অভিবাসননীতি- ব্রিটেন ব্যবসার জন্য উন্মুুক্ত by রবার্ট গিবসন
গত বছর ব্রিটেনের অভিবাসননীতি নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। ব্রিটেনে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করে অভিবাসনের পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে বলে ব্রিটেনের গণমাধ্যমগুলোর একাংশ অভিযোগ তুলেছিল। আমি অবগত আছি, বাংলাদেশেও একধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল যে ব্রিটেনের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আমি পাঠককে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে অভিবাসনের সুফল বিষয়ে সরকার যথেষ্ট পরিমাণে সজাগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ইঙ্গিত থাকলে, নিশ্চিতভাবে সেটি হচ্ছে ব্রিটেন ‘ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত’।
ব্রিটিশ সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে মোট অভিবাসন কমিয়ে আনা। একই সঙ্গে এটি নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর যে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন বাংলাদেশি কর্মী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য বিনিয়োগ, ব্যবসা, পড়াশোনা ও পরিদর্শনের জন্য যুক্তরাজ্য বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলো আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থিক সেবাসমূহ ব্রিটেনে যথেষ্ট পরিমাণে দৃশ্যমান। ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশি অন্য খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাজ্যে পরিচালনার সুযোগ খুঁজছে এবং সেখানে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যান্য অঞ্চলেও প্রসারিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আমি আরেক ধাপ এগিয়ে বলতে পারি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গোটা ইইউর তুলনায় যুক্তরাজ্যে অধিক বিনিয়োগ করছে। অনেক বাংলাদেশিসহ সফল ব্যবসায়ীরা জানেন, যুক্তরাজ্য ব্যবসার উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ব্যবসা স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় ইউরোপের মধ্যে যুক্তরাজ্য শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এই মূল্যায়নের সঙ্গে আরও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য সংযোজন করছি।
এক. ব্রিটেন বর্তমানে এবং ধারণা করা যায়, সামনের দিনগুলোতেও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি। বার্ষিক ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপর জিডিপি নিয়ে আমরা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতি।
দুই. আমাদের রয়েছে বিশ্বের সেরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ। বর্তমান সরকার লাল ফিতার বাধা দূর করেছে। গত বছর করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে শতকরা ২৪-এ নামিয়ে আনা হয়েছে এবং ২০১৪ সাল নাগাদ শতকরা ২২ করা হবে।
তিন. আপনি ইউরোপে ব্যবসা করতে চাইলে, ব্রিটেন হচ্ছে উপযুক্ত স্থান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক বাজার হচ্ছে ইইউ, আমরা এতে সরাসরি প্রবেশের সুযোগ দিয়ে থাকি।
চার. আপনি বৈশ্বিক বাজারে ব্যবসা করতে চাইলে, ব্রিটেন হচ্ছে উপযুক্ত স্থান। সিটি অব লন্ডন এবং স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব এখানে পুঁজি গঠন করে এবং ব্যবসার শেয়ার ছাড়ে।
পাঁচ. আমাদের ইউকে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অফিসের একটি বিশেষ সেবা রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের যুক্তরাজ্যে তাদের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টার্সর খুলতে সাহায্য করা হয়।
ছয়. আমাদের অবস্থান এমন এক জোনে, যেখান থেকে আপনি সকালে এশিয়ায় এবং সন্ধ্যায় আমেরিকায় কথা বলতে পারেন।
