বাঁধ নির্মাণ বন্ধে ভারতের সঙ্গে কথা বলুন-ধামরাইয়ে ছাত্র গণজমায়েতে খালেদা জিয়া by গোবিন্দ আচার্য্য ও মোকলেছুর রহমান,
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধে সরকারকে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, টিপাইমুখসহ সব আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ করতেই হবে। এখনও সময় আছে, বাঁধ নির্মাণ বন্ধে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। আমরাও সহযোগিতা করব। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অধিকার আদায়ে ভয় পেলে চলবে না।
আমরা আপনার সঙ্গে আছি। একই সঙ্গে রোডমার্চ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে 'সরকার হটাও' কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, দেশ রক্ষার ওই কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ধামরাইয়ের হার্ডিঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক ছাত্র-গণজমায়েতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ৪৭তম জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এ জমায়েতের আয়োজন করে। ২০ নভেম্বর তারেকের জন্মদিন ছিল।
তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন।
খালেদা জিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক নদীর পানি ন্যায্য হিস্যা পাওয়া দেশ ও জনগণের অধিকার। সরকারকে জনগণের সে অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে, স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। নইলে দেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৫২টি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদীগুলোকে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সরকার প্রতিবাদ করছে না। তিস্তার পানির জন্য বারবার ধরনা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণ করে তারা আগেই পানি সরিয়ে নিয়েছে, দেবে কোথা থেকে? এখন আবার বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। এতে বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্যই বিএনপি প্রতিবাদ করছে।
দুপুর দেড়টায় রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হন খালেদা জিয়া। বিকেল সাড়ে ৩টায় জনসভাস্থলে পেঁৗছান তিনি। পড়ন্ত বিকেলে সেখানে পেঁৗছেই ১২ গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে ১২টি ল্যাপটপ, ১০ দরিদ্র নারীকে সেলাই মেশিন এবং ২০ দরিদ্র কৃষকের মধ্যে ১০টি গরু ও ১০টি ছাগল বিতরণ করেন। সূর্যাস্তের এক ঘণ্টা আগে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে দেশের বর্তমান অবস্থাসহ সরকারের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া যখন জনসভাস্থলে এসে পেঁৗছান তখন হার্ডিঞ্জ বিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দুপুরের আগে থেকেই আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী আসেন মাঠে। বিকেল গড়াতেই আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। হাইওয়ে থেকে এক কিলোমিটার দূরে জমায়েতস্থল পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশে হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। খালেদার জনসভা অভিমুখে মিছিলের কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। এতে মহাসড়কে চলাচল করা হাজার হাজার গাড়ি কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকে। যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ধামরাইয়ে ছাত্র-গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে ঢাকার টেকনিক্যাল মোড় থেকে জনসভাস্থল পর্যন্ত দেড় শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত রঙবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানো হয় রাস্তার দু'পাশে।
খালেদা জিয়া বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কিছুদিন আগে দেখা হয়েছে। এরপরই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে নাকি আলোচনা ছাড়াই চুক্তি হয়ে গেছে; কিন্তু এ নদী শুধু ভারতের নয়। এতে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার রয়েছে। তারপরও সরকার প্রতিবাদ করেনি। তার প্রশ্ন, তাহলে কি এটি জনগণের সরকার নয়?
