ধর নির্ভয় গান-যখন চড়ূই খেলা করে সোনালি আলোয় by আলী যাকের
নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে যে শত প্রলোভন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন সত্ত্বেও যদি সাধারণ মানুষ একযোগে কারও পেছনে দাঁড়ায়, তাহলে জয় তার জন্য সুনিশ্চিত এবং সাধারণ মানুষ দাঁড়ায় তাদেরই পক্ষে, যারা সত্যিকার অর্থে সৎ এবং গণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। এক কথায় যারা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ ছেড়ে আলোর পথকেই জীবনের মোক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের ফল দেশবাসী সবাইকে
আশান্বিত করেছে। তারা স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলেছে
আজকাল খুব সকালে আমার ঘুম ভেঙে যায়। মাঝে মধ্যে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করি, ঘুম আসে না। তখন বিছানা ছাড়তেই হয়। গিয়ে বসি আমার পড়ার টেবিলে। আমার সামনেই বিশাল খোলা জানালা। দেখি আকাশ, বাড়িঘর এবং কিছু দূরে দিগন্তের বনরেখা। আজ সকালে ভোর সাড়ে ৫টায় আমার পড়ার টেবিলে গিয়ে বসলাম। আমার জানালার আলসেতে টবের মধ্যে ছোট ছোট অনেক গাছ আছে। নানারকম ফুলের গাছ। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় অপরাজিতা। প্রায় সারা বছরই নীল ফুলে ভরে থাকে এই ছোট্ট লতানো গাছটি। অপরাজিতা, অপরাজিত, অপরাজিতা। এই কথাগুলো নিজেকেই নিজে যেন বলি বারবার। বলি এই কারণে যে, কৈশোর এবং যৌবনের সন্ধিক্ষণে প্রায় সব আপনজনকে হারিয়ে অনাথ হয়ে গেলেও কেবল পরাজিত হবো না, এই মনোবৃত্তি আমায় আমার মতো করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে অপরাজিতা প্রসঙ্গে আসছি পরে।
আজ সকালে জানালার ধারে গিয়ে বসে যখন নানারকম চিন্তা, কিছু সংলগ্ন, কিছু অসংলগ্ন আমার মাথায় ভিড় করে আসছে, তখন হঠাৎ আমার প্রিয় চড়ূই পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দে ধ্যান ভঙ্গ হয়। ওরা রোজ সকালে এসে আমার জানালার আলসেতে বসে আমার সঙ্গে নানা কথা বলে। আমি যেন ওদের কিছু কিছু কথা বুঝতেও পারি। জানি, ওরা আমার কাছে কিছু খেতে চায়। আমার পড়ার টেবিলেই একটি ছোট বাটিতে কিছু চাল রাখা থাকে, আমি সেই চাল আলসের ওপরে ছড়িয়ে দিলে ওদের আনন্দ দেখে কে? ওরা হাসে, নাচে, একে অন্যের সঙ্গে খুনসুটি করে, ঝগড়া করে। আমি পাখিদের জীবনের সঙ্গে আমাদের জীবনের সাদৃশ্য খুঁজে পাই। ঠিক ওদেরই মতো কত অল্পতেই না পরিতৃপ্ত আমাদের সাধারণ মানুষ! অথচ ওদের জন্য এই অল্পের আয়োজনে আমাদের কেন এত অনীহা? সাধারণ মানুষ এই অল্পে সন্তুষ্ট বলেই আমরা করে খাচ্ছি। আমাদের যারা সমাজের, প্রশাসনের কিংবা রাজনীতির শীর্ষে আছে তারা নগরবাসী কতিপয় ঐশ্বর্যবান মানুষ বেছে নিয়ে তাদের তেলা মাথায় তেল দিতে এত আগ্রহী; কারণ ওইসব মাথা থেকে অতিরিক্ত ছিটেফোঁটা তেলও যদি সাধারণ মানুষের মাঝে পড়ে, তাহলেই তো সাধারণ জনগণ ক্ষমতাসীনের পক্ষে এসে যায়? তবে আর প্রয়োজন কী জনে জনে জনতার খোঁজ রাখার? কিছু মানুষকে বেছে নিয়ে তাদের প্রয়োজনের অধিক উপকরণে সমৃদ্ধ করে তোল, তারপর তারাই সব মানুষকে তোমার জন্য সুনিয়ন্ত্রিত রাখবে। এসব প্রায় অসংলগ্ন কথা চিন্তা করতে করতে আমার দৃষ্টি আবার গিয়ে পড়ে সেই অসাধারণ সুন্দর অপরাজিতা ফুলের দিকে। ভোরের সূর্য তখন পূর্ব দিগন্তে সম্পূর্ণ উদিত। আমি আবারও মনে মনে উচ্চারণ করি অপরাজিতা! অপরাজিতা!!
