চার বন্ধু ও আজব পাহাড় কেয়া নন্দী
কফির মগে ছোট্ট একটা চুমুক। দরজায় কে যেন টকটক করছে। আদি ফাইলের কাগজগুলোর ওপর মুখ তুলতেই দেখল চারটি চেনা মুখ। ওহ! তোরা, আয়। বস্্। কি ব্যাপার? তোদের মুখে হাসির ছাপ।
কোনো প্ল্যান করেছিস না কি? আদি, সরূপ, অনু, রানা আর প্রকৃতি ওরা পাঁচজন সেই কলেজ জীবনের বন্ধু। ভাগ্যক্রমে তাদের চাকরিও হয়েছে একই ডিপার্টমেন্টে। ওরা পাঁচজনই খুব ভাল গোয়েন্দা অফিসার। যে কোনো সমস্যাই হোক না কেন মুহূর্তের মধ্যেই তা সমাধান করে ফেলে। যাই হোক। সামনেই শীত পড়বে। শরতের এই হাল্কা শীত ও হাল্কা গরমে তারা প্রতিবছরই কোনো নতুন জায়গা দেখতে যায়। এবার ঠিক হলো চাঁদের পাহাড় নামে একটি পাহাড়ী এলাকায় ঘুরতে যাবে। প্ল্যানমতো তারা পরদিন সকাল ছয়টায় রওনা দিল। ঘণ্টা দুই-একের মধ্যেই তারা পৌঁছে গেল সেই গ্রামের ধারে। বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে। জঙ্গলের ভেতর সরু রাস্তা। সাপঘোপ কতকিছু বাসা বেঁধেছে সেই জঙ্গলে। সামনেই একটা ছোটখাট পাহাড়। পাহাড় কেটে আদিবাসীরা ফসল চাষ করছে। ওদের ভাষায় যেটা জুম চাষ। একটু সামনেই একটা খুব সুন্দর টুরিস্ট লজ। সেখানেই একদিনের জন্য তারা থাকার ব্যবস্থা করল। দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করল। বিকেলের দিকে তারা জায়গাটা ঘুরে দেখার জন্য বের হলো। সামনে একজন হোটেল বয়কে জিজ্ঞেস করল- এই শোনো, এখানে চাঁদের পাহাড় নামে একটা জায়গা আছে। কোন্দিকে যেতে হবে একটু দেখিয়ে দেবে? সেই হোটেল বয় নিয়ে গেল তাদেরকে চাঁদের পাহাড়ে। পাহাড়ে ওঠার সময় হোটেল বয় তাদের সাবধান করে বললÑ স্যার, এটা নির্জন জায়গা, বেশি রাত করবেন না। এই বলে হোটেল বয়টা চলে গেল। পাহাড়টি বেশ উঁচু। এখানকার লোকজন বলে এই পাহাড়ের ওপর নাকি একটি ছোট্ট দিঘি আছে। পাহাড়ের ওপর দিঘি থাকতে কখনও শুনেনি তারা। এজন্য কৌতূহলটা একটু বেশি। প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেল। তারা উঠেছে পাহাড়ের ওপর। দিঘির পানিতে পদ্ম-শাপলার মধ্যে চাঁদটি দেখা যাচ্ছে। এই অপরূপ সৌন্দর্যই একে নাম দিয়েছে চাঁদের পাহাড়। বেশ ঘণ্টাখানেক পর তারা পাহাড় থেকে নিচে নামছে। এমন সময় হঠাৎ, রানা পড়ে গেল। শুধু একটি গর্ত দেখা গেল আর রানার চিৎকার শোনা গেল। হ্যাঁ, রানা এই গর্তের মধ্যেই পড়ে গেছে। তারা সবাই গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়ল। সামনে বিরাট রাস্তা। যাকে বলে সুড়ঙ্গ। তারা হাঁটতে লাগল। হঠাৎ থেমে গেল। একি! এখানে তো উপরে ওঠার সিঁড়িও আছে। আদি তখন তাদের দলকে দু’ভাগে ভাগ করল। অনু আর সরূপকে খবর দিতে। আর প্রকৃতি ও আদি এগিয়ে চলল। সামনে দেখল রানাকে। কিন্তু রানা তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আর দুটো লোক তাকে পাহাড়া দিচ্ছে। তারা আরও দেখতে পেল সেখানে প্রাচীনকালের বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস ও মূর্তি রয়েছে। তারা কয়েকটি মমিও দেখল। তারা দু’জনেই অবাক হয়ে গেল এখানকার মমি দেখে। এগুলো এখানে কি করে এলো! কিছুক্ষণ পর অনু আর সরূপ ফিরে এলো পুলিশকে খবর দিয়ে। তারা এগিয়ে যেতে লাগল। খুব সাবধানে পেছন থেকে দু’জন লোককে ধরে ফেলল। তাদের মধ্যে খুব সংঘর্ষ হলো। সরূপ একটু ব্যথা পেল হাতে। ততক্ষণে পুলিশ চলে এলো। ধরে ফেলল সেই লোকদের। অনেকদিন পর পুলিশ এদের ধরতে পেরেছে। প্রায় দু’মাস পর তাদের খোঁজ পেল পুলিশ। তারা জেল থেকে পালিয়েছিল। এর পথ ধরেই পুলিশ কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের পুরো টিমকে ধরতে পারল। তারা যে মমিগুলো এনেছে সেগুলো আসল নয়। নকল মমি তারা বিভিন্ন দেশে পাচার করে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানেও তারা অতর্কিতে হামলা চালায়। সেখানকার পুলিশ সুপার এই চার গোয়েন্দার ওপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।তারা সেখান থেকে ফিরে আসার জন্য রওনা হয়। আসার পথে তারা ভাবছে দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব লোক আগাছার মতো ছড়িয়ে আছে। দেশের মানুষের একটু সচেতনতা ও মানবতাই পারে একটি দেশকে সুন্দর-সুস্থ হিসেবে গড়ে তুলতে।
এস. ভি. সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, (দশম শ্রেণী), কিশোরগঞ্জ
No comments