দেশ অর্থনৈতিকভাবে মহাসংকটে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার ব্যর্থ ও অযোগ্য। সবাই তাদের ব্যর্থতার কথাই বলছে। সরকারের ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। দেশে কোনো রিজার্ভ নেই। অথচ বলা হচ্ছে, রিজার্ভ ছাড়াই দেশ চালানো সম্ভব। এসব বলে সরকার তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চাচ্ছে।
তার অভিযোগ, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশের বাজারে পরিণত হয়েছে। আর এদেশের শিল্পের কাঁচামাল চলে যাচ্ছে ওই দেশে। এটি আধিপত্য বিস্তার। তাই দেশে স্বাধীনতা আছে কি-না সেটাই সন্দেহ।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি বিষয়ে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি কেউ সরকারকে বিশ্বাস করে না। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার আগেই সরকার লুটপাট করেছে। রাঘববোয়ালরা সব টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। তদন্ত করে বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও আইএমএফ বলেছে, দুর্নীতি হয়েছে। তাই তারা টাকা দেবে না। অথচ দায় চাপানো হচ্ছে বিএনপি ও ড. ইউনূসের ওপর। নিজেরা চুরি করে অন্যদের ওপর দায় চাপালে চলবে না। এসবের হিসাব একদিন দিতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আমলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি হয়েছে। তারপর জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বাজার ভালো করে। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গরিব মানুষের লাখো কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। ওই টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, লুটপাটকারীদের সময়মতো ধরা হবে। পাচার করা টাকা ফিরিয়ে এনে ক্ষতিগ্রস্তদের ফেরত দেওয়া হবে।
সরকারকে হুশিয়ার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের এমন পরাজয় হবে যে মুখ দেখাতে পারবে না। স্পিকার সংসদে বলছেন, 'দেশ এভাবে চলতে পারে না।' তাহলে সরকারের উচিত সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া।
তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে খুবই অসুস্থ। ফখরুদ্দীন-মইন তাকে এমন নির্যাতন করেছে যে, কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে আছে তারেক। চিকিৎসা শেষে সে দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু যেসব বিদেশি শক্তি বাংলাদেশকে তাদের অধীন করে রাখতে চায় তারা তারেকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাকে দেশ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
যুবকদের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সারাবিশ্ব স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। তোমরা টেলিভিশন, ফেসবুক সবই দেখছ। তাই তোমাদের শুধু ঘরে বসে থাকলে চলবে না, আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এই স্বাধীন দেশকে অন্য দেশের প্রদেশ হতে দেবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফখরুদ্দীন-মইন সরকার তারেক রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। এখন আবার তিনি যাতে দেশে আসতে না পারেন সে ষড়যন্ত্র করছে; কিন্তু এতে লাভ হবে না।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর কোনো সাক্ষী নেই। তারপরও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দেওয়া হয়েছে। আট বছর আগের গ্রেনেড হামলার মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে।
ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, শিক্ষা সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, ছাত্র সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় নেতা আফরোজা খানম রিতা, ডা. দেওয়ান মোঃ সালাহউদ্দিন, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, যুগ্ম সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, জেলা ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল কবীর পল, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।
মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাননি। তার এবং খালেদা জিয়ার সামনেই মাইকে ঢাকা জেলা সভাপতি হিসেবে আবদুল মান্নানকে ঘোষণা দিয়ে বক্তৃতা করার সুযোগ দেওয়া হয়। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার হুদা নিজেকে ঢাকা জেলার বৈধ সভাপতি দাবি করেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ধামরাইয়ের হার্ডিঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক ছাত্র-গণজমায়েতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ৪৭তম জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এ জমায়েতের আয়োজন করে। ২০ নভেম্বর তারেকের জন্মদিন ছিল।
তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন।
খালেদা জিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক নদীর পানি ন্যায্য হিস্যা পাওয়া দেশ ও জনগণের অধিকার। সরকারকে জনগণের সে অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে, স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। নইলে দেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৫২টি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদীগুলোকে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সরকার প্রতিবাদ করছে না। তিস্তার পানির জন্য বারবার ধরনা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণ করে তারা আগেই পানি সরিয়ে নিয়েছে, দেবে কোথা থেকে? এখন আবার বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। এতে বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্যই বিএনপি প্রতিবাদ করছে।
দুপুর দেড়টায় রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হন খালেদা জিয়া। বিকেল সাড়ে ৩টায় জনসভাস্থলে পেঁৗছান তিনি। পড়ন্ত বিকেলে সেখানে পেঁৗছেই ১২ গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে ১২টি ল্যাপটপ, ১০ দরিদ্র নারীকে সেলাই মেশিন এবং ২০ দরিদ্র কৃষকের মধ্যে ১০টি গরু ও ১০টি ছাগল বিতরণ করেন। সূর্যাস্তের এক ঘণ্টা আগে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে দেশের বর্তমান অবস্থাসহ সরকারের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া যখন জনসভাস্থলে এসে পেঁৗছান তখন হার্ডিঞ্জ বিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দুপুরের আগে থেকেই আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী আসেন মাঠে। বিকেল গড়াতেই আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। হাইওয়ে থেকে এক কিলোমিটার দূরে জমায়েতস্থল পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশে হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। খালেদার জনসভা অভিমুখে মিছিলের কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। এতে মহাসড়কে চলাচল করা হাজার হাজার গাড়ি কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকে। যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ধামরাইয়ে ছাত্র-গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে ঢাকার টেকনিক্যাল মোড় থেকে জনসভাস্থল পর্যন্ত দেড় শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত রঙবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানো হয় রাস্তার দু'পাশে।
খালেদা জিয়া বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কিছুদিন আগে দেখা হয়েছে। এরপরই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে নাকি আলোচনা ছাড়াই চুক্তি হয়ে গেছে; কিন্তু এ নদী শুধু ভারতের নয়। এতে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার রয়েছে। তারপরও সরকার প্রতিবাদ করেনি। তার প্রশ্ন, তাহলে কি এটি জনগণের সরকার নয়?
