বেপরোয়া মোটরসাইকেল
ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট, পরিবহন সংকট মোকাবেলা, স্বল্প খরচ এবং দ্রুত চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেখতে সুন্দর ও ফ্যাশনেবল হওয়ায় অনেক সময় এটি হয়ে উঠছে অবস্থাপন্ন বহু তরুণের প্রতিদিনের ফ্যাশনের অংশ। গ্রামাঞ্চলেও যাত্রী পরিবহনের জন্য ভাড়ায় চলছে মোটরসাইকেল। তবে আশঙ্কার কথা হলো, মোটরসাইকেলের ব্যবহার দিন দিন যত বাড়ছে, দুর্ঘটনাও তত বাড়ছে।
প্রায় প্রতিদিনই এ সংক্রান্ত দুর্ঘটনার খবর থাকছে পত্রিকার পাতায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা তৃতীয় অবস্থানে আছে।
মোটরসাইকেল বিক্রয়কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি মাসে প্রায় ৯০ হাজার নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হচ্ছে। এদের একটি বড় অংশ গ্রামের রাস্তা দিয়ে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে। মোটরসাইকেল চালকরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে বহু গুণ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, 'মূলত মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ফোর-হুইলার গাড়ি থেকে ৬৩ শতাংশ বেশি। কারণ টু-হুইলার যান হওয়ায় এর ভারসাম্য রাখা কষ্টসাধ্য। মোটরসাইকেলকে যেদিক থেকে ধাক্কা দেওয়া হয় এটি সেদিকেই হেলে পড়ে। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বেশি। এ ছাড়া, মোটরসাইকেলের চালক হচ্ছে তরুণ। এরা গতিকে একটি থ্রিল হিসেবে নিচ্ছে। তখন বেপরোয়া গতিতে স্কিড করে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।'
এ ছাড়া ড. শামসুল হক রাস্তা এবং চালকদের আইন না মানার প্রবণতাকেও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেন। দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সামাজিক ক্ষতিটাই বেশি হচ্ছে। মোটরসাইকেলের চালক তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যে ছেলেটি দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে বা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে তার ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হবে পুরো দেশকে।' দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের উপায় যেন কারও জানা নেই। ভুয়া লাইসেন্স বা লাইসেন্সবিহীন চলছে বহু মোটরসাইকেল। মানুষের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না এর ব্যবহার। ড. শামসুল হক আরও বলেন, 'মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। তবে সচেতনতা সৃষ্টি করে কিংবা কিছু আইন প্রণয়ন করে এর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমানো যেতে পারে। হেলেমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেননা, মাথার শতকরা ৬০ ভাগ ইনজুরি কমিয়ে দেয় হেলমেট । ট্রাফিক আইন কড়াকড়ি করতে হবে। অভিভাবকদের বোঝাতে হবে মোটরসাইকেলের ঝুঁকি সম্পর্কে।'
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেরই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় [ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস প্রভৃতি] মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা চরম মাত্রায় পেঁৗছে গেছে। এসব দেশে মোটরসাইকেল একটি আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাই তরুণরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে বেশিরভাগ এবং দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে। এসব দেশের সরকার মোটরসাইকেলকে ডেঙ্গুর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাধি হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে। গঠিত হয়েছে জাতিসংঘ মোটর ভেহিকেল ইনজুরি প্রিভেনশন কমিটি। দেখা যায়, নেপালে মোটরসাইকেল ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তবে ব্যাংককে প্রতিদিন প্রায় ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটে।
উৎসবের সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদের ছুটিতে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ৫ থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন প্রায় সাড়ে ৪শ' রোগী। এদের প্রায় ১৪০ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোয় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।
হাইওয়েতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে গাজীপুর হাইওয়ে থানার সিনিয়র এএসপি আশফিকুর জামান আখতার বলেন, এরা অনেক বেশি বেপরোয়াভাবে চলে। তার মতে, দ্বিচক্রযান যেগুলো আছে সেগুলো লেন দিয়ে চলা উচিত। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকরা তা মানেন না। এ কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। যে ধরনের গতিতে হাইওয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল চলা উচিত, সে গতিতে চলে না। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশে গতি চেকের কোনো ব্যবস্থাও নেই। এ ধরনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে যে পরিমাণ লজিস্টিক সাপোর্ট থাকা প্রয়োজন তাও নেই। তার ভাষায়, হাইওয়েতে দ্বিচক্রযান নিষিদ্ধ করা উচিত। অথবা এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়েতে পাঁচটা লেন করা প্রয়োজন, যার মধ্যে একটা লেন দিয়ে শুধু মোটরসাইকেলের মতো যানই চলাচল করবে।
