বিক্রির নতুন কৌশল-কোমল পানীয়ের বোতলে বাংলা মদ by শহীদ উদ্দীন চৌধুরী,

ক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতটি উপজেলার সর্বত্র ফেলে দেওয়া বিভিন্ন কোমল পানীয়র খালি বোতলে ভরে বাংলা চোলাই মদ বিক্রি হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকার কোমল পানীয়ের দোকানগুলো থেকে বিক্রি করা কোমল পানীয়ের খালি বোতল নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে ওইসব বোতলে বাংলা চোলাই মদ ভরে তা কোমল পানীয়ের নামে নির্বিঘ্নে বিক্রি করে দিচ্ছে মাদকাসক্তদের কাছে। আর মাদকসেবীরাও নিশ্চিন্তে ওইসব মদ পান করে যাচ্ছে।


কোমল পানীয়ের নামে চোলাই মদ বিক্রির জন্য বেশি ব্যবহার হচ্ছে টাইগার, স্পিড, সার্কসহ বিভিন্ন এনার্জি ড্রিংকসের খালি বোতল। এসব ছোট বোতল নিরাপদ ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় মাদকসেবীদের কাছে এগুলোর কদর অনেক বেশি। এ ছাড়া ক্লেমন, সেভেনআপ, স্প্রাইটসহ মিনারেল ওয়াটারের বোতলেও মদ বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে। কয়েকদিন আগে সাতকানিয়া থানা পুলিশের একটি দল কেউচিয়া এলাকা থেকে পানীয়ের বোতলে মদ ভরে মজুদ করে রাখা কয়েক বস্তা মদ আটকের পর টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনের। এ সময় এক মদ পাচারকারীকেও আটক করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তা এসআই খোরশেদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোমল পানীয়ের বোতলে মদ বিক্রির খবর শুনে এলেও তা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। গোপন খবরের ভিত্তিতে মদ আটক করার পর পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে সম্ভাব্য সব জায়গায়। বর্তমানে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়ার পর থেকে তারা কোমল পানীয়ের বোতলে মদ বিক্রির কৌশল অবলম্বন করেছে বলেও জানায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
সরেজমিনে কোমল পানীয় বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চোলাই মদ ব্যবসায়ীদের বেতনভুক্ত শিশু-কিশোররা প্রতিদিন এলাকার দোকানে দোকানে ঘুরে খালি বোতল কিনে নিয়ে যায়। দোকানিরা জানান, মদ ব্যবসায়ীদের কাছে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে টাইগারসহ বিভিন্ন এনার্জি ড্রিংকসের বোতল। টাইগারের প্রতিটি খালি বোতল দুই টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানালেন দোকানদাররা। অন্য খালি বোতল বিক্রি হয় প্রতিটি এক টাকা দামে। এনার্জি ড্রিংকসের বোতলে ভরা এক বোতল মদ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হয় বলেও জানান দোকানিরা। এ ছাড়া আরও ভয়াবহ যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ভাঙাড়ির দোকানের সংগৃহীত পুরনো সব কোমল পানীয়ের বোতল মাদক ব্যবসায়ীরা কিনে নেয় এবং সেসব অপরিচ্ছন্ন বোতল পরিষ্কার না করেই তাতে চোলাই মদ ভরে বিক্রি করা হয়। মাদকসেবীরাও কোনো বাছবিচার না করে অপরিচ্ছন্ন বোতলে ভরা মদ পান করে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম রোগব্যাধিতে। মদ ব্যবসায়ীরা ভিন্ন সময় ভিন্ন কৌশলে চোলাই মদ বিক্রি করে থাকে। কিছুদিন আগেও ব্যবহার হয়ে যাওয়া স্যালাইনের খালি প্যাকেটে মদ বিক্রি করা হতো বলে জানা গেছে। মদ পাচারের অভিনব কৌশলের ব্যাপারে জানতে চাইলে চন্দনাইশ থানার ওসি এএইচএম মশিউর রহমান জানান, পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে তারা নিজেদের কৌশল পাল্টেই পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্নভাবে মদ বিক্রি করে থাকে। কোমল পানীয়র বোতলে মদ বিক্রি তাদের কৌশলেরই একটি অংশ। সম্প্রতি মদের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর অভিযানের কারণে মদ বিক্রি ও পাচার অনেকাংশে কমে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি। 

No comments

Powered by Blogger.