সোনার মূল্যবৃদ্ধি-যশোরে স্বর্ণশিল্পীরা বেকায়দায় by ফখরে আলম,

সোনার মূল্যবৃদ্ধির কারণে যশোরের প্রায় হাজারখানেক স্বর্ণশিল্পী বেকায়দায় পড়েছেন। আয় কমে যাওয়ায় তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সোনার মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে মৃৎ, বাঁশ ও বেত শিল্পের মতো বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত স্বর্ণ শিল্পেও বিপর্যয় নেমে আসবে।


বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি যশোর জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, যশোরে ২০০টি সোনার দোকান রয়েছে। ওইসব দোকানের গহনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রায় দুই হাজার স্বর্ণশিল্পী। কয়েক বছর ধরে সোনার মূল্য অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁদের প্রায় অর্ধেক বেকার হয়ে পড়েছেন। যশোর জুয়েলারি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি উৎপল সরকার জানান, আগে দুই হাজারের বেশি স্বর্ণশিল্পী যশোরের গহনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে এর অর্ধেকও নেই। বাকিরা বেকার জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ বাপদাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন। কেউ সিটি গোল্ড, রুপা, ব্রোঞ্জের গহনা তৈরি করছেন। তিনি আরো জানান, আগে সোনার গহনা তৈরি করে প্রতি মাসে একজন কারিগর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতেন। এখন সেই আয় কমে চার-পাঁচ হাজার টাকায় নেমে গেছে। মেহেদী হাসান খোকন নামে একজন শিল্পী ১০ বছর ধরে সোনার গহনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন সোনার গহনা তৈরির অর্ডার না পেয়ে তিনি রূপার গহনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। মেহেদী জানান, 'আগে সোনার গহনা তৈরি করে প্রতি মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা আয় করতাম। এখন রুপার গহনায় আয় হয় চার-পাঁচ হাজার টাকা, যা দিয়ে কিছুই হয় না।'
১৭ বছর ধরে সোনার গহনা তৈরি করা আরেক শিল্পী উজ্জ্বল দত্ত জানান, তিনি ১৪ বছর বয়স থেকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। আগে যে কাজ করতেন, এখন তার সিকি ভাগ কাজও হচ্ছে না। ফলে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জুয়েলার্স সমিতির যশোর জেলা শাখার সভাপতি কুমার সঞ্জয় চন্দ ভজন বলেন, 'টুইন টাওয়ারে হামলার পরদিন থেকে সোনার মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দোকান খুলে বসে আছি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত বউনি করতে পারিনি। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত স্বর্ণ শিল্পও হারিয়ে যাবে।' এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

 

No comments

Powered by Blogger.