বিদেশি কোচের সন্ধানে আবাহনী

বার তারা আটঘাট বেঁধেই নামতে চাইছে লড়াইয়ে। গত লিগের চতুর্থ দল আবাহনী ভুল শুধরে হয়েছে শক্তিশালী। এই দলকে সঠিক পথে চালাতে লাগবে একজন দক্ষ চালক। যথারীতি সেই চালক হবেন বিদেশি। সেই উপযুক্ত বিদেশি কোচের খোঁজে নেমেছে আকাশি-নীলরা।গত শনিবার থেকে নতুন মৌসুমের আবাহনীর প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে পুরনো যোদ্ধা অমলেশ সেনের তত্ত্বাবধানে। আজীবন আবাহনীর সঙ্গী অমলেশ; আগেও ছিলেন, এখনো আছেন।


তবে সময়ের বিবর্তনে তিনি হয়ে গেছেন তাদের আপৎকালীন কোচ, বিদেশি না পেলেই তাঁর হাতে অর্পিত হয় দায়িত্ব। ইদানীং আবাহনী বিশেষভাবে মজেছে বিদেশি ফুটবল কোচে। এবারও মৌসুমের আগে হন্যে হয়ে খুঁজছে বিদেশি কোচ। কয়েকজনের বায়োডাটাও আছে ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুর হাতে, 'পাঁচ বিদেশি কোচের বায়োডাটা আছে আমাদের কাছে। তাঁরা হাই-প্রোফাইল কোচ, তবে এখনো আমরা সিদ্ধান্ত নিইনি। আগামী ২৭ নভেম্বর টিম ম্যানেজমেন্ট আলোচনা করেই একটা সিদ্ধান্ত নেবে।' এই পাঁচ বিদেশি কোচের মধ্যে দুজন ইরানি, একজন ক্রোয়েশিয়ার, একজন ইংল্যান্ডের আর আছে একজন ব্রাজিলিয়ানও। তাঁদের চাহিদা মাসে ছয় হাজার ডলার থেকে ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত। বেতন এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আবাহনী-কর্তারা এ মাসের শেষের দিকেই চূড়ান্ত করে ফেলতে চান কোনো এক বিদেশিকে।
লিগের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নরা গত মৌসুম শুরু করেছিল ইরানি কোচ আলী আকবর পারমোসলেমিকে দিয়ে। শুরুটা হয়েছিল চার হাজার ডলার দিয়ে, ধীরে ধীরে অঙ্কটা বেড়ে পেঁৗছেছিল পাঁচ হাজারে, যদিও চ্যাম্পিয়নরা শেষ পর্যন্ত পেশাদার লিগ শেষ করে চতুর্থ হয়ে। সেই ব্যর্থতা ঘোচাতে এবারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এ ইরানি কোচ। সুবাদে তিনিও থাকছেন আলোচনায়। টিম ম্যানেজমেন্টের আলোচনায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও রুপুর পছন্দ এশিয়ার কোচ, 'ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ এশিয়া কিংবা ব্রাজিলের কোচ। এশিয়ানরা জানে আমাদের স্ট্যান্ডার্ড কোথায়, কী মানের ফুটবল খেলি। আমাদের খেলার ধরন হলো, বল পায়ে খেলা। এ জন্য ব্রাজিলিয়ান কোচ হলেও খারাপ হবে না মনে হয়। কিন্তু আমার একার কথায় তো হবে না, এখানে টাকার ব্যাপার আছে, টিম ম্যানেজমেন্টের আলোচনার বিষয় আছে।' তারা চাইছে এ মাসের শেষের দিকে বিদেশি কোচ চূড়ান্ত করে তাড়াতাড়ি দলটিকে তাঁর হাতে তুলে দিতে। বিদেশি আসার আগ পর্যন্ত অমলেশ ও রুপু মিলে দলের কন্ডিশনিংটা করিয়ে নিচ্ছেন যেন হেড কোচ এলেই উইথ দ্য বল প্র্যাকটিসে চলে যেতে পারেন।
বিদেশি কোচ ঠিক না হলেও দুই বিদেশি ফুটবলার ইতিমধ্যে ঠিক করে ফেলেছে আবাহনী_ফরোয়ার্ড আওদু ইব্রাহিম ও ডিফেন্ডার সামাদ ইউসুফ। কোচ ঠিক হলেই কয়েক মৌসুম ধরে এ ক্লাবে খেলা দুই ঘানাইয়ান এসে পড়বেন ঢাকায়। বাকি দুজন নিয়ে রুপুর আছে ভিন্ন পরিকল্পনা, 'ফ্রাঙ্কও আবার খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবে আমরা চাইছি তার চেয়েও ভালো একজন ফিনিশার। গতবার অহরহ গোল মিসের কারণে আমরা সাফল্য পাইনি। এবারের দলটা অনেক ব্যালান্সড, শুধু একজন ফিনিশার হলেই হয়ে যায়। এ ছাড়া একজন ভালো বিদেশি মিডফিল্ডারও খুঁজছি।'
প্রতিপক্ষ কোচের বিশ্লেষণেও এবার দেশি-খেলোয়াড়দের সামর্থ্য বিবেচনায় আকাশি-নীলরাই এগিয়ে। তার চেয়েও বড় কথা, প্রত্যেক পজিশনে অন্তত দুজন করে ভালো ফুটবলার আছে। সেটা না থাকায় গতবার তারা ইনজুরি ও কার্ড সমস্যায় পড়ে শেষের দিকে ছিটকে গিয়েছিল শিরোপার দৌড় থেকে। শিরোপার পথে আরেকটা বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের গোল-খরা। সাখাওয়াত হোসেন রনি একাই অনেক গোল মিস করেছিলেন, রবিনের সার্ভিসটাও সেভাবে পায়নি ইনজুরির কারণে। এবারও সেই রনি আছেন, আছেন রবিনও, শেখ জামাল ছেড়ে এসে তাঁদের সঙ্গী হয়েছেন এনামুল হক। যোগ হয়েছেন সদ্য জাতীয় দলে ডাক পাওয়া তরুণ স্ট্রাইকার তৌহিদুল আলমও। তার পরও যেন আবাহনী টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা করতে পারছে না। তাই একজন ভালো বিদেশি ফিনিশার খুঁজছে। রুপুর বিশ্লেষণে এ জায়গাতেই কেবল একটু খুঁত আছে, 'এই দল গতবারের চেয়ে অনেক ভালো, ম্যাচ বের করার মতো ফুটবলারও আছে। তার পরও একজন ফিনিশার লাগবে, যে শুধুই গোল করবে।' ফিনিশারের অভাবেই গতবার সবচেয়ে বেশি ভুগেছে তারা, উপলব্ধিটা এসেছে সেখান থেকেই।



No comments

Powered by Blogger.