নাব্যতা সংকট-নৌপথ পুনরুদ্ধার জরুরি
নাব্যতা সংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে আসা সারবোঝাই কার্গোগুলো মাঝে মধ্যেই মানিকগঞ্জের মোল্লার চর এলাকায় যমুনা নদীতে আটকে যাচ্ছে_ সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত খবরটি উদ্বেগজনক হলেও নতুন নয়। বস্তুত প্রতি বছর শুকনো মৌসুমের শুরুতেই উত্তরবঙ্গের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটটিতে ডিজেল বা সারবাহী জাহাজ আটকে থাকার খবর পাওয়া যায়।
পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য পানির ১০-১২ ফুট গভীরতা প্রয়োজন হলেও এ সময় তা ৬-৮ ফুটে নেমে আসে। ফলে যমুনার চ্যানেল ড্রেজিং করে জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী ঘাটে ভেড়াতে হয়। কিন্তু ততদিনে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সার ও ডিজেলের সংকট বার্ষিক রাউন্ড সমাপ্ত করে। আমাদের প্রশ্ন, প্রতি বছরই যে নদীতে শুকনো মৌসুমে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেখানে ড্রেজিংয়ের আয়োজন সময় থাকতে করলে ক্ষতি কি? সার ও ডিজেলের মতো স্পর্শকাতর পণ্যের সরবরাহ লাইনে এমন বার্ষিক বিঘ্ন নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। কিন্তু তার চেয়েও উদ্বেগজনক হচ্ছে, খোদ নদীর নাব্যতা সংকট। মোল্লার চরের কাছে তিনটি সারবোঝাই কার্গো আটকে থাকার খবরের আগের দিনই সমকালে প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, নাব্যতা সংকটের কারণে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি নৌপথ। ডুবোচরের কারণে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটসহ ছোট-বড় আরও অর্ধশত রুট। আমরা মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব নৌপথ পুনরুদ্ধারের দিকে নজর দেওয়া উচিত। আমরা জানি, সরকার ইতিমধ্যে নৌপথ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করেছে; কিন্তু তা বাস্তবায়নের গতি দেখে আশাবাদী হওয়া কঠিন। সরকারের উচিত হবে, বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। প্রকৃতি প্রদত্ত, পরিবেশবান্ধব ও আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী পরিবহন পথের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ইতিমধ্যে যে ক্ষতি আমরা করে ফেলেছি, তা আর বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না। ইতিমধ্যে যথেষ্ট বিলম্ব হলেও সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে আমাদের দেশে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীগুলো ফের সত্যিকার অর্থেই স্রোতস্বিনী হয়ে উঠতে পারে।
No comments