দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়া উচিত- দণ্ডিতের সেবায় হাসপাতাল



যে দেশে গুরুতর রোগীদের ভাগ্যেই সরকারি হাসপাতালের কেবিন জোটে না, সেখানে ‘পিঠের ব্যথা’র কারণে সাদরে সেবা-শুশ্রূষা দেওয়া হচ্ছে খুনের মামলায় হাইকোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত এক আসামিকে।
তা-ও দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই দণ্ডিত ব্যক্তিটি সাধারণ কেউ নন, তাঁর কাছে এ দেশের কারাবিধি ও হাসপাতালের নিয়মকানুন অকার্যকর।
প্রথম আলোর প্রথম পাতায় শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ‘ভেরি ইম্পর্টেন্ট পারসন’ বা ভিআইপির নাম ইয়াসিন রহমান ওরফে টিটো। ১৯৯৯ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর জিবরান তায়েবী হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। কিন্তু তিনি কারাদণ্ড ভোগ করেছেন সাকল্যে মাত্র তিন দিন, তা-ও একটানা নয়, দুই দফায়। ১৪ মাস ধরে তিনি আছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি কেবিনে। কিন্তু তাঁর তেমন কোনো রোগব্যাধি নেই। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্রে তাঁর রোগের বিবরণ লেখা আছে ‘পিঠব্যথা’।
পিঠের ব্যথায় ১৪ মাস ধরে হাসপাতালের কেবিনে সেবা-শুশ্রূষার এই রেকর্ড সৃষ্টিকারী রোগীটি সম্পর্কে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য তথ্য হচ্ছে এই যে, তিনি চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও কেডিএস গ্রুপের মালিকের পুত্র। তাঁর এই পরিচয়ের কারণেই এ বিষয়ে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কারা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিব্রত হন। প্রথম আলোর প্রতিবেদককে তাঁরা বলেছেন, সবই তো বোঝেন, প্রশ্ন করে বিব্রত করেন কেন?
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ তাদের ওই বন্দীকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে দফায় দফায় চিঠি লিখেছে, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ওই ‘রোগীকে’ ছাড়ছে না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক দায় এড়িয়ে বলেছেন, রোগীর চিকিৎসা করেন চিকিৎসক, হাসপাতালের পরিচালক নন। সংশ্লিষ্ট দুই চিকিৎসকের একজন প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কাছে তাঁর অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রাম কারাগারের এক কর্মকর্তা স্পষ্ট বলেছেন, এভাবে কারাবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর বক্তব্যেও অসহায়ত্বের সুর।
আইনের শাসনের প্রতি সীমাহীন অবজ্ঞার এক বড় দৃষ্টান্ত এটি। এর জন্য দোষী ব্যক্তিদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। তারও আগে উচিত বন্দীকে শিগগির হাসপাতাল থেকে কারাগারে স্থানান্তর করা।

No comments

Powered by Blogger.