ইরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা

রানের পরমাণু কার্যক্রমের সূত্র ধরে দেশটির ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা যৌথভাবে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাজ্য ইরানের ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে। কানাডা জানিয়েছে, তারা দেশটিতে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে কাজে লাগে এ রকম কোনো পেট্রোকেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য রফতানি করবে না। খবর বিবিসি ও এএফপির।


বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে হয়তো তেহরানের ওপর চাপ বাড়বে। এরই মধ্যে নতুন করে আরোপিত এ নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেছে তেহরান। মঙ্গলবার তেহরানের পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, পশ্চিমাদের এ নিষেধাজ্ঞা ইরানের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করবে। দেশটির অর্থনীতি বা পরমাণু কার্যক্রমকে তা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রামিন মেহমান পরাস্ত পশ্চিমাদের এ পদক্ষেপকে ফাঁকা প্রচার বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, 'এ পদক্ষেপ আমাদের জনগণের কাছে নিন্দিত এবং তা আমাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এটা হবে নিষ্ফল।'
ইরানের তেলমন্ত্রী আবদুল হোসাইন বায়াত বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইরানের গ্যাস ও তেল রফতানিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ নিষেধাজ্ঞাকে মার্কিনিদের প্রপাগান্ডা ও মনস্তাত্তি্বক যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছে। এ নিষেধাজ্ঞায় ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের কোনো ক্ষতি হবে না বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়। রাশিয়া এ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, আন্তর্জাতিক আইনের বিচারে এ নিষেধাজ্ঞা অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রত্যাশিত।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এ নিষেধাজ্ঞা ইরানের পরমাণু ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ আলোচনাকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা মনে করি, এ পদক্ষেপ ইরানের পরমাণু ইস্যু নিয়ে আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করবে এবং আলোচনার ক্ষেত্রকে সংকীর্ণ করে তুলবে। এ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় এক লিখিত বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, ইরান তাদের বিপজ্জনক যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এ কর্মসূচি থেকে ইরানকে পিছু হটাতে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, পরমাণু কার্যক্রম থেকে ইরানকে সরিয়ে আনতে চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইরানের তেল এবং গ্যাসক্ষেত্র লক্ষ্য করে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সোমবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এরপরও যদি ইরান তাদের এ কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তবে তাদের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য আরও কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। অন্যদিকে মার্কিন অর্থমন্ত্রী টিমোথি গেইথনার আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে বলেন, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো যাতে ইরানের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ক না রাখে সেজন্য সতর্ক করে দেওয়া হলো; কারণ ইরানের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক রাখা মানে তাদের পরমাণু কার্যক্রমে সহায়তা করা। এ ছাড়া মার্কিন মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের চ্যান্সেলর জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল থেকেই ইরানের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। এরই মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ইরানের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন বন্ধের ঘোষণা দিল যুক্তরাজ্য, যা ইরানের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতিসংঘ পরমাণু সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয় পরমাণু অস্ত্র বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ইরান। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে পশ্চিমারা। এর সূত্র ধরে ইরানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অবশ্য তেহরান বরাবরই বলে আসছে, শান্তিপূর্ণ উপায়েই পরমাণু কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা।

No comments

Powered by Blogger.