ব্রিটেনে শুধু ব্যবসায়ীরাই সম্ভাবনা খোঁজেন না। আমরা বিশ্বের সেরা সংযোগস্থল। হিথরো বিমানবন্দরে বিশ্বের যেকোনো বিমানবন্দরের চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করে। ব্রিটেন কথা বলে বৈশ্বিক ভাষা ইংরেজিতে, যা আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাষা। উন্নয়ন ও বিকাশের বাহন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে ব্রিটেন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও ব্রিটেন রয়েছে নেতৃত্বের আসনে। বিশ্বের সেরা ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্রিটেনে রয়েছে চারটি। আমরা অনেক কঠিন কাজ খুব সহজে সেরে ফেলতে পারি। উদাহরণ হিসেবে লন্ডন ২০১২ অলিম্পিক এবং প্যারা-অলিম্পিকের কথা বলতে পারি। দুটিই সময়মতো এবং বাজেটের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ, কৌতুকরসজারিত এবং আকর্ষণীয় রীতিতে সম্পন্ন হয়েছে।
সুনির্দিষ্টভাবে ভিসার বিষয়টি নিয়ে বলতে চাই, যখন মনে করা হচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং দর্শনার্থীদের জন্য ব্রিটেনের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্রিটেন বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজারের ওপর ভিসার আবেদন বিবেচনা করে। ২০১২ সালে ভিসাপ্রাপ্তির হার ছিল শতকরা ৬৮ ভাগ। ভিজিট ভিসার জন্য জমা পড়া ১০ হাজার ৭০৩টি আবেদনের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ অর্থাৎ আট হাজার ১২৭টি সফলভাবে ভিসা পেয়েছে। ঢাকা এবং সিলেটের ভিসা আবেদনকেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা ভিসা সেবা পাওয়াকে যতটা সম্ভব সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। অনেক দেশেই অনেক সুবিধা নেই। আমরা সবচেয়ে কম সময়ে অর্থাৎ মাত্র ১৫ দিনে ভিসার আবেদন-প্রক্রিয়া করে থাকি এবং সফল আবেদনকারী এর চেয়েও কম সময়ে ভিসা পেয়ে থাকেন। ভিসাপদ্ধতিকে আমরা আরও সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছি, বিশেষ করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এবং নিয়মিত ভ্রমণকারীদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে। ১৯ জানুয়ারি থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আমরা ভিসা আবেদনকেন্দ্র খোলা রাখব এবং অনলাইনেও ভিসা আবেদনের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
গত বছর, যারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণের জন্য ভিসার আবেদন করেছিলেন, তাঁদের শতকরা ৮০ ভাগকে ভিসা দেওয়া হয়েছে। সংখ্যার হিসাবে এক হাজার ৭৮৪টি আবেদনের মধ্যে ভিসা দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৫০০ জনকে। অভিবাসননীতিকে সংস্কার করতে ব্রিটিশ সরকার ব্যাপকভাবে বৈশ্বিক আলাপ-আলোচনা চালিয়েছে। ওয়ার্ক ভিসার মতো বিষয়ও এতে আলোচিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোম্পানিগুলোর মধ্যে চাকরি স্থানান্তরসংক্রান্ত ভিসা অভিবাসনের সীমাবদ্ধতার বাইরে রাখা হয়েছে। ব্যবসাসংক্রান্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো সংখ্যা স্থির করে দেওয়া হয়নি। সভায় অংশগ্রহণ, চুক্তি বা সমঝোতার জন্য ভ্রমণ, তথ্য অনুসন্ধান, অকুস্থল পরিদর্শন ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রচুর আবেদন আমরা বিবেচনা করি, যাতে আমাদের দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সুবিধা পায়।
আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যবসা উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানাতে ব্রিটেন বেশি কাজ করছে। অধিকতর উদারতা দিয়ে, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের ভিসার ব্যবস্থায় আমরা পরিবর্তন এনেছি। ভিসা পাওয়াকে সহজ করতে তাঁদের আমরা ফার্স্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি এবং তা সংখ্যাতীতভাবে। উপরন্তু আমরা দক্ষ জনশক্তির জন্য দরজা বন্ধ করিনি। শ্রমবাজারের শূন্যস্থান পূরণে যাঁরা আসতে চান, তাঁদের আমরা স্বাগত জানাই। সরকার ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ দক্ষতার মানুষের অভিবাসন ২০ হাজার ৭০০-তে বেঁধে দিয়েছে। এই সংখ্যা বেঁধে দেওয়া বিশেষভাবে দক্ষদের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়। ব্রিটেনে কোনো কোম্পানির বিনিয়োগ বা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রেও এই সীমা প্রযোজ্য নয়। এবার আসা যাক যাঁরা যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার জন্য আসতে চান, তাঁদের কথায়। গত বছর আমরা দুই হাজার ৬৫৫টি স্টুডেন্ট ভিসা প্রদান করেছি। শতকরা ৮৬ ভাগ আবেদনকারী ভিসা পেয়েছেন। মোট চার লাখ ৩০ হাজার অ-ইউরোপীয় দেশের শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করছেন। যুক্তরাজ্যের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে তাঁরা হচ্ছেন শতকরা ১৪ ভাগ। এসব কথা বলার মানে হচ্ছে, আমরা প্রকৃত শিক্ষার্থীকে ভিসা প্রদান করে থাকি।
