ঢাকা-কাবুল রেল যোগাযোগের স্বপ্ন দেখি-সাক্ষাৎকার by ড. শাম এল বাথিজা
সাক্ষাৎকার গ্রহণ :অজয় দাশগুপ্তসমকাল : রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ মানবিক গল্পের সারিতে স্থান পেয়েছে। আপনি এখন কাবুলের বাসিন্দা এবং সে অর্থে কাবুলি। কিন্তু কাবুলিওয়ালা গল্পের রহমানের সঙ্গে একেবারেই মিল নেই যে...।বাথিজা : [রহমানের মতোই অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে]... সময় যে বদলে গেছে অনেক। এখন বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম গর্বিত দেশ।
একাত্তরে আপনাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কাবুল ছিল একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র। সে সময় পাকিস্তান থেকে পালিয়ে অনেকে চলে যেতেন আফগান রাজধানীতে এবং তারপর বিমান পথে ভারত হয়ে চলে আসতেন প্রিয় স্বদেশে। তাদের কেউ কেউ মুক্তিবাহিনীতেও যোগ দিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বরের পরেও অনেকে পাকিস্তান থেকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে কাবুল পেঁৗছেছেন। আমরা সাধ্যমতো তাদের সহায়তা দিয়েছি। আফগানিস্তান এখন সার্কের সদস্য। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে আমাদের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
সমকাল : পাকিস্তানের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চাই।
বাথিজা : দুই দেশের রয়েছে অভিন্ন দীর্ঘ সীমান্ত। দুটি দেশই উন্নয়নশীল। ধর্মের বন্ধনও গুরুত্বপূর্ণ। লাখ লাখ আফগান উদ্বাস্তুকে পাকিস্তান আশ্রয় দিয়েছে। নিজেরা কষ্ট স্বীকার করে সাহায্য দিয়েছে। এদের একটি অংশ এখনও পাকিস্তানে রয়ে গেছে। দুই দেশের বন্ধুত্ব বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংঘাতের পরিবর্তে শান্তির এলাকা গঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ আমাদের অভিন্ন শত্রু এবং তাদের দমনেও হাত মেলাতে হবে।
সমকাল : আফগানিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
বাথিজা : অনেক বছর দেশটিতে সংঘাত-হানাহানি চলেছে। এখন বেশিরভাগ এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে। বহির্বিশ্বের সহায়তা বাড়ছে। যুদ্ধের কারণে বিপুলসংখ্যক লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র, এমনকি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এখন তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। সেচ ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। জিডিপিতে কৃষির অবদান ৩০ শতাংশের মতো। আফগানিস্তান খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। খাদ্য রফতানিরও সুযোগ রয়েছে। শ্রমশক্তির প্রায় ৭৭ শতাংশ কৃষির সঙ্গে যুক্ত। আমাদের মাথাপিছু জিডিপি এক হাজার ডলার। বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৯ শতাংশ। তবে এখনও বেকারত্বের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। দারিদ্র্যসীমার নিচেও রয়েছে অনেক নারী-পুরুষ। এ থেকে মুক্ত হওয়াই এ সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন নতুন সড়কপথ নির্মিত হচ্ছে। তবে আধুনিক দেশের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ করতে সময় লাগবে। গ্রামীণ উন্নয়ন বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে। শিল্প খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব স্বীকৃত। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমাদের দেশ বিশ্বাসী। প্রাকৃতিক সম্পদেও আমরা সমৃদ্ধ। এর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তাও অপরিহার্য। অনেক দেশ এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। লোহা ও তামা সম্পদ রয়েছে আফগানিস্তানে। চীনের সহায়তায় রেল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে। অন্য দেশেরও রেলপথ উন্নয়নের বিষয়ে উৎসাহ রয়েছে। আঞ্চলিক কানেকটিভিটি গড়ে উঠলে কাবুল ও ঢাকার মধ্যে পাকিস্তান এবং ভারত হয়ে রেলগাড়ি চলবে। এক সময় এটা স্বপ্নের মতো মনে হতো, কিন্তু এখন মনে হয় এটা বেশি দূরের বিষয় নয়। আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদও অনেক এবং তা প্রক্রিয়াজাত করার কাজে অভিজ্ঞ দেশগুলো অংশ নিতে পারে।
সমকাল : শিক্ষায় কী পরিবর্তন ঘটছে?
বাথিজা : সব ধরনের শিক্ষার প্রসার ঘটছে। বিশেষভাবে বলব নারী শিক্ষার প্রসারের কথা। তারা দলে দলে স্কুলে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে রয়েছে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোতে প্রচুরসংখ্যক ছাত্রীও পড়াশোনা করছে। পার্লামেন্টে এখন ৬৯ জন নারী সদস্য রয়েছেন, যা মোট সদস্যের ৩০ শতাংশ। অনেক উন্নত দেশেও এমন সংখ্যা দেখা যাবে না। পার্লামেন্টে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। স্বাস্থ্য খাতেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা মডেল মনে করি।
সমকাল : কীভাবে, বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন কি?