হঠাৎ করেই এই নৈসর্গিক প্রত্যুষের যে বিমূর্তবোধ, সেখান থেকে মন ধেয়ে যায় অতি নিকট অতীতের দিকে। মনে ভেসে আসে মূর্ত এক প্রতিযোগিতার কথা। মনে আসে অপরাজিতা আইভীর নাম। কী পরম সাহসে অপ্রতুল অর্থ নিয়ে, অস্ত্রকে নিরস্ত্র বানিয়ে, কেবল গণমানুষের সমর্থনপুষ্ট হয়ে মাথা উঁচু করে অভীষ্ট বিজয়ের লক্ষ্যে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে গিয়েছেন এই নারী_ সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ আরেক অপরাজিতা ফুল। ভোরের স্বর্গীয় আলোয় উদ্ভাসিত যার নৈসর্গিক নীল। বড় কষ্ট হয় যখন দেখি যে, আমার পরম ভালোবাসার ধন, আমার এই জন্মভূমি ক্লেদাক্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেই সত্তর দশকের মধ্যভাগ থেকেই। তারপর ক্রমেই আমরা যেন ডুবে যাচ্ছি পূতিগন্ধময় এক অন্ধকার জলাধারের অতলে। বীতশ্রদ্ধ হয়ে যাই আমার দেশের এই ক্রমাবনতি দেখে। এরই মাঝে যখন দু'একটি ফুল ফোটে, দ্যুতি ছড়ায় আপন গৌরবে, তখন মন স্বভাবতই পুলকিত হয়। যেদিন থেকে নির্বাচনের রাজনীতি শুরু এই দেশে, সে স্বৈরাচারের অধীনেই হোক কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, আমরা শুনে আসছি যে, পেশিশক্তি এবং অর্থ_ এই দুই অপশক্তির প্রয়োগ ছাড়া নির্বাচনে জয়লাভ কোনোমতেই সম্ভব নয়। এই কথাটি প্রচলিত আছে আমাদের দেশে সর্বস্তরে। সেই পল্লী পর্যায়ে ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচন থেকে শুরু করে পৌরসভা হয়ে জাতীয় পর্যায়ে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এই ভয়াবহ অপরাধ থেকে নিস্তার নেই আমাদের সমাজের। গ্রামে-গঞ্জে তো সবসময় বলতে শোনা যায় যে, প্রার্থী যত উপযুক্তই হোক না কেন, তার অর্থবল নেই, তার পক্ষে কোনো দুর্বৃত্ত নেই, অতএব সে বৈতরণী পার হতে পারবে না। এই বিষয়টি সর্বজনবিদিত। অথচ আমরা জানি সাধারণ মানুষ যখন একতাবদ্ধ হয় যে কোনো বিষয়ে, তখন কোনো কিছুই আর অসম্ভব থাকে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বলেছিলাম তেল চক্চকে মাথার সমৃদ্ধিশালী অতি ক্ষমতাবান কিছু মানুষ আমাদের গণমানুষকে কখনোই সঠিক পথে চলতে দেবে না। তারা জনগণকে বিভক্ত করে তাদের সম্পূূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দেবে। কেননা, আলোর পথে চলতে তারা আতঙ্কিত হয়। নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে যে শত প্রলোভন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন সত্ত্বেও যদি সাধারণ মানুষ একযোগে কারও পেছনে দাঁড়ায়, তাহলে জয় তার জন্য সুনিশ্চিত এবং সাধারণ মানুষ দাঁড়ায় তাদেরই পক্ষে, যারা সত্যিকার অর্থে সৎ এবং গণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। এক কথায় যারা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ ছেড়ে আলোর পথকেই জীবনের মোক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের ফল দেশবাসী সবাইকে আশান্বিত করেছে। