সান্ত্বনা শুধু সালমা আর নাকফুল by কামরুল হাসান

ধরা স্বপ্নটা সত্যি হলো না।আপাতত কফিনবন্দি হয়ে যাওয়া সেই স্বপ্ন চাপা দিয়ে রাখতে হবে আরো অনেক দিন। তারপর আরো একটা বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব আসবে। আমাদের সালমা-শুকতারা-খাদিজারা আটঘাট বেঁধে নামবেন। আমরা স্বপ্ন কফিনের ডালা খুলব...।সে অনেক দূরের কথা যদিও। দূরের আশা। কিন্তু সাকিব-মুশফিক আর তামিমদের মতো সালমা-খাদিজাদেরও বিশ্বকাপে দেখতে হলে সম্বল সেই ধন্য আশা কুহকিনী!


কারণ স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখার আগে শেষ বাধা ছিল যেটা, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই প্লে-অফ ম্যাচটা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। লঙ্কানদের ৬ উইকেটের জয়টা এসেছে খুব সহজেই। প্রথমে বাংলাদেশকে ১০০ রানে অল আউট করে দিয়ে তারা লক্ষ্যটা পেরিয়ে গেছে মাত্র ২৬.৩ ওভারে। নিজেদের বিশ্বকাপ খেলা আর ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত করে তারা বাংলাদেশের জন্য রেখেছে শুধু ওয়ানডে স্ট্যাটাসের আশা। সে জন্য অবশ্য আগামীকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্লে-অফ ম্যাচটা জিততে হবে বাংলাদেশকে।
জেতার স্বপ্নটা হয়তো একটু বাড়াবাড়িই ছিল। বিশেষ করে দলীয় শক্তি, অভিজ্ঞতা আর এ আসরে এখন পর্যন্ত পারফরম্যান্স সব কিছুতেই শ্রীলঙ্কানরা অনেক এগিয়ে এটা মানতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু সেই বাড়াবাড়ি স্বপ্নটাও দেখতে সাহস জুগিয়েছেন আমাদের সালমারাই। এ ম্যাচের আগে গত দেড় মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। যদিও সেগুলোর কোনোটাতেই জেতা যায়নি, কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার কিছু একটা করে ফেলা যাবে এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ বাংলাদেশের কোচ মমতা মাবেনও। মাঠে দেখা গেল অন্য ছবি।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার ৫ ওভারের মধ্যে ২ উইকেট নেই! ওপেনার আয়েশা আখতার আর তিন নম্বরে নামা ফারজানা হক পিংকি দুজনেই উইকেট দিলেন লঙ্কান পেসার উদেশিকা প্রাবোধানিকে। স্কোর বোর্ডে তখন মাত্র ৪ রান। গত কয়েক ম্যাচে বোঝা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং অনেকটাই সালমা-শুকতারানির্ভর। তাঁরা যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ আশা আছে_এই ভরসায় যাঁরা বসে ছিলেন তাঁদের হতাশ করে দিয়ে দলের ১৩ রানের সময় শুকতারাও প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন রান আউট হয়ে। তার কিছুক্ষণ পর লতা মন্ডলও (১১)। অধিনায়ক সালমা চেষ্টা করছিলেন এক প্রান্ত ধরে রাখার। কিন্তু ওপাশ থেকে উইকেটের পতন দেখতে দেখতেই হয়তো একসময় তিনিও মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। সুয়িনি দে আলউইসের বলে ক্যাচ তুলে দেন শেরিনা রবিকুমারের হাতে। ৭৬ বলে খেলা তাঁর ৩২ রানের ইনিংসে ৪টি চারও ছিল! সালমা আউট হয়ে যাওয়ার পর দুই অঙ্কে পেঁৗছতে পেরেছেন কেবল রোমানা আহমেদ (১৭) আর পান্না ঘোষ (১২)। পুরো ৫০ ওভারও তাই খেলা হয়নি, অল আউট হয়ে যেতে হয়েছে ৪৭ ওভারেই, ঝুলিতে মাত্র ১০০ রানের সম্বল নিয়ে!
স্কোর বোর্ডে কোনো রান জমা করার আগেই প্রথম উইকেটটা হারাতে পারত শ্রীলঙ্কা। কিন্তু জাহানারা আলমের বলে দেওয়া যশোদা মেন্ডিসের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ইয়াসমিন বৈশাখি। মেন্ডিস বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, কিছুক্ষণ পরেই মাত্র ৮ রান করে ফিরে যান সালমা খাতুনের বলে শুকতারার হাতে ক্যাচ দিয়ে। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার সালমা বল হাতেও বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে সফল। তাঁর ২ উইকেটের পরেরটা ওপেনার ইনোকা গালাগেন্দ্রার (১৯)। ৩৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে অল্প একটু যে চাপের মুখে পড়েছিল লঙ্কানরা সেটা দূর করে দেন জায়ানগানি আর ডোলাওয়াত্তে তৃতীয় উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়ে। তারপর শুকতারার বলে পান্নার হাতে ক্যাচ দিয়ে ডোলাওয়াত্তে (২২) ফিরে যান, জায়ানগানিকেও (২৬) ফেরান আসরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল বাংলাদেশি বোলার খাদিজাতুল কুবরা। কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই শ্রীলঙ্কার জয়ের পথে চোখরাঙানি হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ২৬.৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্য ছুঁয়েছে তারা। কিছু না পাওয়ার দিনে একমাত্র সান্ত্বনা হয়তো ব্যাট ও বল হাতে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য সালমার ম্যাচসেরার পুরস্কার। কিংবা কে জানে, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের সৌজন্যে বাংলাদেশ দলের সবাইকে উপহার হিসেবে দেওয়া নাকফুলগুলোও! ম্যাচ হারার পরেও উপহার পেয়ে তাঁদের খুব খুশি দেখাচ্ছিল কিনা!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৭ ওভারে ১০০/১০ (সালমা ৩২, রোমানা ১৭, পান্না ১২; প্রাবোধানি ২/১৪, শশীকলা ২/২৩, আলউইস ২/২৭)
শ্রীলঙ্কা : ২৬.৩ ওভারে ১০১/৪ (জায়ানগানি ২৬, ডোলাওয়াত্তে ২২; সালমা ২/২৬)
ফল : শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সালমা খাতুন

No comments

Powered by Blogger.