বাথিজা : ব্র্যাক আফগানিস্তানে ভালো কাজ করছে। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে জনসাধারণের মধ্যে আমরা এ নিয়ে প্রচার চালিয়েছি এবং তারা বুঝতে পারছে যে, বাংলাদেশের এ সংস্থার কর্মীরা তাদের কল্যাণের জন্যই এসেছে। আফগানিস্তানের সমাজ ব্যবস্থা ঠিক বাংলাদেশের মতো নয়। সব মেয়ের কাছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নেওয়া কর্মসূচি তুলে ধরায় কিছু সমস্যা রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে দুই দেশের ধারণায় পার্থক্য রয়েছে। এটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। কাবুলে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা রয়েছে এবং তাদের সেবার মান খুব ভালো।
সমকাল : বাংলাদেশ আর কীভাবে আফগানিস্তানে সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে পারে?
বাথিজা : বাংলাদেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম। আফগানিস্তানেও তাই। গ্রামীণ উন্নয়নে আপনাদের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে চাই। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএস যে ধরনের কাজ করছে, সরকারি ও বেসরকারি খাতকে পরামর্শ দিচ্ছে আমাদেরও সে ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিআইডিএস আমাদের সহায়তা দিতে পারে। বাংলাদেশে আফগান শিক্ষার্থীরা বৃত্তি নিয়ে পড়ছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছি। বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত। বাংলাদেশ তার এ ভাণ্ডার থেকে আমাদেরও বিলাতে পারে।
সমকাল : আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে। অন্য কয়েকটি দেশের সৈন্যও ছিল। বিদেশি সৈন্যরা কতদিন থাকবে?
বাথিজা : তারা আমাদের প্রয়োজনেই এসেছিল। এখন আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেদেরই গড়ে তুলতে হবে। তবে অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা থাকবে। এটা মনে রাখতে হবে, আমরা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি এবং সে জন্য চড়া মূল্য দিয়েছি। এ কারণে অন্য দেশেরও ক্ষতি কম হয়নি। এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। সব দেশকে বন্ধু হিসেবে বসবাস করতে হবে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। উন্নয়নের পথে চলতে হলে এর বিকল্প নেই। আমরা মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য নিউ সিল্ক রুট ইনিশিয়েটিভের প্রস্তাব রেখেছি। শান্তির পরিবেশ থাকলে এটা বাস্তবায়ন হবে দ্রুত।
সমকাল : আফগানিস্তানে মাজার শরিফসহ অনেক ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, যার প্রতি আকর্ষণ বাংলাদেশেও রয়েছে...
বাথিজা : বাংলাদেশের পর্যটকদের আমরা স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আফগানিস্তান দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এর একটি অংশ রুক্ষ। কিন্তু একই সঙ্গে প্রকৃতি উদারও। অনেক দর্শনীয় স্থান ভ্রমণপিপাসুদের কাছে টানবে। তাদের আতিথেয়তায় কোনো ত্রুটি হবে না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাদের প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীকে স্মরণ করব।
সমকাল : সাক্ষাৎকার প্রদানের জন্য ধন্যবাদ।
বাথিজা : সমকালের পাঠক এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জন্য আফগান জনগণের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
সমকাল : পাকিস্তানের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চাই।
বাথিজা : দুই দেশের রয়েছে অভিন্ন দীর্ঘ সীমান্ত। দুটি দেশই উন্নয়নশীল। ধর্মের বন্ধনও গুরুত্বপূর্ণ। লাখ লাখ আফগান উদ্বাস্তুকে পাকিস্তান আশ্রয় দিয়েছে। নিজেরা কষ্ট স্বীকার করে সাহায্য দিয়েছে। এদের একটি অংশ এখনও পাকিস্তানে রয়ে গেছে। দুই দেশের বন্ধুত্ব বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংঘাতের পরিবর্তে শান্তির এলাকা গঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ আমাদের অভিন্ন শত্রু এবং তাদের দমনেও হাত মেলাতে হবে।
সমকাল : আফগানিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
বাথিজা : অনেক বছর দেশটিতে সংঘাত-হানাহানি চলেছে। এখন বেশিরভাগ এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে। বহির্বিশ্বের সহায়তা বাড়ছে। যুদ্ধের কারণে বিপুলসংখ্যক লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র, এমনকি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এখন তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। সেচ ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। জিডিপিতে কৃষির অবদান ৩০ শতাংশের মতো। আফগানিস্তান খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। খাদ্য রফতানিরও সুযোগ রয়েছে। শ্রমশক্তির প্রায় ৭৭ শতাংশ কৃষির সঙ্গে যুক্ত। আমাদের মাথাপিছু জিডিপি এক হাজার ডলার। বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৯ শতাংশ। তবে এখনও বেকারত্বের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। দারিদ্র্যসীমার নিচেও রয়েছে অনেক নারী-পুরুষ। এ থেকে মুক্ত হওয়াই এ সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন নতুন সড়কপথ নির্মিত হচ্ছে। তবে আধুনিক দেশের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ করতে সময় লাগবে। গ্রামীণ উন্নয়ন বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে। শিল্প খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব স্বীকৃত। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমাদের দেশ বিশ্বাসী। প্রাকৃতিক সম্পদেও আমরা সমৃদ্ধ। এর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তাও অপরিহার্য। অনেক দেশ এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। লোহা ও তামা সম্পদ রয়েছে আফগানিস্তানে। চীনের সহায়তায় রেল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে। অন্য দেশেরও রেলপথ উন্নয়নের বিষয়ে উৎসাহ রয়েছে। আঞ্চলিক কানেকটিভিটি গড়ে উঠলে কাবুল ও ঢাকার মধ্যে পাকিস্তান এবং ভারত হয়ে রেলগাড়ি চলবে। এক সময় এটা স্বপ্নের মতো মনে হতো, কিন্তু এখন মনে হয় এটা বেশি দূরের বিষয় নয়। আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদও অনেক এবং তা প্রক্রিয়াজাত করার কাজে অভিজ্ঞ দেশগুলো অংশ নিতে পারে।
সমকাল : শিক্ষায় কী পরিবর্তন ঘটছে?