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। আমরা সবাই ভাবতে শুরু করেছি যে, এবার বোধহয় সত্যের পথে যাত্রা আমাদের সত্যিই শুরু হলো। আনমনে ভাবছি এসব কথা। আর সকালের এই আলোর ছটায় মনটা ক্রমেই উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। হঠাৎ করেই যেন ঈশান কোণে কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো এক শঙ্কার উপস্থিতি টের পাই আমার অন্তরে। মনে পড়ে যায় যে, অতি জনপ্রিয় এক জনপ্রতিনিধি সম্প্রতি নিহত হয়েছেন নরসিংদী শহরে। তার নাম লোকমান হোসেন। সেখানেও রুদ্র রোষে ফেটে পড়েছে জনতা। কিন্তু তাতে তো আর প্রাণ ফিরে পাবে না এমন আত্মত্যাগী এক নেতা? ঠিক তখনি হঠাৎ করে মনে পড়ে, সৎ, নিঃস্বার্থ, নির্বিবাদী হলেই কি এই নিয়তি হয় মানুষের? তাহলে তাদের নিরাপদ রাখব আমরা কীভাবে? এই নিরাপত্তা একমাত্র দিতে পারে গণমানুষ। তাদেরই ঘিরে রাখতে হবে তাদের প্রিয় নেতাকে সর্বক্ষণ।
আজ সকালে এই ধরনের ভালো-মন্দ, আনন্দ-শঙ্কায় যখন মন ভারী হয়ে আসছে, তখন রৌদ্রস্নাত আমার জানালার আলসেতে ছোট ছোট ফুল গাছগুলোর ওপর অবলীলায় খেলে চলেছে চড়ূইয়ের দল। কোনো চিন্তাই নেই তাদের। আমি ওদের ভোগ হিসেবে আরও কিছু চাল ছড়িয়ে দিই। ওদের কলকাকলিতে আমার মনটা আবার শঙ্কামুক্ত হয়ে এক সুখী ভবিষ্যতের আশার আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
আলী যাকের :সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
নিঃশ্বাস ফেলেছে
আজকাল খুব সকালে আমার ঘুম ভেঙে যায়। মাঝে মধ্যে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করি, ঘুম আসে না। তখন বিছানা ছাড়তেই হয়। গিয়ে বসি আমার পড়ার টেবিলে। আমার সামনেই বিশাল খোলা জানালা। দেখি আকাশ, বাড়িঘর এবং কিছু দূরে দিগন্তের বনরেখা। আজ সকালে ভোর সাড়ে ৫টায় আমার পড়ার টেবিলে গিয়ে বসলাম। আমার জানালার আলসেতে টবের মধ্যে ছোট ছোট অনেক গাছ আছে। নানারকম ফুলের গাছ। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় অপরাজিতা। প্রায় সারা বছরই নীল ফুলে ভরে থাকে এই ছোট্ট লতানো গাছটি। অপরাজিতা, অপরাজিত, অপরাজিতা। এই কথাগুলো নিজেকেই নিজে যেন বলি বারবার। বলি এই কারণে যে, কৈশোর এবং যৌবনের সন্ধিক্ষণে প্রায় সব আপনজনকে হারিয়ে অনাথ হয়ে গেলেও কেবল পরাজিত হবো না, এই মনোবৃত্তি আমায় আমার মতো করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে অপরাজিতা প্রসঙ্গে আসছি পরে।