দেশ অর্থনৈতিকভাবে মহাসংকটে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার ব্যর্থ ও অযোগ্য। সবাই তাদের ব্যর্থতার কথাই বলছে। সরকারের ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। দেশে কোনো রিজার্ভ নেই। অথচ বলা হচ্ছে, রিজার্ভ ছাড়াই দেশ চালানো সম্ভব। এসব বলে সরকার তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চাচ্ছে।
তার অভিযোগ, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশের বাজারে পরিণত হয়েছে। আর এদেশের শিল্পের কাঁচামাল চলে যাচ্ছে ওই দেশে। এটি আধিপত্য বিস্তার। তাই দেশে স্বাধীনতা আছে কি-না সেটাই সন্দেহ।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি বিষয়ে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি কেউ সরকারকে বিশ্বাস করে না। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার আগেই সরকার লুটপাট করেছে। রাঘববোয়ালরা সব টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। তদন্ত করে বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও আইএমএফ বলেছে, দুর্নীতি হয়েছে। তাই তারা টাকা দেবে না। অথচ দায় চাপানো হচ্ছে বিএনপি ও ড. ইউনূসের ওপর। নিজেরা চুরি করে অন্যদের ওপর দায় চাপালে চলবে না। এসবের হিসাব একদিন দিতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আমলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি হয়েছে। তারপর জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বাজার ভালো করে। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গরিব মানুষের লাখো কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। ওই টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, লুটপাটকারীদের সময়মতো ধরা হবে। পাচার করা টাকা ফিরিয়ে এনে ক্ষতিগ্রস্তদের ফেরত দেওয়া হবে।
সরকারকে হুশিয়ার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের এমন পরাজয় হবে যে মুখ দেখাতে পারবে না। স্পিকার সংসদে বলছেন, 'দেশ এভাবে চলতে পারে না।' তাহলে সরকারের উচিত সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া।
তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে খুবই অসুস্থ। ফখরুদ্দীন-মইন তাকে এমন নির্যাতন করেছে যে, কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে আছে তারেক। চিকিৎসা শেষে সে দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু যেসব বিদেশি শক্তি বাংলাদেশকে তাদের অধীন করে রাখতে চায় তারা তারেকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাকে দেশ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
যুবকদের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সারাবিশ্ব স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। তোমরা টেলিভিশন, ফেসবুক সবই দেখছ। তাই তোমাদের শুধু ঘরে বসে থাকলে চলবে না, আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এই স্বাধীন দেশকে অন্য দেশের প্রদেশ হতে দেবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফখরুদ্দীন-মইন সরকার তারেক রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। এখন আবার তিনি যাতে দেশে আসতে না পারেন সে ষড়যন্ত্র করছে; কিন্তু এতে লাভ হবে না।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর কোনো সাক্ষী নেই। তারপরও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দেওয়া হয়েছে। আট বছর আগের গ্রেনেড হামলার মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে।
ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, শিক্ষা সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, ছাত্র সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় নেতা আফরোজা খানম রিতা, ডা. দেওয়ান মোঃ সালাহউদ্দিন, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, যুগ্ম সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, জেলা ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল কবীর পল, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।
মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাননি। তার এবং খালেদা জিয়ার সামনেই মাইকে ঢাকা জেলা সভাপতি হিসেবে আবদুল মান্নানকে ঘোষণা দিয়ে বক্তৃতা করার সুযোগ দেওয়া হয়। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার হুদা নিজেকে ঢাকা জেলার বৈধ সভাপতি দাবি করেন।
No comments