নারীর প্রতি সহিংসতা: উদ্বিগ্ন অধিকার কর্মীরা- নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে by মানসুরা হোসাইন
সম্প্রতি নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মানবাধিকার ও নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘদিনের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পরও নারী নির্যাতন এভাবে বেড়ে চলার কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
১৪টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তৈরি করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন করা হয়েছে। ২০১১ সালে উত্ত্যক্ত করাকে (ইভ টিজিং) যৌন হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করে আইনের অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মানব পাচার প্রতিরোধ, অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (২০০৩ সংশোধিত), যৌতুক আইনসহ দেশে আছে বিভিন্ন আইন। তবে এত আইন ও প্রচারণার পরও নারী নির্যাতন থেমে নেই।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নির্যাতিতদের মাত্র ২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নেন। এ ছাড়া গোপন রাখার প্রবণতার কারণে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সংখ্যা প্রকৃত ঘটনার তুলনায় অনেক কম বলে মনে করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক যুগে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৫ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মোট মামলার সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার ১৯৪। এ সেল শিশুদের বিষয়ে আলাদা পরিসংখ্যান রাখে। সেখানে মেয়েশিশুর নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আলাদাভাবে দেখানো না হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেয়েশিশুরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ২৫০ জন নারীর মধ্যে ১৬ জন আত্মহত্যা করেন। ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত শাস্তি দেওয়া অসাংবিধানিক ও অপরাধমূলক বলে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও গত বছর সালিস ও কথিত ফতোয়ার মাধ্যমে ৪৮ জন নারীকে নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে থানায় মাত্র ১৬টি মামলা হয়।
অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর ৯৮ জন অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক পরিচালক সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতন প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও জরুরি।
আইন থাকলেও অপরাধ দমন বা অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করতে তা যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গত প্রায় এক যুগে মোট পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮১ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ৮০ হাজার ৮০১ জন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত মামলা ও আসামির সংখ্যা নগণ্য। আইন ও সালিশ কেন্দ্র গত বছরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে, নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে বিচার-প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এবং অপরাধ নিরসনে সরকার যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ঘটনার সংখ্যা ও ভয়াবহতা বেড়ে চলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ১৫ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৩৩ ধারা অনুসারে, বিধি প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সব নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিষয়েও ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলীর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন।
নারী নির্যাতন বেড়ে চলার বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার ওপর জোর দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহিলা পরিষদ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অথচ দেশে নারী নির্যাতন বেড়েই যাচ্ছে। কেন বাড়ছে, তা নিয়ে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। নারীরা অধিকার-সচেতন হয়ে উঠছে বলেই নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।’
সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক চিঠিতে পুলিশ সদর দপ্তরকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বলেছে, সদর দপ্তর থেকে পদক্ষেপ নিতে শিগগিরই দেশের সব থানায় চিঠি পাঠানো হবে।
পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন করা হয়েছে। ২০১১ সালে উত্ত্যক্ত করাকে (ইভ টিজিং) যৌন হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করে আইনের অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মানব পাচার প্রতিরোধ, অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (২০০৩ সংশোধিত), যৌতুক আইনসহ দেশে আছে বিভিন্ন আইন। তবে এত আইন ও প্রচারণার পরও নারী নির্যাতন থেমে নেই।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নির্যাতিতদের মাত্র ২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নেন। এ ছাড়া গোপন রাখার প্রবণতার কারণে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সংখ্যা প্রকৃত ঘটনার তুলনায় অনেক কম বলে মনে করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক যুগে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৫ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মোট মামলার সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার ১৯৪। এ সেল শিশুদের বিষয়ে আলাদা পরিসংখ্যান রাখে। সেখানে মেয়েশিশুর নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আলাদাভাবে দেখানো না হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেয়েশিশুরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ২৫০ জন নারীর মধ্যে ১৬ জন আত্মহত্যা করেন। ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত শাস্তি দেওয়া অসাংবিধানিক ও অপরাধমূলক বলে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও গত বছর সালিস ও কথিত ফতোয়ার মাধ্যমে ৪৮ জন নারীকে নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে থানায় মাত্র ১৬টি মামলা হয়।
অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর ৯৮ জন অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক পরিচালক সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতন প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও জরুরি।
আইন থাকলেও অপরাধ দমন বা অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করতে তা যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গত প্রায় এক যুগে মোট পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮১ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ৮০ হাজার ৮০১ জন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত মামলা ও আসামির সংখ্যা নগণ্য। আইন ও সালিশ কেন্দ্র গত বছরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে, নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে বিচার-প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এবং অপরাধ নিরসনে সরকার যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ঘটনার সংখ্যা ও ভয়াবহতা বেড়ে চলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ১৫ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৩৩ ধারা অনুসারে, বিধি প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সব নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিষয়েও ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলীর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন।
নারী নির্যাতন বেড়ে চলার বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার ওপর জোর দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহিলা পরিষদ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অথচ দেশে নারী নির্যাতন বেড়েই যাচ্ছে। কেন বাড়ছে, তা নিয়ে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। নারীরা অধিকার-সচেতন হয়ে উঠছে বলেই নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।’
সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক চিঠিতে পুলিশ সদর দপ্তরকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বলেছে, সদর দপ্তর থেকে পদক্ষেপ নিতে শিগগিরই দেশের সব থানায় চিঠি পাঠানো হবে।
No comments