আজ সকালে জানালার ধারে গিয়ে বসে যখন নানারকম চিন্তা, কিছু সংলগ্ন, কিছু অসংলগ্ন আমার মাথায় ভিড় করে আসছে, তখন হঠাৎ আমার প্রিয় চড়ূই পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দে ধ্যান ভঙ্গ হয়। ওরা রোজ সকালে এসে আমার জানালার আলসেতে বসে আমার সঙ্গে নানা কথা বলে। আমি যেন ওদের কিছু কিছু কথা বুঝতেও পারি। জানি, ওরা আমার কাছে কিছু খেতে চায়। আমার পড়ার টেবিলেই একটি ছোট বাটিতে কিছু চাল রাখা থাকে, আমি সেই চাল আলসের ওপরে ছড়িয়ে দিলে ওদের আনন্দ দেখে কে? ওরা হাসে, নাচে, একে অন্যের সঙ্গে খুনসুটি করে, ঝগড়া করে। আমি পাখিদের জীবনের সঙ্গে আমাদের জীবনের সাদৃশ্য খুঁজে পাই। ঠিক ওদেরই মতো কত অল্পতেই না পরিতৃপ্ত আমাদের সাধারণ মানুষ! অথচ ওদের জন্য এই অল্পের আয়োজনে আমাদের কেন এত অনীহা? সাধারণ মানুষ এই অল্পে সন্তুষ্ট বলেই আমরা করে খাচ্ছি। আমাদের যারা সমাজের, প্রশাসনের কিংবা রাজনীতির শীর্ষে আছে তারা নগরবাসী কতিপয় ঐশ্বর্যবান মানুষ বেছে নিয়ে তাদের তেলা মাথায় তেল দিতে এত আগ্রহী; কারণ ওইসব মাথা থেকে অতিরিক্ত ছিটেফোঁটা তেলও যদি সাধারণ মানুষের মাঝে পড়ে, তাহলেই তো সাধারণ জনগণ ক্ষমতাসীনের পক্ষে এসে যায়? তবে আর প্রয়োজন কী জনে জনে জনতার খোঁজ রাখার? কিছু মানুষকে বেছে নিয়ে তাদের প্রয়োজনের অধিক উপকরণে সমৃদ্ধ করে তোল, তারপর তারাই সব মানুষকে তোমার জন্য সুনিয়ন্ত্রিত রাখবে। এসব প্রায় অসংলগ্ন কথা চিন্তা করতে করতে আমার দৃষ্টি আবার গিয়ে পড়ে সেই অসাধারণ সুন্দর অপরাজিতা ফুলের দিকে। ভোরের সূর্য তখন পূর্ব দিগন্তে সম্পূর্ণ উদিত। আমি আবারও মনে মনে উচ্চারণ করি অপরাজিতা! অপরাজিতা!!
হঠাৎ করেই এই নৈসর্গিক প্রত্যুষের যে বিমূর্তবোধ, সেখান থেকে মন ধেয়ে যায় অতি নিকট অতীতের দিকে। মনে ভেসে আসে মূর্ত এক প্রতিযোগিতার কথা। মনে আসে অপরাজিতা আইভীর নাম। কী পরম সাহসে অপ্রতুল অর্থ নিয়ে, অস্ত্রকে নিরস্ত্র বানিয়ে, কেবল গণমানুষের সমর্থনপুষ্ট হয়ে মাথা উঁচু করে অভীষ্ট বিজয়ের লক্ষ্যে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে গিয়েছেন এই নারী_ সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ আরেক অপরাজিতা ফুল। ভোরের স্বর্গীয় আলোয় উদ্ভাসিত যার নৈসর্গিক নীল। বড় কষ্ট হয় যখন দেখি যে, আমার পরম ভালোবাসার ধন, আমার এই জন্মভূমি ক্লেদাক্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেই সত্তর দশকের মধ্যভাগ থেকেই। তারপর ক্রমেই আমরা যেন ডুবে যাচ্ছি পূতিগন্ধময় এক অন্ধকার জলাধারের অতলে। বীতশ্রদ্ধ হয়ে যাই আমার দেশের এই ক্রমাবনতি দেখে। এরই মাঝে যখন দু'একটি ফুল ফোটে, দ্যুতি ছড়ায় আপন গৌরবে, তখন মন স্বভাবতই পুলকিত হয়। যেদিন থেকে নির্বাচনের রাজনীতি শুরু এই দেশে, সে স্বৈরাচারের অধীনেই হোক কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, আমরা শুনে আসছি যে, পেশিশক্তি এবং অর্থ_ এই দুই অপশক্তির প্রয়োগ ছাড়া নির্বাচনে জয়লাভ কোনোমতেই সম্ভব নয়। এই কথাটি প্রচলিত আছে আমাদের দেশে সর্বস্তরে। সেই পল্লী পর্যায়ে ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচন থেকে শুরু করে পৌরসভা হয়ে জাতীয় পর্যায়ে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এই