নিষ্ক্রিয় বিআরটিএ-সংস্থাটিকে দুর্নীতিমুক্ত ও যুগোপযোগী করুন

রকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর মধ্যে বিআরটিএ বোধ হয় সবচেয়ে আলোচিত প্রতিষ্ঠান। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং রুট পারমিট দেওয়ার ব্যাপারে নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে। দেশের যেসব স্থানে বিআরটিএর অফিস আছে, সেখানেই ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিআরটিএ অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না, টাকা দিলে মেলে সবকিছু_এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সেখানে প্রকাশ্যেই চলে ঘুষের কারবার।


দেশের রাস্তাঘাটে মোটরযান চলাচলে যাতে শৃঙ্খলা থাকে, প্রশিক্ষিত চালকরা গাড়িচালকের আসনে বসেন, সম্ভবত এটা নিশ্চিত করতেই বিআরটিএ নামের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আইনি ভিত্তি মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩। পরিচালিত হয় মোটরযান ও ট্রাফিকব্যবস্থা অধ্যাদেশ অনুযায়ী। অধ্যাদেশের ১৭৭টি ধারা ও উপধারায় মোটরযান আইন ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, মোটরযান মালিক, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের সড়ক ও জনপরিবহনবিষয়ক স্বার্থ, পরিবহনে সার্বিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, প্রয়োজনীয় সব আইন ও বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও বাতিলের একক ক্ষমতা বিআরটিএর রয়েছে, যদিও অধ্যাদেশে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি লঘু। শ্রমিক ও মালিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবু একটি প্রতিষ্ঠান সড়কপথের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে_এমনটি মনে করা হয়েছিল। অন্যদিকে, গত দুই দশকেও এই অধ্যাদেশ হালনাগাদ করা হয়নি। ২০০৩ সালে এটা হালনাগাদ করতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর আট বছর তা ফাইলবন্দি ছিল। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ডের একটি প্রকল্পের অধীনে নতুন এই অধ্যাদেশের আদলে সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক অধ্যাদেশ-২০১১-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা কবে চূড়ান্ত করা হবে, এ বিষয়ে বিআরটিএ অবগত নয়।
বিআরটিএতে ঘুষের বিষয়টি একেবারেই ওপেন সিক্রেট। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আটটি খাতে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে সেখানে। মোটরযান লাইসেন্স, মোটরযান কর, নিবন্ধন, মালিকানা বদলি, ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু ও নবায়ন, রোড পারমিট ইস্যু ও নবায়ন, মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, মোটর ড্রাইভিং স্কুল নিবন্ধন, ইনস্ট্রাক্টর লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন এবং প্রাক-রেজিস্ট্রেশন পরিদর্শন ফি বাবদ ভুয়া রসিদ ও টোকেনের মাধ্যমে বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গাড়ি চালানোর পরীক্ষা নেওয়ার বোর্ড সক্রিয় না থাকায় বিআরটিএর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, দালালদের সিন্ডিকেট এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের চাপে দেওয়া হচ্ছে লাইসেন্স। শুধু সংস্থার মিরপুর অফিস থেকেই দিনে গড়ে কমপক্ষে ৭০০-৮০০ জাল লাইসেন্স বের হচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একটি উপকমিটি বিষয়গুলোর তদন্ত করেও কিনারা পায়নি। ছয় মাস ধরে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুর্নীতি রোধ করলে বিআরটিএ থেকে সরকার বছরে আরো ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
দেশে যাঁরা গাড়ি চালাচ্ছেন, তাঁদের অর্ধেকেরও বেশি চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব চালকের হাতে যাত্রীদের জীবন নিরাপদ নয়। আবার বিআরটিএকে দুর্নীতিমুক্ত করা না গেলে অবৈধ চালকের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সড়কপথের শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। অবৈধ চালক এবং ভুয়া রুট পারমিটের গাড়ি চলবে রাস্তায়। মানা হবে না কোনো নিয়ম। এ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ সংস্থাটিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.