বাথিজা : সব ধরনের শিক্ষার প্রসার ঘটছে। বিশেষভাবে বলব নারী শিক্ষার প্রসারের কথা। তারা দলে দলে স্কুলে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে রয়েছে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোতে প্রচুরসংখ্যক ছাত্রীও পড়াশোনা করছে। পার্লামেন্টে এখন ৬৯ জন নারী সদস্য রয়েছেন, যা মোট সদস্যের ৩০ শতাংশ। অনেক উন্নত দেশেও এমন সংখ্যা দেখা যাবে না। পার্লামেন্টে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। স্বাস্থ্য খাতেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা মডেল মনে করি।
সমকাল : কীভাবে, বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন কি?
বাথিজা : ব্র্যাক আফগানিস্তানে ভালো কাজ করছে। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে জনসাধারণের মধ্যে আমরা এ নিয়ে প্রচার চালিয়েছি এবং তারা বুঝতে পারছে যে, বাংলাদেশের এ সংস্থার কর্মীরা তাদের কল্যাণের জন্যই এসেছে। আফগানিস্তানের সমাজ ব্যবস্থা ঠিক বাংলাদেশের মতো নয়। সব মেয়ের কাছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নেওয়া কর্মসূচি তুলে ধরায় কিছু সমস্যা রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে দুই দেশের ধারণায় পার্থক্য রয়েছে। এটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। কাবুলে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা রয়েছে এবং তাদের সেবার মান খুব ভালো।
সমকাল : বাংলাদেশ আর কীভাবে আফগানিস্তানে সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে পারে?
বাথিজা : বাংলাদেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম। আফগানিস্তানেও তাই। গ্রামীণ উন্নয়নে আপনাদের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে চাই। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএস যে ধরনের কাজ করছে, সরকারি ও বেসরকারি খাতকে পরামর্শ দিচ্ছে আমাদেরও সে ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিআইডিএস আমাদের সহায়তা দিতে পারে। বাংলাদেশে আফগান শিক্ষার্থীরা বৃত্তি নিয়ে পড়ছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছি। বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত। বাংলাদেশ তার এ ভাণ্ডার থেকে আমাদেরও বিলাতে পারে।
সমকাল : আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে। অন্য কয়েকটি দেশের সৈন্যও ছিল। বিদেশি সৈন্যরা কতদিন থাকবে?
বাথিজা : তারা আমাদের প্রয়োজনেই এসেছিল। এখন আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেদেরই গড়ে তুলতে হবে। তবে অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা থাকবে। এটা মনে রাখতে হবে, আমরা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি এবং সে জন্য চড়া মূল্য দিয়েছি। এ কারণে অন্য দেশেরও ক্ষতি কম হয়নি। এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। সব দেশকে বন্ধু হিসেবে বসবাস করতে হবে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। উন্নয়নের পথে চলতে হলে এর বিকল্প নেই। আমরা মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য নিউ সিল্ক রুট ইনিশিয়েটিভের প্রস্তাব রেখেছি। শান্তির পরিবেশ থাকলে এটা বাস্তবায়ন হবে দ্রুত।
সমকাল : আফগানিস্তানে মাজার শরিফসহ অনেক ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, যার প্রতি আকর্ষণ বাংলাদেশেও রয়েছে...
বাথিজা : বাংলাদেশের পর্যটকদের আমরা স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আফগানিস্তান দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এর একটি অংশ রুক্ষ। কিন্তু একই সঙ্গে প্রকৃতি উদারও। অনেক দর্শনীয় স্থান ভ্রমণপিপাসুদের কাছে টানবে। তাদের আতিথেয়তায় কোনো ত্রুটি হবে না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাদের প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীকে স্মরণ করব।
সমকাল : সাক্ষাৎকার প্রদানের জন্য ধন্যবাদ।
বাথিজা : সমকালের পাঠক এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জন্য আফগান জনগণের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
No comments