তবুও পৃথিবী ঘোরে by হশামসুদ্দিন আহমেদ
গ্যালিলিও একবার বলেছিলেন, কে এমন শুনেছে_ ঈশ্বর যে মুক্ত মন তৈরি করেছেন; সেই মন অন্যের স্বেচ্ছাচারী অভিলাষের কাছে ক্রীতদাসের বশ্যতা স্বীকার করে? সত্যের ব্যাপারে আত্মসমর্পণ করতে হবে এমন সব মানুষের কাছে যাদের বিচার করার কোনো যোগ্যতাই নেই।
তরুণ প্রজন্ম গ্যালিলিওর সেই মুক্তমন খুঁজে নিতে সুন্দরবনের খোলাকাশের নিচে গ্রহ-নক্ষত্র জগৎ দেখেছে। আর ছুটে চলা পৃথিবীকে নিয়ে তারা পথ চলছে মহাজাগতিক আলোয়
৩৭৯ বছর আগের কথা। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রপথিক এবং মানব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রকে তার কর্মে স্বীকৃতি পাওয়ার পরিবর্তে দাঁড়াতে হয়েছিল আসামির কাঠগড়ায়। কারণ তিনি সৌরকেন্দ্রিক বিশ্ব মডেলকে সমর্থন করেছিলেন। তার আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ দিয়ে এ সমর্থনের পক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি হলেন মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। ৯ বছরের কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্টিফেন হকিংয়ের মতে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এত বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেননি। অ্যারিস্টটলীয় নিশ্চল পৃথিবীর ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। তিনি গ্যালিলিওর মৃত্যুদিনে জন্মেছিলেন বলে গর্ববোধ করেন। কৃষ্ণবিবর ও কোয়ান্টাম মহাকর্ষের গবেষক স্টিফেন হকিং ওইদিন ৭০ বছর পার করলেন আর পার হলো গ্যালিলিওর মৃত্যুর ৩৭০ বছর।
ঢাকা ইমঙ্িেরয়াল কলেজ তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও শিক্ষা সফরের আয়োজন করে। কিন্তু এ শিক্ষা সফরকে অর্থবহ ও শিক্ষণীয় করে তোলার জন্য ডিসকাশন প্রজেক্টের সহযোগিতা গ্রহণ করে। ফলে ৬ জানুয়ারি ডিসকাশন প্রজেক্টের মাজেদুল হাসানের তত্ত্বাবধানে একদল বিজ্ঞানকর্মী তাদের সঙ্গে সুন্দরবন ভ্রমণে যান। ৬ দিনের ভ্রমণে প্রতিরাতেই খোলা আকাশের নিচে চলে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ। দিনের বেলায় চলে ফিল্টার কাচ দিয়ে সূর্য পর্যবেক্ষণ।
এর মধ্যদিয়ে গ্যালিলিওর মৃত্যুবার্ষিকী এবং স্টিফেন হকিংয়ের জন্মবার্ষিকী উদযাপন হয়। প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী ডিসকাশন প্রজেক্ট ও ইমপেরিয়াল কলেজের যৌথ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মাহফুজুল হক ৮ জানুয়ারির সব কার্যক্রমকে গ্যালিলিও ও স্টিফেন হকিংয়ের সম্মানে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, গ্যালিলিও মহাকাশ বিজ্ঞানের একজন অগ্রপথিক, তার আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা। আর তাই আমাদের সফরের চলমান অবস্থায় আমরা এ আয়োজন করি। তবে এখানে বিশেষ ধন্যবাদ ডিসকাশন প্রজেক্টকে। শিক্ষক সুমনা বিশ্বাস জানিয়েছেন, 'তারা দিবসটি শুরু করেন শোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে গ্যালিলিওকে স্মরণ করে। এরপর জেকব ব্রনওস্কির নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে গ্যালিলিওর ধর্মীয় আদালতে বিচারের অনুষ্ঠানটি দেখানো হয়। এরপর গ্যালিলিওকে স্মরণ করে বিশেষ প্রবন্ধ পাঠ করেন শিক্ষক সুমনা বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন, জাহাজ ছুটে চলেছে নদীর গতিপথ ধরে। জাহাজের ছাদে বসানো টেলিস্কোপে শিক্ষার্থীরা দেখছেন নক্ষত্রমণ্ডলীর অপার্থিব সৌন্দর্য। নাক্ষত্রিক আলোয় আমরা ছিলাম উদ্ভাসিত।'