আমরা চাই, বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকসংখ্যক প্রকৃত শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে আসুক। আমরা এ জন্য কোনো সীমা বেঁধে দিইনি। গত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহার সম্পর্কে আমরা জানি। এ অবস্থা চলতে দেওয়া উচিত নয় এবং শিক্ষার্থীদের এভাবে ঠকতে দেওয়া যায় না। ভিসার নতুন বিধি-বিধান ভালো শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনায় সহায়তা ও সুরক্ষা দিচ্ছে। যাঁরা এই নতুন বিধানের শর্ত পূরণ করছেন, তাঁদের আমরা সাদরে গ্রহণ করব।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েট কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনো বহাল আছে। আমরা বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং অন্য গ্র্যাজুয়েটদের সুযোগ দিচ্ছি। এ কথা সত্য যে আমরা গ্র্যাজুয়েটদের তাঁদের শিক্ষার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কম দক্ষতার কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে বা একেবারেই কাজ না করার ক্ষেত্রে ভিসা প্রদানের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করার পর গ্র্যাজুয়েটরা যথারীতি কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁরা গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের কাজে লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিয়োগকারীর অধীনে ওই পর্যায়ের বেতন-ভাতায় প্রাথমিকভাবে তিন বছর কাজ করতে পারবেন। পরে এই সুযোগ আরও তিন বছর বর্ধিত করার সম্ভাবনাও রয়েছে। আমরা গ্র্যাজুয়েট উদ্যোক্তাদের বিশ্বমানের সৃজনশীল ভাবনা নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে কিছু করার জন্যও ভিসা প্রদান করছি।
পরিশেষে, ব্রিটেনের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ধরনের অতিকথন থেকে বেরিয়ে এসে বলতে চাই, ব্রিটেন এখন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।
রবার্ট গিবসন: বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার।
ব্রিটিশ সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে মোট অভিবাসন কমিয়ে আনা। একই সঙ্গে এটি নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর যে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন বাংলাদেশি কর্মী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য বিনিয়োগ, ব্যবসা, পড়াশোনা ও পরিদর্শনের জন্য যুক্তরাজ্য বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলো আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থিক সেবাসমূহ ব্রিটেনে যথেষ্ট পরিমাণে দৃশ্যমান। ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশি অন্য খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাজ্যে পরিচালনার সুযোগ খুঁজছে এবং সেখানে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যান্য অঞ্চলেও প্রসারিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আমি আরেক ধাপ এগিয়ে বলতে পারি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গোটা ইইউর তুলনায় যুক্তরাজ্যে অধিক বিনিয়োগ করছে। অনেক বাংলাদেশিসহ সফল ব্যবসায়ীরা জানেন, যুক্তরাজ্য ব্যবসার উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ব্যবসা স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় ইউরোপের মধ্যে যুক্তরাজ্য শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এই মূল্যায়নের সঙ্গে আরও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য সংযোজন করছি।
