পার্থক্যটা অনেক বেশি

র যাই হোক, অতিথির সঙ্গে এমনটা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। ব্যাগের মধ্যে ডায়মন্ডের নাকের নথ এনে পুরস্কার মঞ্চে ডেকে ডেকে বাংলাদেশি মেয়েদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আর পাশে দাঁড়িয়ে জয়ী দলের মেয়েরা তা হা করে দেখছেন। প্রথমে লংকান মেয়েরাও ভেবেছিলেন, তাদেরও দেওয়া হবে, কিন্তু একটু পরই জানানো হলো বাংলাদেশ মহিলা দলের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান থেকে একটি করে নথ দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু তাই বলে লংকানদের পুরস্কার


মঞ্চে দাঁড়িয়ে রেখে কেন? উত্তর দিতে পারেনি কেউ। উত্তর দিয়েছিলেন লংকান ক্রিকেটাররাই। মঞ্চ থেকে বেরিয়েই তারা সালমাদের বুকে জড়িয়ে ধরে মাঠের দর্শকদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করেছিলেন। বন্ধুর মতো বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের কাঁধে হাত রেখে ছবিও তুলেছিলেন। ডায়মন্ডের নথ না হোক, তারা এ দিন এর চেয়েও মহামূল্যবান পুরস্কার পেয়েছেন মিরপুর থেকে। বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ২০১৩ বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে গেছেন তারা। এর চেয়ে খুশি, এর চেয়ে দামি আর কিই-বা হতে পারে। 'আমরা বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলাম। সেটা পূরণ হয়েছে আমাদের। বাংলাদেশের জন্যও শুভেচ্ছা রইল। ' ইংরেজিটা ভালো বলতে পারেন না, তাই লংকান অধিনায়ক ডিলানির সিংহলি ভাষার শুভেচ্ছাটা অনুবাদ করে জানিয়ে দিয়েছিলেন লংকান দলের মিডিয়া ম্যানেজার।
লংকানদের চোখে যেমন বিশ্বকাপের স্বপ্ন ছিল, সালমাদের চোখে তেমনি ওয়ানডে স্ট্যাটাসের স্বপ্নটা পড়ে নেওয়া যাচ্ছে। আর তাই আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা গতকাল শ্রীলংকার কাছে ৬ উইকেটে হেরেও খুব আশাভঙ্গের কিছু দেখছেন না অধিনায়ক সালমা খাতুন। 'ওরা (শ্রীলংকা) আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। অনেক বছর ধরে ওরা ক্রিকেট খেলছে। অভিজ্ঞতায় ওদের থেকে আমাদের পার্থক্যটা ব্যাপক। তাছাড়া ব্যাটিং, বোলিং এমনকি ফিল্ডিংয়েও পার্থক্যটা বেশি। সে কারণেই ম্যাচটি আমরা হেরে গেছি। তবে এ ম্যাচ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেও নিয়েছি।' প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে ম্যাচটিকে শিক্ষণীয় হিসেবেই বেশি করে ধরে নিয়েছেন সালমা। সবাই মিলে টাই-টাই ১০০ রান করার পর সালমার হতাশাটা আটকে ছিল ওই ব্যাটিং নিয়েই। নিজে একা ৭৬ বলে ৩২ রান করেছেন; কিন্তু বাকিদের মধ্যে কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। 'ওদের বোলিংটা ভালো। তবে এত ভালো নয় যে, আমরা একেবারে ব্যাটিংই করতে পারব না। আসলে আমাদের টপ অর্ডারে রান আসছে না। কেন আসছে না, সেটার উত্তর আমারও জানা নেই।' ঠিক যে চেয়ারটিতে বসে এদিন সালমা ম্যাচ-পরবর্তী এ কথাগুলো বলেছেন, সেখানে বসেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সময়ও একবার একই কথা বলেছিলেন মুশফিকুর রহিমও।
চার বছর বয়সী এ দলটিতে একগাদা কাঁচা ছাত্রী ঢুকে পড়েছে। যাদের কাছ থেকে বড় স্কোর আশা করাটাই ভুল। ক্রিকেটের কোনো ব্যাকরণ মেনে তারা ব্যাট চালাতে পারেন না। এই কাঁচা ছাত্রীদের নামগুলো না বললেও ক্লাসের ভালো ছাত্রীদের নাম জানিয়ে নিজের হতাশার কথা বলেছেন কোচ মমতা মাবেনও। 'আমি আগেও বলেছি, আমাদের হাতে হাফ সেঞ্চুরি করা, বড় পার্টনারশিপ করার মতো চার-পাঁচজন্য ব্যাটসম্যান নেই। যেদিন সালমা আর শুকতারা ভালো করবে সেদিনই বড় স্কোর হবে।' দলের এই দু'ব্যাটসম্যানের ওপর ভরসা করে আর যাই হোক শ্রীলংকাকে হারানো যায় না। গোটা টুর্নামেন্টকেই তিনি শিক্ষণীয় বলে কালকের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভালো করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। 'দলের সবাই জানে, যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে পারলে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাব আমরা। সে জন্য দলের প্রত্যেকেই সেরাটা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। আশা করি, ম্যাচটি আমরা জিততে পারব।' জড়িয়ে যাওয়া কথা নয়, চিবুক শক্ত করেই এ আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন সালমা। কেননা তিনি বিশ্বাস করেন, নিজেদের যে ক্ষমতা তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলংকা নয়, যুক্তরাষ্ট্রকে হারানো সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.