ডিসকাশন প্রজেক্টের সমন্বয়ক বিজ্ঞান লেখক খালেদা ইয়াসমিন ইতি জানিয়েছেন, গ্যালিলিও স্মরণে এ উদ্যোগটি আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞান সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের বিষয়কে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে পারলে বিজ্ঞানচর্চা এগিয়ে যাবে। ডিসকাশন প্রজেক্টের বিজ্ঞান কর্মী মাজেদুল হাসান টেলিস্কোপে বৃহস্পতির দিকে তাক করে বলেন, ওই বৃহস্পতির ১৬ চাদের ৪টিকে প্রায় ৪০০ বছর আগেই গ্যালিলিও তার নিজের নির্মিত টেলিস্কোপে দেখেছিলেন। সত্যিই এটা উত্তেজনাকর, জলরাশিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে আমাদের জাহাজ। গন্তব্য যেন সুন্দরবন নয়। ওই নক্ষত্র আকাশ। তাই শীতকে উপেক্ষা করে শত শত শিক্ষার্থী আকাশের দিকে তাকিয়ে অবলোকন করেছেন গ্রহ-নক্ষত্র। মাজেদ তার সহকর্মী জাহাঙ্গীর আলম সুর, শাহাবুদ্দিন সামির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন এই অনুষ্ঠান সফলতার পিছনে তাদের কর্মকাণ্ড কাজ করেছে।
প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা বলেছেন, গ্যালিলিওকে স্মরণ করতে ডিসকাশন প্রজেক্টের এ ধরনের উদ্যোগ বিজ্ঞান চেতনা প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ। পদার্থবিজ্ঞানী ড. আলী আসগর বলেছেন, গ্যালিলিওর সংগ্রামকে স্মরণ করার উদ্যোগ বিজ্ঞান চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক এবং শৌখিন জ্যোতির্বিদ জিপি মিত্র বলেছেন, আমার ভালো লাগছে, এ মহাজাগতিক অন্বেষণ আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।
হশামসুদ্দিন আহমেদ
৩৭৯ বছর আগের কথা। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রপথিক এবং মানব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রকে তার কর্মে স্বীকৃতি পাওয়ার পরিবর্তে দাঁড়াতে হয়েছিল আসামির কাঠগড়ায়। কারণ তিনি সৌরকেন্দ্রিক বিশ্ব মডেলকে সমর্থন করেছিলেন। তার আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ দিয়ে এ সমর্থনের পক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি হলেন মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। ৯ বছরের কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্টিফেন হকিংয়ের মতে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এত বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেননি। অ্যারিস্টটলীয় নিশ্চল পৃথিবীর ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। তিনি গ্যালিলিওর মৃত্যুদিনে জন্মেছিলেন বলে গর্ববোধ করেন। কৃষ্ণবিবর ও কোয়ান্টাম মহাকর্ষের গবেষক স্টিফেন হকিং ওইদিন ৭০ বছর পার করলেন আর পার হলো গ্যালিলিওর মৃত্যুর ৩৭০ বছর।
ঢাকা ইমঙ্িেরয়াল কলেজ তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও শিক্ষা সফরের আয়োজন করে। কিন্তু এ শিক্ষা সফরকে অর্থবহ ও শিক্ষণীয় করে তোলার জন্য ডিসকাশন প্রজেক্টের সহযোগিতা গ্রহণ করে। ফলে ৬ জানুয়ারি ডিসকাশন প্রজেক্টের মাজেদুল হাসানের তত্ত্বাবধানে একদল বিজ্ঞানকর্মী তাদের সঙ্গে সুন্দরবন ভ্রমণে যান। ৬ দিনের ভ্রমণে প্রতিরাতেই খোলা আকাশের নিচে চলে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ। দিনের বেলায় চলে ফিল্টার কাচ দিয়ে সূর্য পর্যবেক্ষণ।
