থ্রিডি ছবির মাধ্যমে রেকর্ড করে রেখেছে। এটি রেকর্ড করে রাখার উদ্দেশ্য হলো, গাড়িটি যেন ওই রাস্তার প্রত্যেকটি কোণ বা দিক চিনে রাখতে পারে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তা ছাড়া গাড়িটির কোন্ জায়গাটিতে থামতে হবে, কোন্ জায়গাটিতে গাড়িটিকে পার্কিং করতে হবে_ এ সবকিছুই গাড়ির ক্যামেরায় থ্রিডি ছবির মাধ্যমে রেকর্ড হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, সেন্সরের মাধ্যমে গাড়িটি তার অবস্থানও সহজে চিহ্নিত করে রাখতে পারবে।
কেআইটির গবেষক ক্রিস্টোভ স্টিলার বলেন, 'এ পদ্ধতি ইতিমধ্যেই মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করছে। কারণ এটি মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই আশপাশের অবস্থা দেখে ফেলতে পারে। সাধারণত মানুষের প্রতিক্রিয়া আসতে কিছুটা সময় লাগে। তাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এ গাড়ি যখন মানুষের মতো পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে তখন এটি অত্যন্ত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।' গবেষকদের মতে, গাড়ির চালকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগার কারণেই রাস্তায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ নতুন প্রযুক্তির গাড়ি উদ্ভাবনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে রাস্তায় চলা গাড়িগুলো রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে একটি অপরটির সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং তৎক্ষণাৎ তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এতে গাড়িগুলো রাস্তায় সুশৃঙ্খলভাবে চলবে এবং কোনো যানজট তৈরি হবে না।
তবে এ রেডিও সিগন্যালের পরীক্ষায় কিছু সমস্যাও দেখা গেছে। পরীক্ষার সময় দেখা গেছে, দুটি গাড়ির মাঝখানে যদি কোনো বড় ট্রাক চলে আসে, তাহলে রেডিও সিগন্যাল যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। তবে গবেষকরা সে বাধা দূর করার ব্যাপারেও গবেষণা করে যাচ্ছেন এবং আশা করছেন এ ব্যাপারে তারা অবশ্যই সফল হবেন। আমরাও প্রত্যাশা করছি, তাদের এসব পরীক্ষা ও গবেষণা বাস্তবিকভাবে সফল হোক এবং দুর্ঘটনা রোধে গাড়ির এ নতুন প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ূক।
হপ্রদীপ সাহা
এ গবেষণা কাজে নিযুক্ত আছেন ক্রিস্টোভ স্টিলার। নতুন উদ্ভাবিত এ ভবিষ্যৎ গাড়ি কেমন হবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কগনিটিভ গাড়ি হচ্ছে এমন এক ধরনের গাড়ি, যেটি আশপাশের অবস্থা দেখতে পারবে। এটা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তা ছাড়া গাড়িটি সহজেই জানতে পারবে তার কোন রাস্তা ধরে যাওয়া উচিত এবং সেভাবেই এটি গাড়ির যন্ত্রগুলোকে পরিচালিত করবে। এভাবে গাড়িটি কোনোরকম দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে নিরাপদে অনেকক্ষণ রাস্তায় চলতে পারবে।' এখন প্রশ্ন হচ্ছে_ মানুষ যেভাবে গাড়ি পরিচালনা করে, একটি গাড়ি কীভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে পারবে? আসলে এ কাজটি কিন্তু সহজ নয়। এজন্য একটি গাড়িকে যেমন সার্বক্ষণিকভাবে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, তেমনি তাকে আশপাশের গাড়িগুলোর সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। তাহলেই শুধু এ নতুন উদ্ভাবিত কগনিটিভ গাড়ি রাস্তায় ঠিকঠাকভাবে চলতে পারবে।
কেআইটির গবেষকরা এ ব্যাপারে এখনও নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখছেন। মার্টিন লাওয়ার নামের এক গবেষক নতুন একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এ সফটওয়্যারটি তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ছোট একটি খেলনা গাড়িতে বসিয়ে দিয়েছেন। দেখা গেছে, এ খেলনা গাড়িটি শুরুতে বেশ কয়েকবার ভুল করলেও পরবর্তী সময়ে সেটি ঠিকঠাক সঠিক রাস্তা দিয়েই চলেছে। তবে এটাও ঠিক যে, গাড়িটিকে অবশ্যই রাস্তা চিনতে হবে। আর এজন্য গবেষকরা তাদের পরীক্ষার গাড়িতে ক্যামেরা বসিয়ে দিয়েছেন। তারপর তাতে একই পথ ধরে কয়েকবার আসা-যাওয়াও করেছেন। গাড়ির এ ক্যামেরাটি আশপাশের সবকিছু থ্রিডি ছবির মাধ্যমে রেকর্ড করে রেখেছে। এটি রেকর্ড করে রাখার উদ্দেশ্য হলো, গাড়িটি যেন ওই রাস্তার প্রত্যেকটি কোণ বা দিক চিনে রাখতে পারে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তা ছাড়া গাড়িটির কোন্ জায়গাটিতে থামতে হবে, কোন্ জায়গাটিতে গাড়িটিকে পার্কিং করতে হবে_ এ সবকিছুই গাড়ির ক্যামেরায় থ্রিডি ছবির মাধ্যমে রেকর্ড হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, সেন্সরের মাধ্যমে গাড়িটি তার অবস্থানও সহজে চিহ্নিত করে রাখতে পারবে।
কেআইটির গবেষক ক্রিস্টোভ স্টিলার বলেন, 'এ পদ্ধতি ইতিমধ্যেই মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করছে। কারণ এটি মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই আশপাশের অবস্থা দেখে ফেলতে পারে। সাধারণত মানুষের প্রতিক্রিয়া আসতে কিছুটা সময় লাগে। তাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এ গাড়ি যখন মানুষের মতো পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে তখন এটি অত্যন্ত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।' গবেষকদের মতে, গাড়ির চালকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগার কারণেই রাস্তায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ নতুন প্রযুক্তির গাড়ি উদ্ভাবনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে রাস্তায় চলা গাড়িগুলো রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে একটি অপরটির সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং তৎক্ষণাৎ তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এতে গাড়িগুলো রাস্তায় সুশৃঙ্খলভাবে চলবে এবং কোনো যানজট তৈরি হবে না।
তবে এ রেডিও সিগন্যালের পরীক্ষায় কিছু সমস্যাও দেখা গেছে। পরীক্ষার সময় দেখা গেছে, দুটি গাড়ির মাঝখানে যদি কোনো বড় ট্রাক চলে আসে, তাহলে রেডিও সিগন্যাল যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। তবে গবেষকরা সে বাধা দূর করার ব্যাপারেও গবেষণা করে যাচ্ছেন এবং আশা করছেন এ ব্যাপারে তারা অবশ্যই সফল হবেন। আমরাও প্রত্যাশা করছি, তাদের এসব পরীক্ষা ও গবেষণা বাস্তবিকভাবে সফল হোক এবং দুর্ঘটনা রোধে গাড়ির এ নতুন প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ূক।
হপ্রদীপ সাহা
No comments