এক. ব্রিটেন বর্তমানে এবং ধারণা করা যায়, সামনের দিনগুলোতেও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি। বার্ষিক ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপর জিডিপি নিয়ে আমরা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতি।
দুই. আমাদের রয়েছে বিশ্বের সেরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ। বর্তমান সরকার লাল ফিতার বাধা দূর করেছে। গত বছর করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে শতকরা ২৪-এ নামিয়ে আনা হয়েছে এবং ২০১৪ সাল নাগাদ শতকরা ২২ করা হবে।
তিন. আপনি ইউরোপে ব্যবসা করতে চাইলে, ব্রিটেন হচ্ছে উপযুক্ত স্থান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক বাজার হচ্ছে ইইউ, আমরা এতে সরাসরি প্রবেশের সুযোগ দিয়ে থাকি।
চার. আপনি বৈশ্বিক বাজারে ব্যবসা করতে চাইলে, ব্রিটেন হচ্ছে উপযুক্ত স্থান। সিটি অব লন্ডন এবং স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব এখানে পুঁজি গঠন করে এবং ব্যবসার শেয়ার ছাড়ে।
পাঁচ. আমাদের ইউকে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অফিসের একটি বিশেষ সেবা রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের যুক্তরাজ্যে তাদের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টার্সর খুলতে সাহায্য করা হয়।
ছয়. আমাদের অবস্থান এমন এক জোনে, যেখান থেকে আপনি সকালে এশিয়ায় এবং সন্ধ্যায় আমেরিকায় কথা বলতে পারেন।
ব্রিটেনে শুধু ব্যবসায়ীরাই সম্ভাবনা খোঁজেন না। আমরা বিশ্বের সেরা সংযোগস্থল। হিথরো বিমানবন্দরে বিশ্বের যেকোনো বিমানবন্দরের চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করে। ব্রিটেন কথা বলে বৈশ্বিক ভাষা ইংরেজিতে, যা আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাষা। উন্নয়ন ও বিকাশের বাহন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে ব্রিটেন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও ব্রিটেন রয়েছে নেতৃত্বের আসনে। বিশ্বের সেরা ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্রিটেনে রয়েছে চারটি। আমরা অনেক কঠিন কাজ খুব সহজে সেরে ফেলতে পারি। উদাহরণ হিসেবে লন্ডন ২০১২ অলিম্পিক এবং প্যারা-অলিম্পিকের কথা বলতে পারি। দুটিই সময়মতো এবং বাজেটের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ, কৌতুকরসজারিত এবং আকর্ষণীয় রীতিতে সম্পন্ন হয়েছে।
সুনির্দিষ্টভাবে ভিসার বিষয়টি নিয়ে বলতে চাই, যখন মনে করা হচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং দর্শনার্থীদের জন্য ব্রিটেনের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্রিটেন বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজারের ওপর ভিসার আবেদন বিবেচনা করে। ২০১২ সালে ভিসাপ্রাপ্তির হার ছিল শতকরা ৬৮ ভাগ। ভিজিট ভিসার জন্য জমা পড়া ১০ হাজার ৭০৩টি আবেদনের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ অর্থাৎ আট হাজার ১২৭টি সফলভাবে ভিসা পেয়েছে। ঢাকা এবং সিলেটের ভিসা আবেদনকেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা ভিসা সেবা পাওয়াকে যতটা সম্ভব সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। অনেক দেশেই অনেক সুবিধা নেই। আমরা সবচেয়ে কম সময়ে অর্থাৎ মাত্র ১৫ দিনে ভিসার আবেদন-প্রক্রিয়া করে থাকি এবং সফল আবেদনকারী এর চেয়েও কম সময়ে ভিসা পেয়ে থাকেন। ভিসাপদ্ধতিকে আমরা আরও সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছি, বিশেষ করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এবং নিয়মিত ভ্রমণকারীদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে। ১৯ জানুয়ারি থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আমরা ভিসা আবেদনকেন্দ্র খোলা রাখব এবং অনলাইনেও ভিসা আবেদনের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