এর মধ্যদিয়ে গ্যালিলিওর মৃত্যুবার্ষিকী এবং স্টিফেন হকিংয়ের জন্মবার্ষিকী উদযাপন হয়। প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী ডিসকাশন প্রজেক্ট ও ইমপেরিয়াল কলেজের যৌথ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মাহফুজুল হক ৮ জানুয়ারির সব কার্যক্রমকে গ্যালিলিও ও স্টিফেন হকিংয়ের সম্মানে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, গ্যালিলিও মহাকাশ বিজ্ঞানের একজন অগ্রপথিক, তার আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা। আর তাই আমাদের সফরের চলমান অবস্থায় আমরা এ আয়োজন করি। তবে এখানে বিশেষ ধন্যবাদ ডিসকাশন প্রজেক্টকে। শিক্ষক সুমনা বিশ্বাস জানিয়েছেন, 'তারা দিবসটি শুরু করেন শোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে গ্যালিলিওকে স্মরণ করে। এরপর জেকব ব্রনওস্কির নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে গ্যালিলিওর ধর্মীয় আদালতে বিচারের অনুষ্ঠানটি দেখানো হয়। এরপর গ্যালিলিওকে স্মরণ করে বিশেষ প্রবন্ধ পাঠ করেন শিক্ষক সুমনা বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন, জাহাজ ছুটে চলেছে নদীর গতিপথ ধরে। জাহাজের ছাদে বসানো টেলিস্কোপে শিক্ষার্থীরা দেখছেন নক্ষত্রমণ্ডলীর অপার্থিব সৌন্দর্য। নাক্ষত্রিক আলোয় আমরা ছিলাম উদ্ভাসিত।'
ডিসকাশন প্রজেক্টের সমন্বয়ক বিজ্ঞান লেখক খালেদা ইয়াসমিন ইতি জানিয়েছেন, গ্যালিলিও স্মরণে এ উদ্যোগটি আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞান সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের বিষয়কে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে পারলে বিজ্ঞানচর্চা এগিয়ে যাবে। ডিসকাশন প্রজেক্টের বিজ্ঞান কর্মী মাজেদুল হাসান টেলিস্কোপে বৃহস্পতির দিকে তাক করে বলেন, ওই বৃহস্পতির ১৬ চাদের ৪টিকে প্রায় ৪০০ বছর আগেই গ্যালিলিও তার নিজের নির্মিত টেলিস্কোপে দেখেছিলেন। সত্যিই এটা উত্তেজনাকর, জলরাশিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে আমাদের জাহাজ। গন্তব্য যেন সুন্দরবন নয়। ওই নক্ষত্র আকাশ। তাই শীতকে উপেক্ষা করে শত শত শিক্ষার্থী আকাশের দিকে তাকিয়ে অবলোকন করেছেন গ্রহ-নক্ষত্র। মাজেদ তার সহকর্মী জাহাঙ্গীর আলম সুর, শাহাবুদ্দিন সামির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন এই অনুষ্ঠান সফলতার পিছনে তাদের কর্মকাণ্ড কাজ করেছে।
প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা বলেছেন, গ্যালিলিওকে স্মরণ করতে ডিসকাশন প্রজেক্টের এ ধরনের উদ্যোগ বিজ্ঞান চেতনা প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ। পদার্থবিজ্ঞানী ড. আলী আসগর বলেছেন, গ্যালিলিওর সংগ্রামকে স্মরণ করার উদ্যোগ বিজ্ঞান চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক এবং শৌখিন জ্যোতির্বিদ জিপি মিত্র বলেছেন, আমার ভালো লাগছে, এ মহাজাগতিক অন্বেষণ আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।
হশামসুদ্দিন আহমেদ
No comments