ষ ইমরান ইমন
মোটরসাইকেল বিক্রয়কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি মাসে প্রায় ৯০ হাজার নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হচ্ছে। এদের একটি বড় অংশ গ্রামের রাস্তা দিয়ে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে। মোটরসাইকেল চালকরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে বহু গুণ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, 'মূলত মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ফোর-হুইলার গাড়ি থেকে ৬৩ শতাংশ বেশি। কারণ টু-হুইলার যান হওয়ায় এর ভারসাম্য রাখা কষ্টসাধ্য। মোটরসাইকেলকে যেদিক থেকে ধাক্কা দেওয়া হয় এটি সেদিকেই হেলে পড়ে। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বেশি। এ ছাড়া, মোটরসাইকেলের চালক হচ্ছে তরুণ। এরা গতিকে একটি থ্রিল হিসেবে নিচ্ছে। তখন বেপরোয়া গতিতে স্কিড করে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।'
এ ছাড়া ড. শামসুল হক রাস্তা এবং চালকদের আইন না মানার প্রবণতাকেও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেন। দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সামাজিক ক্ষতিটাই বেশি হচ্ছে। মোটরসাইকেলের চালক তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যে ছেলেটি দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে বা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে তার ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হবে পুরো দেশকে।' দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের উপায় যেন কারও জানা নেই। ভুয়া লাইসেন্স বা লাইসেন্সবিহীন চলছে বহু মোটরসাইকেল। মানুষের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না এর ব্যবহার। ড. শামসুল হক আরও বলেন, 'মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। তবে সচেতনতা সৃষ্টি করে কিংবা কিছু আইন প্রণয়ন করে এর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমানো যেতে পারে। হেলেমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেননা, মাথার শতকরা ৬০ ভাগ ইনজুরি কমিয়ে দেয় হেলমেট । ট্রাফিক আইন কড়াকড়ি করতে হবে। অভিভাবকদের বোঝাতে হবে মোটরসাইকেলের ঝুঁকি সম্পর্কে।'
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেরই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় [ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস প্রভৃতি] মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা চরম মাত্রায় পেঁৗছে গেছে। এসব দেশে মোটরসাইকেল একটি আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাই তরুণরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে বেশিরভাগ এবং দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে। এসব দেশের সরকার মোটরসাইকেলকে ডেঙ্গুর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাধি হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে। গঠিত হয়েছে জাতিসংঘ মোটর ভেহিকেল ইনজুরি প্রিভেনশন কমিটি। দেখা যায়, নেপালে মোটরসাইকেল ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তবে ব্যাংককে প্রতিদিন প্রায় ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটে।
উৎসবের সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদের ছুটিতে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ৫ থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন প্রায় সাড়ে ৪শ' রোগী। এদের প্রায় ১৪০ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোয় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।
হাইওয়েতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে গাজীপুর হাইওয়ে থানার সিনিয়র এএসপি আশফিকুর জামান আখতার বলেন, এরা অনেক বেশি বেপরোয়াভাবে চলে। তার মতে, দ্বিচক্রযান যেগুলো আছে সেগুলো লেন দিয়ে চলা উচিত। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকরা তা মানেন না। এ কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। যে ধরনের গতিতে হাইওয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল চলা উচিত, সে গতিতে চলে না। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশে গতি চেকের কোনো ব্যবস্থাও নেই। এ ধরনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে যে পরিমাণ লজিস্টিক সাপোর্ট থাকা প্রয়োজন তাও নেই। তার ভাষায়, হাইওয়েতে দ্বিচক্রযান নিষিদ্ধ করা উচিত। অথবা এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়েতে পাঁচটা লেন করা প্রয়োজন, যার মধ্যে একটা লেন দিয়ে শুধু মোটরসাইকেলের মতো যানই চলাচল করবে।
ষ ইমরান ইমন
No comments