গত বছর, যারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণের জন্য ভিসার আবেদন করেছিলেন, তাঁদের শতকরা ৮০ ভাগকে ভিসা দেওয়া হয়েছে। সংখ্যার হিসাবে এক হাজার ৭৮৪টি আবেদনের মধ্যে ভিসা দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৫০০ জনকে। অভিবাসননীতিকে সংস্কার করতে ব্রিটিশ সরকার ব্যাপকভাবে বৈশ্বিক আলাপ-আলোচনা চালিয়েছে। ওয়ার্ক ভিসার মতো বিষয়ও এতে আলোচিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোম্পানিগুলোর মধ্যে চাকরি স্থানান্তরসংক্রান্ত ভিসা অভিবাসনের সীমাবদ্ধতার বাইরে রাখা হয়েছে। ব্যবসাসংক্রান্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো সংখ্যা স্থির করে দেওয়া হয়নি। সভায় অংশগ্রহণ, চুক্তি বা সমঝোতার জন্য ভ্রমণ, তথ্য অনুসন্ধান, অকুস্থল পরিদর্শন ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রচুর আবেদন আমরা বিবেচনা করি, যাতে আমাদের দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সুবিধা পায়।
আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যবসা উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানাতে ব্রিটেন বেশি কাজ করছে। অধিকতর উদারতা দিয়ে, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের ভিসার ব্যবস্থায় আমরা পরিবর্তন এনেছি। ভিসা পাওয়াকে সহজ করতে তাঁদের আমরা ফার্স্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি এবং তা সংখ্যাতীতভাবে। উপরন্তু আমরা দক্ষ জনশক্তির জন্য দরজা বন্ধ করিনি। শ্রমবাজারের শূন্যস্থান পূরণে যাঁরা আসতে চান, তাঁদের আমরা স্বাগত জানাই। সরকার ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ দক্ষতার মানুষের অভিবাসন ২০ হাজার ৭০০-তে বেঁধে দিয়েছে। এই সংখ্যা বেঁধে দেওয়া বিশেষভাবে দক্ষদের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়। ব্রিটেনে কোনো কোম্পানির বিনিয়োগ বা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রেও এই সীমা প্রযোজ্য নয়। এবার আসা যাক যাঁরা যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার জন্য আসতে চান, তাঁদের কথায়। গত বছর আমরা দুই হাজার ৬৫৫টি স্টুডেন্ট ভিসা প্রদান করেছি। শতকরা ৮৬ ভাগ আবেদনকারী ভিসা পেয়েছেন। মোট চার লাখ ৩০ হাজার অ-ইউরোপীয় দেশের শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করছেন। যুক্তরাজ্যের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে তাঁরা হচ্ছেন শতকরা ১৪ ভাগ। এসব কথা বলার মানে হচ্ছে, আমরা প্রকৃত শিক্ষার্থীকে ভিসা প্রদান করে থাকি।
আমরা চাই, বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকসংখ্যক প্রকৃত শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে আসুক। আমরা এ জন্য কোনো সীমা বেঁধে দিইনি। গত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহার সম্পর্কে আমরা জানি। এ অবস্থা চলতে দেওয়া উচিত নয় এবং শিক্ষার্থীদের এভাবে ঠকতে দেওয়া যায় না। ভিসার নতুন বিধি-বিধান ভালো শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনায় সহায়তা ও সুরক্ষা দিচ্ছে। যাঁরা এই নতুন বিধানের শর্ত পূরণ করছেন, তাঁদের আমরা সাদরে গ্রহণ করব।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েট কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনো বহাল আছে। আমরা বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং অন্য গ্র্যাজুয়েটদের সুযোগ দিচ্ছি। এ কথা সত্য যে আমরা গ্র্যাজুয়েটদের তাঁদের শিক্ষার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কম দক্ষতার কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে বা একেবারেই কাজ না করার ক্ষেত্রে ভিসা প্রদানের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করার পর গ্র্যাজুয়েটরা যথারীতি কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁরা গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের কাজে লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিয়োগকারীর অধীনে ওই পর্যায়ের বেতন-ভাতায় প্রাথমিকভাবে তিন বছর কাজ করতে পারবেন। পরে এই সুযোগ আরও তিন বছর বর্ধিত করার সম্ভাবনাও রয়েছে। আমরা গ্র্যাজুয়েট উদ্যোক্তাদের বিশ্বমানের সৃজনশীল ভাবনা নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে কিছু করার জন্যও ভিসা প্রদান করছি।
পরিশেষে, ব্রিটেনের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ধরনের অতিকথন থেকে বেরিয়ে এসে বলতে চাই, ব্রিটেন এখন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।
রবার্ট গিবসন: বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার।
No comments