ইভিএমের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল-আফজল খানকে নিয়ে ধূম্রজাল by মাসুক আলতাফ চৌধুরী,

ফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নগরজুড়ে পুরোমাত্রায় বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের রঙবেরঙের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানারে ছেয়ে গেছে নগরীর সর্বত্র। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া, মতবিনিময়, মিছিল_ সবই চলছে পুরোদমে। তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নতুন গতি পেয়েছে।


আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ চালিয়ে গেলেও বিএনপির এক প্রার্থী হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে প্রচার থেকে বিরত রয়েছেন। বিএনপির অন্য প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু কৌশলী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে জামায়াত ও জাপা প্রার্থী প্রচারের
মাঠে সরব। এদিকে ইভিএম পদ্ধতি
বাতিল ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার প্রতিবাদে জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার দুপুরে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপি ওই মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, শহর বিএনপির সভাপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন কায়সার প্রমুখ। জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বেগম রাবেয়া চৌধুরী জানান, শতভাগ ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হলে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হতে পারে। বিএনপির এ অবস্থানের ফলে দলীয় মেয়র প্রার্থীরা দোটানায় রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন_ সদর আসনের সাংসদ হাজি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা আলহাজ ওমর ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শিকদার, কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম রওশন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী হতে চান_ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু।
জাপা ও জামায়াতের একজন করে মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন_ জেলা জাপার আহ্বায়ক এয়ার আহমেদ সেলিম ও জামায়াতের মহানগর আমির কাজী দীন মোহাম্মদ।
আফজল খানের গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে আ'লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিন্নমত
আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দাবি করে অধ্যক্ষ আফজল খানের প্রচার নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন দলের অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তাদের দাবি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল নারায়ণগঞ্জের মতো প্রার্থী চাপিয়ে দেবে না।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয় সংসদের হুইপ মুজিবুল হক এমপি বলেন, আফজল খানকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন_ কাজ করে যাও। কুমিল্লার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসনের এমপি আবদুল মতিন খসরু বলেন, দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আফজল খানকে নির্বাচন করার জন্য গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। এ সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেন, প্রার্থিতার বিষয়ে এটাই চূড়ান্ত। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিধান নেই। এক্ষেত্রে দলের সহানুভূতি থাকে। আফজল খান প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক। এসব দিক বিবেচনা করে তাকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য দলের সভানেত্রী গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের অন্য যুগ্ম আহ্বায়ক ও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী সফিকুর ইসলাম সিকদার বলেন, লোকমুখে শুনছি অধ্যক্ষ আফজল খান নেত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন। এসব গ্রিন সিগন্যাল আমার কাছে বিমূর্ত শব্দ বলে মনে হচ্ছে। আমি জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অথচ আমিই এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি আফজল খান দলের সমর্থন পেয়েছেন। হয়তো আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। দলের অন্য সিনিয়র নেতাদের কাছে খবরটি পেঁৗছানো হয়েছে কি-না আমি জানি না। অন্য সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ ওমর ফারুক বলেন, ওইদিন (রোববার) আমিও সংসদ ভবনে গিয়েছিলাম। এমপি আবদুল মতিন খসরুকে সঙ্গে নিয়ে আফজল খান প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবনের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় নেত্রীকে আফজল খান বলেন, তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করতে কাজ করছেন। নেত্রী জবাবে বলেছেন, করো। এটুকু কথাকে ঘিরে আফজল খান ও তার লোকজন নগরে প্রচার করছেন, তিনি নেত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন। আফজল খানের এ ধরনের প্রচার নগরীর সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের বিভ্রান্ত করার একটা অভিনব কৌশল। আমার জানামতে, দল তফসিল ঘোষণার আগে একক প্রার্থী হিসেবে কাউকে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদি নিত তাহলে জেলার সিনিয়র নেতারা অবশ্যই বিষয়টি জানতে পারতেন। দলের আরেক সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু গ্রিন সিগন্যাল বিষয়ে বলেন, এটা নেত্রীর নয়, এমপি আবদুল মতিন খসরুর সিগন্যাল। প্রচারটা তিনি করিয়েছেন। আমাকে দমানোর জন্য আবদুল মতিন খসরু এটা করেছেন। কারণ আমার গ্রামের বাড়ি বুড়িচং। আমাকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে হিংসা করেন। আর সে হিংসা চরিতার্থ করার জন্য আফজল খানকে নিয়ে মেতেছেন। এদিকে আফজল খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও না পাওয়ায় তার এক ঘনিষ্ঠজন জানান, আফজল খানকে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা মেয়র পদে নির্বাচনী কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। যেখানে নেত্রী এ ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন সেখানে এটাকে দলের গ্রিন সিগন্যাল বা সমর্থন ভাবাই যায়।

No comments

Powered by Blogger.