ভয়াবহ অপরাধ থেকে নিস্তার নেই আমাদের সমাজের। গ্রামে-গঞ্জে তো সবসময় বলতে শোনা যায় যে, প্রার্থী যত উপযুক্তই হোক না কেন, তার অর্থবল নেই, তার পক্ষে কোনো দুর্বৃত্ত নেই, অতএব সে বৈতরণী পার হতে পারবে না। এই বিষয়টি সর্বজনবিদিত। অথচ আমরা জানি সাধারণ মানুষ যখন একতাবদ্ধ হয় যে কোনো বিষয়ে, তখন কোনো কিছুই আর অসম্ভব থাকে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বলেছিলাম তেল চক্চকে মাথার সমৃদ্ধিশালী অতি ক্ষমতাবান কিছু মানুষ আমাদের গণমানুষকে কখনোই সঠিক পথে চলতে দেবে না। তারা জনগণকে বিভক্ত করে তাদের সম্পূূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দেবে। কেননা, আলোর পথে চলতে তারা আতঙ্কিত হয়। নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে যে শত প্রলোভন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন সত্ত্বেও যদি সাধারণ মানুষ একযোগে কারও পেছনে দাঁড়ায়, তাহলে জয় তার জন্য সুনিশ্চিত এবং সাধারণ মানুষ দাঁড়ায় তাদেরই পক্ষে, যারা সত্যিকার অর্থে সৎ এবং গণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। এক কথায় যারা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ ছেড়ে আলোর পথকেই জীবনের মোক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের ফল দেশবাসী সবাইকে আশান্বিত করেছে। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। আমরা সবাই ভাবতে শুরু করেছি যে, এবার বোধহয় সত্যের পথে যাত্রা আমাদের সত্যিই শুরু হলো। আনমনে ভাবছি এসব কথা। আর সকালের এই আলোর ছটায় মনটা ক্রমেই উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। হঠাৎ করেই যেন ঈশান কোণে কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো এক শঙ্কার উপস্থিতি টের পাই আমার অন্তরে। মনে পড়ে যায় যে, অতি জনপ্রিয় এক জনপ্রতিনিধি সম্প্রতি নিহত হয়েছেন নরসিংদী শহরে। তার নাম লোকমান হোসেন। সেখানেও রুদ্র রোষে ফেটে পড়েছে জনতা। কিন্তু তাতে তো আর প্রাণ ফিরে পাবে না এমন আত্মত্যাগী এক নেতা? ঠিক তখনি হঠাৎ করে মনে পড়ে, সৎ, নিঃস্বার্থ, নির্বিবাদী হলেই কি এই নিয়তি হয় মানুষের? তাহলে তাদের নিরাপদ রাখব আমরা কীভাবে? এই নিরাপত্তা একমাত্র দিতে পারে গণমানুষ। তাদেরই ঘিরে রাখতে হবে তাদের প্রিয় নেতাকে সর্বক্ষণ।
আজ সকালে এই ধরনের ভালো-মন্দ, আনন্দ-শঙ্কায় যখন মন ভারী হয়ে আসছে, তখন রৌদ্রস্নাত আমার জানালার আলসেতে ছোট ছোট ফুল গাছগুলোর ওপর অবলীলায় খেলে চলেছে চড়ূইয়ের দল। কোনো চিন্তাই নেই তাদের। আমি ওদের ভোগ হিসেবে আরও কিছু চাল ছড়িয়ে দিই। ওদের কলকাকলিতে আমার মনটা আবার শঙ্কামুক্ত হয়ে এক সুখী ভবিষ্যতের আশার আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
আলী যাকের :সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
No comments